পরিস্পন্দন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
হাত নিশপিশ, আঙুল কাঁপছে।
ইদানিং হাত কাঁপে অকারণে। ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। ডানহাতটা বেশী। আঙুলগুলো চেপে ধরি, বামহাতের মুঠোয় নিই। টের পাই থেমেছে একটু। একটু পরে ছেড়ে দিই মুঠো, দ্বিধাচিত্তে হতোদ্যম ওরা। থেমে আসে ধীরে।
বামহাতে স্কালপেলটা তুলে নিই। গতকাল কিনেছি ওটা। ফয়েল থেকে ব্লেডটা বের করে লাগিয়েছি। চক্চকে স্বচ্ছ। আলতো করে হাত বুলোই ধারালো প্রান্তে। শীতল ঠাণ্ডা। অপেক্ষায় থাকি আবার কখন কেঁপে উঠবে অন্যহাতখানি। টেবিলের উপর ডানতালু রাখি, আর অপেক্ষায় থাকি।
ঘরে আলো খুব কম; শুধু অজপাড়াগাঁয়ের কোন অদেখা রমণীর হাতে বোনা সূক্ষ্ম বেতের ছাঁকনি, কাঠের খোদাই করা টেবিলল্যাম্পের আলো। সন্তান কোলে ঘুমপাড়ানী নারীহাতের ছোঁয়া বেতের ভাঁজেভাঁজে। আমি জানি তার ঘরের কোনে এখনও পড়ে আছে অর্ধসম্পন্ন বেতের কাজগুলো। অসম্পূর্ণ শরীর নিয়ে ওরা চুপচাপ পড়ে থাকে ঘরের কোনে। বেতের ভাঁজেভাঁজে মাটির ঘরে শিশুর জন্মপ্রক্রিয়া, আঁতুড়ঘর থেকে কাঁথা মুড়িয়ে আনা তেল চপ্চপে মানুষের কান্নার ইতিহাস। দাওয়ায় বসে বুনতে থাকা, পাশে ঘুমানো সন্তান, লোল পড়ছে, কপালে কালো টিপ, জননী আনমনা হয়, থেমে যায় আঙুল, কেঁপে উঠে। স্তব্ধ হয় বেতের কাজ, ক্ষণিকের তরে। মধ্যবিত্ত টেবিলল্যাম্পটার ঐ সূক্ষ্ম বেতের ছাঁকনির ঠিক কোথায় থেমে গিয়েছিলো ঐ পল্লীরমণীর হাত তা আমি জানি। আলতো করে ছুঁয়ে দিই জায়গাটা। কম্পিত হাতে।
আমার পরিধানে যে সুতোগুলো, ওরা খুব চেনে ভোরের সংঘবদ্ধ পায়েহাঁটা, কর্মঠ কারিগরের নিতম্বে কর্পোরেট চাহনি। আমার চর্ম-সচেতন প্রেয়সীর মাসিক প্রসাধন ব্যয় জোগাতে ওদের খাটতে হয় নিদেনপক্ষে ত্রিশদিন, গাদাগাদি করে থাকতে হয় সর্প-গর্তে, সরীসৃপ লিবিডো পরিতুষ্ট কোরে। আমি মাড়িয়ে চলি মরুভূমির সাদা বালুর মানুষদের ঘামে ভেজা পথ। আমি এক সাধারণ মধ্যবিত্ত। মঙ্গাপীড়িত কৃষকের হাতে তোলা ভাত খেয়ে আমি কিনতে চাই অত্যাধুনিক জার্মান চক্রযান। আমি উত্তেজিত হই রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠান শ্রবণে, এবং নির্বিকার চিত্তে পাতা উল্টাই প্রাতরাশ টেবিলে, মাখন মাখাই রুটিতে, সাথে লাগাই কিশোরী ধর্ষণ-রক্ত, পান করি গলিত লাশ। আমি এক সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপরায়ণ মধ্যবিত্ত, আমি ময়দান সরগরম করি মেকি কান্নায়, কৃতজ্ঞতার হুংকার ছাড়ি প্রাচীন উর নগরে জন্মানো ত্রাণকর্তার অকস্মাৎ পশুবলির, অথচ আমার বাসার জানালার ব্যালকনিতে আট্কে থাকে সন্তানের গলাকাটা লাশ। আমি সাহিত্যচর্চা করি, এবং এইসব ইস্যু নিয়ে নিত্যনতুন শব্দচয়নে কনসাস ক্লিয়ার করি। আমি এক সাধারণ মধ্যবিত্ত যে নির্বাচিত নারীর যোনীমুখে জীবনের সুখ খোঁজে।
ইদানিং হাত কাঁপে অকারণে। ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। ডানহাতটা বেশী।
শুধু দেখেছি শীতল পাহাড়ী ঝর্ণাজল আর জনমানবহীন সৈকতের বালুর তলে হাতদুটো ঢুকিয়ে রাখলে ওরা কেমন থেমে যায় নিশ্চুপ। দেখেছি, কাঁপা হাতের তালুতে বালু নিয়ে গুন্গুন্ করলে ওরা কেমন বদলে যায়। নড়েচড়ে ছবি আঁকে বালুরা, নিজেদের সজ্জিত করে প্যারেড স্কোয়াডের সেপাইদের মতন, কী এক অপূর্ব চিত্রকলা, যেন দানার ভেতর জীবন, সুরের ছোঁয়ায় নাচছে। জ্যামিতিক মন ওদের।
জানিনা, ইদানিং কেন হাত কাঁপে। ডানহাতটা বেশী।
উফ্ জানিনা কেন...
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার
এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।
আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন