আমাদের চারপাশে প্রায়ই কিছু মানুষ দেখা যায় যারা বিভিন্ন কারনে নিজেদের ক্ষতি করে, যেমন শরীরের বিভিন্ন যায়গা ধারালো কিছু দিয়ে কেটে রক্তাক্ত করা চুল কেটে ফেলা ইত্যাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা এদের ইমোশনাল ফুল, পাগল কিংবা এটেনশন সিকার বলে থাকি। এটি একটি মানসিক সমস্যা যাকে সেলফ হার্ম হলা হয়ে থাকে।
সেলফ হার্ম কি ?
নিজেকে আঘাত করার মাধ্যমে মানসিক শান্তি আনার চেষ্টা করা, এ ধরনের সমস্যাকে সেলফ হার্ম বা (Self Harm/ SH Disorder ) বলা হয়ে থাকে, এটি কোন মানসিক রোগ নয় তবে কিছু মানসিক সমস্যা এর সাথে সম্পৃক্ত । সব ক্ষেত্রে এটি নিজের ইচ্ছাধীন হয় না, সে চাইলেও নিজেকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকতে পারে না । সেলফ হার্ম বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন চামরা কেটে রক্তাক্ত করা, নিজেকে খামচে রক্তাক্ত করা ,শরীরে বিভিন্ন অংশে ভীষণ ভাবে আঘাত করা, মাথা শক্ত কিছুর সাথে আঘাত করা, হাত পা আগুনে পুরিয়ে ফেলা, চুল কেটে কিংবা ছিঁড়ে ফেলা। অধিংশ ক্ষেত্রে এটি সুইসাইডের উদ্দেশ্যে করা হয় না, কিন্তু অনেক বিপজ্জনক হতে পারে, এমন কি মৃত্যু হতে পারে। অনেকের ধারনা দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে মানুষ এ ধরনের কাজ করে থাকে, কিন্তু এ ধরনের কাজ এরা লোকচক্ষুর আড়ালেই করতে পছন্দ করে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি পাঁচ জন নারী তে একজন এবং সাত জন পুরুষে একজন কম বেশী এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকে যাদের বয়স ১৪-২১ এর মধ্যে ।
কেন এ সমস্যা হতে পারে ?
প্রসন্ড মানসিক চাপ, অতিআবেগ, কিংবা সাধারণত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় | কিছু মানসিক রোগ যেমন Borderline personality disorder, Depression, Eating disorders, Anxiety , Posttraumatic distress disorder ইত্যাদির ফলাফল রুপে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে ।চিকিৎসা শাস্ত্র মতে সেলফ হার্ম safety valve এর মতো কাজ করে যখন emotional pressure মানুষের সহ্য করার ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, এক্ষেত্রে বলে নেওয়া ভাল সবার পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা সমান হয় না । এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী মনে করে রক্ত বের করে দেওার সাথে সাথে টেনশন কমে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে এটি তাদের সাহায্য করে emotional pressure ভুলে থাকতে। এ ধরনের কাজ করে এরা জিবন্ত অনুভব করে এবং কষ্টের জগত থেকে বেড়িয়ে আসতে চায়। লজ্জা কিংবা অপরাধ বোধ থেকেও মানুষ এমন কাজ করতে পারে বলে ধারনা করা হয় ।
সমাধানঃ
এ সমস্যায় পরলে যদি কেউ সহানুভূতি দেখায় কিংবা সাহায্য করে তবে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ লেভেল এর হলে এরা উত্তরন পেতে পারে। তবে যদি কোন মানসিক রোগের ফলস্বরূপ হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তার চিহ্নিত করে চিকিৎসা নিতে হবে। কারন এটি দিন দিন বেড়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে সহজে।
কিছু তাৎক্ষনিক সাধারণ সমাধান হচ্ছে ,
- কারো সাথে ফিলিং শেয়ার করা
- তাৎক্ষনিক ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা
- কাগজে লেখালেখি করা
- লাল কালি কিংবা রঙ দিয়ে ছবি আঁকা
- দৌর, লাফ কিংবা কোন পরিশ্রমের কাজ করা
- পাঞ্চিং ব্যাগে আঘাত করা
- স্কুইজ বল প্রেস করা
- শব্দ তৈরি করা যেমন চামচ কিংবা কিছু দিয়ে ধাতব বস্তুকে আঘাত করে, কিংবা বাদ্যযন্ত্র বাজানো
- হাঁটু বা কনুইয়ে বরফের টুকরো চেপে ধরা
- ভীষণ ঝাল কিংবা তেতো সাদের কিছু খাওয়া