somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক জন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকথা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার অপরাধে রাজাকার ও মুজাহিদরা তাদের বাড়ি জালিয়ে দেয়

১৭৫৭ সালে পলাশীর পান্তরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার মৃত্যুর পর অস্তমিত হল আমাদের বাংলার স্বাধীনতা সূর্য। তার পর ২০০ বছর ইংরেজদের গোলামী পর যখন একটা রাষ্ট্র আমাদের উপহার দিলো দুইটি খন্ডে ভিবক্ত পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান। একি অপরের দুরুত্ব ছিল ১১০০ মাইল। তাদের সাথে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও খাদ্যভ্যাস কিছুই মিল ছিল না শুধু ধর্মের ভিত্তিতে একটি দেশ হয়ে গেলো। আমরা জন সংখ্যা বেশী হলেও তারা আমাদের শোসন করতে শুরু করল। আমাদের গর্ভ ছিল শোনালী আঁশ (পাট)। সেই পাটের টাকা দিয়ে তাদের অঞ্চল কে তারা সম্বৃদ্ধ করতে শুরু করলো। অবশেষে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার উপর যখন আঘাত হানলো তখন ৫২‘র শহীদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হল ঢাকার রাজ পথ। তার পর লড়াই আর থামেনি। ৫৪ যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিমলীগের ভরাডুবি এরপর ৬৪‘র ৬ দফা ৬৯‘র এ গন অভ্যুথান, ৭০‘র নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় ও ৭১ মুক্তি যুদ্ধ অবশেষে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়। এই কথাগুলো বলতে বলতে তিনি শিহরীত হয়ে পড়েন, তিনি আর কেউ নন মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর ভুঁইয়া। পিতা মৃত বাদশা মিয়া ভুঁইয়া। গ্রাম মহালঙ্গা। পোষ্ট অফিস বালিয়াদি। উপজেলা মীরসরাই। এপ্রিল মাসেই তিনি মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ছিলেন প্লাটুন কমান্ডার। তার প্লাটুনে ছিল ৩৭ জন মুক্তি যোদ্ধা। থানা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন বলেন তিনি জানান। এলাকা ছিল সিতাকুন্ড। প্রথমে আসামের লোহারগড় ক্যাম্পে মুক্তি যুদ্ধের ট্রেনিং নেন। সামনা সামনি যুদ্ধ করেন সিলেট জেলায়। সেখানে যুদ্ধে তিন জন মুক্তি যুদ্ধা শহীদ হন এবং পাঁচ জন গুরুত্বর আহত হন। এরপর দুটি লাশ পাওয়া যায়। একটি লাশ খাল দিয়ে ভেসে চলে যায়। এরপর তিনি চলে আসেন সিতাকুন্ডে। এখানে এসে শুরু করেন গেরিলা আক্রমন। ৭ই মার্চে বঙ্গ বন্ধুর ভাষন এবং তার আব্বার অনুপ্রেরনায় মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন বলে জানান। মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার অপরাধে তাদের বাড়িটি রাজাকার এবং মুজাহিদরা ৪ সেপ্টেম্বর আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়। এতে ৬৮টি পরিবারের ঘর সম্পুন্ন রুরে বর্ষিভুত হয়ে যায়। তাদের বাড়িতে রাজাকার এবং মুজাহিদের সাথে এক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেখানে তিন জন মুক্তি যোদ্ধা শহীদ হন। তাদের নাম হচ্ছে, আবুল হোসেন, আবদুল মোতালেব এবং টিপু। পরবত্বীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংসদ সদস্য এম আর সিদ্দিকী শহীদদের স্মৃতি রক্ষাত্বে একটি স্মৃতি পলক তৈরি করেন। এরপর মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হিতু মোহাম্মদ ভুঁইয়া বাড়ির জামে মসজিদ কবরস্থানের পাশে একটি শহীদ মিনার প্রস্তুত করে দেন। মুক্তি যুদ্ধে তাদের বাড়ি থেকে সবচেয়ে বেশী মুক্তি যোদ্ধা অংশ গ্রহণ করেন বলে জানান। প্রায় ২৬ জনের মত মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহণ করেন। ১১ এবং ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের সাথে ছোট দারগোহাটে সামনা সামনি যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই যুদ্ধে তিন জন রাজাকার এবং দুইজন বিহারীকে মুক্তি যোদ্ধা হত্যা করেন। যুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ইন্টার মেডিয়েটের ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধে তাদের বাড়ির একজন মুক্তি যোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন । তার নাম আবদুল জলিল। তিনি কুমিরার ঘাটঘর এলাকায় যুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধের পর তিনি প্রগতি ইন্ডাস্টিজের চাকরি করেন এবং বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছেন। তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে।
১৬ ডিসেম্বর এলেই তার হৃদয় আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে যায়। এবং পাশাপাশি বেদনাও জাগে। কারণ নয় মাসের দীর্ঘ সংগ্রামে অসংখ্য মানুষ তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। অবশ্যই প্রাণের বিনীময়ে পাওয়া এই বিজয় হচ্ছে অনন্য। দেশমাতৃকার মুক্তির যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা স্বজন হারিয়েছেন, যারা লাঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে কখনো ভুলতে পারবেনা তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতি। তার জীবনের স্বরনীয় ঘটনাই হচ্ছে মুক্তি যুদ্ধ। যত দিন বেছে থাকবেন ততদিন ১৯৭১ কে স্বরণ করে যাবেন বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×