আমার নাম সাদিয়া (ছদ্মনাম) । বয়স ২৬ বছর । আমি পড়াশোনা করেছি গ্রামের একটি মফঃস্বল কলেজে । অনার্স পাস করেছি সেখানেই । আমি বিয়ের আগে কখনো ঢাকা আসিনি । পারিবারিক ভাবে বিয়ে হবার পর আমার স্বামী আমাকে ঢাকা নিয়ে আসে ।
আমরা ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া বাসায় থাকতাম । সবকিছু ঠিকই ছিল । আমার স্বামী সারাদিনে অফিস করত । বাড়িওয়ালা বাড়িওয়ালি খুব ভাল ছিল । কিন্তু তাদের ছেলে যখন বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফেরত আসল । তখন থেকে আমার জীবনে নেমে এল দুর্বিষহ যন্ত্রণা!
আমি বাড়িওয়ালার ছেলেকে প্রথম দেখাতেই চিনতে পারলাম । এই ছেলেটির সাথেই বিয়ের আগে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল । পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক হয় আমদের!
কিন্তু এখন তো আমি বিবাহিত! এসব কথা মনে করাও আমার জন্য পাপ । বাড়িওয়ালার ছেলে আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতে লাগল । আমি চেষ্টা করলাম ছেলেটিকে এড়িয়ে যেতে । তারপর একদিন আমার স্বামী অফিসে গেলে ছেলেটি আমার সামনে এসে বলল……
ছেলেটি আমায় বলল,
সাদিয়া! কেমন আছ?
জি ভাল আছি!
আমাকে জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি?
কেমন আছেন?
এই তো আছি । ভেতরে আসতে বলবে না? নাকি ঘরের বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে?
আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বললাম,
আসুন! ভেতরে আসুন
ছেলেটা ভেতরে এসে বিছানায় পরিচিত ভঙ্গিতে বসল । বসে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
বিছানাটা অনেক নরম!
আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না । আমার কেন জানি খুব ভয় করতে লাগল । শরীর ঘামতে লাগল ভয়ে । ছেলেটি বলল,
দরজাটা লাগিয়ে আসো! সাদিয়া দুজনে অনেক দিন গল্প করি না । দুজনে আজ অনেক গল্প করব! প্লীজ দরজাটা লাগিয়ে আসো
আমি যন্ত্রের মত দরজা লাগিয়ে এসে বিছানায় বসলাম । ছেলেটা আমার হাত ধরে ফেলল । আমি হাত ছাড়ালাম না । কেন ছাড়ালাম না জানি না । ওকে এক সময় আমি খুব ভালবাসতাম । অনেক ভালবাসতাম । কিন্তু সে তো নিজেই আমার কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছিল!
ছেলেটা আমার হাত ছেড়ে দিল । আচ্ছা ছেলেটার একটা ছদ্ম নাম দেই । সেজান । সেজান আমার দিকে তাকাল না অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
সাদিয়া! আমার শরীরে ব্লাড ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে! আমার লাইফটা সিনেমার মত হয়ে গেছে । তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু ভাগ্য তোমাকে কেড়ে নিয়েছে! তুমি আজ অন্যের বউ সেটাই জানে এই সমাজ । কিন্তু পৃথিবী এটা কি জানে জে তুমি আমারই শুধু প্রেমিকা? জানি সাদিয়া তুমিও কিছু বলবে না । তুমি বলবে এটা বলাও এখন পাপ! কিন্তু আমি কি পাপ করেছিলাম সাদিয়া? আমি কি পারতাম না সিগেরেট মদ খেতে? বিদেশে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করতে । সেখানে কি পারতাম না নারী নিয়ে ফুর্তি করতে? তবে আমাকে কেন এভাবে মরতে হবে?
সেজান কাঁদতে লাগল । আমি কিছু বলতে পারলাম না । ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম । পাপ হলে হোক । একজন মানুষ মারা যাচ্ছে! তার হাত ধরে যদি পাপ হয় হবে ।
সেজান সেদিন চলে গেল । আর আমার কাছে আসল না । মাঝে মাঝে আমিই যেতাম ওকে দেখতে । ওর অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে লাগল । ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল । আমার স্বামী অফিসে গেলে আমি একদিন সুযোগ করে ওকে দেখতে গেলাম । ও কেমন যেন হয়ে গেছে । চেহারাটা নষ্ট হয়ে গেছে ।
আমাকে দেখে কেমন উল্টা পাল্টা কথা বলল । বলল,
সাদিয়া তোমার স্বামী তোমাকে খুব আদর করে তাই না? কাল রাতেও কি আদর করেছে? হা হা হা । তোমার স্বামীর যায়গায় নিজেকে এনে এসব কথা ভাবতে ভাল লাগে সাদিয়া!
এসব কি বলছ!
আচ্ছা তুমি কি একটু মদের ব্যাবস্থা করতে পারবে?
মদ!
হ্যা জীবনে জেনে শুনে পাপ করি নি । তারপরেও আমার ভাগ্য টা এমন । তাই এখন খুব পাপ করতে ইচ্ছে করে । সাদিয়া তুমি আজ রাতে থেকে যাও আমার কাছে । একটু আদর দিবে আমাকে!
ছিঃ
সেজান অসুস্থ মানুষের মত হাসল তারপর বলল,
না সাদিয়া খারাপ আমি হতে পারব না । এসব কাজ ও করা হবে না আমার । আযান দিচ্ছে নামাজ পড়তে হবে । নামাজে দাঁড়ালে শরীরে শক্তি পাই না । আল্লাহ্’র কাছে সব সময় মাফ চাই । জানি না জীবনে কি অপরাধ করেছিলাম আজ এমন অসুস্থ হয়েছি আমি । আমি জানি আমি মারা যাব । আমরা সবাই মারা যাব । কিন্তু তবু কেন এত বাঁচতে ইচ্ছে করে সাদিয়া?
সেজান এর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল । আযান হচ্ছে । সেজান নামাজ পড়বে । ওর মত ভাল মানুষ সত্যিই হয় না । কেন যে পৃথিবীতে ভাল মানুষ গুলো এত কষ্ট!
আমি সেজান কে হাসপাতালে রেখে বাসায় ফিরে দেখলাম আমার স্বামী চলে এসেছে । স্বামীর চোখে সন্দেহের চাহনি । আমার স্বামী আমাকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিল পরদিন সকালে । এক সপ্তাহ পর ঢাকা ফিরে এসে শোনলাম সেজান মারা গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫