somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশলীনা-০৯ [ভিন্ন আয়োজনে অন্য সাময়িকী]

২১ শে মার্চ, ২০১১ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশলীনা
চৈত্র ১৪১৭] মার্চ ২০১১] সংখ্যা ০৯] বর্ষ ০১]
--------------------------------------------------------------------------
পাঠ-পূর্বক বিজ্ঞপ্তি]

আকাশলীনা- মূলত এটি একটি ছোট পত্রিকা; প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রণ কাগজে প্রকাশিত হয়।
বলা যেতে পারে, সাদা-কালোয় প্রকাশিত এটি আমাদের রঙিন এক স্বপ্নের গল্প!
এখানে মূল পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি অনলাইন পাঠকদের জন্য সরবারাহ করা হয়েছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা বিষয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারেন...
পত্রিকাটির মুদ্রিত কপি নিয়মিত পেতে চাইলে; ফোন নম্বরসহ আপনিও ঠিকানা লিখে জানান।
আমাদের সম্পাদনা পরিচিতি এবং সরাসরি যোগাযোগ করার ঠিকানা এই লেখার নিচে উল্লেখ আছে।

সকলকে ধন্যবাদ।
- সম্পাদক, আকাশলীনা
--------------------------------------------------------------------------
মূল পত্রিকা এখান থেকে শুরু-
--------------------------------------------------------------------------
সম্পাদকীয়]

পূর্ণ হলো স্বাধীনতার ৪০ বছর।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব নিয়ে পিছু ফিরে তাকালে, ব্যর্থতার লম্বা এক ইতিহাস উপহাস করবে আমাদের।
জাতি হিসেবে বাঙালির এ ব্যর্থতা জানা ছিলো না। জানলে, আজ আমরা স্বাধীন হতে পারতাম না। নিশ্চয়, এ জাতির জয়ী হবার গৌরব ও দুর্নীবার সাহস আছে- নয়তো ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেও, কী করে আমরা ছিলাম হার না মানা?
সেই বীর বাংলাদেশিদের স্বাধীনতার ৪০ বছরে এসেও আফসোস করতে হয়- এ ব্যর্থতা কি রাষ্ট্রের?
না। এটি এ জাতির কুলষিত নোংরা রাজনীতির অভিশাপ। সুশিক্ষার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি সত্যি; কিন্তু কিছু হলেও কি এগোচ্ছি না? সে তুলনায় এখনো রাষ্ট্রীয় রাজনীতির চর্চা হয় ব্যক্তি ও দলগত। দেশকে নিয়ে ভাবনা হলে, একটা দেশের অন্তত কোমর সোজা করে দাঁড়াতে ৪০ বছর লেগেছে- এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
তবু, সুদিন একদিন আসবে- স্বপ্নভুকরা এই স্বপ্ন দেখতে কখনো কার্পন্য করেনি।

স্বাধীনতার পাশাপাশি, বসন্তের এ সীমিত আয়োজন- আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে বারবার।

সবার ভালো হোক- এ শুভ কামনা...
--------------------------------------------------------------------------
স্বাধীনতা]
মার্চ ২৫, ১৯৭১; এবং...
নোমান ভূঁইয়া

“দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুনবাজার।/ পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ,/ লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।/ দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুনবাজার।”

ভয়াল কালোরাত্রির পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সেদিন মানুষ দেখলো পোড়া লাশ, ঘর পুড়ছে, বাজার পুড়ছে; লাশ পিষে চলছে ভারি ট্যাংক; জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক; চোখে জল, বুকে আগুন- এ নিয়েই পথে নামলো মুক্তিকামী মানুষ। গড়লো ব্যারিকেড। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ট্যাংকের সামনে এগিয়ে দিলো সাহসী বুক।
দিন-মাস-বছর ঘুরে আবার এসছে ২৬ মার্চ। “পরাধীন” বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবের দিন- মহান স্বাধীনতা দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনেই বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো স্বাধীনতার লড়াইয়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেছিলো স্বাধীনতার যুদ্ধ। তারপর টানা ৯ মাস। রক্তে ভাসে সবুজ মাটি। লাশের স্তূপ জমে পথে-ঘাটে, ডোবায়, বন-বাদাড়ে। বাঙালির সেই প্রাণপণ লড়াইয়ের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের এ দেশিয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী। এদের মৃত্যুকূপ ও ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মাথা তুলে দাঁড়ায় একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ- বাংলাদেশ।
২৫ মার্চের কালোরাতে পরিকল্পিত হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি হায়েনারা। সে রাতে শুধু কি হয়েনার দলই ছিলো? কুকুরেরও কেউ ছিলো না? ছিলো। মাত্র একরাতেই কেবল ঢাকা শহরের ঘুমন্ত ও ঘুমভাঙা প্রায় সাত হাজার নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২৭ মার্চ দুপুর পর্যন্ত আড়াই দিনে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজারে। এরপর টানা ৯ মাসে এক কোটিরও বেশি বাঙালিকে ঘরছাড়া করে তারা।
যুদ্ধ শুরুর মাত্র ছয় মাসেই হত্যা ও ধর্ষণের পর ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে প্রায় পৌনে এক কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় তিন হাজার সদস্যকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়। নৃশংস সে হত্যাযজ্ঞের নির্দশন হিসেবে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে ৯২০টি বধ্যভূমি। ৮৮টি নদী ও ৬৫টি ব্রিজের ওপর হত্যা-নির্যাতনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।
সেই মধ্যরাত পার না হতেই ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। ট্যাংক, কামান, মেশিনগান ও সাজোয়া যান থেকে অবিরাম গুলি চালানো হয়। ঢাকা শহর জ্বলতে থাকে। দখল হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংলগ্ন এলাকা। হলে-হলে, বাড়িতে-বাড়িতে হানা দিয়ে আত্মগোপনকারি ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করে হানাদার বাহিনীরা। বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ওড়ায় পাকিস্তানের পতাকা।
পূর্বাকাশে লাল আভা উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় গুলিবর্ষণ। শহরজুড়ে নেমে আসে ভৌতিক নীরবতা। জনমানবহীন শহরে তখন কেবল সেনা ক্যনভয়ের আওয়াজ আর কাকপক্ষীর কিচিরমিচির।
কিন্তু থেমে থাকে না পাকিস্তানি হায়েনারা। মাত্র দু-তিন ঘণ্টা কিছুটা নীরব থাকার পর আবারো শুরু করে তাণ্ডব। মধ্য দুপুরে ঢুকে পড়ে পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায়। টানা এগারো ঘণ্টা চলে তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ। ক্যান ভর্তি পেট্রল ঢেলে ভস্মীভূত করে বাড়িঘর-দোকানপাট। পলায়নরত মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। ঘরের ভেতরের বাসিন্দাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। হত্যা করা হয় প্রায় ৭০০ নর-নারী-শিশুকে।
এদিন বিকেল ৪টায় তৎকালীন ইত্তেফাক অফিসের সামনের রাস্তায় চারটি ট্যাংক নিয়ে অবস্থান নেয় পাকিস্তানি সেনারা। তখন সেখানে চার শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলো। সাড়ে চারটার মধ্যে ভবনটি অগ্নিকুণ্ডে রূপ নেয়। পরদিন সকালে সেখানে ছাইভস্ম ও লাশ ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।
>
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------
স্বাধীনতা : অভিজ্ঞতা]
মুক্তিযুদ্ধের এক নৌ কমান্ডোর গল্প
ফারুক ই আজম, বীরপ্রতীক

আগুনঝরা মার্চ, ১৯৭১। একুশ বছরের তরুণ আমি। খুলনায় চাকরির পাশাপাশি স্নাতক পড়ছি স্থানীয় বিএল কলেজে। রাজনীতি করতাম না। উত্তাল মার্চের মাঝামাঝি কোনো একদিন সকালে যাচ্ছিলাম অফিসে। যাওয়ার পথে এখানকার সবচেয়ে জনসমাগম এলাকা পিকচার প্যালেসে চোখে পড়ে মানুষের বড় জটলা। লোকজন বলাবলি করছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গতরাতে এ এলাকায় হামলা করেছে, গুলি চালিয়েছে, নির্যাতনের পর একটি পরিবারের মা-মেয়েকে হত্যা করেছে। বর্ণনা শুনেই গা শিউরে উঠলো। দৌড়ে গেলাম সম্মুখের ঘটনাস্থলে। পরিবারটি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের। ঘরজুড়ে শুধুই নির্যাতনের চিহ্ন। মা-মেয়ের লাশ পড়ে আছে। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে মাটি আর মেঝেতে ছোপ ছোপ রক্ত ছড়িয়ে গেছে। ঘরের দোতলায় গৃহশিক্ষকের লাশ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আসবাবপত্র, বাসনকোসন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও দেব-দেবীর ছবিগুলোও রেহাই পায়নি, গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে সবই। ঘরের দেয়ালের ক্ষতচিহ্ন জানান দিচ্ছে বর্বরতার মাত্রা। এ দৃশ্য দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গেছে। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- পাকিস্তানি এই নরপশুদের তাড়াতে হবে, দেশ স্বাধীন করতে হবে।
ফিরে এলাম বাসায়। ওই দিন বিকেলে খুলনা শহরে এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের করলো বিক্ষোভ মিছিল। যোগ দিলাম সেখানে। জীবনে এই প্রথম মিছিলে যোগ দিয়েছি। মিছিল থেকেই জনতার সঙ্গে শহরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খান এ সবুরের বাসায় হামলায় অংশ নিলাম। একপর্যায়ে পুলিস মিছিলে গুলি চালালো, নিহত হলেন প্রায় বারোজন। আর অন্য অনেকের মতো বেঁচে গেলাম আমিও।
এভাবেই মহান মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম।
একাত্তরের উত্তাল মার্চে পুরো দেশের মতো উত্তাল খুলনাও। ২৫ মার্চ রাতে খুলনা পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি সেনারা হামলা চালায়। কয়েকটি স্থানে বোমা মারলো। রাস্তার পাশের অনেক দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শহরে জারি করা হয়েছে কারফিউ। ২৭ মার্চ কারফিউর ফাঁকে বাইরে বেরুলাম। বাসায় ফিরতেই বুয়া বলে, ‘মামা, চট্টগ্রাম স্বাধীন হয়ে গেছে!’
পার্শ্ববর্তী মৌলভীপাড়ার মানুষের কাছ থেকে সে এ কথা শুনেছে। ছুটে গেলাম ওই বাড়িতে। দেখি, অনেক মানুষ জড়ো হয়ে রেডিও শুনছে। হঠাৎ কানে এলো বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমানের সেই স্বাধীনতার ঘোষণা। মনের সাহস দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমি চট্টগ্রামের ছেলে, তাই উপস্থিত সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, বাহবা দিলেন। আমিও আনন্দ-উৎফুল্লে, আত্মহারা। নিজেকে কেনো জানি বীর বীর মনে হতে লাগে। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিই- চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার। বাসায় ফিরে মামাকে বললাম, ‘চট্টগ্রাম স্বাধীন হয়ে গেছে, আমি আর এখানে থাকবো না।’
মামা-মামি হাসলেন। প্রথমে না করলেও একপর্যায়ে রাজি হলেন। চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা আবু তাহের নামে এক ব্যবসায়ী, তাঁর লঞ্চ নিয়ে খুলনা থেকে ফিরছিলেন। এ লঞ্চেই উঠে গেলাম। সঙ্গে আছে মামার দেওয়া মাত্র ২০০ টাকা।
এদিকে হানাদারদের দখলে চাঁদপুর শহর- এ খবরে শহরের প্রধান ঘাটে না নেমে, অল্প আগের লঞ্চঘাটে আমাদের নেমে যেতে হলো। লঞ্চের অন্য বাঙালি যাত্রীদের সঙ্গে আমিও কিছু পথ হেঁটে, কিছু পথ রিকশায় ছিলাম। বিকাল চারটা নাগাদ পৌঁছলাম ফেনীর ফাজিলপুর ব্রিজের কাছে। সেখানে এলাকাবাসী পাহারা দিচ্ছিলেন। আমাদের আটকালেন তাঁরা। সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আমাকে আটকে রাখা হয়। কারণ, আমি নাকি বিহারি! নাদুস-নুদুস শরীর দেখে তাঁরা ভেবেছিলেন, আমি বিহারির সন্তান না হয়েই পারি না! পাহারাদারদের একজন, ব্রিজের নিচে মেরে ফেলে রাখা একটা লাশ দেখিয়ে বললেন, ‘তোরও এই একই অবস্থা হবে।’
আমি তো প্রাণভয়ে নিস্তেজ, কোনো প্রশ্নের জবাবও দিতে পারছি না; বোবা হয়ে গেছি। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি প্রাণ গেলো...
হঠাৎ দেখলাম একজন বৃদ্ধ লোক এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, হাত রাখলেন কাঁধে। তাঁর হাতের স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেলাম। তিনিই আমাকে বুদ্ধি দিলেন- আমি যে বাঙালি, তা প্রমাণের জন্য চাটগাঁর ভাষায় কথা বলতে। ব্ব্যস! মুখ খুলে যায় আমার। এরপর বৃদ্ধ লোকটা তাঁদের নিশ্চিত করলেন, আমি বিহারি নই। এবার উল্টো তাঁরা মাফ চেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন।
নতুন জীবন পেয়ে মন আরো বেশি আনচান করছে প্রিয় চাটগাঁর জন্য। হেঁটে হেঁটে মিরসরাই-ফটিকছড়ি পাড়ি দিয়ে রাত ৯টায় পৌঁছলাম বাড়িতে। পুরো এপ্রিল মাস বাড়িতে ছিলাম। সুযোগ খুঁজছিলাম মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার; মন ছটফট করছিলো প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যাবার। ৬ মে সেই সুযোগও এসে গেলো। আমার গ্রামেরই ২৮ জনের এক তরুণ দল ভারত যাওয়ার জন্য জড়ো হয়। রামগড় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সবাই ঢুকে পড়লাম ভারতে। সীমান্তবর্তী হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে গেলাম। রাত কাটালাম বাঁশের বিছানায়। সকালে ডাক পড়লো। নৌ কমান্ডো রিক্রুট করা হচ্ছে, তদারক করছেন সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম। প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছি। মনোনীত দলটিকে প্রথমে আগরতলা নেওয়া হয়। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে দমদম বিমানবন্দরে, এরপর ট্রেনে নদিয়ার পলাশীর ব্যাটল ফিল্ডে। যেখানে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা যুদ্ধ করেছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। ক্যাম্পে রাখা হলো আমাদের। শুরু হলো নিবিড় প্রশিক্ষণ। রাত-দিন মিলে প্রায় ১৮ ঘণ্টা করে জুন ও জুলাই, এ দুমাস কঠিন প্রশিক্ষণ চলে। ভারতের নৌবাহিনীর অফিসাররা প্রশিক্ষণ দেন।
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ওখানকার ভাগীরথী নদীতে নিয়মিত সাঁতার কাটতে হতো। সে এক কঠিন কষ্টময় প্রশিক্ষণ। দুমাস ধরে নৌ অভিযানের নানা কৌশল আয়ত্তে নিলাম। আগস্টের ১ তারিখ আমাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিনই সবাইকে মাঠে সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে বাছাই চললো। আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশন চালাতে ৬০ জনকে নির্বাচন করা হয়। তিনি পাকিস্তানি মেরিন-এ কর্মরত অবস্থায় ফ্রান্সের তুলন থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
দেশে ঢুকতে প্রতি গ্রুপে ২০ জন করে মোট তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এক গ্রুপে কমান্ডার ছিলেন ডা. শাহ আলম বীরোত্তম, ডেপুটি ছিলাম আমি। কমান্ডার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী ও ডেপুটি কমান্ডার শহীদ মাজহারুল বীরোত্তমের নেতৃত্বে ছিলো দ্বিতীয় গ্রুপ। বিধানকৃষ্ণ সেনের নেতৃত্বে অপর গ্রুপটি অবশ্য যথাসময়ে টার্গেট এরিয়া পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারেনি।
অতঃপর দুই গ্রুপের ৪০ জন নৌ কমান্ডো দেশজুড়ে সাড়া জাগানো চট্টগ্রামের সেই অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নিতে দেশে ঢুকে পড়ি। চট্টগ্রাম শহরে আসতে আসতে, ভয়ে পথিমধ্যেই তিনজন পালিয়ে যায়। ১৫ আগস্ট রাতে নৌ যুদ্ধের প্রথম আক্রমণ অপারেশন জ্যাকপট শুরু হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরসহ দেশের সব নদীবন্দরে অভিযান চালান নৌ কমান্ডোরা। এ অভিযানে নৌ কমান্ডোদেও কোনো ক্ষতিই হয়নি। সবকটি বন্দরে শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে তিনটি সমুদ্রগামী জাহাজ ডুবিয়ে দিই আমরা। জেটি পন্টুন, কোস্টার শিপসহ প্রায় ১২টি স্থাপনা ধ্বংস হয়। অভিযান শেষে আবার ভারতের ক্যাম্পে ফিরে যাই।
আমি মনে করি, নৌ কমান্ডোদের কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই, অপারেশন জ্যাকপটের সফলতা মুক্তিযুদ্ধের জন্য টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। এতে শত্রুপক্ষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, ভড়কে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে উজ্জীবিত হয়।
১৩ সেপ্টেম্বর আমার নেতৃত্বে ২১ জনের একটি দল আবার চট্টগ্রাম বন্দরে অভিযান চালাতে দেশে ঢোকে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় দুমাস শহরে অবস্থান করে তিনটি অভিযান চালাই আমরা। বন্দরের বহির্নোঙর, গুপ্তখাল ও সল্টগোলা খালে পরিচালিত পৃথক অভিযানে কয়েকটি জাহাজ ডুবে যাওয়াসহ, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহির্নোঙরের অপারেশনে একজন কমান্ডোকে হারাই আমরা। তিনি শহীদ মোহাম্মদ হোসেন ফরিদ। এ ছাড়া ধরা পড়েন তিনজন। নুরুল হক, আমির হোসেন ও এস এম মাওলা নামে এই তিন নৌ কমান্ডোকে পরে দেশ স্বাধীন হলে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়। তাঁরা শত্রুদের নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন।
চট্টগ্রাম শহরে নৌ কমান্ডোদের আশ্রয়স্থল ছিলো তিনটি- জিইসি মোড়ের বর্তমান ওয়াইএমসিএ ভবন, ওই সময়ের কাকলী বিল্ডি; দ্বিতীয়টি, কাজির দেউড়ি বিমান অফিসের পেছনে সালেহ জহুরের বিল্ডিং। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী এটি বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়। বর্তমানে এখানে বহুতল ভবন হয়েছে। তৃতীয় আশ্রয়কেন্দ্রটি ছিলো আগ্রাবাদ হাজীপাড়ার পান্নাপাড়া।
দুঃখের বিষয়, যুদ্ধের সময়ের এসব বীর নৌ কমান্ডোর প্রায় সবাই এখন নীরবে-নিভৃতে সময় কাটাচ্ছেন। কয়েকজন চলে গেছেন অন্যদেশে। হাজারো ক্ষোভ তাঁদের মনে। পরিচয়ও দিতে চান না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে তাঁরা খুশি নন।
স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পরও, দেশের করুণ পরিস্থিতিতে মনে কষ্ট পেলেও, আমি কিন্তু হাল ছাড়ছি না। আমি আশাবাদী; একদিন না একদিন এ দেশের তরুণ ও যুবসমাজ জেগে উঠবে। দেশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে। এরাই মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সুন্দর, সুস্থ ও শান্তির বাংলাদেশ বানাবে।
>
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম। শ্রুতিলিখন : রশীদ মামুন
---------------------------------------------------------------------------
বসন্ত বিশেষ]
বনে বসন্ত, মন অশান্ত
সাইফুল আমিন

আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,/ আজি ভুলিয়ো আপন-পর ভুলিয়ো-
এখন বসন্ত।
আর তাই বসন্ত বাতাসে মন যদি হারিয়ে যেতে চায়ই; এমন কোনো গান গাইবেন নাইবা কেনো? অবশ্য, গাইবেন কী করে- প্রকৃতিতে যে সে রকম কোনো উপকরণ নেই!
সত্যি, আমাদের এ যান্ত্রিক নগরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গাছগুলোর ধুলোয় ধূসর পাতারা এখনো যে সে কথা বলছে না।
আসলেই, আক্ষেপ করার মতোনই বিষয়- নগরজীবন থেকে আর সব ঋতুর মতোন বসন্তও হারিয়ে যাচ্ছে। নাকি গেছেই?
দিনপঞ্জিকায় চোখ রেখে বুঝলাম, বসন্তের মধ্যসময়ে দাঁড়িয়ে। ঠিক যতোগুলো দিন গেছে এ ঋতুর; আর ততোগুলো দিনই সামনে বাকি।
অথচ তবুও, নগরের আকাশে বসন্তের পাখিরা গাইছে না; ফুলগুলো সব গেলো কোথায়?
অথচ বিশাল এ বাংলার গ্রাম থেকে ভেতরে ছুটে যান- সেখানে বসন্ত মানেই ডাহুক ডাকে। কোকিলের কুহুতান। পলাশ-শিমুলে রাঙা চারিধার। আর পাতাশূন্য গাছগুলো ফাগুন-চৈত্রের আগুন মাথায় নিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে... উদাসী উন্মাদনায় মনজুড়ে হাহাকারের বৈঠা বাইতে ইচ্ছে করবে। দূরের কোণে চোখে লেগে যাবে কলসি কাঁকে যাওয়া কন্যার আবছায়া... কে থামাবে তখন মনের আকুলতা?
হেঁড়ে গলা হোক আর যাই হোক; রাখালের বাঁশির সুরে গাইতে হবেই-
কী করি/ আমি কী করি? বনে ফাগুন, মনে আগুন...
যে শহুরে জীবন নিয়ে বড়াই আমাদের- ওমন নয়নাভিরাম তার কোথায় আছে? এক নিমেষে যা মন ভালো করে দেয়?
এ শহরে উদাসী বানিয়ে দেওয়ার মতোন কোনো মড়ার কোকিল নেই। এখানের বসন্ত কখনো অশান্ত হয়ে উঠতে পারেনি। এখানে বসন্তের কোনো আঁধার নেই; তাই এ শহরের মানুষগুলো পূর্ণিমা বোঝে না। হ্যাঁ, তবু এ নগর-বন্দর নিয়ে গ্রাম থেকে মাঠে-ঘাটে সর্বত্র আজ বসন্ত। মনে আল্পনা, চোখে কল্পনা।

০২.
বসন্তকে রবীন্দ্রনাথ যতার্থই উপস্থাপন করে গেছেন তাঁর গান-গল্প-কবিতায়। ফলে, প্রকৃতি ধংস করা নাগরিকরা বসন্তের বনকে উচ্ছন্নে পাঠিয়ে, আজ রঙিন পোশাকে বসন্তের উৎসব করে! সত্যিকারের কোনো বাসন্তী ফুল নয়, আমরা এখন প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাই মুঠোফোন আর ফেসবুক-এ!
পরবর্তী প্রজন্মের কাউকে দেখিয়ে বলতে পারি না- এই হলো পলাশ-শিমুল, রাঁধাচূড়া। এই হলো ডাহুকের ডাকাডাকি, কোকিলের কুহুতান। ...এ অনুভূতি কেবল হতাশার নয়, আক্ষেপের। এবং পরিবর্তী বিপর্যয়েরও।

০৩.
বসন্ত চলছে। এ শহরে না হোক; অন্য কোনোখানে হলেও নিশ্চয় বসন্তদিনের হাওয়া বইছে।
হ্যাঁ, আর সেখানে যখন বসন্ত রাতের পূর্ণিমায় পুরো চরাচর থইথই করবে; আমাদের হয়তো নাগরিক জীবন ছেড়ে সে বনে যাওয়া হবে না, মাতাল সমীরণে গা-ভাসানো হবে না- আমরা হয়তো ঘরের কোণেই পড়ে রইবো। ফেসবুক-টুইটার-মুঠোফোনে জোছনার কল্পনায় প্রিয়জনের সঙ্গে বসন্তের আল্পনা বুঁনবো...
>
কৃতজ্ঞতা : আশরাফুল হক
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------
বসন্তের কবিতা]
ফুল ফোটার দিনে
জয়নুল আবেদীন স্বপন

ফুল ফোটার দিনে দূরেত্বে নিরুদ্দেশে
বসন্তের জোয়ারে অজান্তে ডানা মেলবো।
দুরন্ত বসন্তের দিগন্তে তাকিয়ে
ভোরের জ্বলজ্বল রোদের অপেক্ষায়
উদগ্রীব আমি বসে আছি সব ভুলে।

নির্মুক্ত উড়ন্ত মন অন্তহীন তেজে
উঠানে নেচে ওঠে নিরন্তর উৎসবে,
ক্লান্ত নিরস বুক ওখানে সিক্ত হয়,
প্রকৃতির সাড়ম্বর দীপ্তিমান ডাকে
প্রতিদিন ঘ্রাণ খুঁজি দৃঢ় প্রত্যয়ে।

চোখের ক্ষুধা মেটাতে স্বপ্ন জাগে,
সবুজ ঘাসের ডগায় ঘুমাতে যেয়ে
মনের আয়নায় চেনামুখ ভাসে।
উদাসীন ভাবনাগুলো বিভোর হয়ে
বসন্তদিনে দিবাস্বপ্নে ফাঁপর কাটে।
----------------------------------------------------------------------------
খেলা ও ধুলা]
শচীন টেন্ডুলকার : মহানায়কের অপূর্ণতা ঘুচবে?
সৈয়দা সুধন্যা

২৮ বছর কাপের অপেক্ষায় ছিলাম; আর না- কথাটা যদিও আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১১-এর বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছে। তবুও, এ কথাটি বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের অব্যক্ত আর্তিটাও বুঝিয়ে দেয়। শুধু শচীনের কেনো, পুরো ইন্ডিয়াও নিশ্চয় চায় এ জীবন্ত কিংবদন্তির হাতে বিশ্বকাপের সোনালি শিরোপাটা তুলে দিতে।
কপিল দেব যখন বিশ্বকাপ হাতে লর্ডসের বারান্দয় উল্লাস করছিলেন, শচীনের বয়স তখন ১০; এরপর ১৯৮৩-এর সেই বিশ্বকাপের পর কেটে গেছে আরো ২৮ বছর। কিন্তু সেই স্মৃতি খুব ভালোভাবেই মনে রেখেছিলেন শচীন। বলেছিলেন, ‘কোনো ইন্ডিয়ানই তা ভুলতে পারবে না। যে কোনো খেলোয়াড়ের মতো আমার চোখেও আছে দেশের জন্য বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন।’ সেই স্বপ্ন কী পূরণ হবে? শচীন ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন না, তবে ইঙ্গিতপূর্ণ কথায় বলেছেন এবার তাঁর স্বপ্নপূরণ হতেই পারে, ‘ঈশ্বরের কৃপায় আমরা যা পেতে চাই, সেটি পাবো।’ ডন ব্র্যাডম্যানের অত্যাশ্চর্য ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় ছাড়া ক্রিকেটের আর সব পাওয়া হয়ে গেছে এই লিটল মাস্টারের; টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৯৭টি সেঞ্চুরি, ৩২৩২১ রান। খেলেছেন পাঁচ-পাঁচটি বিশ্বকাপ। কিন্তু যে অপ্রাপ্তির বেদনাটি উঠে আসে তাঁর বুকের গভীর থেকে, সেটি বিশ্বকাপ জিততে না পারার হাহাকার।
বিশ্বকাপে সবসময়ই উজ্জ্বল শচীন। পাঁচ বিশ্বকাপের দুটিতেই ছিলেন টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৯৬-এর বিশ্বকাপে ৮৭.১৬ গড়ে ৫২৩ রান এবং ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬১.১৮ গড়ে ৬৭৩ রান করেছেন। তবে গত বিশ্বকাপটা তাঁর কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো। তবে এই বিশ্বকাপে অন্যতম ফেবারিট তারা। র‌্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে থাকলেও নিজেদের ফর্ম নিয়ে দারুণ উত্তেজিত। নিজেদের দেশে খেলা, তার ওপর শচীনের শেষ বিশ্বকাপ- সব মিলিয়ে দারুণ উজ্জীবিত এই গ্যারি কারস্টেন-এর দলটি। দলের সব সদস্যরাও শচীনের জন্য বিশ্বকাপ জিততে চাইছেন। আর এখানেই আপত্তি অস্ট্রেলিয়ান স্টিভ ওয়াহ-র! ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মনে করেন, একজন ব্যক্তি কখনো দেশের ওপরে যেতে পারেন না। তাঁর মতে, ‘দৃষ্টিভঙ্গিটা সঠিক নয়। আপনি একজন ব্যাক্তির জন্য খেলে বিশ্বকাপ জিততে পারবেন না। আপনি খেলবেন দলের জন্য, দেশের জন্য।’ তবে শচীনকে ঘিরে ইন্ডিয়ানদের এই আশায়, স্টিভ ওয়াহ বলেন, ‘টুর্নামেন্ট তাঁর আলোয় আলোকিত নাও হতে পারে। কিন্ত যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে।’
----------------------------------------------------------------------------
বন্ধুর কাছে মনের কথা]
বহুদিন ভালোবাসাহীন
মাসউদ আহমাদ

মাঝে মাঝে নিজেকে বড় একা লাগে। মনে হয়, সবই আছে তবু যেনো কী নেই। তখন বুকের গহীনে শূন্যতার ঢেউ ছুঁয়ে ছূঁয়ে যায়। নির্জন দুপুরে, ক্লান্ত সন্ধ্যায় একা একা পথ হাঁটি। কতো যে এলোমেলো কথা মস্তিষ্কের কার্নিশে ভিড় করে... পুরনো দিনের স্মৃতি মনে পড়ে... সেই সময় মনের সবটুকুজুড়ে নিঃসঙ্গতা নীরবে বিষণ্নতার জন্ম দেয়। জীবনে যদি বসন্তই না আসে, তাহলে প্রেমের কবিতা লিখে কী হবে? তবু ভাবনারা ধূসর বসন্তকুঞ্জে মুগ্ধতা খোঁজে।
ঢাকা শহরে কেউ হয়তো একা থাকে না। কারণ আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে এতো যে ব্যস্ততা, চাপ, তাপ, প্রতি মুহূর্তের এতো আবেগ, লাঞ্ছনা, ক্লান্তি, হতাশা, ভালোবাসা, স্বপ্ন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কাজেই একা থাকা আর হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই শহরে কেউ খোঁজও রাখে না- না সুখে না দুঃখে। দূরের মানুষ তো বটেই, একই ছাদের ওপরতলা-নিচতলা খোঁজ-খবরহীন কেটে যায় মাস-বছর... জীবন তবু বয়ে চলে আপন খেয়ালে। কিন্তু একাকীত্ব তবু কাটে না, গতকাল-আজ; এভাবে দিনের পর দিন...
প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করা মানে জীবনকে স্থবির করে তোলা। এমন অফিসে সূর্যের আলো পড়ে না, কোনোদিনই। হৃদয়জমিন তবু প্রতীক্ষায় থাকে কোনো এক শুভদিনের। কিন্তু বসন্তও আসে না, কোকিলও ডাকে না- কুহু! কেবলই শহরজুড়ে কাকের কর্কশ কা-কা। হৃদয়মন্দিরেও একই শূন্যতা বা অনাকাক্সিক্ষত কোলাহল। তাতে কি আর মন ভেজে! নিঃসঙ্গতা তবু কাটে না। কতোদিন প্রতীক্ষায় থেকেছি, আমার যদি সুন্দর মনের একটা বন্ধু থাকতো! সে দেখতে শ্যামলা বা কালো হোক, কিন্তু স্নিগ্ধ ও আন্তরিক। তাহলে মনের সব সুপ্ত কথামালার অর্গল খুলে দিতাম তাকে। তেমন কারো দেখা মেলে না। তেমন কেউ কথাও দেয় না; কথা দিলেও কেউ তা রাখে না। এই কর্পোরেট যুগে কথা দেয়ই কজন? কেনো জানি, আজ কেবলই মনে হচ্ছে- বহুদিন ভালোবাসাহীন। বহুদিন উথাল-পাথাল মেঘহীন এ হৃদয়জমিন। বহুদিন পড়েনি কোনো হাত কপালে, ভালোবাসার স্বপ্ন দেখার। বহুদিন একা একা জীবনের দীর্ঘ পথে, ছন্দহীন। জীবনে বসন্ত আসে না, কোকিল ডাকে সরবে বা নীরবে। তবু দিন যায়। রাত যায়। স্বপ্ন ও সম্ভাবনা পাশাপাশি চলে, নিশিদিন। বহুদিন ভালোবাসাহীন...
>
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------

আকাশলীনা
চৈত্র ১৪১৭] মার্চ ২০১১]
সংখ্যা ০৯] বর্ষ ০১]

কৃতজ্ঞতা] হিমেল অনার্য
সম্পাদক] নোমান ভূঁইয়া

শব্দ বিন্যাস ও সমন্বয়] সৈয়দা সুধন্যা
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠাসজ্জা] রঙছুট
বিশেষ সহযোগিতায়]
শফিক হাসান, মহিবুল হাসান কাউসার
সাবরিনা আহমেদ
সার্বিক ব্যবস্থাপক] সাইফুল আমিন

যোগাযোগ]
+88 018 18 731377 [সাইফুল আমিন]
[email protected]

মূল্য] ১০ টাকা
[স্বপ্নের কোনো মূল্য হয় না।
তবু যাঁরা এই স্বপ্ন কিনতে চান,
তাঁদের জন্য এই নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ]

সম্পাদক ও প্রকাশক
নোমান ভূঁইয়া কর্তৃক সার্কুলার রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত;
এবং হাতিরপুল, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৫
থেকে মুদ্রিত

একটি জয়ী প্রকাশনা
=============================================
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×