মাঘ ১৪১৮ :: জানুয়ারি ২০১১ :: বর্ষ ০২ :: সংখ্যা ০৭
----------------------------------------------------------------------------------
:: পাঠ-পূর্বক বিজ্ঞপ্তি ::
আকাশলীনা- এটি একটি ছোট পত্রিকা।
তবে, বন্ধুকে কাছে পাওয়া, বন্ধুর সঙ্গে থাকা; গান-সিনেমা-বই; আড্ডা আর গল্পে মজতেই আকাশলীনা-র জন্ম। বন্ধুর কাছে মনের কথা বলার মূলমন্ত্র নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও, এখন এটি মুক্ত প্রাণ আর স্বপ্নের সোপানের প্রত্যাশী।
প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রণ কাগজে এটি প্রকাশিত হয়। বলা যেতে পারে, সাদাকালোয় প্রকাশিত ২৪ পৃষ্ঠার এটি এক রঙিন স্বপ্নের গল্প!
যে কোনো বিষয়ে, যে কেউই লিখতে পারেন এখানে। লেখক-পাঠক আর বন্ধুতার মেলবন্ধন সৃষ্টি করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
০২.
এখানে মূল পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি অনলাইন পাঠকদের জন্য সরবারাহ করা হয়েছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা বিষয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারেন।
পত্রিকাটির মুদ্রিত কপি নিয়মিত পেতে চাইলে; ফোন নম্বরসহ ডাক-ঠিকানা লিখে জানাতে পারেন। নতুন সংখ্যা প্রকাশের পরপরই পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়...
আমাদের সম্পাদনা পরিচিতি এবং সরাসরি যোগাযোগ করার ঠিকানা এই লেখার নিচে উল্লেখ আছে।
ধন্যবাদ। -সম্পাদক। []
----------------------------------------------------------------------------------
মূল পত্রিকা এখান থেকে শুরু-
----------------------------------------------------------------------------------
:: শীতের গদ্য ::
আসুন, শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই
আলমগীর কবীর
একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। বাইরে প্রচণ্ড শীত। তারপরেও আমাকে আজ সন্ধ্যায় একটা জরুরি ইন্টারভিউ নিতে হবে। মন চাইছিলো না এই শীতে বের হই কোথাও। অন্য কোনো কাজ হলে হয়তো তারিখটা আমি জোর করে পরিবর্তন করে নিতে পারতাম। কিন্তু পারলাম কই?
বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা মন্ত্রীর সাথে মুখোমুখি বসার সৌভাগ্য হবে আমার। এই ভেবে ইন্টারভিউ নেয়ার তারিখটা পেছানো গেলো না। আমি কোনো রকম গরম একটা কাপড় গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম হোটেল সোনারগাঁও-এর উদ্দেশে, আমার সাথে আরো দুজন। একজন সহকর্মী আরেকজন আমার ফটোগ্রাফার। প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে এলাম হোটেল সোনারগাঁওয়ের লবিতে। মন্ত্রী মহোদয় আসলেন। ইন্টারভিউতে মুখোমুখি হলাম আমি। মন্ত্রী মহোদয় দিলেন দারিদ্র্য মোচনের নানা তকমা, বললেন আদর্শ-গণতন্ত্রের কথা, বললের শোষণহীন শাসনব্যবস্থার কথা।
ইন্টারভিউ শেষ করে মন্ত্রীমহোদয়ের সৌজন্যে আমরা খেলাম তিন কাপ কফি আর ছয়টা সমুচা। কফির গরমে যাতে শীতটাকে একটু হালকা করে নিতে পারি। খাওয়া শেষে ওয়েটার বিল লিখে আনলেন। বিল এলো প্রায় হাজার দুয়েক টাকা।
ইন্টারভিউ শেষ করে আমি রিকশা না পেয়ে হাঁটা শুরু করলাম গন্তব্যের দিকে। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। ইউনিভার্সিটিতে পা রাখতেই দেখলাম, ছোট্ট এক শিশু গাছের শুকনো পাতা দিয়ে আগুনের কুণ্ডলি বানিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এ সময়েই আমার মনে পড়লো, তিন কাপ কফি আর হোটেল সোনারগাঁওয়ের কথা। মনে পড়লো হাজার দুয়েক বিলের কথা। বড্ড বেশি পাপ করে ফেললাম নাকি? দুই হাজার টাকা সন্ধ্যাবেলায় শেষ না করে, ওই বাচ্চা ছেলেটার মতো অন্তত আরো চারটে শিশুকে শীতের কাপড় দেয়া যেতো।
আমি যখন এই লেখাটা লিখছি- আমার ভেতর তখনো এই পাপবোধ কাজ করছে।
এবার আসি শীতের কথায়। শীত মানে অনেকের মনে কাজ করে বিশেষ ফ্যাশন; শীত মানে কোথাও লম্বা একটা ট্যুর দেয়া। অনেকে শীতকে উপভোগ করতে আদাজল খেয়ে পথে নামছে। প্রথমে মাথায় আসে ফ্যাশনেবল কাপড়ের চিন্তা। কীভাবে এবারের শীতের নিউ স্টাইলটা আয়ত্বে আনা যায়! শীতে যা কিছু পরি না কেনো, ফ্যাশনটা একটু জোশ হওয়া চাই।
এ সময়ে টেলিভিশনে বাড়ে দেশের খ্যাতনামা রূপ বিশেজ্ঞদের কদর। পা ফাটা রোধ করতে, মুখ ফাটা, বুক ফাটা; এমনকি, শীতে হৃদয় ফাটা রোধ করতে কোন ধরণের ক্রিম, কোন ব্র্যান্ডের লোশন ব্যবহার করতে হবে- এসব নিয়ে ফ্যাশন শো, টক শো-র মাতম লাগে। শীত উপলক্ষে লম্বা একটা ট্যুরের কথা আগেই বলেছি।
সারা দেহে শীত যে একটা আবরণ রাখে, তাকে আমি কুয়াশা বলে ডাকি। কুয়াশার ভেতর হলুদ সর্ষে ফুলের মলিন চেহারা দেখতে ভ্রমণপিপাসুদের সাধ লাগে হয়তো। বাংলার আনাচে-কানাচে শীতের সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। সব সৌন্দর্যকে এবার গিলে ফেলা চাই! সাথে ক্যামেরা। সব লোকেশনের ছবি তুলে নিলে মন্দ হয় না। তারপর ছবি তুলে এনে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস- “এই সর্ষে ক্ষেতের মাঝে লম্বা একটা খেজুর গাছ কেমন দাঁড়িয়ে আছে, তাড়াতাড়ি কমেন্টস দে। অনেক টাকা খরচ করে বেড়াতে গিয়ে শীতের এই ছবিটা তুলে এনেছি!”
এবার বেড়ানোর কথা বাদ দিয়ে বলি ভোজনের কথা। পাটি সাপটা, ভাপা পিঠা, মুইঠা পিঠা, কলা পিঠা, তেলের পিঠা… এমন অনেক বাহারি নকশি পিঠার ভিড় দেখে, ভোজনরসিকের কাছে শীত একটা উৎসবে পরিণত হয়। শহরের রাস্তায় রাস্তায় মজাদার পিঠার দোকান বসে। প্রচণ্ড এই শীতে যে মানুষটা না খেয়ে দিন যাপন করছে, আমরা একবারও তার কথা ভাবি কি? খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার একটা স্টাটাস- “অমুক মামার দোকানের পাটি সাপ্টা পিঠা খেয়ে শীতের ঠাণ্ডাকে কমিয়ে দিলাম, মামু! এবার কম্বল মুড়ি দিয়া আরেকটা লম্বা ঘুম। আহ, কী শান্তি!”
এতোকিছুর পর একবার আপনার ঘরের বাইরে চোখ মেলে তাকাবেন কী! কী দেখবেন, দেখবেন হয়তো আপনার বাড়ির পাশের রাস্তায় কোনো এক শিশু বস্তা গায়ে ঘুমাচ্ছে। হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা, এয়ার কন্ডিশনার, রুম হিটার, আর মজাদার ভাপা পিঠা দূরের কথা- এখানে শিশুটির মাথায় ছাদও নেই। রাতের ভয়াবহ শীতের জ্বালার সাথে লড়াই করে সে ঘুমুচ্ছে। শীতের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সংগ্রাম তার। গরমের ছোঁয়া নিয়ে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যমামা কখন আসবে, জানা নেই তার। হাড়ে হাড়ে গিয়ে বিঁধেছে শীত রূপসীর কাঁটা। সারা শরীরে শীতের কাঁটা কী এক অসহ্য যন্ত্রণা! হাঁটুটা বুকের কাছে এসে জড়ো হয়েছে আগের চেয়ে। বোকা শিশুটি এভাবেই অ্যাডভেঞ্চার করছে শীতের সাথে লড়াই করে।
তাই আসুন না, প্রত্যেকে একজন শীতার্ত মানুষকে সাহায্য করি। আপনার আশেপাশে থেকেও শুরু করতে পারেন শীতার্তদের সাহায্য করার কাজ। একবার চোখ মেলেই দেখুন না, আপনার আশেপাশেই শীতার্ত হাজার হাজার মানুষ পেয়ে যাবেন। আপনার আত্মীয়-বন্ধুদের কাছে একবার শেয়ার করে দেখুন আপনার ভালো কাজের আইডিয়াটা। দেখবেন, আপনার ভালো কাজের সাথে লোকের অভাব নেই। শীত মানে অ্যাডভেঞ্চার যদি প্রমাণ করতে হয়, তবে আপনি একবার শীতের এই অ্যাডভেঞ্চারকে গ্রহণ করুন, সাহস নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসুন। দেখবেন সত্যিই প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাচ্ছেন। []
::
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------------
:: বিশেষ রচনা ::
মানুষ হিসেবে আমাদের দায়
মুহাম্মদ সাফায়েত হোসাইন
ঝগড়া, রাগ কিংবা অভিমানের আলোকছটায় ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকেও যখন মিলনের অভিপ্রায় একীভূত হয়, তখন প্রকৃতির অমোঘ ধ্বনির তালেও চারিদিকে নেমে আসে নীরবতা ও স্থবিরতা। মিলনের আকাক্সক্ষায়, প্রতীক্ষার প্রহরে, বর্ষা-শীত-বসন্ত এমনকি সব ঋতু প্রকৃতিই হয়ে পড়ে রুক্ষ্ম আর নির্জীব। যখন লেখাটি লিখছি তখন ঘরে আলো নেই, বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলো জানালার কাচ ও পর্দা ভেদ করে অবধারিত ধারায় প্রবেশ করছে। পূর্ণ অন্ধকারে লেখার বাসনা থাকলেও, এটুকুন আলো বন্ধ করার কোনো ইচ্ছে আমার ভেতর প্রবলতর হয়নি। কারণ, অন্ধকার জগতটা ভালোলাগে না আমার। চারিদিকে সুনশান নীরবতা থাক, তবে আলো চাই। এ আলো ল্যাম্পপোস্টের আলোর চেয়ে তীব্র, মনের কোণে বিকশিত আশার আলো, সামাজিক-নৈতিকতার আলো, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার আলো, ভদ্রতার আলো, সহানুভূতির আলো এবং অতি অবশ্যই শিক্ষার আলো।
মানুষও সচেতনতার সহবাসে, প্রভাবিত জগতে, অবচেতন মন যখন বিমর্ষ বা উদাসী বিকেলে; অদৃশ্য প্রলয়ে, ভেতরে ভেতরে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে- তখন কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা বা প্রকৃতির চিরাচারিত নিয়ম, অদূরদর্শীতার অন্তরায় হয়ে বাধ সাধে না। কেনোনা, আমরা একাকীত্বের স্বাদ নিতে পারি, দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারি কিংবা হরতাল ডাকতে পারি; আবার আইন পাস করাতে পারি, কিংবা বাস-ট্রাক-রিকশা পুড়িয়ে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করতে পারি। কিন্তু আমরা উদাসীন হতে পারি না। ভয় একটাই, উদাসীন হয়ে ভুলক্রমে যদি অপরের উপকার করে বসি, তবে আমার ক্ষমতার দাপট টিকে রইবে তো? মাঝে মাঝে চিন্তামগ্ন হয়ে ভাবি, দাতা হাতেম তায়ী হয়েও তো আমি তলাবিহীন ঝুড়ির চাহিদা মেটাতে পারবো না। তাহলে হাতেম তায়ী হওয়ার দরকার কি? বরং কিং মিডাস হয়ে পড়ি, যা-ই স্পর্শ করবো, সব স্বর্ণ হয়ে যাবে। নিজের মালিকানায়ও থাকবে। দুঃখ একটাই, কিং মিডাস একসময় ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। কিন্তু আমরা তলাবিহীন ঝুড়ির তলাটা ঠিক করার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছি না। শুধু ভাবছি- কতো দিবো, আর কতো? যতোই দিই তলাবিহীন এ ঝুড়ি কখনো পুরোবে না। আমরা কিন্তু কখনো ভাবছি না, অথচ আমার আপন ঝুড়িটাই তো তলাবিহীন। তাহলে তলাবিহীন শব্দটাই হোক ভুলের প্রতিশব্দ।
বাস্তবতার দৃশ্যপটে, দিন মানে সূর্যালোকিত রাজপথ, যানজট, কর্মব্যস্ততা বা কর্মসন্ধান হলেও; রাত মানে বিশ্রাম বা অন্ধকার নয়। আমার কাছে রাত মানে কোনো কিছু পাবার আকুলতা, না পাবার ব্যাকুলতা, কখনো কখনো জীবনের প্রতি চরম ঘৃণায় আত্মহত্যার ভাবনাটাও মাথায় খেলে যায়। এ মনে হওয়ার পিছনের কারণ, সর্বস্তরের মানুষই তখন জীবনের হিসাব মিলাতে বদ্ধ পরিকর। যদিও এ হিসাবেব ডেবিট-ক্রেডিট মেলানো অসম্ভবপর।
জেলখানায় প্রচলিত একটি শব্দ শুনেছি, ইলিশ ফাইল। শব্দটির বিশেষত্ব কয়েদীদের নির্দিষ্ট একটু জায়গার নড়চড়বিহীন ঘুমানো। অনেকটা, ঘুমের ঘোরেও যাতে অন্যের ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ করা। এ যেনো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের, “স্থানের অভাব এ জগতে নাই, তবু মাথা গুঁজিবার ঠাঁই ওদের এইটুকুই” কথাটার প্রতিধ্বনি। ভেবে দেখুন, এমন আত্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যদি আমাদের মনে স্থাবর সম্পত্তির মতো বাসা বাঁধে, তবে আমাদের দেশে দুর্নীতি, ধর্ষণ, রাহাজানি- কিছুই থাকার কথা নয়, বা অনেকাংশেই কমে যাবে। যাকে বলা যায় যৎসামান্য।
শেষ করছি, তবে কিছুদিন আগে শোনা একটা কৌতুক মনে পড়েছে। এক বন্ধু অপর বন্ধুকে বলছে, ‘আজকে একটা মেয়ের ইজ্জত বাঁচিয়েছি।’ শুনে অপর বন্ধু বললো, ‘কিভাবে?’ বন্ধু জবাব দেয়, ‘ক্যামনে আবার! সেল্ফ কন্ট্রোল, ম্যান! সেল্ফ কন্ট্রোল!’
কিছু কৌতুক হাসিচ্ছলেও শিক্ষা দেয়। এটি তারই প্রমাণ। আমরা হাসতেও ভুলে গেছি, হাসি যে সবচেয়ে ভালো ওষুধ- তাও বোধহয় আমাদের মনে নেই। তবু কামনা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৌতুকরূপী সেল্ফ কন্ট্রোল বা আত্মনিয়ন্ত্রণ হোক আমাদের জীবনের চলার পথ ও পাথেয়। নয়তো নিজের কাছে নিজের পরীক্ষার প্রশ্ন আনকমন হয়ে থাকবে- আমি কতোটুকু ভালো মানুষ? অথবা আমি কি ভালো মানুষ? []
::
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------------
:: কবিতা ::
বালি ও নক্ষত্র
মুহাম্মাদ আবদুল্লাহিল বাকী
আমার বাল্যকালে শিক্ষায়িত্রী উপমা দিয়ে বলতেন-
পুরুষ হলো একধরনের আসমান কাঁচাগাছ
যে নিঃসঙ্গ, শীত ও কুয়াশা সহ্য করে তাকে বাঁচতে হয়।
লক্ষ্য করে দেখেছি আমার নিঃষ্পত্র ডাল মহাশূন্য থেকে
কি একটা ধরতে চায়, কিন্তু এ জগতে
একমাত্র কঠিন বস্তু হলো মন; আমি সন্দেহ,
ধাতু ও পিপাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কিন্তু কিছুই হলো না, অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবেও
আমার চুল সাদা হয়ে গেলো, দেহ থেকে
পানির মতো বিন্দু পড়ে পড়ে নষ্ট হতে লাগলো
নিজের এসব কথা আমি মাটির ভিতরে চুণ দিয়ে রেখে যাচ্ছি
এবার ধপাস করে পড়ে মারা যাবো।
এমন একটা জিনিস খুব জানতে ইচ্ছে হয়।
বালি ও নক্ষত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে যতো যন্ত্রণা আমি ভোগ করলাম
তা কি মধ্যাকর্ষণ শক্তির সীমানা ছাড়িয়ে দূরে চলে গেছে
না খুঁজে খুঁজে আমার দেহ ও মনের টুকরো কুড়িয়ে
জোড়া দিয়ে আবার আমাকে ব্যথা দেবে বলে ঘুরছে।
এ প্রশ্ন করতাম না যদি মাথার ভিতরেও চোখ থাকতো
যদি চিন্তার থেকে অন্তত দুই ব্যাটারির আলোও বের হতো-
কিন্তু আমি একজন সাধারণ লোক
ভীতু, তরল এবং দৈব বিশ্বাসী ও স্বার্থপর। []
::
শেখপাড়া, রাজশাহী
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------------
:: কবিতা ::
সম্পর্ক
ফজলুল মল্লিক
কথা ছিলো বিনা শুল্কে তোমার-আমার
সম্পর্ক হবে।
অথচ অনাবিষ্কৃত তোমার মুখায়বে
এ কিসের দৃশ্যপট!
যদি এমন হতো স্পর্শে আমার
তুমি মেলে ধরতে গোলাপ-পাপড়ির শোভার মতো
তোমার সমস্ত আকুলতা।
তাহলে আমি না হয় ব্যাকুল হতাম
ভালোবাসার ছল নিয়ে ভ্রমণ করতাম
তোমার সমগ্র সত্ত্বায়।
অথচ অনাবিষ্কৃত তোমার মুখায়বে
এ কিসের দৃশ্যপট!
তবে আমার কাছে কি চাও তুমি?
শুল্ক?
ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কিছুই নেই।
ভালোবাসা নেবে? []
::
সম্পাদক, ডাহুক। ফেনী সদর
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------------
:: খেয়ালিপনা ::
মাঝরাতে, যদি ঘুম ভেঙে যায়
সাইফুল আমিন
যখন থেকে দূরে আছো, সেই থেকে আমি নিঃসঙ্গ! আগে জানতাম না; এখন টেরও পাচ্ছি- নিঃসঙ্গতার একটা সুর আছে! একাকী মগ্নতার ভেতর চলে গেলে, সুরটা কেমন আপনা-আপনি বেজে ওঠে। আমার তখন কেবলই মনে হয়- এই বুঝি আমি জলরঙের ছবি আঁকছি!
জলরঙে ছবি আঁকারও যে এতো ব্যাপকতা; তা বুঝলে পরে কে এই স্বপ্ন দেখতো! কাগজে পরীক্ষামূলক টেস্ট দিয়েই এই আয়োজনের শুরু। তারপর পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে কতোক্ষণ। সে ভেজা কাগজ কিছুটা রোদে শুকাতে দিতে হবে। এরপরই প্রথমবারের মতোন রং চড়াতে হবে আপন খেয়ালে…
আমি জীবনে কোনোদিন ছবি আঁকিনি। আজ কী আঁকবো? কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আঁকা যায়। ছবির নিচে বয়স চার-পাঁচ দিয়ে দিলে, আর কেউ কিছু মনে করবে না! ভাববে, বাচ্ছা ছেলেমেয়েদের খেয়ালিপনা!
কিন্তু মাথার ভেতর অন্য চেতনা ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি রাতের আকাশ আঁকবো! পুরো কাগজটায় প্রথমে কালো রং ছড়ালাম। তারপর হালকা নীল-সাদা ছড়ালে কি আকাশের মতোন হবে?
রং সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তবু ছবিই আঁকতে হবে কেনো; এই ভূতটাই-বা কী করে মাথায় ঢুকলো, এটাই একটা আশ্চর্য ব্যাপার!
তবু তোমার কথা মনে হয়। হুম… এটা তোমার না থাকার বেদনাবোধ হয়তো। নিজেকে একটা কিছুর মধ্যে ব্যস্ত রাখার খেলা। আজকালকার টি-টোয়েন্টি খেলাটা বেশ জমে। যখন-তখন আউট হয়ে গেলেও কেউ কিছু মনে করে না। ব্যাটসম্যানের কৈফিয়ত থাকে, ‘আরে ভায়া, বল নষ্ট করতে চাইছিলাম না। তাই মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে গেছে আরকি!’
আচ্ছা, এই আউটের মতোন তোমারও কি ঘুমের বিচ্ছুতি হয়? মানে, মাঝরাতে আমার মতোন যখন-তখন ঘুম ভেঙে যায়?
আজকাল শীতের রাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। অনেক আয়েশের ঘুম ভেঙে গেলে, একা থাকার নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসে। যতোই চেষ্টা করি না কেনো, কাঁথার নিচে ফের ওম পাই না। মনে হয়, জগতের সমস্ত শীত আমার এই কাঁথার ভেতর হু হু করে ঢুকে পড়ছে!
ঘুম না এলে, তার পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে মাথাব্যথাটা চেপে বসে। এতো রাতে আর ওষুধ খেতে ইচ্ছে হয় না। তবু উঠি; বাথরুমে যাই। ঢক ঢক করে দুই গ্লাস পানি খাই। পানিটা ওমন বরফ হয়ে থাকে যে, সে স্পর্শে যতোটুকুন চমকাই, ভূত দেখলেও ততোটা চমকাতাম কিনা সন্দেহ।
অনেকদিন জোছনা দেখি না। কর্ম-ব্যস্ত জীবনে, জোছনানুভূতিই তো টের পাই না! দেখার কথা মনে থাকবে কী করে? আমাদের কোনো বারান্দা নেই, সে তো তুমি ভালো করেই জানো। চিলোকোঠার দরজা খুললেই পুরোটা ছাদ… সবগুলো বাতি নেভানো তখন। হঠাৎ আমার, রাত এখন কতো হলো- সেটা জানার ইচ্ছে হয়। যেহেতু, হাতে ঘড়ি পরে ঘুমানোর মানে হয় না; আবার মুঠোফোনটাও হাতে করে ছাদে আসিনি, অতএব সময় জানার চেষ্টা বৃথা। তবে অনুমান হয়, রাত চারটার কম নয় এখন।
আকাশে চাঁদ নেই। জোছনা দেখার সাধ পূর্ণ হলো না ভেবে, কপাল চাপড়াই। পোড়া কপালে যে কিছু জোটে না, সে অভিজ্ঞতা ঢের হয়েছে আমার। এটা সম্ভবত, আমার আত্মীয়-পরিজনের অভিশাপও হতে পারে। মেজো বোন আর দুলাভাই- এ দুজনের একটা আবদার না শোনায়; আমার তো ধারণা, এঁরা সারাজীবনেও আর কোনোদিন খোলামন নিয়ে আমার পাশে দাঁড়াবে না!
এটা ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। ফের আমি তোমার কথা ভাবতে শুরু করি- এতো রাতে তুমিও কি জেগে আছো? শীতের রাত বলে, হয়তো খুব বাধ্য না হলে, নিশ্চয় বিছানা ছাড়বে না। আচ্ছা, এ রকম রাতে তুমি কি কখনো জানালা খুলে পাশে দাঁড়াও?
মনে হচ্ছে, খুললেই ভালো করতে! তোমার চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে আমার ভেতর কম্পন উঠতো। আমি কাল্পনিক নদীতে স্রোতের মতোন ছুটে যেতাম তোমার পানে! যদিও জানি না, তুমি দুহাতে ভালোবাসার কাব্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে কিনা! []
::
ধানমণ্ডি, ঢাকা
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------------
আকাশলীনা]
মাঘ ১৪১৮ :: জানুয়ারি ২০১১ :: বর্ষ ০২ :: সংখ্যা ০৭
সম্পাদক :: নোমান ভূঁইয়া
[email protected]
প্রধান সহকারী : আলমগীর কবীর
[email protected]
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও পষ্ঠাসজ্জা :: রঙছুট
শব্দ বিন্যাস ও সমন্বয় :: সৈয়দা সুধন্যা
সার্বিক ব্যবস্থাপক :: সাইফুল আমিন
যোগাযোগ ::
+88 018 18731377
[email protected]
http://www.facebook.com/akashlina.mag
================================================
দ্রষ্টব্য : মূল কাগজে প্রকাশিত সকল লেখা এই ব্লগে প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে, আমরা দুঃখিত।
পুরো লেখা পড়তে এই ঠিকানায় যান- http://www.akashlina10.wordpress.com
-সম্পাদক।