গত ০৪ মে ২০১৪ ইং তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি’র গণঅনশন কর্মসূচীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার চেয়েছেন এবং জিয়া ও মঞ্জুর হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নাম উল্লেখ করেন।
ছোটকালে একটা গল্প শুনেছিলাম, জনৈক মহিলার সাথে অনেকেরই ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসা করলে অন্য সবার নাম বললেও দেবরের নাম বলে না। ঐ মহিলা সবসময় সুখে থাকলেও হঠাৎ খুবই দুঃখে পড়ল। দুঃখে পড়ার এক পর্যায়ে প্রলাপ বকতে শুরু করল। প্রলাপ বক্তে বক্তে তখন অন্য সবার নামের চেয়ে দেবরের নাম বেশী বলতে লাগল। সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ল যে, মহিলা এখন দেবরের নাম এত বেশী বলছে কেন ? তখন একজন তার এক বন্ধুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, কোন মহিলা যখন বেশি সুখে থাকে তখন সে দেবরের নাম বলে না। আর যখন সে দুঃখে/বিপদে থাকে তখন বেশি বেশি দেবরের নাম বলে। কারণ হিসাবে তিনি বললেন, দেবর নাকি অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প ------!! প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন, খালেদা জিয়া কি এমন দুঃখে পড়েছেন, যে তিনি এখন শুধু এরশাদের নাম বেশি নিচ্ছেন ? শুধু নাম-ই নয়, এখন তাঁর স্বামীর খুনী হিসেবেও এরশাদকে উল্লেখ করেছেন। একি ! এতো দেখি সেই গল্পের নায়িকার মত প্রলাপ বকা। ক্ষমতায় নেই, দলে চরম বিশৃংখলা, নেতা-কর্মীরা হতাশ, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে আম-ছালা দু-ই হারানো, দুই ছেলে প্রবাসে সুরাসক্ত-এমন পরিস্থিতিতে বলুন তো কে ভাল থাকতে পারে ? প্রলাপ বকা ছাড়া কি আর কোন উপায় থাকতে পারে ?
জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদ গুলশানে বেগম খালেদা জিয়াকে মাত্র এক টাকা (নামমাত্র) মূল্যে প্লট উপহার দিয়েছিলেন, যা বর্তমান দূর্মূল্যের বাজারে চারশো কোটি টাকার নীট সম্পদ । এর কারণ হিসাবে লোকমুখে কথিত আছে, কোন এক সময় এরশাদ নাকি জিয়ার চেয়েও বেগম খালেদার আপন ছিলেন। আজ এরশাদকে ফাঁসানোর জন্য এ তাঁর কোন অপচেষ্টা ?
এরশাদ যদি বেগম জিয়ার কথামতো ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতেন, বেগম জিয়ার কূটকৌশল অনুযায়ী এরশাদ দলীয় রাজনীতি পরিচালনা না করে তাঁর সাথে জোট করতেন, তাহলে হয়তো গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের দেবরের মত তাঁর নাম গোপনই থেকে যেত।
স্বাধীনতার এত পরে কেন বেগম খালেদা জিয়া স্বামী হত্যার বিচার চাইছেন। দু’মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন কি তিনি সেটা ভুলে গিয়েছিলেন ? নাকি ক্ষমতায় যাওয়ার লালসায় তিনি আজ দিশেহারা ? তাছাড়া মধ্যদুপুর পর্যন্ত দিবাস্বপ্নে অভ্যস্ত খালেদা জিয়া নাকি আবার হাইপার সোম্নিয়া রোগে ভুগছেন ! সব মিলিয়ে তাঁর অবস্থা নিতান্তই বেগতিক ! তাই পুরনো ¯মৃতি মনে পড়ার কারনেই হয়তো এরশাদের কথা বেশি বলছেন।
এদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, ইতিহাস বিকৃতি করে ও ধর্মকে পুঁজি করে খালেদা জিয়া যখন জনগণের ম্যান্ডেট আদায় করতে পারছেন না, ঠিক তখন স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে তিনি জনগণের করুণা লাভের চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাধারণ জনগণ তাঁর অভিনয় ও মায়াকান্নায় গলতে চায় না, তারা তাঁর মায়াকান্নার স্বরূপ এর পূর্বেও দু’বার উপলব্ধি করতে পেরেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি, ধর্মকে পুঁজি করা, আর আজ বহুদিন পর স্বামী হত্যার বিচার চাওয়া সবই তাঁর ছলচাতুরীর স্বরূপ, যা আজ জাতির সামনে উন্মেচিত। এরপরও হয়ত নতুন কোন্ ইস্যু সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলবে, তখন নতুন কোন ছোট দেবরের নাম সামনে আসতে পারে বৈকি !