গত ২১ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তনুর সুরতহাল সম্পন্ন হয়। কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা থেকে ময়নামতি সেনানিবাসের পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। সূত্র জানায়, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সুরতহাল করার জন্য যাওয়া কর্মকর্তাকে জানানো হয়, পাওয়ার হাউস এলাকায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনশ' থেকে চারশ' গজ দক্ষিণে কালো টাঙ্কিসংলগ্ন রাস্তার কালভার্টের পশ্চিম দিকে অনুমান ২০ থেকে ৩০ গজ দূরে সোহাগী জাহান তনুকে (১৯) অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। সেদিন ছিল ২০ মার্চ। আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টায় তনুর অচেতন দেহ কুমিল্লার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা সেনানিবাসের ৪ এমপি ইউনিটের সার্জেন্ট মো. মহসীন মরদেহের সঙ্গে থাকা মালপত্র তালিকাসহ পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন। তালিকা অনুযায়ী পাওয়া যায় মেয়েদের বাঁ পায়ের জুতা, যার একটি ফিতা ছেঁড়া ছিল। দুটি মোবাইল হ্যান্ডসেট পাওয়া যায়, যার একটি সিম্ফনি ভি-৬০ মডেল এবং অন্যটি ওয়ালটন ব্র্যান্ডের মডেল এমএইচ-৯। এ ছাড়া মেয়েদের ব্যবহৃত একটি ছোট হাতব্যাগ, মাথার এক গোছা চুল ও দুই টুকরো খাকি হলুদ রঙের রানিং টেপ পাওয়া যায়, যার আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৫ ও ১০ ফুট।
সুরতহাল রিপোর্টে তনুর মরদেহের বিবরণে বলা হয়, তনুর বাঁ কানের নিচের অংশ সামান্য ছেঁড়া ছিল। বাঁ কানের নিচে কিছুটা রক্ত ও মুখের বাঁ পাশে এবং ডান হাঁটুর ওপরে নখের আঁচড়ের মতো দাগ ছিল। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও জখমের চিহ্ন ছিল না। সুরহতাল রিপোর্ট তৈরিতে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. লে. কর্নেল সেলিনা বেগম সহায়তা করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সুরতহাল রিপোর্ট এবং এখন পর্যন্ত পাওয়া আলামত বিশ্লেষণে প্রশ্ন উঠে আসে- তনুর মরদেহ উদ্ধারের স্থলেই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে, না অন্য কোথাও হত্যার পর মরদেহ এখানে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে। তনুর পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা জানিয়েছেন, সে একটি ফোন নম্বরই ব্যবহার করত এবং তার হাতে সব সময় একটি হ্যান্ডসেটই দেখা যেত। ঘটনাস্থলে দুটি হ্যান্ডসেট ও চারটি সিমকার্ড পাওয়া যায়। সিম্ফনি হ্যান্ডসেটের সঙ্গে একটি মোবাইল কাভার পাওয়া যায়, যেখানে ভেতরে আলাদা কালিতে সোহাগী লেখা ছিল। মোবাইল হ্যান্ডসেট, যেভাবে চুলের গোছাসহ আলামত ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে রাখা হয়, তা-ও স্বাভাবিক নয়। হত্যাকারীরা সাধারণত ঘটনাস্থলে এভাবে আলামত রাখে না।
আরও কিছু প্রশ্ন :
তনুর মরদেহ উদ্ধারের একদিন পর থেকেই তার প্রতিবেশী এক যুবককে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। এই যুবক তনুকে উত্ত্যক্ত করত বলে তার খালাতো বোন নাইজু এর আগে জানিয়েছিলেন। বর্তমানে এই যুবক কোথায়, তা জানা যাচ্ছে না। অনেকের ধারণা, সে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কারও হাতে আটক রয়েছে। অবশ্য তাদের দায়িত্বশীল কেউই তাকে আটকের কথা স্বীকার করেনি।