কোথা থেকে আসে সে, কোথায় চলে যায়
এক সমাজ বহিরিস্থিত ও দুর্দম নায়ক দেখা দেয় অকস্মাৎ, উনিশশো ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, বাংলাভাষা এলাকায়। বিধি-বিধান ঠাসা, আইন-কানুনঘেরা, সুখ-শান্তি ও লোভ-লালসার সংসারে বসবাস করে না সে। ওইখানে বসবাসের অধিকার নেই তার সামাজিক কানুন মতে। তার বাস গহীন অরণ্যে। অনুগত দঙ্গল তার আশপাশে সকল সময়, তবুও সে একা। কতকটা নিয়তি ও অনেকটাই পরিস্থিতি তার জন্য বরাদ্দ করে দেয় চির বিজনবাস। সংসারে ও সমাজে সে এক তীব্র উপদ্রব, ভীতিকর ঘূর্ণি। কেননা বিজনবাসী যদিও সে, কিন্তু সে হানা দেয় সমাজে ও সংসারে_ যেখানে গোপন পাপ জমে জমে মহাসতূপ হয়ে ওঠে, কিন্তু ন্যায়ের দণ্ড পাপীকে ছুঁতেও পারে না; যেখানে শোষণ ও অত্যাচার ও অবিচার প্রতিবিধানহীন, যেখানে নিঃসহায় দুঃখী অভাগার দুর্গতি সীমাহীন_ সেইখানে সে আসে। চালু আইন বিধান ও নিয়মনীতি তছনছ করে দেয় সে, প্রতিষ্ঠা করে তার নিজস্ব সাম্য ও কল্যাণবোধের বিধান, যা প্রথাগত বিশ্বাস মতে_ নৈরাজ্যেরই অন্য নাম। যে বিধান নষ্ট করে সমাজ কাঠামোর ভারসাম্য, ধনী আর নির্ধন একাকার হয়ে যাওয়ার মতো প্রলয়ঙ্করী দুর্বিপাক অবধারিত করে তোলে ওই নববিধান, তাই সমাজপতিগণ সংঘবদ্ধ হয় তাকে রুখবার জন্য। সে তাদের চোখে এক সীমালঙ্ঘনকারী দুষকৃতি, যাকে রোখার জন্য সকল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংঘবদ্ধ ও অতন্দ্র। অন্ধকারের নিবিড় সঙ্গী সে, সে আসে লোকালয়ে একা। বারবার আসে, ঘুরেফিরে আসে। কারণ সমাজ ও সংসারের জন্য রয়েছে তার গভীর টান, গাঢ় ঔৎসুক্য। তাই বিজনবাসী হয়েও সে সংবাদ রাখে সমাজ ও সংসারের সকল এলাকার। কোথায় কোনখানে কোন অন্যায় সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, কোন ভার অসহ হয়ে উঠছে দুঃখী মানুষের জীবনে। সে আসে, একা। ওইসব অন্যায় ও অনাচারের প্রতিবিধান করতে আসে সে।
সে নিঃশব্দে আসে না, নগর-প্রান্তর বনভূমি শব্দময় হয়ে ওঠে, যখন সে আসে। কেননা সে বীর, মহানায়ক_ তার আগমনবার্তা বায়ু ও জলকল্লোল ও আকাশের মেঘলোকে বেজে উঠতেই হবে। সে আসে। 'গভীর রাতে জমকালো একটা অশ্বপৃষ্ঠে দেখা যায় তাকে। গোটা শরীরে তার কালো পোশাক। মাথায় কালো কাপড়ের পাগড়ি। মুখে একটা কালো রুমাল জড়ানো। কোমরের বেল্টে গুলিভরা রিভলবার।' এসব কিছু নিয়ে এ নায়ক এসে পেঁৗছে আমাদের ভাষা পৃথিবীতে। গণ্য হয় অভিনবরূপে, হয়ে ওঠে অভিভূতকর ও চিত্তজয়ী। তার নাম বনহুর। সমাজ ও সংসার তাকে জানে মহা তিকর, সর্বনাশা দসু্য বলে, তাই তার সামাজিক নাম_ দসু্য বনহুর। এমনকী সে নিজেও নিজের পরিচয় দেয় এই নামে। তবে এ পরিচয়ে তার সত্তা বোধ করে গৌরব এবং পৌরুষ। দসু্য সে, পৃথক। সকল সাধারণের পৃথিবীতে বিপুল অসাধারণ, সে দসু্য বনহুর। এই পুরুষের নির্মাণকারী এক নারী_ রোমেনা আফাজ। যে পুরুষ অথবা নায়ককে রোমেনা আফাজ নির্মাণ করেন তাঁর দসু্য বনহুরের গল্পমালায়, সে সকল সীমার বাঁধন ছাড়িয়ে মাড়িয়ে ওঠে সীমাতিক্রমণতার প্রতিমূর্তি। সে পুরুষ নয়। তার স্বপ্নকার এক নারী। যে নিরন্তর পুরুষভাবনায় প্রতিটি নারী যাপন করা শুরু করে তার জীবন, কিশোর বেলা থেকে; সেই স্বপ্ন, ভাবনা, বোধ, ঘৃণা ও বিস্ময়, বিশ্বাস ও অবিশ্বাস দিয়ে তাঁর নায়ককে গড়েছেন রোমেনা আফাজ। এ পুরুষ এক সৃষ্টিশীল নারীর সৃষ্টি, সে ভিন্ন সে দসু্য_ বনহুর।
যখন সে আসে, পূর্ব পাকিস্তানের মূলধারার উপন্যাসের নায়কেরা তখন নিষপ্র্রভ ও গত-পরাক্রম। সাতচলি্লশের পর থেকে ষাটের দশকের গোড়া পর্যন্ত সময়ে প্রকাশিত হয়ে গেছে পুরুষ ও নারী লেখকের অনেক অনেক উপন্যাস; কিছু তার নন্দিত হয়ে উঠেছে শিল্পসুষমার কারণে, কাহিনী বা বিষয়বস্তু কোনো কোনোটিকে করে তুলেছে নামজাদা। এ সময় প্রকাশিত কিছু উপন্যাসের উল্লেখ করা যেতে পারে। "লালসালু" (1948) সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রথম উপন্যাস। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস "চাঁদের অমাবস্যা" বেরোয় দীর্ঘ বিরতির পর, 1964তে। 1954 সালে প্রকাশিত হয় "জননী", শওকত ওসমান-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। পঞ্চাশের দশকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস আবু ইসহাকের "সূর্য দীঘল বাড়ি", প্রকাশকাল 1955। শামসুদ্দীন আবুল কালামের "কাশবনের কন্যা" প্রকাশিত হয় 1955-এ।
আলাউদ্দিন আল আজাদের "তেইশ নম্বর তৈলচিত্র" বেরোয় 1960 সালে। জহির রায়হান রচিত "শেষ বিকেলের মেয়ে" 1960-এ। রাজিয়া খানের "বটতলার উপন্যাস" 1959-এ বেরোয়, "অনুকল্প" প্রকাশিত হয় 1963তে। রাবেয়া খাতুনের "মধুমতী"ও প্রকাশিত হয় 1963 সালে। এ উপন্যাসগুলোর কোনো কোনোটি নায়কের আখ্যান, তার বাস্তব জীবনের চড়াই-উৎরাই, মনের এলাকার জটিল ও সরল নানা গলিঘুঁজির গল্পকথা পাওয়া যায় এখানে। কোনো কোনোটি নারী জীবনকেন্দ্রিক_ তার জীবনদুর্গতি, আর্থিক দুর্গতি, যুঝে ওঠার স্পৃহা ও শক্তি, মাতৃরূপে তার মহিমা_ এসবের গল্প রয়েছে এ গোত্রের উপন্যাসে। তবে প্রধান চরিত্র নারী বা পুরুষ যাই হোক না, সবক'টি উপন্যাসেই ল্য করা যায় যে, নায়কদের বিশ্বে ঘটে গেছে বিপুল প্রলয়। নায়কেরা এখন আর দীপ্তিমান কেউ নয়, তারা মহিমাহীন ও নিষপ্রভ। তারা ধুঁকতে থাকা মানুষ, কিন্ন ও কিষ্ট। পরাক্রম ও দীপ্তি ও তীব্র তেজ নিয়ে একদা আবিভর্ূত হয়েছিলো নায়কেরা, পৃথিবীর পুরাণগুলোতে, মহাকাব্যে, রোমান্সের ভূখণ্ডে, জগৎ মোহিত হয়েছিলো তাদের বীরত্বে, মহত্ত্বে, ঔদার্যে, হৃদয়ের উষ্ণতায়। দিকে দিকে বেজে উঠছিলো তাদেরই জয়ধ্বনি। তাদেরই গাথা, চারণ কবিদের মুখে থেকেছে যুগের পর যুগ ধরে, তাদের মহিমা-কথা জানাতে জানাতে তাঁরা পরিক্রমণ করেছেন লোকালয়, জনপদ। ক্রমে ওই পরাক্রমশালীগণ লুপ্ত হয়ে যায়। মহানায়ক গিলগামেশ বা কর্ণ কিংবা পুরাণপুরুষ আব্রাহাম অথবা যযাতি অথবা বদ্ধপরিকর মুনি পরশুরাম ক্রমে হয়ে যায় দূর স্মৃতি, সুদূর বিষয়। সাহিত্য, বা নির্দিষ্ট করে বলা যায় উপন্যাস, ক্রমে পথ করে নেয় বাস্তব সংসারের সাধারণ মানুষের কাছে পেঁৗছবার; ও তার নেহাৎ সাধারণ ও ুদ্র জীবনের গল্প বলার। উপন্যাস পেঁৗছুয় বাস্তব সমাজে বসবাসরত দ্বিধা, সংশয়, ভালো ও কালোয়ভরা মানুষের বসতির দরোজায়। বলা শুরু করে কুবের কপিলা ও মালার (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: "পদ্মানদীরমাঝি", 1938) রসাতলের জীবনবাস্তবতার গল্প,বা বলে চারণকবি নিতাইয়ের মর্মন্তুদ লড়াইয়ের কথা (তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, "কবি", 1348), জোচ্চুরি কলুষ অভাব ও কেদ পরিপূর্ণ ডোম সমাজের একজন নিতাই, স্বপ্ন দেখে চারণকবি হিশেবে প্রসিদ্ধি পাবার ও নিষ্কলুষ প্রেমের মহাব্যাকুলতা মনে মনে বয়ে চলার। ওইসব স্বপ্ন ও কলুষের ভেতর দিয়ে পথ করে নিয়ে ক্রমে বাংলা উপন্যাস পেঁৗছোয় "লালসালু"র ভুবনে।
ওই ভুবন দ্বিধাজরজর, শঙ্কিত, থইহারা ও কম্পমান এক নায়কের ভুবন। এ উপন্যাসের নায়ক মজিদ যদিও বহু দশক ধরে গণ্য হয়ে আসছে অস্তিত্ববাদী নায়কের সার্থক প্রতিভূরূপে, যে কিনা প্রতিকূলতার পর প্রতিকূলতা পেরোয় এবং নিজের অস্তিত্বকে পোক্তভাবে দাঁড় করিয়ে দেয় সকল সঙ্কটের পথ পাড়ি দিয়ে। নিরন্তর প্রতিকূলতা সে পাড়ি দেয় বটে, তবে বাঁচে নিরন্তর ফন্দিফিকির করে, ঘোরপঁ্যাচের অন্ধিসন্ধির ভেতর দিয়ে; লুব্ধ এক আরশোলা। তার মহিমা এক আরশোলার মহিমা।
"চাঁদের অমাবস্যা"র আরেফ আলী পেশায় স্কুলমাস্টার, ঘটনাচক্রে একটি খুন বৃত্তান্তের অংশ হয়ে যায়। মুখে তার কথা সামান্যই, মনে বিরামহীন বয়ে যায় কথাস্রোত। সেও দ্বিধা সংশয়ে দীর্ণ জীর্ণ, কুণ্ঠিত ও অনিশ্চিত এবং আত্মবিশ্বাসহীন। মলিন ছায়ার চেয়ে বেশি কিছু নয় আরেফ আলী। "জননী" এবং "সূর্যদীঘল বাড়ি"- দুটো উপন্যাসের প্রোপট গ্রাম এবং প্রধান চরিত্র নারী। দুটো উপন্যাসেই লেখকদের উদ্দেশ্য নারীর জননীসত্তার মহিমা তুলে ধরা। "জননী"র কেন্দ্রীয় চরিত্র দরিয়া বিবি। দরিদ্র কৃষিজীবী আজহার খার স্ত্রী দরিয়া বিবি। আজহার খাঁ গৃহস্বামী ঠিকই, তবে তার উপস্থিতি অনুপস্থিতিরই শামিল।নিরীহ, নিরুপায়, জীবনের গুণ টেনে টেনে ধুঁকতে থাকা শরীর মাত্র সে। অন্যদিকে ইয়াকুব, "জননী" উপন্যাসের খলনায়ক বলা যায় যাকে, আজাহার খাঁর সম্পর্কিত ভ্রাতা এবং বিধবা দরিয়া বিবির ধর্ষণকারী; সেও নির্দয় প্রাণবান কঠোর কেউ নয়। সে ধর্ষণকারী, তবে শিথিল ছত্রখান গত্যন্তরহীন তার জীবন, কুঁকড়েমুকড়ে গুটিসুটি পাকানো অথর্ব জন্তু এক_ তার পুরো অস্তিত্ব। "সূর্যদীঘল বাড়ির" স্বামী পরিত্যক্তা শ্রমজীবী জয়গুনের পাশেও তার প্রাক্তন স্বামীকে, করিম বক্সকে, এমনই দোমড়ানো, সামর্থ্যহীন ও বাঁকাচোরা মনে হয়। "কাশবনের কন্যা" কবিয়াল শিকদারের কাহিনীচ্ যতোটা, ততোটাই হোসেন ও তার স্বপ্নভঙ্গ ও নতুন স্বপ্নে ভরে ওঠার কাহিনী। শিকদার দারুণ কবিশক্তির অধিকারী, প্রথম তরুণবেলায় সে প্রেমে পড়ে কৈশোরের সঙ্গী জোবেদার। সে প্রেম ব্যর্থ হয়। জোবেদা সুখে ও দুঃখে স্বামীর সংসারে খাপ খাওয়াতে থাকে ঠিকই, শিকদার হয়ে যায় সম্পূর্ণ বিবাগী। ব্যর্থ প্রেমের দহনে দগ্ধ শুধু তার অন্তরই হয় না, জীবনও হয়ে যায় পোড়া কাষ্ঠ, আশা ও সম্ভাবনাহীন বিরান পোড়োভিটা এক, সে। "তেইশনম্বর তৈলচিত্র" ও "শেষ বিকেলের মেয়ে"র নায়কেরা নাগরিক; একজন চিত্রকর, অন্যজন সাংবাদিক। তাদের বিশ্বাস উপলব্ধি পেশা জীবনদৃষ্টি সবকিছু জানাতে থাকে তারা অন্য সাধারণের চেয়ে কতো ভিন্ন; কতো সুসংস্কৃত তাদের সাংস্কৃতিক চেতনা ও বোধ।তারা জীবন, সমাজ ও নারীকে দেখে মার্জিত মন ও বিশ্বাসের আলোয়। কিন্তু ভেতরে তাদের কোনো ভিত নেই; আত্মবিশ্বাসহীন দোদুল্যমান ও কণ্ঠস্বরহীন তারা অধিকাংশ এলাকায়। নাগরিক শরীর কাঠামোর ভেতরে তাদের প্রায় কিছুই নেই। ভেতরটা ফাঁপা। একই ছাচের নায়কের দেখা মেলে "বটতলার উপন্যাস", "অনুকল্প" ও "মধুমতী" উপন্যাসে। এক সামর্থ্যহীন, ফাঁপা, সুবেশধারী, মানভাষা ব্যবহারের তুমুল দতাসম্পন্ন নাগরিক কাকতাড়ুয়া সকল: নারীর জীবনকে ধ্বংস ও ধসে ভরে দেয়ার শক্তিটুকু শুধু নড়েচড়ে তাদের সামর্থ্যশূন্য সত্তায়।
এমনই কিন্ন ছায়াসকলের আনাগোনা ও অবস্থান যখন পূর্ব পাকিস্তানের উপন্যাসের ভূভাগে, তখন সে আসে। প্রকাশিত হতে থাকে এ নায়কের আখ্যান ধারাবাহিকভাবে। খণ্ডের পর খণ্ড জুড়ে বর্ণিত হতে থাকে তার তীব্র তী্ন নির্দয় মধুর হৃদয় ও কর্মকাণ্ডের গল্প। 'শহরে বন্দরে, গ্রামে, পথে-ঘাটে-মাঠে সব জায়গায়' শোনা যেতে থাকে তার অশ্ব ুরধ্বনি। হয়ে ওঠে চিত্তহারী। কিশোরী ও তরুণী হৃদয় গ্রহণ করে তাকে স্বপ্ন ও বিস্ময় পুরুষরূপে। যদিও সে হরণ করে কিশোর ও তরুণ হৃদয়ও, তবে তারা তার সাময়িক পাঠকমাত্র। নারীপ্রাণ তাকে ঘিরে কিশোরকালের জীবনচক্র শুরু করে, তার সঙ্গে চলতে চলতে এগোয় নবীন তারুণ্যের কালে পা রাখার জন্য। অনেক দশক ধরে এমনটিই চলতে থাকে, এখনও ওই প্রণোদনা লুপ্ত হয়ে গেছে একথা বলা যাবে না। তীব্র আকুল স্রোত মন্থর হয়ে গেছে; কিন্তু তা বহতা। কেনো এক নারী রচনা করেন এমন এক অসামাজিক, দুর্দমনীয়, দুর্বিনীত, ন্যায়-অন্যায়ের সীমানা পেরোনো, বন্য নায়কের আখ্যান, যখন সমাজে ও সংসারে কোথাও সে নেই! একথা তাঁর কাছে স্পষ্ট যে, তাঁর এ নায়কের আখ্যান সাহিত্যের মূলধারার অন্তভর্ুক্ত হবে না কোনোমতেই, এবং তাঁর গল্প এ তথ্য জানিয়ে যেতে থাকে যে, তাঁর পরোয়াও নেই মূলধারার শিল্পিত শিল্পকলার বলয়ে ঢোকার, এই নায়কের আখ্যান নিয়ে। জানিয়ে যেতে থাকে যে তাঁর অন্তরে রয়েছে এক তীব্র প্রণোদনা_ পুরুষভাবনা যার অন্য নাম, তার পুরোটা প্রকাশ করতে চান তিনি গল্পে গল্পে।
এক পুরুষ গড়ে তুলে আর তার গল্প বলে বলে, বলতে চান কেমন বাসনা - পুরুষ বাসনা _নারীর অন্তর জুড়ে । এইসব গল্প এক নারীর পুরুষসৃষ্টির তীব্র প্রণোদনাজাত। জীবন ও সমাজ বাস্তবতার রূপকার হবার স্বপ্ন ও প্রচেষ্টা যে তাঁরও ছিল, তার প্রমাণ রোমেনা আফাজের সামাজিক উপন্যাসগুলো। তবে ওই সমাজ আখ্যান তাঁকে বেশীণ আটকে রাখতে পারে নি,তাঁর সত্তা অচিরেই নিবিষ্ট হয়ে পড়ে স্বপ্নপুরুষের স্বপ্নে। আমাদের জানাতে থাকে যে তাঁর সকল মনোযোগ ও অনুরাগ এক বন্য পুরুষকে ঘিরে, যে বন্য-র স্বপ্নে ও কল্পনায় ভরে আছে নারীর হৃদয়, বহু বহু কাল ধরে। তার জন্য নারীর প্রাণ কখনো ভরে উঠেছে বিষাক্ত মধুতে, কখনো অস্তিত্ব নিংড়ানো কান্নায়। তবু এ পুরুষের জন্য নারী থেকেছে তৃষিত, আকুল, অধীর, বিমুখ, বিতৃষ্ণ, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দোটানায় চিরকাল ধরে ।