somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী সিনেমা – খোঁজ দ্যা সার্চ

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চতুর্মাত্রিকে বেশ কিছুদিন আগে একজন ব্লগার একটা বাংলা সিনেমার লিংক দিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন । ভাবলাম বহুদিন বাংলা সিনেমা দেখা হয় না – এই ছবিটা দেখব – তাই ছবিটা ডাউনলোড দিলাম । ছবিটার নাম খোঁজ দ্যা সার্চ ।বাংলা ব্লগে মুভি রিভিউ পড়তে পড়তে মনের মাঝে একটা খায়েস জাগছিল যে আমিও একদিন মুভি রিভিউ লিখব । তবে সবাই লিখে সিরিয়াস মুভি নিয়ে তবে আমি লিখবো কমেডি মুভি নিয়ে।খোঁজ দ্যা সার্চ মুভিটা দেখার পর মনে হল এইতো পাইছি – এতদিনের খায়েশ পূর্ণ করার মত একটা মুভি – যেটা নিয়া একটা মজার রিভিউ লেখা যাবে । যথারীতি রিভিউ লিখতে বসলাম – লিখতে বসে দেখি কিছুই লিখতে পারছি না । টেনশনে পড়ে গেলাম,চেষ্টা করলাম লিখতে না পারার কারণ বের করতে ,অবশেষে বোঝতে পারলাম লিখতে না পারার কারণ । আসলে এই ছবিতে রিভিউ লেখার মত কিছুই নাই, নিজের উপর বুলডোজার চালাইয়া যদি রম্য টাইপ কিছু একটা লেখি সেটা পড়ে পাবলিক ছবি দেখা তো দুরে থাক আমারে উল্ঠো মাইর দিব ।

আজকাল দেখছি সিনেমা রিলিজ হওয়ার পর – সিনেমা হলের বাহিরে টিভি রিপোর্টাররা দাঁড়াইয়া থাকেন – তাদের কাজ হল সিনেমা শেষ হলে মানুষের মুখের সামনে মাইক ধরা আর জিজ্ঞেস করা সিনেমাটা কেমন লাগল সে অনুভূতি জানানো। আমিও ঠিক করলাম যেহেতু রিভিউ লিখতে ব্যর্থ হয়েছি তাই এই ছবি নিয়া একটা কাল্পনিক পাবলিক জরিপ করলে কেমন হয় – তাহলে আসুন দেখি রিপোর্টার আর খোঁজ দ্যা সার্চ সিনেমার দর্শদের কথোপকথন -

রিপোর্টার – দর্শক মণ্ডলী আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি মনিকা সিনেমা হলের বাহিরে ।অপেক্ষা করছি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাওয়া ছবি “খোঁজ দ্যা সার্চ” কখন শেষ হবে কখন আমরা জানতে পারব সিনেমা সম্পর্কে দর্শকদের অনুভূতির কথা । এই তো একজন দর্শককে দেখা যাচ্ছে উনি হাসতে হাসতে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসছেন । চলুন শুনি উনি কি বলেন -

রিপোর্টার – আচ্ছা আপনি এরকম হাসতে হাসতে সিনেমা থেকে বের হয়ে আসছেন কেন?
দর্শক – আমারে কিছু জিগাইয়েন না ভাই – আগে আমারে হাসিটা থামাতে দেন ।
রিপোর্টার – কেন ভাই কি হইছে -তাছাড়া আপনার এত হাসির কারণ?
দর্শক – ভাইরে ছবির পোষ্টার দেখে একশন মুভি মনে করে ছবি দেখতে ঢুকছিলাম ।ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি এটা একটা কমেডি মুভি। এমন কমেডি ভাই পাবলিক হাসি থামাতে পারছে না ।

রিপোর্টার – এইদিকে একজনকে দেখা যাচ্ছে খুব উত্তেজিত হয়ে টিকেট মাষ্টারের রুমের দিকে যাচ্ছেন ।আসুন দেখি উনি কেন এত উত্তেজিত । আমি এখন কথা বলব একজন উত্তেজিত দর্শকের সাথে । ভাই আপনি কি একটু বলবেন আপনি এত উত্তেজিত কেন?
দর্শক – আর বলিয়েন ভাই – আসছি ছবি দেখতে, ভিতরে ঢুকে দেখি শুধু ছবির ট্রেলার দেখায় ।টাকা দিয়া টিকেট কেটে কি ট্রেলার দেখতে আসলাম নাকি । অন্যান্য মুভির এক মিনিটের ট্রেলার দেখে অনেক কিছু বুঝা যায় কিন্তু এই মুভির আড়াই ঘণ্টার উপরে ট্রেলার দেখলাম,মাগার ছবির কিছুই বোঝলাম না ।তাই আমি আমার টাকা ফেরত চাই ।

রিপোর্টার – ঐদিকে একজনকে দেখা যাচ্ছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে সিনেমা হল থেকে বের হচ্ছেন । কি ভাই ছবি কেমন লাগল?
দর্শক – অন্যরকম একটা ছবি দেখলাম ।
রিপোর্টার – অন্যরকম ব্যাপারটা যদি একটু বিস্তারিত বলতেন ।
দর্শক – পুরা ছবিটাই একটা অন্যরকম ছবি – সবচেয়ে বড় অন্যরকম যে বিষয়টি আমার চোখে ধরা পড়েছে সেটা হল -ছবিতে কোন গল্প ই নাই – গল্প ছাড়া এই বোধয় পৃথিবীর সিনেমার ইতিহাসে প্রথম কোন মুভি বানানো হল ।
রিপোর্টার – আর কিছু ?
দর্শক – ছবিতে নায়ক ফাইটিং নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে উনি অভিনয়ের কোন সুযোগই পাননি ।ছবিতে নায়কের হাতেগোনা কয়েকটা ডায়লগ ছিল। নায়ক মাঝেমাঝে ডায়লগ দিয়ে দর্শকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন – ছবিতে উনার চরিত্রটি আসলে বোবা’র চরিত্র ছিল না ।

রিপোর্টার -সামনে একজনকে দেখা যাচ্ছে বেশ হন্তদন্ত হয়ে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসছেন । আপনি এত হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসছেন কেন?
দর্শক – আমি খুঁজতাছি -
রিপোর্টার – আপনি কি খুঁজতাছেন?
দর্শক – এই ছবিটা যে বানাইছে তারে খুঁজতাছি ।
রিপোর্টার – তারে কেন খুঁজতাছেন?
দর্শক – তারে একটা স্পেশিয়াল ধন্যবাদ দিমু ।
রিপোর্টার – স্পেশিয়াল ধন্যবাদ কেন?
দর্শক – আমি এত দিন একটা সমস্যায় ভুগছিলাম – এই ছবি দেখার পর আমার সে সমস্যার সমাধান পাইয়া গেছি ।
রিপোর্টার – আরেকটু যদি খুলে বলতেন -
দর্শক – আমার এক দুশমন আছে ।যারে আমি চাইছিলাম শারীরিকভাবে আঘাত না করে বা জেল হাজাতে না ঢুকিয়ে শাস্তি দিতে । কিন্তু আমি এতদিন কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।এই ছবি দেখার পর আমি সে পথ খুঁজে পাইছি ।
রিপোর্টার -কি পথ খুঁজে পেলেন ?
দর্শক – তারে আমি আমি আমার টাকা খরচ করে টিকিট কেটে সিনেমা হলে এনে এই ছবি দেখামু – তারপর ছবির অরিজিনাল ডিভিডি তারে গিফট দিমু ।

রিপোর্টার – আমার পিছনের দিকে একজনকে দেখা যাচ্ছে কোমরে হাত দিয়ে ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে সিনেমা হলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছেন । আপনার কি হয়েছে – আপনি এইরকম ল্যাংড়াচ্ছেন কেন?
দর্শক – আরে ভাই ঢুকছিলাম ছবি দেখতে – ছবি শুরু পর পর্দায় শুরু হল ফাইট আর সাথে সাথে হলের ভিতর শুরু হইল হাসাহাসি । ফাইট আর হাসাহাসির ধাক্কায় চেয়ার থেকে পড়ে আমার কোমর শেষ ভাই ।হু মাগো আমার কোমর শেষ হইয়া গেল গো ।

রিপোর্টার – এখানে একজন দর্শক ঝিম ধরে বসে সিগারেট টানছেন । ভাই ছবিটা কেমন দেখলেন ?
দর্শক – বুঝতাছি না কেমন হবে ?
রিপোর্টার – মানেটা বুঝলাম না
দর্শক -সবশেষে দেখলাম টু বি কন্টিনিউ লেখা – তাতে বুঝলাম এটা ছিল ছবির ট্রায়াল ভার্শন – ফুল ভার্শনটা পরে আসবে ।

রিপোর্টার – দেখা যাচ্ছে এক লুঙ্গি পড়া চাচা মিয়া আমার দিকে হেঁটে আসছেন । আচ্ছা চাচা মিয়া ছবিটা কেমন দেখলেন ?
দর্শক – কি কমু কন,আমিতো অনেক কিছু বুঝি নাই
রিপোর্টার – বুঝেন নাই কেন?
দর্শক – কারণ ছবিতে অনেকে ইংরেজিতে ডায়লগ দিছি । আমি মূর্খসূর্খ মানুষ ইংরেজি ডায়লগ কেমনে বুজুম কন ? তয় ভাইজান ১ নম্বর নায়িকাটারে বেশ পছন্দ হইছে ।

রিপোর্টার -এইদিকে একজন ডিজিউস দর্শককে দেখা যাচ্ছে ।আচ্ছা ছবিটি সম্পর্কে আপনার মতামতটি যদি আমাদের একটু ব্যক্ত করতেন ।
দর্শক – প্রথমে আমি বুঝেছিলাম এটি একটি হলিউড মুভি । কিন্তু আমাদের বাংলা সিনেমার সেই চিরায়ত দৃশ্যটি দেখে বুঝলাম এটা একটা বাংলা মুভি ।
রিপোর্টার – কোন চিরায়ত দৃশ্য ?
দর্শক – ঐ যে নায়ক গুণ্ডাদের তাড়া খাইয়া নদীতে ঝাপ দেয়,তারপর নায়ককে গ্রামের গরীব কোন লোক নদীর তীর থেকে তুলে নিয়ে সেবা শুভ্রষা দিয়ে ভাল করে তুলে ।

রিপোর্টার -এক উদাসী দর্শককে দেখা যাচ্ছে সিনেমা হলের সামনে দাঁড়াইয়া বেশ উদাস হয়ে ছবির পোস্টার দেখছেন ।কাছে গিয়ে দেখি উনি ছবি সম্পর্কে কি বলেন । আচ্ছা ভাই ছবিটা আপনার কেমন লাগলো ?
দর্শক – বেশ জোরে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন – জটিললল ।
রিপোর্টার – জটিল কেন?
দর্শক – কারণ ছবির আগা মাথা কিছুই বুঝি নাই – তাই ছবিটা আমার কাছে জটিল মনে হল । আর ছবির পরতে পরতে লুকিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আর আজব আজব সব ধাঁধা । সেসব প্রশ্নের বা ধাঁধার উত্তর একমাত্র ছবির পরিচালক ছাড়া পৃথিবীর আর কারোর দেয়ার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না ।

রিপোর্টার – দর্শক মণ্ডলী আপনারা এতক্ষণ শুনলেন খোঁজ দ্যা সার্চ মুভির দর্শকদের একশন রি-একশন । এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন ছবিটা দেখবেন কি দেখবেন না !!!!

সতর্কীকরণ –এই ছবিটি যদি কেউ দেখতে চান তাহলে শারীরিক মানসিক অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে – তাই এই ছবিটা দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন ।

ট্রেলারে একটু চোখ বুলিয়ে নেন -


ও বন্ধু লাল গোলাপী গানটাও শুনতে পারেন -


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৪
২৪টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×