- আমরা মনে হয় জীবনেও কোন একটা বিষয়ে একমত হতে পারবো না। সেই শুরু থেকেই আমাদের তিনজনের চিন্তাধারা, চলাফেরা, কথা বলার ধরন সবকিছুই আলাদা ছিল। তবে কি আমরা বন্ধু নয় ? আমরা কি একে অপরকে ফিল করি না?
- ইফতি শোন, তুই যেরকম ভাবছিস ব্যাপারটা ঠিক সেরকম না। আমরা একে অপরের অনুপস্থিতি ঠিকি বুঝি। তুই কি বলিস রাহাত?
- আমি আর কি বলব, সবতো তোরাই বলছিস। আসলে আমার মনে হয় আমরা বন্ধু, আবার বন্ধু না।
- সেটা কি রকম?
- আমার এক্সপ্লেনশন তোদের ভাল লাগবে না। তার চেয়ে বরং একটা বিড়ি ধরা। তিনজনে মিলে ভাগাভাগি করে টানতে টানতে শীতটাকে উপভোগ করি।
- জীবনে উপভোগ করার অনেক কিছু আছে, তবে শীত সে তালিকায় কোনভাবেই পড়ে না, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। শীতের কাজ ই হল বারবার মনে করিয়ে দেয়া জীবনটা কাঁথা তা আর বালিশ ছাড়া কিছু না।
- জীবন কাঁথা বালিশ হতে যাবে কেন! জীবনে তোরা আর স্বতন্ত্র হতে পারলি না!
- তোরা মানে আমাদের দুজন কে বোঝালি?
- হ্যাঁ তোদের দুজনকেই বুঝালাম। তবে আলাদা আলাদাভাবে।
- তাহলে শোন আমার কথা, আমি স্বতন্ত্র নই, কোনোদিন ছিলামও না, কোনোদিন হতেও পারব না। আমি আমার সুবিধামত একদিকে হেলে থাকি, এক পাশ দিয়ে বয়ে চলি। চারপাশ দিয়ে হাত বাড়াই, আটদিকে কান খুলে দেই। একচোখে মারিয়াকে ইশারায় করি। মাঝেমাঝে বুকের ভাল্বগুলো কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে জ্বালিয়ে তুলি। ঘুম ঘুম শরীর জাগিয়ে শাড়ীর ভাঁজ খুলি। ইন দিস পয়েন্টে আমি যে স্বার্থপর সেটা প্রমাণিত হয়ে যায়।
- এসবের ভিতর মারিয়া, শাড়ীর ভাঁজ এসব আসলো কোথা থেকে ! তুই না আজব একটা চিজ ! ভাল ই ত্যানা প্যাঁচাতে পারিস।
- যার উপভোগের তালিকায় শীত থাকে, সে কিভাবে বুঝবে মারিয়া আর শাড়ীর ভাঁজের মর্ম। আর আমি একটা ভাল মানের চিজ ই, দেখছিস না শীতে কেমনে জমে গেছি।
- তুইও কি ওর মত মেনে নিয়েছিস যে তুইও সুবিধাবাদী স্বার্থপর !
- না আমি তার চেয়েও খারাপ, আমি হলাম অসভ্য। জিলেট ফোম আর রেজার দিয়ে প্রত্যহ শরীরের লোম পরিষ্কার করেও সভ্য হতে পারিনি। চিৎকার দিয়ে তোর এই জেন্টলম্যান সোসাইটিকে বলতে ইচ্ছে করে আমি তোমাদের মত সভ্য নই, হতেও চাই না। তবে মানবতাকে আগলে রাখতে অন্তিম ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে দেই।
- বাহ কি দারুণ! আমি একজন অসভ্য আর একজন স্বার্থপরের সাথে বাস করছি ! অসভ্যটা আবার মানবতাবাদী, স্বার্থপরটা রোম্যান্টিক।
- আমরা তো বললাম আমাদের কথা তোর কথা বল।
- আমি তোদের মত এমন না, তবে আমি প্রত্যহ সাবলীল পাপ করে ঘুরে বেড়াই। অতঃপর স্নান করে মুছে ফেলার চেষ্টা করি ।
- হাহা হাহাহাহা এর মানে তুই পাপী?
- আশ্চর্য ! এখানে হাসার কি হল, পাপের কথা শুনলে হাসতে হবে নাকি ! আমি তো পাপ জমিয়ে রাখছি না, নিত্য মুছে ফেলে দেই।
- কোথায় ফেলিস, ডাস্টবিনে? না ফুটপাথে?
- আমার সাথে ইয়ার্কি করিস, না?
- না দোস্ত ইয়ার্কি না, জানলে একটু ভাল হত আরকি। সেখান থেকে পাপ তুলে এনে দেখতাম, সে পাপে মারিয়া বা শাড়ির ভাঁজের মত কিছু আছে কিনা।
- আমার কি মনে হয় জানিস আমাদের তিনজনের মাঝে দারুণ একটা মিল আছে।
- অসম্ভব আমাদের মাঝে কোন মিল নাই , থাকতে পারে না। আমরা হলাম তিন গ্রহের তিন প্রাণী, শুধু জীবনের খাতিরে বাস করছি এক ছাদের নিচে। সে খাতির ফুরিয়ে গেলে আমরা আবার আমাদের গ্রহে ফিরে যাব।
- আমারও নাকিবের মত মনে হয় আমরা হলাম তিন গ্রহের তিন প্রাণী। তারপরেও শুনতে ইচ্ছে করছে কোথায় মিল খুঁজে পেলি !
- আমার মনে হয় আমরা তিনজনের বুকেই একটা মাকড়শা বাস করে। সে অনবরত জাল বুনে যায়। সে জালে বিছানো থাকে আমাদের ব্যর্থতার সুখ, সে জালে ঝুলে থাকে আমাদের নির্জলা যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাস। সে জালে যখন আমাদের হৃৎপিণ্ড পুরাটা প্যাঁচ খেয়ে যায়, তখন আমরা কেউ স্বার্থপর হয়ে উঠি, কেউ অসভ্য আর কেউ পাপী। আসলে আমরা শিকড়হীন তিনজন মানুষ, আমরা আমাদের মাঝে একটা অদৃশ্য শিকড় খুঁজে ফিরছি, জানিনা সেটার নাম বন্ধুত্ব কিনা।
- এরপর পুরা একমিনিট ঘরটা মিষ্টি এক নীরবতায় ছেয়ে গেল, সে নীরবতা ভেঙ্গে ইফতি বলে উঠল – একটা বিড়ি হলে মন্দ হত না, তিনজনে ভাগাভাগি করে টানা যেত।
- নাকিব বলে উঠল – সেক্সের পর যদি পৃথিবীতে কোন কিছু উপভোগ করার মত থাকে সেটা হল শীত।
- রাহাত বিড়িতে হালকা একটা টান দিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠল – জীবনটা আসলেই কাঁথা আর বালিশ ছাড়া আর কিছু না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৫