somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশাখী মেলায় কাজলাদিদির দাওয়াত ছিল

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পয়লা বৈশাখে আমি তোমার সাথে মেলায় যাব। প্রথমে মাটির প্লেটে আমি পান্তা ইলিশ খাব। আমি জানি ইলিশে তোমার এলার্জি আছে। তাই তুমি খুব ঝাল মরিচ আর ঝাঁঝালো পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা খাবে। মরিচ আর পেয়াজের ঝালে তোমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়বে, আমি আমার শাড়ির সাদা আঁচল দিয়ে সে পানি মুছে দেয়ার সময় মিটিমিটি হাসবো। সেই দৃশ্য আমার বান্ধবী কাজলা তার মুঠো ফোনের হাই রেজোলেশন ক্যামেরা দিয়ে বন্দি করবে। কাজলা সেই ছবি তার ফেইসবুকে আপলোড করে আমাদের ট্যাগ করবে। আমাদের ফেইসবুক বন্ধুরা সে ছবি লাইক করবে, কেউ কেউ আবার কিউট কিউট কমেন্টও করবে। তারপর আমরা পুরো মেলা ঘুরেঘুরে তোমার জন্য একটা বাঁশি কিনবো, আর তুমি আমাকে একটা টিয়ে পাখি কিনে দিবে। কাজলার জন্য একটা সাদা আঁচলের শাড়ি কিনে দিবো। যদিও আমার জানামতে সে শাড়ি পড়েনা। তারপরেও কাজলা’র জন্য একটা সাদা আঁচলের শাড়ি কিনবো। আমার এরকম প্লানের কথা যখন তোমাকে বলেছি – তখন তুমি মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়েছ।

ও কাজলা কে তো আপনাদের সাথে পরিচয় করে দেয়া হল না। সে আমার খুব কাছে মানুষ, কাছের বন্ধু। আমি তারে কাজলাদিদি বলে ডাকি। এক সাথে স্কুল, কলেজ পেরিয়ে এখন ভার্সিটিতে পড়ছি। কিন্তু আমার সাথে তার সবকিছুতেই আকাশ পাতাল পার্থক্য। যেমন আমি খুব শান্ত শিষ্ট টাইপ বাঙালি বধূ টাইপ, আর সে খুব চঞ্চল এবং খোলামেলা টাইপ। আমি যখন আমার বড় ওড়না মাথায় টানি, সে তখন ফু দিয়ে কপালের চুল উড়িয়ে তার ফতুয়ার উপরের বোতাম খুলে দেয়। তার অনেক ছেলে বন্ধু আছে, সে খুব আড্ডাবাজ টাইপের। ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে আমি বাসায় চলে আসি, সে তখন তার ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকে। এমনও হয়েছে রাত ১০/১১ টায় তারে ফোন করলে সে বলত সে এখনও বাসায় ফিরেনি। আমার সাথে তার কেমনে বন্ধুত্ব হল সেটা নিয়ে আমি মাঝেমাঝে খুব অবাক হই। আমি নিজেও জানিনা এই বিপরীত মেরুর মেয়েটাকে আমি এত ফিল করি কেন, কেনইবা বন্ধুদের কথা মনে হলে প্রথমেই মেয়েটার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে।

তুমি প্রায়ই বলো আমি যেন তার সাথে চলাফেরা না করি। আমি তোমার সব কথা মানলেও এই কথাটা মানতে পারিনা। তুমি যখন প্রতিদিন তার বেলেল্লাপনা উচ্ছৃঙ্খল লাগাম ছাড়া জীবনের নতুন নতুন ইনফরমেশন দিতে তখন তোমার সাথে তর্কে জড়িয়ে যেতাম। তুমি যেদিন বললে তার সিগারেট খাওয়ার খবরটা দিলে , সেদিন তোমাকে খুব কড়া রিএক্ট দেখিয়েছিলাম। বলেছিলাম তো কি হয়েছে। একটা ছেলে সিগারেট খেলে সমস্যা না হলে, একটা মেয়ে খেলে সমস্যা হবে কেন!! তুমি আমার এমন রিএক্ট দেখে ইন রিপ্লাই তেমন কিছু বলনি। কিন্তু তোমার অবাক দৃষ্টি আমাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তোমার কাছে থেকে যেদিন শুনলাম সে ড্রাগস নেয়া শুরু করছে, সেদিন থেকে আমি তাকে নিয়ে বেশ টেনশনে আছি। তাই ঠিক করেছি তোমাকে নিয়ে তার সাথে একদিন বসব, দুজনে মিলে ভাল করে বুঝিয়ে বলব। আর সেই দিন পয়লা বৈশাখ হলে খুব ভাল হবে বলে আমি তুমি মিলে ঠিক করলাম পয়লা বৈশাখ তার সাথে বসবো। বছরের প্রথম দিন থেকে তার একটা নতুন জীবন শুরু হবে। তুমি প্রথমে তাকে আমাদের সাথে বৈশাখী নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানালেও আমার সব প্লান শুনে তুমি রাজি হয়ে গেলে। কাজলাও প্রথমে রাজি ছিলনা, কিন্তু আমার পীড়াপীড়িতে সেও আমাদের সাথে মেলায় যেতে রাজি হল।

পয়লা বৈশাখ সকাল থেকে কাজলা’কে মোবাইলে ট্রাই করছি কিন্তু বারবারই তার মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে। ভাবলাম রাত জেগেছে হয়ত তাই বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে। তার আবার রাত জাগার অভ্যাস আছে। মাঝেমাঝে সে আমাকে রাত তিনটায় মেসেজ দিয়ে জানতে চাইত কেমন আছি! অদ্ভুত একটা মেয়ে। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি বৈশাখে সাজে তোমার সাথে যেখানে দেখা করার কথা সেখানে অপেক্ষা করছি। একটু পরে তুমি আসলে। তোমাকে দেখে আমি খুব অবাক হলাম। কারণ তুমি একটা শর্ট পেন্ট আর একটা গেঞ্জি পড়ে আসছো, হাতে একটা পত্রিকা। অথচ তোমার সাথে কথা ছিল তুমি পাঞ্জাবী পাজামা পড়বে। তুমি আমাকে কুশলাদি না বলেই করেই জিজ্ঞেস করলে – তুমি কিছু শুনছ? আমি একটু কড়া হয়ে বললাম – আমি কি শুনবো। তখন তুমি পত্রিকাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলে। আমি পত্রিকা হাতে নিয়ে পত্রিকা দিকে তাকানোর কিছুক্ষণ পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম।

কাজলা আমাকে একদিন তার এক মধ্যরাতের মেসেজে লিখেছিল – যে নিয়মগুলো তোর/আমার মত মেয়েদের একটা শিকলে আটকে রাখে।আমি সমাজের সেসব উদ্ভট নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম বানাবো, এবং সেটা আমাদের এই সমাজে প্রতিষ্ঠা করবো। কাজলা তার নিয়ম এই সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তার আগেই সে সমাজ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। সমাজ ছেড়ে কিন্তু সে তার ইচ্ছায় যায়নি। তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে বিদায় করা হয়েছে। তার বিদায়ের দিন পত্রিকার একটা শিরোনাম হয়েছিল এরকম – বারিধারায় ধর্ষণের পর তরুণী খুন। কাজলা তার ছেলে বন্ধুর বারিধারার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। সেখানে তারা চার বন্ধু থাকত। চারজনই কাজলার বন্ধু। সেই চার বন্ধু তার আরও পাঁচজন বন্ধুকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে। তারপর তারা নয়জন মিলে পালাক্রমে কাজলা’কে সারারাত ধর্ষণ করে। সকালের দিকে তাকে তার নিস্তেজ শরীরকে বালিশ চাপা দিয়ে আরও নিস্তেজ করে দেয়।

বন্ধুদের কথা মনে হলে আজও একটা সুইট মেয়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে। যে মেয়েটি বৈশাখী মেলায় আমাদের একটা ছবি তুলার কথা ছিল। যে মেয়েটিকে আমাদের একটা সাদা আঁচলের শাড়ি কিনে দেবার কথা ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×