somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরানো সে সব ঈদ স্মৃতি বায়স্কোপের পর্দায় ভেসে উঠে

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনে দিনে আমি একজন একা এবং নস্টালজিক টাইপের মানুষ হয়ে উঠছি। ইদনিং বেশীর ভাগ সময়ই নিজেকে নিয়ে খুব ভাবি, আর মাঝেমাঝে চোখ বন্ধ করে জীবনের সুন্দর স্মৃতিগুলোর বায়স্কোপ দেখি। সেই বায়োস্কুপের পর্দায় জীবনের শতশত স্মৃতির সাথে-সাথে আমার পুরানো সে সব ঈদের স্মৃতিও ভেসে উঠে।

এখনও মনে আছে দলবেঁধে সন্ধ্যার পর ঈদের চাঁদ দেখতে যেতাম। কে কার আগে চাঁদ দেখবো সেই প্রতিযোগিতায় পলক না ফেলে পশ্চিমের আকাশে চেয়ে থাকতাম। কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে মন খারাপ করে ঘরে ফিরতাম, আর চাঁদ দেখা গেলেতো আমাদের আনন্দ কে দেখে, হৈ চৈ হই-হুল্লোড় করে বাড়ি ফিরতাম। খুশিতে আর টেনশনে রাতে ঘুম হত না। টেনশনটা ছিল কে কার আগে সকালে পুকুরে গোসলে নামবো। খুব ভোরে দলবেঁধে বাড়ির বড় পুকুরে গোসল করে, নতুন কাপড় পড়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতাম। নামাজ পড়া শেষে বাড়ি ফিরে বিভিন্ন রকমের পিঠা খাওয়া হত।পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরে গিয়ে আবারও খাবার। দুপুরের দিকে শুরু হত মার্বেল খেলা। ঈদের দিন কার সাথে মার্বেল খেলবো সেটা কিন্তু আগে থেকে ঠিক করা থাকতো। সময় এবং জায়গা-মত গেলেই মার্বেল খেলার সাথীকে পেয়ে যেতাম। বিকেলে থাকতো ফুটবল ইভেন্ট, পাশের গ্রামের সাথে, সেটাও আগে থেকে ঠিক করা থাকতো। যে ঈদে বিকেলে ফুটবল খেলা না থাকতো সে ঈদে সাদাকালো টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখতাম।

তারপর বড় হলাম, শহরে চলে গেলাম। বন্ধু-বান্ধব হল, চাহিদা, টেস্ট, আবেগ সব বদলে গেল। সাথে ঈদের আনন্দের ধরণও বদলে গেল। সন্ধ্যা পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে শপিং করা ছিল ঈদের কিছুদিন আগের নিয়মিত রুটিন। খুব আয়োজন করে খুব কাছে বন্ধুদের ঈদ কার্ড দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতাম। ঈদের আগের রাতে ফাইনাল শপিং করে সেলুনে গিয়ে চুল কেটে বাসায় ফিরতে ফিরতে মাঝরাত পেরিয়ে যেত। সকালে উঠে নামাজ পড়ে আসার পর লাচ্চি, সেমাই, পিঠা,পায়েস, কোর্মা, পোলাও খেতাম। খাওয়া দাওয়ার পরে বসতাম গান শুনতে, ঈদে বের হইয়া যত এলবাম কিনতাম একে একে সব শুনতাম। গান শুনে-শুনে সব ঈদ মেসেজের রিপ্লাই করতাম। বিকেলে বের হতাম বন্ধুদের সাথে মোটর সাইকেলে চক্করে। চক্করে শহরের বাহিরে কোথাও যাওয়া হত। সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতাম। ফিরে এসে একে একে সব বন্ধুদের ঘরে দলবেঁধে যেতাম। রাতে বাসায় ফিরে ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে বসতাম।

তারপর চলে আসলাম বিদেশে। বিদেশে আসার পর ঈদটা কেমন পানসে হয়ে গেছে। কোনদিকে ঈদ আসে আর কোনদিকে ঈদ যায় সেটা ভালো করে বোঝতেই পারিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঈদের নামাজ পড়তে যাই। তারপর সারাদিন বাসায় টিভি দেখেই কেটে যায়। মাঝেমাঝে ঈদের দিনও কাজ থাকে, তাই ঈদের জামাত পড়ে এসে কাজে চলে যেতে হয়। শনিবার বা রবিবারে ঈদ হলে পরিচিত দুই একজন বাসায় বেড়াতে আসেন, আমরাও বেড়াতে যাই। এখন আর কাউকে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়না। সবাইকে ভার্চুয়ালি ফেইসবুক, হোয়াটস আপের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়। তবে বাংলাদেশের ঈদ মিস করি, ঈদগাহে নামাজ পড়ার পর কোলাকোলি মিস করি, খাবার-দাবার মিস করি, বন্ধুদের সাথে শপিং মিস করি। তারপরেও কেন জানি উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি কখন ঈদ আসবে। তারপরেও অপেক্ষায় থাকি কখন বাংলা টিভিতে শুনবো কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কালজয়ী ঈদের গান - ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

ঈদের মত উৎসবগুলোর কারণেই আমাদের জীবনটা মাঝেমাঝে অন্যরকম সুন্দর হয়ে উঠে। তাই আমাদের জীবনে ঈদের মত উৎসবগুলোর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সবার ঈদ যেন কাটে খুব আনন্দে,খুব মজায়,খুব খুশিতে,খুব ফুর্তিতে! যে যে জায়গায় আছেন সে জায়গায়ই নিজের মত করে উপভোগ করুন ঈদ আনন্দ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা । ঈদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:২৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×