somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় হরমুজ আলী ভাই

২২ শে জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





পূবের আকাশ এখনো অন্ধকার, ভোরের আলো ফুটতে দেরি আছে। হরমুজ আলী বিছানা ছেড়ে মুখ ধুয়ে জামা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। গন্তব্য যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজার। গভীর রাত থেকে ফজর পর্যন্ত কাঁচামাল বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক আসে এই বাজারে। হরমুজ আলীর কাজ ট্রাক থেকে কাঁচামাল আনলোড করা। কখনো ট্রাকের ডালায় বসে কখনো আড়ৎদারের ভিড়ি'তে বসে ওজন দেয়া লাগে পাইকারের চাহিদা মত। সব পাইকারের পছন্দ কয়েলদার হরমুজ আলীকে। হরমুজ আলী কখনো কাউকে ওজনে ঠকায় না। বেলা সাড়ে নয়টা পর্যন্ত একটানা এই কাজ করে চলেন তিনি।

দশটার পর বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে যায় ডেমরা রোডে একটা বাসের বডিবিল্ডিং ওয়ার্কশপে। সেখানে তিনি ওয়েল্ডিং এর কাজ করেন। এখানে তার ডিউটি বেলা দুইটা পর্যন্ত।

দুটোর পর বাসায় ফিরে গা-গোসল দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে একটা ঘুম দেয় বিকেল চারটা পর্যন্ত। তারপর চলে যায় সায়েদাবাদের বাস টার্মিনালের একটা বাস কাউন্টারে। রাত দশটা পর্যন্ত সেখানে তার ডিউটি। এখানে তিনি টিকিট কাউন্টারে দুর পাল্লার যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেন। ডিউটি শেষ করে প্রায় প্রতিদিন বাসায় ফেরেন সাড়ে দশটা থেকে এগারোটা টার মধ্যে। তারপর ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে হারিয়ে যায় হরমুজ আলী।

গত একুশ বছর তিনি এই একই রুটিনে চলে আসছেন। তার চেহারায় কোন ক্লান্তি কোন হতাশা কোনদিন দেখিনি। তার কোন এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋন নেয়ার রেকর্ড নাই, বড় রকমের ধার-কর্জ করার রেকর্ডও নাই।

হরমুজ আলীর এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মেয়ে দুটো দারুণ মেধাবী হয়েছে। ছেলেটা গতবার নটরডেম কলেজে চান্স পেয়ে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছে আর মেয়েটা ইডেন কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।

হরমুজ আলীর কোন ছুটির দিন নাই। আমার সাথে হরমুজ আলীর দীর্ঘ বছরের পরিচয়। বয়সে আমার দুই তিন বছরের বড়। উনার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানায়।

২০০০ সালে বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢাকায় সংসার পেতে ছিলেন। সেই থেকে আজ অব্দি তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা কত কিছু। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পর বাস কাউন্টারে গিয়ে তার সাথে আলাপ জমাই। সুখ দুঃখের কতো আলাপ চলে তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে।

মাধ্যমিক পাশ করার পর হরমুজ আলী নিম্ন বিত্ত পরিবার থেকে অভাবের টানে ঢাকায় এসে বদলে ফেলেছে তার নিজের সংসারের অবস্থা সাথে বাপের সংসারের দায়িত্ব সমান তালে। ছোট ভাই বোনের লেখা পড়া, বিয়ে-শাদি, চাকরি-বাকরি সবই করেছে এই হাতের কামাই করে। এইতো গত মাসে তার সব চেয়ে ছোট ভাইকে শিপইয়ার্ডের কাজের ভিসায় সিংগাপুর পাঠিয়েছে।

আমি অবাক হয়ে মাঝে মাঝে ভাবি এদেশের কতো ছেলে মেয়ে চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে। দুই কলম পুথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত হয়ে বিরাট আত্ন অহংকারে ভোগে। এ কাজ করলে জাত চলে যাবে, ও কাজ করলে অমুকে কি মনে করবে, তমুকে কি ভাববে ব্লা ব্লা ব্লা।

গতকাল ছিলো হরমুজ আলীর জন্মদিন। তার জন্মদিনটা গতবার তার ভোটার আইডি কার্ড থেকে জেনেছিলাম। মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম একটা সারপ্রাইজ দেবো। হোক এটা তার রিয়েল জন্মদিন বা ঠিক করে দেয়া। অফিসিয়ালি তো এটাই তার বার্থ ডে।

আমি রাত দশটার সময় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তার কাউন্টারে গিয়ে হাজির। তাকে না জানিয়ে অতি ক্ষুদ্র উপহার একটি শার্ট নিয়ে গিয়েছিলাম। উপহার পেয়ে তার চেহারার অভিব্যাক্তি আর চোখের জলের বর্ননা প্রিয় পাঠক কোন শব্দ দিয়ে লিখতে পারবো না। প্রকাশও করতে পারবো না। শুধু নিজের গলাটাও ধরে আসছিলো তার অশ্রু দেখে।

হরমুজ আলীর মতো নিরলস সংগ্রামী মানুষদের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা নিরন্তর ।

ভালো থাকবেন হরমুজ আলী ভাই।


ঢাকা, শনিবার
০৭ শ্রাবন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

ছবিঃঅন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

'প্রাণে-ধনে' নাকি 'ধনে-প্রাণে'?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৩১


প্রথমে মুজতবা আলীর 'দেশে-বিদেশে'র' পাঠান মূলুকে খোদ পাঠানের মুখ থেকে শোনা একটা প্রাক্টিক্যাল কৌতুক দিয়ে শুরু করছি ( কৌতুকের মুল বিষয়বস্তু কাকতলীয়ভাবে কিছু মাথামোটা রাজনীতিবিদদের সাথে মিলে গেলে লেখক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×