somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পটা কার?- তৃতীয় পর্ব

২৩ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-কিরে কই গেছিলি?
-মা, বন্ধুদের সাথে একটা হ্যাংআউট ছিল।
-হ্যাং আউট নাকি **গিগিরি করতে গেছিলি?
-মা, তুমি এসব কি বলো ?
-কি বলি মানে? তোর বাপ হইসে এক *গিবাজ।৬৪ জেলার কোন জেলায় তার একটা করে **গি নাই? আর তার মাইয়া হইয়া তুই কি করবি? তুই আস্ত একটা **গি হইয়া রাতে বিরাতে বাহিরে কাটাইয়া আসবি এটাই তো স্বাভাবিক।
-মা, বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
-ও সত্যি কথা হইলেই সেটা বেশি? তুই আর তোর বাপ একই ধাঁচের ।

মাঈশা মায়ের কাছ থেকে সরে গেল।পাশের রুমে চলে গেল।মার প্রতি তার চূড়ান্ত রাগ উঠল। কিন্তু মাঈশা ইচ্ছে করলেই মাকে যা তা বলতে পারবে না। মা হচ্ছে মা। মাকে যা-তা বলা যায় না। মায়েরা ভুল করলেও সেটা ভুল নয়। মায়েরা পাপ করলেও সেটা পাপ নয় । কিন্তু হামিদা বেগম যা শুরু করলেন তাতে মাঈশার পক্ষে আর কথা বলা প্রায় অসম্ভব। একজন মা তার মেয়েকে **গি বলছেন এটা মোটেও ভালো কিছু নয়। মাঈশার যে ফিরতে দেরি হবে এটা সে তার মাকে বলেই গিয়েছিল। আসতে দেরি হয়েছে কারণ হঠাত কলিম উদ্দিন মানে মাঈশার বাবা ফোন করে মেয়েকে দেখতে চান। কি একটা জরুরী কথা আছে বলে মাঈশাকে বলেন অপেক্ষা করতে। মাঈশার বাবার কথাবার্তায় ও আজকে সে বিরক্ত। মাঈশা কোন কিছু জানতে চায় না তবু তাকে জানাতে এসেছিল তার বাবা। মাঈশার সাথে তার বাবার কথাবার্তার নমুনা নীচে দেয়া হলো।

-মাঈশা , তোকে আজকে আমি কিছু কথা বলব। এগুলো না বললে তোর মনে হবে তোর বাবা আসলে অনেক খারাপ একটা বাবা। এখন হয়তো তোর খারাপ লাগবে না তবে তোর বাবা মারা গেলে তখন তুই গর্ব করে কিছু বলতে পারবি না।

-কি কথা বাবা?

-তোর মায়ের সাথে আমি কেন থাকি না। কিংবা আমাদের সংসার বলতে আসলে কিছু নাই কেন।

-আমি এটা কখনো জানতে চেয়েছি?

-তোর জানা দরকার। তোর বয়স হয়েছে। তোর বাবা-মারও বয়স হয়েছে ওপারে যাওয়ার। তার আগে এটা তোর জন্য জানা জরুরী।

-আমার জন্য জরুরী নয় এটা।

-তুই শুনবি এখন।তোর মায়ের সাথে যে কেয়ারটেকার সেলিমের একটা সম্পর্ক আছে তুই সেটা জানিস?

-সম্পর্ক! কি ধরণের সম্পর্ক?

-বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক।

-মানে! এটা কি বলছো তুমি?

-হ্যাঁ। এটাই সত্য। আমি নিজে দেখেছি এটা।

-কি দেখেছো?

-তোর জন্মের কিছুদিন পর একদিন দেখি সেলিম তোর মায়ের ঘরে। তখন বাড়িতে আমি আর তোর মা ই থাকতাম। কাজের লোকেরা বাহিরেই থাকত । আমি বরিশাল যাব বলে বাসা থেকে বের হই। কিন্তু কোন কারণে আবার বাসায় ফিরি। আমি গিয়ে দেখি সেলিম তোর মায়ের ঘরে। তোর মা মদ খেয়ে সেলিমের গায়ের উপর শুয়ে আছে। আমি কিছু বলি নি। চলে আসলাম। সে যে আসলাম আর কখনো যাই নি আমি। কিন্তু তোর মায়ের খোঁজ খবর রেখেছি। আমি তোর মাকে কতটুকু ভালোবাসি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমি ওকে কখনো এভাবে দেখতে চাই নি।

-বাবা, স্টপ ।তুমি আমার মায়ের নামে যা-তা বলছো কেন?

এটা বলে মাঈশা বাসায় চলে আসল । আর এসেই শুনলো তার মা তাকে রাস্তার মেয়ে বানিয়ে ফেলেছে। হামিদা বেগম মেয়েকে এসব বলার পর আর একটুও মদ মুখে দেন নি। তিনি দেখলেন মেয়ে মুখ কালো করে তার রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। হামিদা বেগমের হঠাত করেই মন খারাপ হয়ে গেল।তিনি এতদিন দেখেন তিনি যাই করেন না কেন মেয়ে তার রুমেই থাকে। এভাবে মেয়ের সরে যাওয়াটা তাকে একটা ধাক্কা দেয়। মানুষ মাতাল হোক আর যাই হোক মানুষের অন্তর কখনো মাতাল হয় না।

হামিদা বেগম মেয়ের রুমের দিকে গেলেন। দরজা খোলাই ছিল। এই বাড়ির একটা বৈশিষ্ট্য হলো এখানে ভেতরের কোন রুমের দরজা লক করার ব্যাবস্থা নাই। হামিদা বেগম রুমে ঢুকলেন।দেখলেন মাঈশা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে তিনি প্রায়ই দেখেন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে একা একা।হামিদা বেগম কোন সময় মেয়ের একা সময়টাতে ডিস্টার্ব করেন না।তার ধারণা কোন মানুষ একা থাকতে চাইলে তাকে আরো একা থাকতে দেয়া উচিত।একা থাকলে মানুষ নিজেকে উপলব্ধি করতে পারে। দিনে কিছু সময় হলেও মানুষের একা থাকা জরুরি। মানুষ মাঝে মধ্যে একা থাকার ভালোলাগায় হারিয়ে যায়।"একা থাকার এই ভালো লাগায় হারিয়ে গিয়েছি, নিঃসঙ্গতা আমাকে আর পাবে না।"

মাঈশা বলে হামিদা বেগম মেয়ের কাঁধে হাত রাখলেন।খুব আলতোভাবে ।

-মা, আমি একটু একা থাকি?

-তুই যখন আমার পেটে ছিলি তখন কি আমি একা থাকতে পারতাম?

-আমি তোমার পেটেই ছিলাম? তুমি শিওর?

-তাহলে?

-বাবা আমাকে বলল তোর মা বানিয়ে বানিয়ে তোর জন্মের গল্প বলে।সে এগুলা জানার কথা না।

-আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলি?

-হ্যাঁ।

-আর কি বলি?

-কেয়ারটেকার সেলিমের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

-কি সম্পর্ক মানে?

-মা। তুমি মেয়েকে তো ঠিকই রাস্তার মেয়ে বানিয়ে ছাড়লে। কিন্তু সেলিমের সাথে তুমি বাসায় বসে এসব করতে পারলে ! ছিঃ ছিঃ মা।

হামিদা বেগম চলে আসলেন মেয়ের রুম থেকে।মাঈশা মায়ের দিকে তাকালোও না একবার।হামিদা বেগমকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। মাঈশা কিছু বলবে না আজ মাকে।তার যা খুশি করুক।যে মা তার মেয়েকে **গি বলতে পারে সে কখনো মা হতে পারে না।মাঈশা আজ মায়ের রুমে যাবে না।আজ সারারাত সে একা একা থাকবে আজ সারারাত সে একা একা কাঁদবে। সে আজ একা থাকার ভালোলাগায় হারিয়ে যাবে। এই শহরের মানুষদের একটা বড় অংশ কোন না কোন কারণে এভাবে হারিয়ে যায়। কাউকে খুঁজে ফেরানোর মানুষ থাকে আর কারো কেউ থাকে না। মাঈশার সব থেকেও নাই।

হামিদা বেগম রুমে গিয়ে বসে আছেন। হামিদা বেগম আসলে নিজেই জানেন না মাঈশার জন্মের দিনে আসলে কি হয়েছিল। তিনি কি তাহলে মাঈশার মা নন? তাহলে কি তার সন্দেহই সত্যি?

হামিদা বেগম তার স্বামী কলিম উদ্দিন কে এই সন্দেহটাই করেন।হামিদা বেগমের ধারণা হচ্ছে কলিম উদ্দিন কোথাও কোন এক মহিলার পেট বাধিঁয়ে সেই বাচ্চা কোন ভাবে হামিদা বেগমের নামে চালিয়ে দিয়েছে। হামিদা বেগম মাঝেমধ্যে কোনভাবেই মনে করতে পারেন না আসলে মাঈশার জন্মের সময় তিনি কোথায় ছিলেন?

তিনি বেশি কষ্ট পেয়েছেন তার সাথে সেলিমের সম্পর্ক আছে এটা শুনে। কলিম উদ্দিন এভাবে মেয়ের কাছে হামিদা বেগমকে ছোট করলো? এভাবে একটা মিথ্যা বলতে পারলো?

হামিদা বেগম এমনিতেই কলিম উদ্দিনকে বিশ্বাস করেন না।হামিদা বেগম আর কলিমউদ্দিন এর বিয়ের গল্পটা অনেকটা বাংলা সিনেমার গল্পের মত। তার বয়স হয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু কোনভাবেই তাকে বিয়ে দিতে পারছেন না তার বাবা। এদিকে এই মেয়েকে কোনভাবেই যার-তার হাতে তুলে দিলেই হবে না।যে মেয়ে মদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে তাকে কে বিয়ে করবে? যতই তার বাবার টাকা থাকুক। তার উপর মেয়ের একটা কঠিন সমস্যা আছে। ইমামুল হক ভূঁইয়ার অফিসে ইন্টার্ভিউ দিতে আসা এই ছেলেটাকে দেখে তার ভালো লাগে। শিক্ষিত ছেলে। তিনি ইন্টার্ভিউর পর ছেলেটাকে তার বাড়িতে আসতে বলেন।

এদিকে কলিম উদ্দিনের তখন খুব টাকার প্রয়োজন। তার বাবার ক্যান্সার আর মায়ের কিডনীতে সমস্যা। ইমামুল হক তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে একটা সময় রাজি হয়ে যায়। তবে সে সরাসরিই বলে তার বাবা আর মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে। ইমামুল হক সাহেব বললেন তিনি সব টাকা দিবেন। শুধু তাদের মেয়েটা যাতে সুখী থাকে।

এই লোক আজ তাকে কাজের লোকের সাথে জড়ালো? হামিদা বেগম কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। মাঈশাও আর রাতে মাকে দেখতে আসলো না। সকাল ১১ - ১২ টা পার হলেও হামিদা বেগমকে সে বের হতে দেখে নি। মাঈশা ঘরে ডুকে দেখলো হামিদা বেগম এখনো শুয়ে আছেন। মায়ের শরীরে হাত দিয়ে মাঈশা কান্নায় ভেঙে পড়লো। হাসপাতালে নিয়ে জানা যায় গভীর রাতেই হামিদা বেগম স্ট্রোক করে মারা যান ।

কলিম উদ্দিন স্ত্রীকে দেখতে এসেছিলেন। মাঈশা তার বাবাকে গিয়ে বলল, আমার মাকে নিয়ে গর্ব করার মত কিছু কি আছে? থাকলে বলো। মাকে খুব নোংরা মানুষ ভাবতে ভালো লাগছে না। কোন মেয়ে কি তার মাকে নোংরা ভাবতে পারে?

কলিম উদ্দিন কিছু বলল না। শুধু বলল, এখন থাক এসব ।

................................চলবে

দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link

প্রথম পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:২৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×