somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ, তুমি কি বানরের চাচাত ভাই?

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মূল বিষয়ে আসার আগে একটা কথা মনে রাখা জরুরী, বিজ্ঞানের নীতিগুলো হলো আল্লাহর আদেশ। আল্লাহই বিজ্ঞান নামক প্রকৃতির নিয়ম বা ধর্মকে রূপ দিয়েছেন। তার আদেশেই, আগুন থেকে তাপ আসে আবার তিনিই সেই আগুনকে ইব্রাহীম (আঃ) এর জন্য ঠান্ডা করে দেন।

ডারউইন যখন প্রথম তার তত্ত্ব দেন, তার মোদ্দা কথা ছিল, এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণী ধীরে ধীরে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে সৃষ্ট। এখানে স্রষ্টার কোন ভূমিকা নেই। তার এই ধারণার উৎপত্তি মূলত বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় একই রকম দেখতে প্রাণী নিয়ে চিন্তা ভাবনা (click)। বিগল জাহাজে করে তার সেই বিখ্যাত সমূদ্র ভ্রমণে তিনি নানা স্থান থেকে ফসিলসহ বিভিন্ন স্পেসিমেন সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তীতে তিনি তার এই গাজাখুরি তত্ত্ব পাবলিশ করেন। তার তত্ত্বের মূল বিষয় হলো, মা বাবা থেকে তার সন্তান সন্ততিতে ছোট খাট পার্থক্য তৈরী হয় এবং প্রকৃতিতে যে সন্তান সর্বাধিক খাপ খাওয়াতে পারে সে টিকে যায় বাকিগুলো টিকতে না পেরে ধ্বংশ হয়। ফলে টিকে থাকার জন্য নতুন অনুকুল বৈশিষ্টসম্পন্ন জীবের আবিভাব ঘটে এবং তার পরবর্তী জেনারেশনে সহায়ক বৈশিষ্টগুলো স্থানান্তরিত হতে থাকে। এভাবে অনেক জেনারেশনের ছোট ছোট সম্মিলিত পরিবর্তন মিলে এক সময় সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি সৃস্টি করে। আর প্রজাতি হলো, পরস্পর যৌন বা অযৌন (কিছু নিম্ম শ্রেণীর জীবের ক্ষেত্রে) পদ্ধতিতে যারা সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম বংশের ধারা তৈরি করতে পারে। এ সংজ্ঞানুযায়ী খচ্চর, কোন প্রজাতি না।

ডারউইনের ঐ তত্ত্ব যখন দেওয়া হয় তখন জেনেটিক্স সম্পর্কে মানুষ কিছু জানত না। আর ফসিল রেকর্ডও ছিল অসম্পূর্ণ। অসম্পূর্ণ ফসিল রেকর্ড দেখে তিনি বিভিন্ন ট্রানজিশন প্রজাতির ফসিল নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেন যার কয়েকটি পরে আবিষ্কৃত হয়। আর কার্বন ডেটিংও তো তখন ছিল না। জেনেটিক্স এর অগ্রগতির পর মানুষ জানতে পারে কি করে এক জেনারেশন থেকে অন্য জেনারেশনে বংশের নানা বৈশিষ্ট স্থানান্তরিত হয় আবং আরো জানতে পারে, বিভিন্ন বংশগত রোগের জন্য দায়ী জিন সম্পর্কে। আর এান্টবায়োটিক আবিষ্কারের পর জীবাণুর মিউটেশনের ঘটনা তো আছেই। এসব দেখে কিছু মানুষ বিবর্তনবাদ অমোঘ সত্য বলে মনে করা শুরু করে যেমনটা আপনাদের কারো কারো হয়েছে।

বিজ্ঞানের একটা তত্ত্ব কিভাবে প্রতিষ্ঠা পায় জানা আছে আপনাদের? তত্ত্ব দেওয়া হয় প্রকৃতির কোন এক ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য। উদাহরণ স্বরূপ, নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র/তত্ত্ব প্রথম যখন দেওয়া হয় তখন এটা দিয়ে গ্রহ-উপগ্রহের গতি প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা দেওয়া যেত কিন্তু পরে দেখা যায় যে, এ তত্ত্ব দিয়ে বুধ গ্রহের অস্বাভাবিক স্পন্দনকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। এর অনেক বছর পর আইনষ্টাইনের বিপ্লবী তত্ত্ব জেনারেল রিলেভিটি দৃশ্যপটে আসলে বুঝা যায় যে নিউটনের তত্ত্ব ভুল ছিল। এখন যেমন, আইনস্টাইনের থিওরি দিয়ে ক্ষুদ্র কণার আচরণ ব্যাখ্যা করা যায় না। তার জন্য রহস্যময় কোয়ন্টাম ম্যাকানিক্সের ফরমূলা প্রয়োজন আর তা সম্পূর্ণ প্রোবাবিলিস্টিক বা সম্ভাব্যতা ভিত্তিক। আবার এই ফরমূলা দিয়ে প্রকৃতির অন্যান্য অমোঘ নিয়মকে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাই এখন পদার্থবিদরা সার্বজনীন একটা তত্ত্ব খুঁজে ফিরছেন। ইতিমধ্যে সিট্রং থিওরি হালে পানি পেলেও, এর অবিশ্বাস্য সব ফলাফল যেমন এক্সট্রা ডাইমেনশন-মাল্টিভার্স প্রভৃতি রূপকথা সদৃশ সব সাইড এফেক্টের কারণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কানে কানে একটা কথা বলি, এটা কিন্তু আমার কাছে গ্রহণযোগ্য কারণ এক্সট্রা ডাইমেনশনের বিষয়ে সুরা কাহাফের জুলকারনাইনের ঘটনায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

এখন মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি । বিবর্তনবাদে স্রষ্টার ভূমিকা ব্যতীত random মিউটেশনের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়, তা অত্যন্ত ধীর এবং এর ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯% বা আরো বেশি ক্ষেত্রেই প্রতিকুল বৈশিষ্টের সৃষ্টি করে। কাজেই সময় গণনা করলে এই মহাবিশ্ব সৃুস্টকাল সূচনা ধরলে বর্তমান সময় পর্যস্ত এই পুরো মহাকাল সম্পূর্ণ বিবেচনা করলেও আপনি একটামাত্র নতুন প্রজাতিও সৃষ্টি করতে পারবেন না (এত বেশি জেনেটিক পরিবর্তন দরকার যে তা এই পুরো সময় বিবেচনা করলেও সম্ভব না)। মডেল সিমুলেট করে তা দেখানো যায়। অথচ শুধু জিওলজিক্যাল ক্যামব্রিয়ান যুগেই ভোজবাজির মতো অল্প সময়ে অসংখ্যা জটিল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নতুন জীবের অবির্ভাব ঘটেছে। সম্প্রতি ন্যাচার গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দাবী করা হয়েছে যে বিবর্তনের ঘটনা ধীর না। দ্রুত, হঠাৎ এবং অনেকটা ভোজবাজির মতো ।

বিবর্তনবাদ মিথ্যা কেন তার আরো কিছু পয়েন্টঃ কিভাবে এক কােষী জীব প্রথম সৃষ্টি হলো তার কোন ব্যাখ্যা নেই পরীক্ষাগারে হাজার চেষ্টা করেও অনুরূপ কিছু তৈরী করতে পারে নি।

বিবর্তনবাদে চেতনার কোন ব্যাখ্যা নেই, বিজ্ঞান এখানে পুরোপরি ব্যর্থ।

তারপর আসেন মরফোজেনেসিসে। মায়ের পেটে মরফোজেনেসিস কিভাবে ঘটে, কিভাবে বা কি কৌশলে এক কোষ থেকে বিভিন্ন প্রকার টিস্যু তৈরী হয়ে, সুবিন্যস্ত বিভাজন ঘটে এবং বিভিন্ন অঙ্গের সৃুষ্টি হয় তা জানতে পারলে মানুষ গবেষণাগারে কিডনি, হৃদপিন্ড, হাত, পা তৈরী করতে পারত কিংবা মানুষের একটা হাত কাটা পড়লে সেখানে আরেকটা হাত গজানোর ব্যবস্থা করতে পারত। বর্তমানে, স্টেম সেল(ভ্রণ থেকে পাওয়া যায়) কালচার করে মানুষের অঙ্গ তৈরীর চেষ্টা চলছে যা অনেকটা ট্রায়াল এন্ড এরর পদ্ধতিতে অন্ধের মতো করে. কেননা আমরা গোঁড়ার কিছুই জানি না। জানব কিভাবে? আল্লাহকে ছাড়াই তো সব কিছু ব্যাখ্যার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তাই এত সব চেতনাসম্পন্ন জীব স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয় নি। তবে সব প্রাণিী যে এক সাথে সৃষ্ট হয় নি তার প্রমাণ ফসিল রেকর্ড। সুতরাং ধারণা করা যায় আল্লাহ তাআলা সময়ে সময়ে নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন নতুন প্রাণী সৃস্টি করেছেন এবং তা আমার মনে হয় বিদ্যমান স্পেসিম্যান থেকেই তৈরী তবে মানুষ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিম্পাঞ্জী যার সাথে মানুষের জিনের সর্বাধিক মিল তার কোন ফসিল আপনি খুঁজে পাবেন না, যেটির উদাহরণ দেওয়া হয়, সেটি একটি দাঁত মাত্র, সেটি যে শিম্পাঞ্জীর তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। তার মানে শিম্পাঞ্জীর আবির্ভাব মানুষের অনেক পরে।

আল্লাহ বলেনন ‘তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সম্পর্কে সীমা লঙ্ঘন করেছিল, তোমরা তাদের নিশ্চিতভাবে জানো। আমি (আল্লাহ) তাদের বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও। আমি তা তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ ও মুত্তাকিদের জন্য উপদেশস্বরূপ করেছি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬৫-৬৬)

দুনিয়াতে আদমকে পাঠানোর আগে দুনিয়ার উপযোগী করে পরিবর্তিত করে দিয়েছিলেন, যেমন লম্বায় খাটো করে দেওয়া, নীচ তলার দুটো ফুটোকে ত্যাগ করার জন্য উম্মোচিত করা (বেহেস্তে এসব করার দরকার ছিলনা), লোমশ শরীর সহ আরো অনেক কিছু, যে কারণে আপনাদের ধারণা হয়েছে যে মানুষ আর নিয়েন্ডারথালরা চাচাত-ফুফাত ভাই।

আল্লাহর নির্দেশনাতেই জেনেটিক পরিবর্তন হয় আর এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি সৃষ্টিতে তাঁর কোন ট্রায়ালের প্রয়োজন হয় না, যেমন প্রয়োজন হযনি সাধারণ গরুকে শীতের উপযোগী করে লোম দিয়ে ঢেকে দিতে (Yak), কিংবা আদমের পাজর থেকে হাওয়াকে তৈরী করতে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৩
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×