একজন ফুল বিক্রেতা ও বিজয়ের গল্প।
.
জহির ফুল বিক্রেতা,
আজ ১৫ই ডিসেম্বর, রাত থেকে শুরু হয়ে যাবে ফুলের রমরমা ব্যাবসা।
তাই সে অনেক ফুলের অর্ডার করেছে, ঠিকমত মালও এসে পরেছে।
ফুলগুলোকে সে বিভিন্ন ডিজাইনে সাজাতে লাগলো।
কারন আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস।
অনেকেই ফুল কিনে শহীদদের সৃতিসৌদে দেন।
এতে উনারা আনন্দ পান, বিজয়ের আনন্দ।
.
বিজয় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, এটা উটা খুঁড়িয়ে বিক্রি করে।
আধুনিক সভ্যজগতের কিছু মানুষ এদের একটি নাম দিয়েছেন পথ শিশু।
এরা রাস্তায় রাস্তায় থাকে এই বলে এরা পথ শিশু।
আজ কিছুই সে পায়নি, কাল ১৬ই ডিসেম্বর না।
তাই বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা ফুটপাত পরিষ্কার।
খুব ভাল করেই পরিষ্কার করার ফলে সে পুরোনু বোতল, ছিরা ফারা কাগজ, পরিতেক্ত কোন জিনিশ সে আজ রাস্তায় পায়নি।
বেচারার মন খারাপ, কাল বিজয় দিবসে সেও ভাবছিল ফুল দিবে সৃতি সৌধে।
কিন্তু হলনা তার সেই মনের ভাসনা পূর্ন।
.
জহির আহমেদ ফুল সাজাতে ব্যাস্ত সারাদিন
ফলে কিছুটা ক্লান্তও বটে।
সে লক্ষ করল তার দোকানের পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,
মনে হয় টোকাই হবে এই ভেবে বলল,
কিরে বেটা? আজ কিছু পাবিনা।
সব পরিষ্কার, জানিস না আজ বিজয় দিবস, শহর দুই তিনবার ঝাড়ু মারছে আজ।
তার দোকানের সামনেও কিন্তু আজ ফ্রিতে ঝাড়ু দিল কেউ।
.
জহির বিজয়কে জিজ্ঞেস করল: কিরে কাজ কাম না থাকলে আমার সাথে ফুল সাজা।
তরে টাকা দিবনে।
বিজয় সায় দিয়ে বলল আইচ্ছা:
জহিরের সাথে বিজয়ও ফুল সাজাতে ব্যাস্ত,
জহির আহমেদ বুদ্ধিমান তাই সাথে জাতীয় পতাকাও রেখেছে সাথে,
জাতীয় পতাকা, প্লেকার্ড, ফুল আজ খুব দামেই বিক্রি হচ্ছে।
রিক্সাওয়ালারাও ছোট ছোট পতাকা লাগিয়ে যাত্রীদের কে বিজয় দিবসের
শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু ভাড়া বেশী আদায় করার চেষ্টা করছে।
.
সন্ধ্যা থেকে আর ফুল বিক্রি হচ্ছেনা,
মনে হয় সন্ধার পরে ফুল দিতে মানা ' মনে মনে ভাবলো জহির'
বিজয়কে তার নায্য পারিশ্রমিক দিয়ে হাতে তার পছন্দের একটা ফুলেরতোড়া
দিয়ে বিদায় দিল জহির।
বিজয় মনের আনন্দে হেঁটে হেঁটে সৃতি সৌধের দিকে যাচ্ছে।
তার কাছে শহরকে আজ নতুন ঢাকা শহর মনে হচ্ছে।
যাইহোক, তার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোই কাজ, অলিগলি সব রাস্তা তার জানা।
বিজয় ফুলেরতোড়া নিয়ে যাচ্ছে সৃতি সৌধের দিকে।
তার মনে আনন্দে জোয়ার, হঠাৎ তার রাস্তা আগলে দাঁড়ালো এক নেশাখোর।
তার মাথায়ও বিজয়ের পতাকা বাঁধা।
লম্বা একটা ছুরি দেখিয়ে বিজয়ের সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেল সেই নেশাখোর।
সাথে তার সপ্নের ফুলেরতোড়াও,
চিনিয়ে নিয়ে গেল তার স্বাধীনতাও।
রাস্তায় পরে রইলো বিজয় নামের পথ শিশু।
বিজয় তখন চিৎকার করে বলতে লাগল।
হে মুক্তিযুদ্ধের শহীদেরা।
ক্ষমা করে দিও আমায়, আমার স্বাধীনতা আমি পাইনি।
তাই তোমাদের আজ ফুলের শুভেচ্ছা জানাতে পারলাম না।
.
লিখা: Al-Amin Ahmed
( কাজী নজরুলের ছাত্র)