এলিয়েন বলতে আমি কিন্তু বু্দ্ধিমান কোন অন্যজাগতিক জীবকে বুঝাচ্ছি না। পৃথিবীর বাইরে অন্য জীবের অস্তিত থাকে পারে তবে তারা বুদ্ধিমান হবে এমন কোন কথা নেই। আর এই বিষয়টি নিয়ে নানা অপবিজ্ঞান আর সাহিত্যের রমরমা ব্যবসাও আছে। অথচ বিজ্ঞানে এই বিষয়টি অনেক অনেক জটিল একটি ধারনা। আজ সেই ধারনাটুকু সহজভাবে এই বলার চেষ্টা করব।
প্রথমেই আমাদের চিন্তা করতে হবে পৃথিবীর জন্ম নিয়ে। ৪৫০ কোটি বছর পূর্বে জন্ম হওয়া এই পৃথিবী অতি উপ্তত্ব ছিল। পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে অনেক গুলো বৈজ্ঞানিক ত্বত্ত আছে। আমরা আপাতত সেদিকে না গিয়ে বরং প্রথম প্রান বা প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে একটু বলতে পারি।
অ্যামিনো অ্যাসিডই পৃথিবীর প্রথম প্রান বলা হয়। কার্বন হাইড্রোজেন অক্সিজেন আর নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে এই এসিডটি তৈরী। এটি এখন প্রান রসায়নের ভিত্তি। সে যাই হোক প্রচলিত ত্বত্ত অনুযায়ী এইটি জটিল যৌগ টিই প্রথম কোষ উৎপাদন করে।
তখনকার এই দূর্গম পরিস্থিতিতে একটি জীবনে জন্ম আসলেই বিজ্ঞানকে অনেক ভাবিয়েছে। একটি জীবের প্রধান দুটি কাজ হল জম্ম নেওয়া আর আরেকটি হল পরিবেশে টিকে থাকা। আর দুই নম্বর কাজটিই সবচেয়ে কঠিন। কারন তার জীবনকে বাচিয়ে রাখতে হলে তাকে যে কোন মৌল বা যৌগ্ পদার্থের উপর নির্ভর করতে হবে। সেই প্রথম এককোষী জীবটি হয়ত অক্সিজেনের উপর নির্ভর করেছিল। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের সেই জীবটি পরিবর্তিত হয়েছে বহুকোষী প্রানীতে। আবার পরিবেশের সাথে মানাসই করেই তৈরী করে ছিল তার খাদ্যশৃঙ্খল।
এই ভিডিওটি দেখতে পারেন:
http://www.youtube.com/watch?v=6lyC-CSvCOo
টিকে থাকার এই লড়াইটা পুরোটাই বিবর্তনে মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। পানিতেই প্রথম প্রানের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে পানির ধর্ম এই মহাবিশ্বের সব জায়গায় একই রকম হবে।তাই কোথায় যদি পানি পাওয়া যায় আমরা ধরে নিতে পারি সেখানে জীবের অস্তিত থাকতে পারে। পানি তিনটি রুপ যা আমরা জানি বরফ, তরল আর বাষ্পীয়। আমাদের এই সৌরজগতের মঙ্গল এবং বৃহঃস্পতির চাঁদ ইউরোপাতে পানি অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ইউরোপা একটি অদ্ভুত উপগ্রহ কারন সময়ের সাথে তার আয়তন বাড়ে অথবা কমে। সে যাই হোক দুক্ষেত্রেই পানির এই অস্তিত্ব বরফ অবস্হায় আছে। পানির তরল অবস্থায় থাকতে হলে গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর মত অবস্থানে আসতে হবে। অর্থ্যাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যে যে দূরুত্ব সেরকম দূরত্ব।
আমরা কিন্তু সৌরজগতের বাইরের গ্রহদের সরাসরি দেখতে পাই না। আমাদের প্রযুক্তি সেই উচ্চতায় আমরা নিতে পারিনি। কোনটা গ্রহ তা আমাদের বুঝতে হয় একটি তারার নিবিড় পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে। এটি গ্রহ যখন তারার চারপাশে ঘুরে তখন কিছুটা সময়ের জন্য ওই তারাটি অন্ধকার থাকে তখন আমরা এই ঘুর্নায়মান বস্তুটিকে গ্রহ বলে বুঝতে পারি। বিষয়টা অনেকটা সূর্যগ্রহনের মতই। সৌরজগতের বাইরে ১৯৯৭ সালে এভাবেই আমরা প্রথম গ্রহ আবিষ্কার করি।
এখন আমাদের ব্যয়বহুল অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এসেছে তা হল এই মহাবিশ্বে আমাদের মত গ্রহ আছে বিলিয়ন বিলিয়ন। কাজেই ওইখানে প্রাণের উম্মেষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এবার ধরে নিলাম এরকমই একটি গ্রহ আছে যার পানি তরল অবস্থায় আছে। তাহলে ঐ গ্রহের প্রানী বা জীবদের বৈশিষ্ট্য আমরা কিন্তু বির্বতনের ত্বত্তের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারব। পানিতে বসবাস করতে হলে ঐ প্রানীটি সুর থাকবে, আর চলাচল করতে হলে তার লেজ বা পাখা থাকবে। হয়তবা ফুসফুসও থাকবে। অবশ্য বিবর্তনে জটিল হিসাব নিকাশে কিছুটা অন্যরকমও হতে পারে। যদি ওই গ্রহে আলো থাকে তবে সেই প্রানীদে চোখও থাকবে। আর চোখ থাকলে তা সামনে থাকাই উচিত কারন সামনের দিকে চলাফেরা করতে হলে চোখ সামনে থাকলে সুবিধা হবে।
তবে ওরা বিবর্তনের কোন পর্যায়ে আছে তাও একটি অতি গুরত্বপূর্ন ব্যাপার। বিবর্তন একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানের সবসূএর গুলোর উল্টো পথে চলে এটি। বিবর্তন আগে থেকেই আপনি কিছু বলতে পারবেন না। অর্থ্যাৎ ভবিষ্যত বানী করতে পারবেন না আপনি। কোন একটি প্রানী বিবর্তনে সামান্যতম উপাদানের পরিবর্তনও এর ফলাফলকে অন্যকিছুতে রুপান্তরিত করতে পারে।
সে যাই হোক, আমরা এতক্ষন পানি ভিত্তিক জীব জগত সাজচ্ছিলাম। কিন্তু বাস্তব আরও জটিল। পানি হচ্ছে H2O কিন্তু সেই অক্সিজেন ছাড়াও কিন্তু হাইড্রোজেনের সাথে অন্য মৌলিক পদার্থ মিশতে পারে। তাহলে.......
তাহলে অন্য কোন বিশ্বে হয়ত নাইট্রোজেন ভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা থাকতে পারে যা আমাদের সম্পুর্ন অচেনা। এমনকি এর বিবর্তন সর্ম্পকেও আমাদের কোন জ্ঞান নেই। তাহলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করার মত অনেক প্রানীই থাকে পারে। কি বলেন? তার চেয়ে বড় কথা হল এইরকম হলে জীবের যে সঙ্গা আমরা দ্বার করিয়েছিলাম তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আর মহাবিশ্বের সব গ্রহেই প্রানের বা এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকে পারে। এমনকি নক্ষত্রেও। হোকনা তা মাইক্রোস্কপিক। আপতত আমরা আমাদের অনুভবগ্রাহ্যহীন যে কোন বিষয় বাদ দিতে পারি।
এবার আসা যাক সভ্যতা নিয়ে। সভ্যতা সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত আছে বিবর্তন। একটি মহাজগতিক প্রানী অবশ্যই ইচ্ছা থাকতে হবে এই মহাবিশ্বকে দেখার। তা নাহলে তাদের সাথে আমাদের সারাজীবনও দেখা হবে না। কারন আমাদের সেই ক্ষমতা এখনও হয়নি যে অন্যদের খুজে বের করতে পারব। যদি তা না হয় তবে তা হবে আলোর নিচে অন্ধকারাছন্ন স্থানটির মতই। অন্য সভ্য সমাজকে এই পৃথিবীর কথা জানানোর দরকার আছে কিনা সেটাও একটি বিবেচ্য বিষয়। কারন সেই সভ্য এলিয়েন রা হয়ত কোন স্পেসশীপে বসবাস করছে অথবা শক্তি সংগ্রহ করছে বিভিন্ন গ্রহে থেকে গ্রহান্তরে। ওদের কাছ থেকে আমরাও হয়ত রেহাই পাবো না।
বেতার তরঙ্গ পাঠানোর মত কোন প্রযুক্তি তাদেরও থাকতে হবে। অথবা যে কোন ভাবে তাদের আমাদের সাথে যোগাযোগ করা ব্যবস্থার থাকতে হবে। তারা হয়ত তাদের পরিবহনের কাজে ব্ল্যাকহোল ব্যবহার করে।
এলিয়েনদের সম্পর্কে আমাদের এই আইডিয়া গুলোকে পোক্ত করেছে UFO(unidentified flying object) . সবচেয়ে মজার কথা হল এই UFO সর্ম্পকে যতগুলো কাহিনী প্রচলিত আছে তার সবগুলোই একইরকম। আর এখানেই এর মূল সমস্যা। এগুলো বিশ্লেষন করে সত্যিকার অর্থেই কিছু পাওয়া যায়নি। বিশ্বের বহুলোকের ধারনা আমেরিকা হয়ত UFO এবং এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ করেছে। যদিও বিজ্ঞানের কাছে এর কোন গুরুত্ব নেই। বিজ্ঞান শুধু একবারই একটি রেডিও সিগন্যাল পেয়েছিল যাকে বলা হয় Wow! Signal.
অনেক বিশ্লষনের পর একটি শব্দই পাওয়া গিয়েছিল আর তা হল Wow!.
বিজ্ঞানের এই বিষয়টি সবচেয়ে আকর্ষনীয় আর মিস্ট্রি বলে স্বীকার করে নিচ্ছি। তবে সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারনাটি আনলে বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায়। এটা নিয়ে না হয় আরেকদিন বলব। তবে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান যা বলতে পারবে যে এলিয়েন আছে। হয়ত আমরা যে রকম বুদ্ধিমান প্রানী কল্পনা করি ঠিক তেমনটি নয় তবে আছে তা হয়ত মাইক্রোস্কপিক অথবা আমাদের চিন্তার বাইরে। একদিন হয়ত বিজ্ঞান সেই সত্যটিকেই ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
সূএ: ডিসকোভারি চ্যানেল
ছবি গুলো: উইকিপিডিয়া থেকে