মানুষের ভিতর এক জাদুর থলি। এতো কিছুতে ভরপুর তা বোঝা মুশকিল। বাহ্যিক ভাবে হয়তো সব হাতের নাগালে থাকে না, তবে ভিতরের অন্তরে তাঁরা যা ইচ্ছা তৈরি করতে পারে। সেই এক মন, শুধু সব নিয়ে আবদার করে। এমন সব যা হয়তো কোনদিনও সম্ভব ছিল না। মানুষ তবু ব্যস্ত সেই সব আবদার পূরণে। যদি মনের আশা পূরণে মরতেও হয় তবু মরতেই রাজী।
আজ যে গল্পও টা বলবো, সেইটা এক ছেলের অপরাধ বোধ নিয়ে। আমরা যারা আছি বাস্তবটাকে মেনে নিবো। কাল্পনিক চরিত্রের সাথে হইতও মিল থাকতেও পাড়ে। তবে আমার আছে, তাই লিখছি।
‘’’ আজ থেকে অনেক অনেক আগে। আটলান্টিকের মাঝে ছোট এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ ছিল। দ্বীপটার নাম ছিল Rukun Ireland।
ক্ষুদ্র হলেও দ্বীপে ছিলও অনেক লোকের বাস। বিভিন্ন সভাবের মানুষ গুলোর মাঝে ছিলও ভিন্ন ভিন্ন মত। তাঁদের মাঝে একটা ভয়ানক আইন ছিলও। আইনটা এমন- কেউ যখন পূর্ণ বয়স অর্থাৎ যৌবনে পা দিবে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে আর পরীক্ষা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক। দ্বীপের সব মানুষেরাই ওই পরীক্ষা দিয়ে এসেছে।
ভোগৌলিক ভাবে দ্বিপটি এমন স্থানে যা সাগরের মাঝে। পরীক্ষাটি ছিলও প্রত্যেক যুবক ছেলেদেরকে নিজের তৈরি নৌকায় পৃথিবীর এ প্রান্তও থেকে ও প্রান্তের মাধ্যমে দ্বীপে আস্তে হবে। যে পারবে সেই এই দ্বীপে বাস করতে পারবে। আর যে পারবে না সে সাগরে ডুবে মারা যাবে।
সেই দ্বীপে বাস করত নয়ন নামের এক যুবক। সে অন্য রকম স্বভাবের, সাধারণ নিয়ম তার সহ্য হতো না। ভাবুক স্বভাবের ছিলও সে, আকাশ সমুদ্রের পানি আর রাতের সেই তাঁরা গুলো ছিলও তার সাথী। তাঁর শিক্ষা ভূমি ছিলও বেলা ভুমির সাদা বালু আর লাল কাঁকড়া। তাঁর ছবি আঁকার খাতা ছিলও ভেজা মাটি। যেখানে হাত নাড়তেই যেন হয়ে যেত হাজার ধরনের ছবি। যখন সে ছবি আঁকতে আঁকতে বিরক্তও হত তখন পাহাড়ের চুড়ায় বসে দূরের সাগর দেখতও। ভালোই সময় তাঁর কাটছিলও।
তাঁর বাবা তাঁকে বরাবর সেই দ্বীপের নিয়মের কথা মনে করিয়ে দিত কিন্তু সে এসবের ধার ধারে না। সময়ও যেন কাটে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। সবকিছু সব মানলেও বাস্তবতা আর সময় কখনও কাউকে ছাড় দেয় না। নয়নের বন্ধুরা তখন সবাই শিক্ষা গ্রহনে ব্যাস্ত আর নয়ন ব্যাস্ত পৃথিবীকে নিয়ে। দেখতে দেখতে সময় তাঁর নখের মাথায়। তখন কোন কিছু ভাবার সময় ছিলও না। তাই সে সময় তাঁর বাবার পরাতন নৌকার কাঠ গুলো দিয়ে একটা নৌকা তৈরি করলো সে। কিন্তু এতো আগের কাঠে যে চোরা ঘুন ছিলও তা বুঝে নি নয়ন।
দেখতে দেখতে যাত্রার সময় এগিয়ে আসলো। নৌকায় এক মাসের খাবার সবাই নিয়েছে। এরপর থেকে নিজেদের খাবার সাগর থেকে নিতে হবে। এভাবে পাড়ি দিতে হবে এই বৃহৎ সাগর। সেদিন মনে হচ্ছিলো নয়নের, বয়স খুব খারাপ। এভাবে সবাইকে ছাড়ালও সময়। এমন সব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনায় পানি জমে নয়নের।
ধীরে ধী্রে নৌকা আগাতে শুরু করে। দূরের সেই বাবা-মার মুখ গুলো আফছা হয়ে যায়। তাঁরপর এক নৌকা থেকে আর সব নৌকা গুলো বিচ্ছিন্নও। নয়ন এক আর নিল এই সাগর। মাঝ সমুদ্রে যেতে সেই বাতাস আর অচেনা পাখি গুলোকে দেখে দেখে ভালোই সময় কাটছে।
ভালোই কাটছিলও তাঁর। খাবার ছিলও পর্যাপ্ত। সে আশা করতে শুরু করলো হইতও সেও পারবে এই পরীক্ষায় উরতিন্ন হতে। হঠাৎ একদিন তাঁর স্বজাতির এক নৌকা তাঁর চোখে পড়ল। দূর থেকে মনে হচ্ছিলো কেউ নেই তাতে। এর মাঝে ১৫ দিন পার হয়ে গেছে। মনে একটু খটকা লাগলো ,এমন তো হওয়ার কথা ছিলও না। কাছে আস্তেতেই ভীষণ বাজে গন্ধও নাকে আসলো নয়নের। তারপর উকি দিয়ে দেখে নৌকায় অর্ধওগলিত এক লাশ। দেখে চিনতে পারলো এ তো অর বন্ধু ইমারান। এই বধ্য বিস্ত্রিত মহাসাগরে কে অর বন্ধুকে মারল। ওর লাশ দেখে নিজের নৌকায় গিয়ে জড়ে জড়ে নৌকা চালাতে লাগলো।
এভাবে সময় কাটতে লাগলো।এক মাসের খাবার প্রায় শেষ। এখন নিজ থেকে কিছু করতে হবে। কিন্তু কেন জানি আজ নয়নের নৌকার তলায় পানি। নয়নের বুকটা ভয়ে কেপে উঠলও। যা ভেবছিল তাই, তাঁর কাঠে সেই ঘুনের ছিদ্র দিয়ে পানি উঠছে ।
বাঁচার সম্ভবানা কমে গেল। এদিকে খাবার শেষ। পানি ছেঁকবে না মাছ ধরবে। বালক এখন দিশেহারা। কানে বাজছে সেই সাগরে পানির শব্দ। যা তাঁর আগে ভাল লাগত, তা আজ ভীষণ ভয় লাগছে। সেই শো শো পানির ডাক তাঁকে গিলে খাবে।
মন খুব খারাপ। ফুটোটা দিন দিন বাড়ছেই। খুব চিন্তায় এখন নয়ন। আজ সাগরের গর্জনে বেচে থাকার খুব ইচ্ছা করছে।
হঠাৎ পানিতে কি যেন সাঁতরালও।নয়ন দৌরে যায়। ওমা মেয়ে মানুষ কোথা থেকে মাঝ সমুদ্রে আসলো। আহা হাসি কি, চোখে চোখে কাব্য তৈরি করতে পাড়ে। বিভ্রমে পড়ে গেলো নয়ন।
আরে এ তো মৎস্য কন্যা, ছোট কাপড়ে তাঁর বুকের সেই গঠনে বাড়বার চোখ যাচ্ছে। নয়ন মনে মনে বলছে, এগুলো দেখা ঠিক না। মৎস্য কন্যাও আস্তে আস্তে খুলে ফেলছে এক একটা আবরণ। অবশেষে সব খুলে দু হাতে বক্ষ ঢেকে কামনার ফাদে ফেলছে নয়নকে। হঠাৎ নয়নের পায়ে পানি লাগে। ঠাণ্ডা অনুভূতি পেয়ে বিভ্রম তাঁর কেটে যায়। হুস আসতেই মৎস্য কন্যা পানিতে দুব দেয়। দিশাহারা নয়ন, পানিতও না ছেঁকলে নৌকা এখনি ডুবে যেত।
খাবারও কাল শেষ হয়ে যাবে, বিষণ্ণতা আর সময়টাকে বিরক্তও মনে হচ্ছিলো নয়নের।
অবশেষে খাবার আজ শেষ, পানিতে নামবে ভেবে চিন্তা করতেই, মৎস্য কন্যা আবারো হাজির। আজ যেন আর সুন্দর লাগছে। ঠোঁট গুলো জ্বলছে, এক অপরিচিতও ফল মনে হচ্ছে নয়নের। খুব সাধ নিতে ইচ্ছা হচ্ছে।আজ মৎস্য কন্যা সব খুলে দিল। আজ আর হাতও রইলো না। আজ বিভ্রম মাত্রা তিক্ত। পানি যখন এক কোমর মৎস্য কন্যা ডুবে গেলো। মুখে এক মায়াবী হাসি।
নৌকাটাও ডুবতে শুরু করেছে। আজ নৌকা ডুববেই নয়ন তা ভালো করেই জানে। নৌকা ডুবেও গেলো।
মাঝ সমুদ্রে নয়ন হাত নারাচ্ছে। বাঁচার ইচ্ছা তাঁর প্রচুর, মনে পরছে তাঁর ইমরানের কথা। সেও বুঝি বিভ্রমে পরেছিল। নয়ন আস্তে আস্তে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। বাঁচার আশায়। ‘’’
হাঁ হাঁ হাঁ, কেমন লাগলো। এখন বাজে ০৪;২৪। ভোঁররাত্রি বলা যায়। বলুন, গল্পতার সাথে কি মিল পান। না পেলে সৌভাগ্যবান। আমার মিল পুরোপুরি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:০৪