somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শতাদ্বী সেরা নির্বাচিত পাখি পুটিকিটিকি কাহিনী

১৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


( যারা পোষ্টে বড় ছবি দেখতে পারছেন না তারা দয়া করে এ পোষ্টের ২৬ নং মন্তব্যের ঘরে সকল ছবি দেখতে পারেন)
আমাদের দেশের বর্তমান নির্বাচনী ডামাডোল, নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মাঝে বৈশ্বিক সংবাদ শিরোনামকে ছাপিয়ে মাত্র
দিন দুয়েক আগে বিশ্বের নামকরা তাবত মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল নিউজিল্যান্ডে নির্বাচনে জয়ী
অদ্ভুত পাখি পুটিকিটিকি ।

প্রতিবছর ভোটের মাধ্যমে সেরা পাখি নির্বাচন করে নিউজিল্যান্ড ৷ সে খবর খুব কম মানুষই জানতে পারেন ৷
কিন্তু এবার পুটিকিটিকির জয়ের কথা জেনেছে কমপক্ষে ১৯৫ টিরও বেশী দেশের মানুষ৷ এই সামুর পাতায়
ডানে কিংবা বায়ে অনেক সময়ই ডয়েচে ভেলের কিছু সংবাদ শিরোনাম ভেসে উঠে । সেখানে ক্লিক করলে
সংবাদটির বিস্তারিত দেখা যায় । সংবাদটি সেভাবেই আমি দেখেছি । আশা করি সংবাদটি আমার মত অনেকেই
দেখেছেন । পাখিটিকে নীজ চোখে অনেকবার দেখার সৌভাগের কারণে সংবাদটি নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে কিছু
তথ্য চিত্র সামুর অগনিত পাঠক কুলের সাথে শেয়ার করার মানসে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ।

সংবাদ ভাষ্য হতে জানা যায় সারা দুনিয়ার ১৯৫ টি দেশের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন এই পাখি
নির্বাচনে৷ সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ভেরিফায়েড ভোটের এ নির্বাচনে বিজয়ীর মুকুট উঠেছে অদ্ভুত স্বভাবের বৈচিত্রময়
পাখি পুটিকিটিকির শীরে ৷

বড় আদুরে স্বভাবের মজার উভচর পাখী পুটিকিটিকি ৷ এ কারণেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে তার নামে৷
সংবাদ ভাষ্যগুলি হতে জানা যায় নির্বাচনি প্রচারাভিযানে পাখিটির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য অন্য পাখিদের চেয়ে বেশি
গুরুত্ব পায়, বৈশিষ্টগুলি হলো :
এক- পছন্দের সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করতে সে খুব সুন্দর করে নাচতে পারে,
ছবি-১ : সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করে পুটিকিটিকির নাচ


https://www.youtube.com/watch?v=98ceB5SPRXI&t=25s
এই বিশাল নির্বাচনি কাহিনীর পটভুমি হল প্রতিবছর দেশি পাখির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বর্ষসেরা পাখি নির্বাচন
করে নিউজিল্যান্ড ৷এর আয়োজনে থাকে ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ড নামক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানএ বছর প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ
উদযাপন করছে ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ড৷নিজেদের শতবর্ষে পাখিদের শতবর্ষের সেরা নির্বাচনটাকে সার্থক করে দিলো
পুটিকিটিকি, এমনটিই বলা হয়েছে তাদের সংবাদ ভাষ্যে ।

পুটিকিটিকি না থাকলে কি নিউজিল্যান্ডের সেরা পাখি নির্বাচনে ১৯৫ টি দেশের মানুষ অংশ নিতো! সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে ।
এমন নির্বাচনে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ভোট কি পড়তো! সেখানেও রয়েছে পাখিটির বিষয়ে দৃষ্টি নন্দন বৈচিত্রময়ী প্রচারাভিযান !!
নির্বাচকদের কাছে এটাও প্রতিভুত হয়েছে মা বা বাবা হলে পাখিটি তাদের ছানাকে খুব সুন্দর করে লালন-পালন করতে পারে ।
ছবি ২- দুটি ছানাকে পিঠের পালকে মুরে পাখিটির পানিতে বিচরণ


শুধুই কি ছানাকে প্রতিকুল পরিবেশে নিরাপদে রাখা, ছানাকে তারা যত্ন করে খাওয়ায় ।
ছবি ৩ - মাছ শিকার করে ছানাকে খাওয়ানোর পুর্ব মহুর্ত


এই পাখিগুলি পরিবার বেষ্টিত হয়ে থাকতেও পছন্দ করে
ছবি ৪ - একটি পুটিকিটিকি পরিবারের ছবি


ছবি সুত্র : Peter Foulds/Royal Forest and Bird Protection Society/AP/picture alliance
পাখিটি খুব অদ্ভুত অদ্ভুত রহ রহ রহ শব্দ করে ডাকতে পারে
পাখিটি খুব অদ্ভুত অদ্ভুত রহ রহ রহ শব্দ করে ডাকতে পারে
https://www.youtube.com/watch?v=CHRXi1UoOCw

খ্যাতনামা ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান কমেডিয়ান জন অলিভার ভূমিকা না রাখলে পুটিকিটিকি নামে যে এমন অদ্ভুত একটা পাখি
আছে তা বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ হয়ত জানতেই পারতো না বলে বলা হয়েছে প্রায় প্রতিটি সংবাদ ভাষ্যেই ।
ছবি ৫- খ্যাতনামা বৃটিশ -আমিরিকান কমেডিয়ান জন অলিভার (একাধিক আন্তর্জাতিক মানের পুরস্কারপ্রাপ্ত কমেডিয়ান )


পুর্বেই বলা হয়েছে প্রতিবছর দেশি পাখির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বর্ষসেরা পাখি নির্বাচন করে নিউজিল্যান্ড ৷
বরাবরের মতো এবারও হয়ত অন্য কোনো পাখিই পেয়ে যেতো সেই স্বীকৃতি৷ কিন্তু ভোট প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা চোখে পড়ায়
পুরো বিষয়টিকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যান জন অলিভার ৷আমিরিকান টিভি শো এইচবিও-র জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘লাস্ট উইক
টুনাইট'-এ তুলে ধরেন অখ্যাত, অজ্ঞাত পাখি পুটিকিটিকির কথা। এ প্রসঙ্গে মনে বাজে আমাদের দেশের বর্তমান
রাজনৈতিক নির্বচনী প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ধরা পড়লে আমিরিকান কমেডিয়ানরা একে জানি কি পর্যায়ে নিয়ে যায় ,
যাহোক কামনা করি সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক, তা না হলে বিপদ অনেক!!!
ছবি ৬ - John Oliver on the Tonight Show dressed as the pūteketeke


সুত্র : Click This Link
পাখিটির জয় নিশ্চিত করতে নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনের রাস্তায় লাগানো হয় বিশাল বিলবোর্ড,
ছবি ৭ - সেখানে লেখা ছিল ‘দ্য লর্ড অব উইংস‌'


কিন্তু ‘ডানাওয়ালাদের সম্রাট' শুধু নিউজিল্যান্ডের মানুষদের ভোট পেলে তো জিততে পারবে না৷
তাই প্যারিস, টোকিও, লন্ডন এবং মুম্বাইয়েও লাগানো হলো বিলবোর্ড৷ ব্রাজিলের ইপানেমা সমুদ্র সৈকতের ওপর দিয়ে
জন অলিভার এমন এক বিমান ওড়ালেন যার গায়ে বাঁধা ছিল সেই ‘দ্য লর্ড অব উইংস' লেখা ব্যানার(তথ্য সুত্র ডয়েচে ভেলে)৷
ছবি ৮ - ভোটাভুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনেক জায়গায় পুটিকিটিকি সেজেই হাজির হন কমেডিয়ান জন অলিভার৷


উৎস : on The Tonight Show on Nov. 8, 2023.Todd Owyoung—NBC/Getty Images
বিখ্যাত উপস্থাপক জিমি ফ্যালনের ‘দ্য টুনাইট শো'-র মতো অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে তাঁকে ।
ছবি ৯ - পুটিকিটিকির আদলেই দেখা গেছে জন অলিভারকে ৷


বাকিটা রেকর্ড ভোটে পুটিকিটিকির শতাব্দির সেরা পাখি নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস ৷সে ইতিহাস জানাতে গিয়ে
নিউজিল্যান্ডের ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ড-এর প্রধান নির্বাহী নিকোলা টোকি বলেনঃ
"পুটিকিটিকি ‘বার্ড অফ দ্য সেঞ্চুরি' হওয়ার দৌড়ে শুরুতে ধারেকাছেও ছিল না ৷অনন্য চেহারা, সন্তান বড় করার
মিষ্টি ভঙ্গিমা এবং খাবার উগড়ানোর অদ্ভুত প্রবণতাই তাকে শেষ পর্যন্ত শীর্ষে তুলেছে৷"
এ বছর প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন করছে ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ড৷ নিজেদের শতবর্ষে পাখিদের শতবর্ষের সেরা
নির্বাচনটাকে সার্থক করে দিলো পুটিকিটিকি৷

এখানে উল্লেখ্য যে এই পাখীটি পুরাতন বিশ্বে পাওয়া গ্রেব পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস্য। এর কিছু প্রজাতি পৃথিবীর
বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে।
ছবি ১০- International Union for Conservation of Nature
( IUCN) version 2019.2 অনুযায়ী পাখীটির বিশ্বব্যপি অবস্থান এর চিত্র


সুত্র - Click This Link

উল্লেখ্য পাখীদের অতীত বর্তমান ও সিজনাল মোভমেন্ট বুঝাতে ইংরেজীতে Extant, Extant breeding,
Extant resident and Extant non Breeding শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয় । এ শব্দগুলির মর্মার্থ নিন্মরূপঃ
Extant ( বিদ্যমান )
The species is known or thought very likely to occur presently in the area, usually encompassing
current or recent localities where suitable habitat at appropriate altitudes remains.
1. Extant Breeding
The species is/was known or thought very likely to occur regularly during the breeding season
and to breed.
2. Extant Resident
The species is/was known or thought very likely to be resident throughout the year
3. Extant Non- breeding
The species is/was known or thought very likely to occur regularly during the non-breeding season.

উপরের মানচিত্র হতে দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তর পুর্বাঞ্চলের হাউর এবং পাহারী এলাকার লেক ও মুক্ত জলাসয়ে
পরিযায়ি পাখি হিসাবে এই পাখিটির বিচরনের সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে ,দেশের পাখি প্রেমী ও পাখি বিশারদগন এ
বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে পারেন ।

পুটিকিটিকি পাখিগুলি গড়ে ১৮ -২০ ইঞ্চির মত লম্বা হয়। এদের ডানার বিস্তার প্রায় ২৪-৩০ ইঞ্চি এবং ওজন ১ হতে
১.৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে (সুত্র উইকিপিডিয়া) ।
ছবি ১১ -পাখিটি তার সঙ্গীকে ডাকছিল যেটি তার দেখার বাইরে চলে গেছে। ছবিটি স্কটল্যান্ডের বার্ণি লেকে তোলা ।


ছবি ১২-স্কটল্যন্ডের উত্তরে উত্তর সাগর সন্নিহিত বার্ণী লেকের (লেক কে লচ হিসাবে অভিহিত করা হয়) মনোরম ছবি


ছবি- ১৩ - এটি একটি চমৎকার সাঁতারু এবং ডুবুরি পাখিও বটে যা ডুব দিয়ে পানির নিচে মাছ শিকার করে।


পাখিটি উচ্চস্বরে রহ-রহ-রহ রহ করে ডাকে যা পুর্বে ভিডিও লিংকে দেখানো হয়েছে ।
সুত্র Click This Link

এখানে উল্লেখ্য ফরেস্ট অ্যান্ড বার্ডের মতে, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ৩০০০ এরও কম পাখি রয়েছে, তবে
কয়েক দশক আগে এই সংখ্যাটি আরও কম ছিল এবং তাদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এই সংখ্যা ক্রমাগতভাবে
বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ফরেষ্ট এন্ড বার্ড উল্লেখ করেছে যে নিউজিল্যান্ডের ৮০% এরও বেশি দেশীয় পাখি হুমকি প্রজাতির
তালিকায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য এই প্রজাতির কিছু পাখি ইতিমধ্যে
বিশ্ব প্রকৃতি হতে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে।যথা নিন্মের চিত্রে দেখানো Alaotra grebe প্রজাতির পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
ছবি ১৪ -Alaotra grebe was one of the three species of lake endemic grebes that have gone extinct.


উপরের চিত্রে দেখানো পাখিটি সাম্প্রতিক বিলুপ্ত পুটিটিকিটি প্রজাতির পাখি যা মাদাগাস্কারের আলাওট্রা হ্রদ এর আশে
পাশের হ্রদের স্থানীয় বাসিন্দা ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বারাকুডা কিংবা আরো কিছু মাংসাশী মাছ তার আদি বাসস্থানে
প্রবর্তিত হওয়ার পর এই পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ছবি ১৫ - বারাকুডা নামের একটি রাক্ষুসি মাছ অন্য মাছকে গিলে খাচ্ছে ।


শুধুমাত্র রাক্ষুসি মাছই এর বংশ নিধনের জন্য একাকী দায়ী নয় হিংস্র ঈঘল ও লেকের ধারে বনে জঙ্গলে বসবাস কারী
হিংস্র স্বাপদ প্রাণীকুলই এদের বংশ বিনাশের জন্য কম দায়ী নয় ।
যাহোক মাংসাসী প্রাণীকুল কারো কারো জন্য জীবনহানিকর হলেও তারাই আবার দুপায়ী প্রাণীকুলের জন্য হয় জীবনদায়ী।
অবশ্য দুপায়িরাও অনেক পাখি নিধনের জন্য কম দায়ী নয় । সে কথায় পরে আসছি ।
ছবি ১৬ - মাদাগাস্কারের এক মহিলা মাথায় করে একটি বারাকুডা রাক্ষুসী মাছ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে জীবন জীবিকার তরে ।


নীজ চোখে দেখেছি বিপন্ন পুটিকিটিকি ছানা গুলিকে রক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহড়
সংলগ্ন একটি মনোরম জনপ্রিয় লচে ( লেকে) ভাসমান বায়ো-হ্যাভেন ইনস্টল করা হয়েছে ।
ছবি ১৭ -চিত্রটির বা পাশে লেকের মাঝখানে ভাসমান ও পাশে থাকা ধুসর ছবিটাই ভাসমান- বায়ো - হ্যভেন


ছবি ১৮ - যেখানে পাখিটি নিরাপদে তার ছানা গুলিকে ঈগলের হানা থেকে সুরক্ষা দিতে পারছে সহজে ।


দ্য ফ্রেন্ডস অফ গ্লাসগো'স লোকাল নেচার রিজার্ভস (এলএনআর) নামের একটি সংগঠন প্রায় ১৫০০০ পাউন্ড সংগ্রহ
করেছে পাঁচটি বিশেষ ভাসমান দ্বীপ স্থাপনের জন্য, ভাসমান দ্বীপে গাছপালা লাগানো হয়েছে যেখানে পাখিরা নিরাপদে
বাসা বাঁধতে পারে এবং তাদের বাচ্চাদের বড় করতে পারে।
গ্লাসগো সিটি কাউন্সিল, আরএসপিবি এবং সেভেন লচেস প্রজেক্ট স্বেচ্ছাসেবকদের সমর্থন করছে যারা বায়ো-হ্যাভেনস
কেনার জন্য MyParkScotland ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনুদান এবং ক্রাউড সোর্সড ফান্ডিং(Crowed sourced
Funding) পেয়েছে। প্রকল্পটি বিরল প্রজাতির সেই সমস্ত পুটিকিটিকিদের সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে আসছে যারা
প্রতি বছর প্রজনন করতে এই লেকে আসে ।

অনেক কথাইতো হল বলা শতাব্দি সেরা নির্বাচিত পুটিকিটিকি পাখিটিকে নিয়ে। বিদেশী কার্যক্রম ও উদাহরণকে কিভাবে
আমরা কাজে লাগাতে পারি সে দিকটা দেখার জন্য এবার কিছুটা ফিরে তাকানো যাক আমাদের দেশে আসা পরিযায়ী
পাখিদের বিচরণ, নিরাপত্তা ও সেসাথে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় পাখিদের বিষয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক কথামালায় ।
আমরা সকলেই জানি বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের দেশের হাউর ও মুক্ত জলাসয়ে অগনিত পরিযায়ী পাখি
এসে আমাদের জীব জগতকে বৈচিত্রময়তায় ভরে দেয় ।
ছবি ১৯ : বাংলাদেশের হাকালুকি হাউরে আসা অগনিত পরিযায়ী পাখি


বিভিন্ন সংবাদ ভাষ্যেই জানা যায় হাকালুকি হাওরে নাকি অনিরাপদ পরিযায়ী পাখি। পাখি শিকারিদের কারণে দিন দিন
কমছে পাখির সংখ্যা। এতে হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা।

পাখি শিকারিরা রাত-দিন নানাভাবে ফাঁদ পেতে, বন্দুক ও জাল দিয়ে হাওরে পাখি শিকার করছে। বিষটোপ খেয়ে পাখির
পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে।

এতো গেল এক দিক, আরেকদিকে দেশী শিকাড়ী পাখিও দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে ।
ছবি -২০ আমাদের অনেকের বাড়ীর আশেপাশেই এক সময় দেখা যেতো অগনিত শিকারি পাখি শকুন


জানা যায় বাংলাদেশের শিকারি পাখি (Raptors) সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত একটি গ্রুপ রয়েছে ।
বাংলাদেশে এখন দেখতে পাওয়া শিকারি পাখিদের তথ্য-উপাত্ত এবং ছবি দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা যায় ।

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলও যেন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ।
শিম,ঝিংগে কিংবা লাওয়ের মাচায় বা বাড়ির আঙিনায়-উঠানে যেপাখিকে নেচে খেলে চলতে দেখা যেত,আনাচে কানাচে
শিস বাজিয়ে মানুষের দ্বারপ্রান্তে থেকে মিষ্টি সুরে ডাক দিত, সেই পাখিকে আজ আর তেমন একটা দেখা যায় না। কেবল
বাংলাদেশ সরকারের দুই টাকার নোটেই কিংবা দোয়েল চত্তরের ভাস্কর্যেই এর দেখা মিলে ।
ছবি-২১ ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় ক্যম্পাসের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট দোয়েল চত্তরে থাকা দোয়েল পাখির ভাস্কর্য ।


ছবি ২২ - সবুজ প্রকৃতিতে জুড়ে থেকে মানুষকে বিমোহিত করা দোয়েল পাখিটা আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেল!


একটা সময় ছিল যখন দোয়েল পাখির আনাগোনায় প্রকৃতি সৌন্দর্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। সকালবেলা সূর্য ওঠার
সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি সুরে ডাক পেড়ে মানুষের ঘুম ভাঙাত এই পাখি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সাদা-কালো এ পাখি এখন আর
তেমন দেখাই যায় না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব, মাটি, পানি ও বায়ুদূষণ, বনায়ন ধ্বংস,
অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, বন্যা, খরা ও লবণাক্ততার প্রাদুর্ভাবে জৈববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন।
এদের যথাযথ সংরক্ষনে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে যথাযথ প্রকল্প এবং কর্মসুচী প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করে।
মনে রাখতে হবে শুধু নির্বাচন ও ভোটই শেষ কথা নয় , সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে হবে আমাদের সামগ্রিক জীববৈচিত্রকেও ।
এর সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের জীবন ও জীবিকা ।

এতক্ষন ধৈর্য ধরে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।


তথ্য ও কথা সুত্র : ডয়েচে ভেলে , দৈনিক গার্ডিয়ান, ডেইলি টেলিগ্রাফ , বিবিসি , বিভিন্ন নিউজিল্যান্ড ওয়েবসাইট।
ছবি ও চিত্র সুত্র : উইকিডিডিয়া, গুগল অন্তর্জাল ও স্কটল্যান্ডের দুটি লেকে নীজ হাতে তুলা কয়েকটি ছবি।
এ ছাড়াও অনেক লেখা ও ছবি সুত্রই লিংক আকারে পোষ্টের লেখার সাথে যুক্ত করা হয়েছে ।


উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় ব্লগার,লেখক ও কবি খায়রুল আহসান যিনি অতি সম্প্রতি সুনামগঞ্জের হাউর এলাকা
পরিভ্রমন করে এসেছেন,দেখেছেন সেখানকার বর্তমান জীববৈচিত্র, সে সাথে আমার সর্বশেষ পোষ্টে
মন্তব্যের ঘরে রেখে যাওয়া তাঁর একটি খোলা ইচ্ছা (ঘোষনা) প্রকাশের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ দিনের খড়া কাটিয়ে
একটি শতাদ্বী সেরা পাখিকে নিয়ে এই পোষ্ট রচনা ও প্রকাশে ব্রতী হয়েছি ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১:১১
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×