somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ বিদেশের কিছু নির্বাচিত রূপকথার পাখি সমাচার - ১ম পর্ব

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথমেই কৃতজ্ঞতার সহিত উল্লেখ্য সামু ব্লগের জনপ্রিয় লেখক , কবি ,গীতিকার,সুরকার,গায়ক ও জেষ্ঠ ব্লগার সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই এর লেখা এক যে এক পাখি রাজ্য ছিল লেখাটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে এই লেখাটি। জানতে কৌতুহলী হয়েছিলাম সত্যযুগের পাখী রাজ্যটি আসলে কোন মুলুকে ছিল আর সেখানকার রূপকথার পাখিরাই বা কেমন ছিল। সে অভিলাষ নিয়েই লোককাহিনীর/রূপকথার পাখিদের সন্ধানে অভিযানে নেমে পরি । অভিযানের শুরুতেই এ বিষয় সম্পর্কিত দেশে বিদেশে বিদ্যমান সম্ভাব্য লিটারেচার রিভিউ করে দেখলাম। জানতে পারলাম এ সম্পর্কে বিদেশের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই রূপকথার পাখিদের নিয়ে গুণগত ও পরিমানগত গবেষনা করেছেন, অনেকেই এই বিষয়ে এমনকি পিএইচডি পর্যায়ে গবেষনা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) লিখেছেন। সেখানে শুধু রূপকথার পাখিদের বিবরণই ছিল না, সাথে রূপকথার পাখিরা সে সময়ে ব্যক্তি, সমাজ ও রাস্ট্রিয় পর্যায়ে কি ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে সমস্ত প্রভাব কতটা চলমান ছিল, সমসাময়িক পর্যায়ে এসেও রূপকথার পাখিগুলি শিল্প সাহিত্য, অর্থনীতি, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় পর্যায়ের বিভিন্ন দিকে কি রকম প্রভাব বিস্তার করে চলেছে তা নিয়ে রয়েছে সুন্দর কোয়ালিটিটিভ ও কোয়ানটিটিটিভ বিশ্লেষন। আমাদের দেশে রূপকথার পাখিদের নিয়ে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন গবেষনাধর্মী কাজের হদিস মিলেনি। তবে গুটি কয়েক রূপকথার অচিন পাখি যথা,রক পাখি,জটায়ু, ফিনিক্স , আবাবিল , ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী পাখি সহ অন্য কিছু চেনা পাখি যথা কাক,ঈগল, সারস. রাজহংস,ফিঙে, ঘুঘু,বুলবুলি আর টুনটুনি নিয়ে গুটি কয়েক গল্পের বই রয়েছে । এর মধ্যে প্রখ্যাত লেখক ও কবি আসাদ চৌধুরী লিখিত বেশ বড় আকারের একটি সোনালী পাখির গল্পের বই রয়েছে , তবে তাতে শুধু অচিন একটি সোনালী পাখি নিয়েই গল্পটি আবর্তিত ।

আমাদের এ সামু ব্লগেও রূপকথার পাখি নিয়ে পোষ্ট রয়েছে তবে সেখানেও মাত্র ২/৩টি পাখির কথাই বলা হয়েছে । মোদ্দা কথা বিস্তারিত আকারে বিদেশের মত রূপকথার পাখি নিয়ে আমাদের দেশে গবেষনা, সাহিত্য কর্ম ও শিল্প কর্মের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলেই দেখা যায় ।

অথচ বন্দী রাজকুমারী, দুঃসাহসিক রাজপুত্র, সাত সমুদ্র তেরো নদী, তেপান্তরের মাঠ, রাক্ষস আর পঙ্খিরাজ—এসমস্ত নিয়ে আমাদের চিরচেনা একটি সমৃদ্ধ রূপকথার জগৎ রয়েছে । রূপকথাতে বনের পশু যেমন আছে ,তেমনি আছে পাখিরাও। পাখি ছাড়াও রূপকথা হয়। কিন্তু ব্যাঙ্গমা–ব্যাঙ্গমী, শুক-শারী কিংবা, ঈগল, কাক, সারস, রাজহংস ,ময়ুর ময়ুরী, ঘু ঘু, প্যাঁচা,সিন্দবাদের সেই রক পাখি—এগুলো বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপকথার জগৎ কল্পনা করা যায় না। রূপকথার পাখি নিয়ে আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য গবেষনা ও সাহিত্য, চারু কলা, চিত্র ও স্থাপত্য কর্ম না থাকলেও বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণালী দিনের যুগসন্ধিক্ষনে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, উপেন্দ্র কিশোর , দক্ষিনারঞ্জনের গল্পে-উপন্যাসে, ময়মনসিংহ গীতিকায় আর প্রকৃতির কবি জীবনানন্দের কবিতায় পাখিরা এসেছে বারে বারে। জীবনানন্দ দাশের নিজের লেখায় প্রায় পঞ্চাশ প্রজাতির পাখিকে উড়তে দেখা যায়। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ আবার আসিব ফিরে কবিতায় চারটি পাখির বর্ণনা করেছেন। আবার আসিব ফিরে কবিতায় তিনি লিখেছেন- আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িঁটির তীরে- এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয়/ হয়তোবা শঙ্খচিল শালিকের বেশে…/ হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে/ হয়ত শুনিবে এক লক্ষ্মীপ্যাঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে….। তাঁর কবিতায় লক্ষ্মীপ্যাঁচাও ছিল।


আর উঠানের পায়রা কবিতায় এক লাইনেই তিনি হাজির করেছেন তিনটি পাখিকে আর আক্ষেপ করে বলেছিলেন তারা যেন না যায় চলে মাঠ ঘাস ছেড়ে যথা- উঠানের পায়রা শালিক কাক উড়ে-উড়ে বলে /এত দিন নক্ষত্রের তলে/রৌদ্রের আকাশে/তোমরা তো ছিলে এই খোড়োঘরে আমাদের পাশে/তোমরা কোথায় যাও আজ, আহা, এই সব মাঠ ঘাস ছেড়ে….. / ।

দেশ বরেণ্য অন্যান্য গীতিকবিদের অনেক গানেও পাখিরা ফিরে ফিরে এসেছে বারবার যথা- আমার সোনার ময়না পাখি---, অনেক সাধের ময়না আমার বাধন কেটে যায়…. বউ কথা কও বইলা পাখি ডাকে….., হলদিয়া পাখি সোনারি বরণ পাখিটি ছাড়িল কে….., , কুহু কুহু সুরে আর ডাকিসনারে পাখি আর ডাকিছ না…. , ছোট্ট পাখি চন্দনা দেখতে ওগো মন্দনা…. ইত্যাদি । অবশ্য তারও বহু আগেই সেই পৌরাণিক যুগের রূপকথার রাজ্যেও বাস করত আজব, বুদ্ধিমান কিংবা হিংসুটে পাখিরা।মুলত পাখিরা প্রাচীনকাল থেকেই পৌরাণিক কল্পনার প্রাণী।

রূপকথার কোন কোন পাখি দেবতাদের কাছে বার্তাবাহক হিসাবে কাজ করে, মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ বহন করে এবং স্বর্গ পর্যন্ত প্রার্থনা করে। তারা মানুষকে আত্মা জগত এবং মৃত আত্মাদের রাজ্যের বাইরে নিয়ে যায়; তারা প্রকৃত বীর পুরুষের অনুসন্ধান করে, গোপনীয়তা উন্মোচন করে, সতর্কতা এবং বুদ্ধিদৃপ্ত পরামর্শ দেয়, যাত্রা কিংবা কোন শুভ কর্ম সস্পাদনের প্রারম্ভে শুভ অশুভ দিক নির্দেশনা দেয় বিবিধ প্রকারে । যদিউ রূপকথায় থাকা অনেক পাখিকেই যথা আরব্য রজনীতে অন্তর্ভুক্ত সিন্দবাদের গল্প কথায় থাকা বিশালাকৃতির রক পাখী , মহাভারতের গরুর, রামায়নের জটায়ু কিংবা মানুষের ভাষা বুজতে পারা বেঙ্গমা বেঙ্গমী কিংবা কথা বলতে পারে এমন পাখি যথা শুক/সারির দেখা বাস্তবে পাওয়া যায়না । তার পরেও হাজার বছর ধরে এই পাখিরা বাঘা বাঘা অনেক অনেক শিল্প সাহিত্যিকদেরকে করেছে অনুপ্রানীত, তাদের শিল্প কর্মে আর রচনায় পাখিকে টেনে আনতে পেরেছে, তাদেরকে নিয়ে উপভোগ্য কাহিনী ও চিত্র রচনায় প্রলুব্ধ করেছে । অন্যদিকে পাখি নিয়ে বলা রূপকথার গল্প, কবিতা, কিসছা কাহিনী আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বপ্নের জগৎ তৈরি করেছে রুপালী জ্যোৎস্নার রাতে কিংবা ঘোর অমানিশায়। ঘুমপাড়ানি গানের সঙ্গে দাদি-নানিরা ব্যাঙ্গমা–ব্যাঙ্গমী ,টোনাটুনি , শুক/সারির গল্প শুনিয়ে এ দেশের শিশু-কিশোরদের জন্য মায়াবী শৈশব গড়ে দিয়েছেন। যাহোক, রূপকথা নিয়ে বিদ্যমান সাহিত্য পর্যালোচনার পর গল্প কাহিনীতে থাকা বিশাল রূপকথার জগত হতে বহুল চর্চিত কয়েকটি পাখির বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে পড়ি । অনুসন্ধান পর্যায়ে যে পরিমান তথ্য ও গল্প কাহিনী সম্ভার সংগৃহিত হয়েছে তা সামুর এই স্বল্প পরিসরে লেখে শেষ করা যাবেনা । তাই মাত্র গুটি কয়েক রূপকথার পাখির কথা এখানে সচিত্র পরিবেশন করা হলো । বাকি সবগুলি পাখীকে একত্রিত করে গবেষনামুলক পুস্তক আকারে প্রকাশের প্রয়াস নেয়া হবে ।সেটি হবে আরেক বিশাল প্রকল্প ।

রূপকথার পাখিদের সন্ধানে পথ চলতে গিয়ে প্রথমেই মনে হল এর জন্য বনে বাদারে ঘুরাঘুরির সাথে সাত সমৃদ্র তের নদীও দিতে হবে পারি । মনে হল কবির কথাই হয়তবা ঠিক-
যেতে হবে তেপান্তরের মাঠের শেষে দৈত্যপুরীর কাছে,
গহনবনে জলার ধারে শুকনো পাতার গাছে –
যখনই যাবে সকাল সাঁঝে,
ঝোপ ঝাড়ের আড়াল মাঝে –
হয়তবা দেখলেও দেখতে পাবে
ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী হোথায় চুপটি বসে আছে ।

তবে অভিযানে নেমেই দেখলাম কোথায় বা সেই অশ্বত্থ গাছে ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমি? আর কোথায় বা সেই সোনার টিয়া, সোনার খাঁচায় শুক-শারী, হীরামন পাখিরা? তারা সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আসলে যাদের জন্য এইসব পাখিরা সেই রাজপুত্র, পক্ষীরাজ ঘোড়া, কলাবতী রাজকন্যা, লালকমল-নীলকমল, রাক্ষস-খোক্কসের রাজ্যগুলোইতো আর নেই। সন্ধ্যেবেলায় মা-দিদিমা-ঠাকুমার কোল ঘেঁষে শোনা সে সব রূপকথারার পাখিরাও হারিয়ে গেছে। এখন হ্যারি পটার, সোফিয়া, মোয়ানা , স্পাইডার ম্যান , ড্রাগন গেম আরো কত শত শত মোবাইল ও কম্পিউটার বেইসড গেমের অদ্ভুত আকৃতির পাখিদের রাজত্ব । শিশু কিশোরদেরকে তো লেপটপ আর স্মার্ট মোবাইল ফোন হতে ফেরানোই যায়না , সর্বত্রই অভিভাবকদের নিকট হতে অনুযোগ শুনা যায় এসকল গেম যেন তাদের সন্তানদের মাঝে নেশার মত জেকে ধরেছে। আত্মীয় স্বজনের কাছে ফোন করলে বিজি টোন শুনা যায় । পরে এক সময় পাওয়া গেলে শুনা যায় মোবাইল ফোন নাকি ছিল তাদের ছেলে মেয়ে আর নাতি নাতনীদের দখলে, আর তারা ফোন নিয়ে মত্ত ছিল তাদের পছন্দের খেলাধুলার তালে। লেখাপড়ায় বিঘ্ন না ঘটায় এমন বিকল্প শিশুতোষ বিকল্প শিক্ষা সহায়ক বিনোদন উদ্ভাবন এখন মনে হয় সময়ের দাবী । শিশু কিশোরদের শিক্ষাদানে নিবেদিত এ সামু ব্লগের জনপ্রিয় ব্লগার বৃন্দ যথা শায়মা আপু, অপু তানভীর আরো যারা আছেন তাঁদের সকলের দৃষ্টিতো এ বিষয়ে আকর্ষন করতেই পারি ।

যাহোক ফিরে যাই মুল প্রসঙ্গ রূপকথার পাখির জগতে ।
প্রথমেই শুরু করা যাক পাখিকুলের জন্ম বৃতান্ত হতে । পবিত্র কোরানের সুরা ইমরানে থাকা ৪৯ নং আয়াতের মধ্যখানে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলে দিয়েছেন -
أَنِّي أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ
আন্নীয় আখ্লাক্কু লাকুম্ মিনাত্ত্বীনি কাহাইয়াতিত্ত্বোয়াইরি ফাআন্ফুখু ফীহি ফাইয়াকূনু ত্বোয়াইরাম্ বিইয্নিল্লা-হি,। বাংলা আনুবাদ হল
আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখির আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখিতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে।

প্রাসঙ্গিক লিটারেচার রিভিউ থেকে জানা যায় বেশ কিছু ইসলামী স্কলার ও ব্যক্তিত্ব যথা নক্সবন্দিয়া তরিকার কামেল সাহেবুল সাইফ শাইখ আবদুল কিরিম -আল- তিবরিছি বলেছেন এটা খুবই সত্য. জান্নাত থেকে সরাসরি এসেছে ময়ূর। তিনি অবশ্য একথাও বলেছেন যে বিবর্তন বাদী ডারউইন পন্থিরা ময়ূরকে স্বর্গের পাখি হিসাবে মানতে নারাজ । তাদের এমত দ্বিমতচারিতার বিষয়ে তিনি বলেছেন যদি সমস্ত মানবজাতি, শুধু মানবজাতিই বা কেন, সৃষ্টির সবকিছুই কেবল পুনরুত্পাদন এবং বেঁচে থাকার জন্য বিবর্তিত হয় তাহলে ময়ূরের এমনতর রঙ এবং সবকিছু সেই আদি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত তেমনতর অবিকল সৌন্দর্যের অধিকারী না থাকার কথাওতো উড়িয়ে দেয়া যায়না । কিন্তু একটি ময়ূরে যে রং আছে তা মুলত বিভিন্ন ধর্মালম্বি লেখকদের লেখায় থাকা স্বর্গের রঙের ইঙ্গিত দেয় এবং যখন কেও ময়ূরের এমনতর সুন্দর রূপটি দেখে তখন সে মুগ্ধ না হয়ে থাকতে পারেনা ।
তাই ময়ূর দিয়েই শুরু হল রূপকথার পাখি কথন ।

ময়ূর

দুই শতাধিক বছর আগে ১৮৩৬ সালে দ্য মেন্টাল ইলুমিনেশন অ্যান্ড মরাল ইমপ্রুভমেন্ট অফ ম্যানকাইন্ড, পুস্তকে রেভারেন্ড টমাস ডিক ময়ূরকে "পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পাখি" বলেছেন। তিনি বলেছেন খুব কম মানুষই আছে যারা এই বর্ণনাকে বিতর্কিত করবে । যাহোক, ইতিহাস জুড়ে, ময়ূরের কাছে তার চকচকে সুন্দর চেহারার থেকেও আরও বেশি কিছু রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, এটি ভাল এবং মন্দ, মৃত্যু এবং পুনরুত্থান, এবং পাপপূর্ণ অহংকার এবং অতিমাত্রায় অসারতার প্রতীক হিসাবে কাজ করেছে। অনেকটা তার এভিয়ান ভাই কাক এবং দাঁড়কাকের মতো, ময়ূর লোককাহিনী ও কল্পকাহিনীতে দেবতাদের প্রিয় পাখি হলেও সে অবশ্য আজও বিদ্যমান অসংখ্য কুসংস্কারে ব্যাপকভাবে চিত্রিত হয়ে রয়েছে ।

ভারতে প্রথম উদ্ভূত ময়ূররা তাদের ইতিহাসকে বাইবেলের সময়ে ফিরে পেতে পারে। বাইবেলে এগুলোকে রাজা সলোমনের দরবারে নিয়ে যাওয়া ভান্ডারের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়ূর গ্রীক মহাবীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সাথেও যুক্ত। এ প্রসঙ্গে ১৮১২ সালের বই দ্য হিস্ট্রি অফ অ্যানিমালস-এ লেখক নোয়া ওয়েবস্টার লিখেছেন:
আলেকজান্ডার যখন দিগ্বিজয়ে লক্ষে ভারতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি হায়ারোটিস ( রাভী ) নদীর তীরে বিপুল সংখ্যক ময়ুর দেখতে পেয়েছিলেন তখন তাদের সৌন্দর্যে এতটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে তিনি কাউকে ময়ূর হত্যা বা বিরক্ত করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন।


গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে, ময়ূরকে শত চোখের দৈত্য আর্গোস প্যানোপ্টেসের রক্ত থেকে জন্মেছিল বলে বিশ্বাস করা হতো। পরবর্তী বিবরণে বলা হয়েছে আর্গোসের মৃত্যুর পর দেবী হেরা, নিজের চোখ ময়ূরের লেজে রেখেছিলেন কিংবা পর্যায়ক্রমে-আর্গোসকে ময়ূরে পরিণত করেছিলেন। এই সংযোগের কারণে, গ্রীক পুরাণের রাউটলেজ হ্যান্ডবুক এ উল্লেখ আছে যে ময়ূর ছিল গ্রীক দেবী
"হেরার বিশেষ পাখি"। Source -Museum of Fine Arts, Ghent ,Belgium


রোমান সময়ে ময়ূর গন্য হতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসাবে, যা সাধারণত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ সুপারস্টিশনে, লেখক রিচার্ড ওয়েবস্টার উল্লেখ করেছেন:
এটি ঘটেছিল যখন লোকজন লক্ষ্য করেছিল যে ঝরে পরা ময়ূরের পালকগুলি বিবর্ণ হয়না বা তাদের চকচকে দীপ্তি হারায় না। ময়ুরের ঝরা পালককে তাই অমরত্ব বা পুনরুত্থানের চিহ্ন হিসেবে দেখা হতো।
Peacock in national Gallery in London ছবি সুত্র : ন্যাশনাল গেলারী, লন্ডন


উপরের চিত্রকর্মটি বিখ্যাত ইতালীয় শিল্পী কার্লো ক্রিভেলি অঙ্কিত । এতে রয়েছে বিভিন্ন শৈল্পিক অভিযোজন। পোপ সিক্সটাস IV কতৃক ১৪৮২ সালে ইটালিয় ছোট্ট শহর অ্যাসকেলিকে প্রদত্ত স-সরকার উদযাপন উপলক্ষে এটি চার্চ অফ এস এস এর জন্য অঙ্কিত হয়েছিল । পরে বিভিন্ন হাত ঘুরে এই বিখ্যাত চিত্র কর্মটি ১৮৬৪ সালে লন্ডনের ন্যশনাল গেলারীতে গিয়ে স্থান পায় । সেখান হতেই এই চিত্রের ছবিটি সংগৃহীত ।

এ ছবিটিতে থাকা শৈল্পিক অভিযোজনের একটি অংশে আকাশ থেকে নেমে আসা আলোক রশ্মি মেরির প্রতিনিধিত্ব করে যা পবিত্র আত্মার দ্বারা যীশু খ্রীষ্টকে তার গর্ভে গ্রহণ করা হয়েছে বুঝায় । বাদিকে ;বাদিকে দুটিক বন্ধ প্যাসেজ এবং মেরির শোবার ঘরে বিশুদ্ধ জলের ফ্লাস্ক প্রচলিতভাবে মেরির কুমারীত্বকে নির্দেশ করে। ডানাওয়ালা দেবদূত গ্যাব্রিয়েলকে সেই ছোট্ট শহরের একটি মডেল বহনকারী আসকোলির পৃষ্ঠপোষক সেন্ট এমিডিয়াসের সাথে চিত্রিত করা হয়েছে। অগ্রভাগে সামনে পড়ে থাকা আপেল নিষিদ্ধ ফল মানুষের পতনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং শসা মুক্তির প্রতিশ্রুতির প্রতীক । আর ছবিতে যুক্ত ময়ূরটি পুণরুত্থান ও অমরত্বের প্রতীক। কারণ একথা বিশ্বাস করা হত যে এর পালক কখনই ক্ষয় ও বিবর্ণ হয় না ।

ভারতবর্ষে ময়ূর রঙিন জাঁকজমক ও নৃত্য উদযাপনের প্রতীক । অনেক জায়গায় বিদ্যার দেবী সরস্বতির ভাস্কর্যের পাশে একটি ময়ূরকে থাকতে দেখা যায় । ভারতে দেবানগড়ে ফাইন আর্টস কলেজ চত্তরে সুভ্র বসনা দেবী স্বরসতির ভাস্কর্যের সাথে যুক্ত রয়েছে একটি ময়ুর ।


এর পরে আসা যাক আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত রূপকথার ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমীর কথাতে ।

ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী

আমাদের শিশুতোষ সাহিত্যে থাকা ব্যঙ্গমা–ব্যঙ্গমী এক জোড়া রূপকথার পাখি।
ব্যঙ্গমা- ব্যঙ্গমীর কথা আমরা প্রথম পাই দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখা বিখ্যাত রূপকথার কাহিনী ঠাকুরমার ঝুলিতে নীলকমল আর লালকমল গল্পে। এই ব্যঙ্গমা- ব্যঙ্গমী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনেও খুব ধরেছিল। এই গল্পে থাকা ব্যাঙ্গমা ব্যঙ্গমী পাখি যুগল বাংলার পাখি বিষয়ক রূপকথার কিংবদন্তিতে পরিনত হয়েছে ।
কোন সুদূর অতীতে কোনো এক গরিব জেলের দুর্দশা দেখে তাকে প্রতিদিন একটা করে মাছ উপহার দিত ব্যঙ্গমা–ব্যঙ্গমী জুটি। কিন্তু সেই জেলেই লোভের বশে রাজার কাছে ব্যঙ্গমা–ব্যঙ্গমীকে সর্বনাশ করার চেষ্টা করে। রাজার পাইক-বরকন্দাজদের সঙ্গে নিয়ে সে ধরতে চেয়েছিল উপকারী পাখি দুটিকে। কিন্তু সৎ, বুদ্ধিমান পরোপকারী পাখি দুটি সেদিন জেলে, পাইক-বরকন্দাজদের উড়িয়ে নিয়ে হারিয়ে যায় তেপান্তরের ওপারে রহস্যময় জগতে। আর ফেরেনি কখনো ,তবে রয়ে যায় আমাদের কাছে রূপকথার পাখি হয়ে, আর ফিরে ফিরে আসে বিবিধ গল্প কথনে ।



টুনটুনি

টুনটুনি আমাদের অতিপরিচিত পাখি। ব্যঙ্গমা–ব্যঙ্গমীদের মতোও তারো সদর্প বিচরণ রূপকথার রাজ্যে। টুনটুনির গল্প আছে ঠাকুরমার ঝুলিতেও। টুনটুনিকে নিয়ে এত এত গল্প আছে, সেগুলো সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করে বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী একটা আস্ত বই লিখে ফেলেছিলেন। নাম টুনটুনির গল্প। টুনটুনির এক গল্পে হয়েছে বলা -
এক রাজার বাগান কোণে টুনটুনির বাসা ছিল। রাজা সিন্দুকের টাকা রোদে শুকুতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তাঁর লোকেরা একটি টাকা ঘরে তুলতে ভুলে গেল। টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় এনে রেখে দিল, আর ভাবল, ‘ঈস! আমি কত বড়লোক হয়ে গেছি! রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘর সেই ধন আছে!’ তারপর থেকে সে খালি এ কথাই ভাবে, আর বলে—
রাজার ঘরে যে ধন আছে
টুনির ঘরেও সে ধন আছে!
টুনটুনি ঠোটে ধরা সোনার মোহর - ছবি সুত্র : উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী লিখিত টুনটুনির গল্পের বই ।


‘রাজার ঘরে যে ধন আছে টুনির ঘরেও সে ধন আছে’—
এই বুলি আউড়ে, প্রখর বুদ্ধি খাটিয়ে দুষ্টু-লোভী রাজাকেও শাস্তি দিয়েছিল টুনটুনি।যাহোক সে অনেক কথা , এখন চুনটুনি বুদ্ধি খাচিয়ে রাজার নাকের ডগায় বসে কিভাবে তার নাসিকা কর্তন করেছিল সে দৃশ্যটাই দেখা যাক । টুনটুনি এক পর্যায়ে রাজা মশায়ের নাগের ডগায় বসতেই সিপাই থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে পড়ল।ছবি সুত্র : উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী লিখিত টুনটুনির গল্পের বই থেকে ।



শুক/শারী/হিরামন টিয়া পাখি

বাংলামুলুকসহ সারা ভারত বর্ষেই রাজপুত্র আর রাজকন্যারদের নিয়ে রূপকথার কিসসা কাহিনীগুলিতে শুক/শারী/ হিরামন টিয়া পাখির উপস্থিতিও একেবারে কম নয় । রূপ কথার প্রায় প্রতিটি কিসছা কাহিনীতেই দেখা যায় বনিক সৌদাগরেরা জাহাজ নিয়ে বানিজ্য করার জন্য বিদেশ থেকে ফিরার কালে একটি শুক বা শারী নিয়ে আসার জন্য বায়না ধরত আদুরে রাজরাণী, রাজকন্যা কিংবা অভিজাত সৌদাগরী ঘরের যুবতি কন্যাগন ।


শুক/শারী/হিরামন টিয়া নাকি ছিল মানুষের মত কথা বলতে পারা আর ভাগ্যলিপি ও ভবিষ্যতের কথা বলার ক্ষমতা সম্পন্ন পাখি । ছোট কালে দেখেছি এই বিশ্বাস নিয়ে দাদী একটি টিয়া পাখি বড় এক খাচায় ভরে পালত । খাচাটি সারাদিন বারান্দায় ঝুলিয়ে রেখে তাকে দিয়ে মানুষের মত কথা বলা শিখানোর জন্য দাদী আপ্রান চেষ্টা করত । আর ঐ পাখিটার জন্য আমাদের বাড়ীর সামনে বাগানে ঘাসের উপরে বসা ঘাস ফড়িং ধরতে হত । প্রতিদিন বাগান জোড়ে তিরিং বিরিং করে লাফালাফি করে ঘাস ফড়িং ধরা সেও ছিল এক মহা ফ্যাসাদ ।
অনেক দিন যায় দাদি যতই টিয়াকে কথা বলতে শিখাতে চায় সে শুধু টেও টেও করে । আর কাহাতক কষ্ট করে বাগানে ঘুরে ঘুরে ঘাস ফড়িং ধরা । একদিন রাগ করে দাদীর অগোচরে খাচার দরজা ফাক করে টিয়াটিকে দিলাম ছেড়ে । এ দৃশ্য দেখে দাদীর সে কি কান্না , আর সে সময়ে ঘরে রেডিউতে বাজতে ছিল বসির আহমদের বিখ্যাত একটি গান যারে যাবে যদি যা পিঞ্জর খুলে দিয়েছি , যা কিছু বলার ছিল বলে দিয়েছি...।


এ গান শুনে দাদীর কান্না যায় আরো বেড়ে , এর ফলে পুরা পরিবার থেকে আমার উপর যে কি পরিমান বিবিধ শাস্তি আরোপ করা হয়েছিল আর তার কি কি ফলাফল উপহার দিয়েছিলাম পুরা পরিবারকে সে সব কথা বলতে গেলে হয়ে যাবে আর এক রূপকথার
গল্প । সব লেখা আছে মনের ডায়েরিতে , সময় পেলে ডেলে দিব একদিন সামুতে ।

রকপাখি

মধ্যপ্রাচ্যের কিংবদন্তি অনুসারে রক একটি বিশালাকৃতির শিকারী পাখি।
আরবীয় রূপকথায় ও নাবিকদের মুখে মুখে রকপাখি আরবের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে। ইবনে বতুতা চীন সাগরে একটি ভাসমান পর্বততুল্য বস্তুর বর্ণনা করে সেটিকেই রকপাখি বলে অভিহিত করেন। আরব্য উপন্যাসে অন্তর্ভুক্ত সিন্দাবাদের গল্পে রকপাখির উল্লেখ পাওয়া যায়।
ইউরোপীয় শিল্প ঐতিহাসিকগন রকপাখির ধারণাটি ভারতীয় পুরাণের আকাশচারী গরুড় ও পাতালের নাগের যুদ্ধের থেকে এসেছে বলে মনে করে থাকেন। মহাভারত ও রামায়ণ-এ কুমিরের সাথে যুদ্ধরত হাতিকে গরুড় কর্তৃক আকাশে উঠিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত দেখা যায়।


হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে নিজ রাজ্য লঙ্কাপুরীতে নিয়ে যেতে চায়, সেই দৃশ্য দেখে জটায়ু নামক বিশাল এক পাখি তাকে রাবণের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে৷ জটায়ু রাবণের বিপক্ষে যথেষ্ট বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে কিন্তু বার্ধক্যের কারণে রাবণ অতি চতুরতার সাথে জটায়ুর বিপক্ষে জয় লাভ করে।


আরব্য উপন্যাসে সিন্দাবাদের দ্বিতীয় অভিযানে এক ক্রান্তীয় দ্বীপে রকপাখির দেখা পাওয়া যায়। মার্কো পোলোর বর্ণনার জন্য এই দ্বীপকে মাদাগাস্কার বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে সেটি কল্পনায় বিশালাকায় পাখিদের দেশে পরিণত হয়। সন্দেহাতীতভাবে, মার্কো পোলোর বর্ণনা তৎকালের মানুষের কল্পনাকে নাড়া দেয়, যার প্রভাব তখনকার চিত্রাঙ্কনে প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন ১৯৬০ সালে ফ্রানৎস ফন রোজেনহফের একটি চিত্রে দুইটি রকপাখির মতো বিশালাকায় পাখি একটি হরিণ ও একটি হাতি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অপর একটি পাখি সিংহকে তুলে নিতে যাচ্ছে দেখা যায় ।


তবে ১৭শ শতাব্দী নাগাদ যুক্তিবাদী বিশ্ব রকপাখির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকে। এর পরেও আধুনিক যুগে রকপাখি ও অন্যান্য পৌরাণিক ও লোককাহিনিভিত্তিক সত্তার মতো ডাঞ্জিয়নস অ্যান্ড ড্রাগনস- জাতীয় কল্পকাহিনি নির্ভর গেমের অংশ হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত হয়ে গেছে।



ফিনিক্স পাখী

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে পবিত্র অনল প্রভা থেকে ফিনিক্স পাখির সৃষ্টি। ফিনিসীয় পুরাণ, চাইনিজ পুরাণ, গ্রিক পুরাণ, হিন্দু পুরাণ এবং প্রাচীন মিসরীয়দের বর্ণনায়ও ফিনিক্স পাখির উল্লেখ পাওয়া গেছে। প্রাচীন গ্রিক পুরাণ অনুসারে ফিনিক্স হল এক পবিত্র ‘অগ্নিপাখি’। আর এটি এমনই একটি পবিত্র আগুনের পাখি, যার জীবনচক্র আবর্তিত হতে থাকে হাজার হাজার বছর ধরে। যমদূত আসার ঠিক আগেই ফিনিক্স পাখি নিজেদের বাসা নিজেরাই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আর নির্মমভাবে দগ্ধীভূত হয় এই পাখি এবং তার বাসার ভস্ম থেকেই জন্ম নেয় নতুন জীবন।প্রাণ পায় নতুন জীবনের, শুরু হয় আবারও জাতিস্মর ফিনিক্সের অবিনাশী যাত্রা।


স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ এবারডীন এর লাইব্রেরীর বেসটিয়ারীতে সংরক্ষিত ফিনিক্স পাখির একটি চিত্র। ছবিটি স্ব-সংগৃহীত।


উল্লেখ্য দ্য এবারডীন বেস্টিয়ারি হলো এবারডীন ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরির একটি অংশ যেখানে ১২ শতকের আলোকিত ইংরেজী পাণ্ডুলিপি সংরক্ষন করা হয়েছে । ১২ শতকের পাণডুলিপি সমুহ ১৫৪২ সনে ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদের ওল্ড রয়্যাল লাইব্রেরির তালিকায় প্রথম তালিকাভুক্ত হয়েছিল । এ থেকে ধারণা করা যায় যে ফিনিক্স পাখি উপাক্ষানটি প্রায় হাজার বছর আগেই চর্চিত হয়েছিল অতি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা পরিমন্ডলে ।

উড়ন্ত ড্রাগন

ড্রাগন একটি বড় যাদুকরী কিংবদন্তি প্রাণী যা বিশ্বব্যাপী একাধিক সংস্কৃতির লোককাহিনীতে উপস্থিত হয়। ড্রাগন সম্পর্কে বিশ্বাস অঞ্চলভেদে উল্লেখযোগ্যভাবে বিভিন্ন ধরনের, তবে মধ্যযুগ থেকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ড্রাগনগুলিকে প্রায়শই ডানাযুক্ত, শিংযুক্ত এবং আগুন ঝড়ানো শ্বাস প্রশ্বাসে সক্ষম হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। প্রাচ্যের সংস্কৃতিতে ড্রাগনকে সাধারণত ডানাবিহীন চার পায়ের সর্পজাতীয় প্রাণী হিসাবে চিত্রিত করা হয়। যাহোক, গল্প কাহিনী বা চলচিত্রে এদের ব্যপক ধংসসাধনের ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণী হিসাবেই তুলে ধরা হয়েছে ।


এখন অবশ্য ড্রাগন কাহিনী অনেকটাই পুরান হয়ে গেছে আর একে নিয়ে রচনা হচ্ছে শিল্প সাহিত্য যেমনটি দেখা যায় ল্যাং এনড্রো সম্পাদিত(১৯০৫) রেড রোমান্স বুকে থাকা বিখ্যাত The End of Dragon চিত্র কর্মে ।


ড্রাগন পর্ব শেষ হলেও মনুষ্য তৈরী প্রযুক্তি এখন ড্রাগনের চেয়েও মারাত্মক উড়ন্ত আগুনে পাখি যথা F-35 Fiter jet, Mig-35 Fiter jet সহ আরো অসংখ্য ধংসাত্মক উড়ন্ত যন্ত্রদানব পাখির আবির্ভাব ঘটিয়েছে এই ধরাধামে যাদের ভয়ে সারা পৃথিবীই আজ প্রকম্পিত ।



খঞ্জন পাখি

ছোট্ট পাখি খঞ্জনা , দেখতে ওগো মন্দ না । জানালার কাছে গাছের ডালে পাতার নীচে কিংবা ঘাসের বুকে বসে সারাক্ষন লেজ নাড়ে আর ছন্দময় তালে কিচ কিচ করে। কিচ মিচ করে খঞ্জন যা বলে কান পেতে শুনলে জানা যাবে তাদের নিয়েও রয়েছে রূপকথা ।


কান পাতলে জানা যাবে রূপকথার রাজ্যে খঞ্জন হলো আরেকটি "পরী পাখি", বলা হয়ে থাকে পরীরা মাঝে মাঝে ছদ্মবেসে খঞ্জনের রূপ ধরে উড়ে বেড়ায় আকাশে। ভাগ্যবানেরা দেখতে পায় চন্দ্রিমা রাতে খোলা আকাশের নীচে কোন মনোরম নির্জন পরিবেশে গেলে ।


সব চেয়ে বড় কথা হলো পাখিদের রাজা হিসাবেও খঞ্জনের পরিচিতি রয়েছে । বলা হয়ে থাকে একদা পাখী রাজ্যে সমস্ত পাখি একটি সংসদের আয়োজন করেছিল এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে সর্বোচ্চ এবং দ্রুত উড়তে পারবে তাকে রাজার মুকুট পড়িয়ে দেয়া হবে। ঈগলটি সহজেই অন্যদের থেকে অনেক উপরে উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু চতুর ছোট্ট খঞ্জন পাখিটি ঈগলের ডানার নীচে চুপটি করে লুকিয়ে ছিল যতক্ষণ না ঈগলটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল - তারপর খঞ্জনটি লাফিয়ে বেরিয়েছিল এবং ঈগলের চেয়েও বেশী উচ্চতায় উড়েছিল।ফলে তাকেই পাখি রাজের মুকুট পরিয়ে দেয়া হয় ।



দাঁড় কাক

আমাদের দেশে নীতিকথার গল্পগুলোতে কাক নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গল্পকথা । রয়েছে চতুর কাকের পাশাপাশি বোকা কাকের গল্প কথাও । চতুর কাকের কথায় দেখা যায় পানির তৃষ্ণায় যখন বুদ্ধিমান কাকের যখন প্রাণ যায়, তখন অর্ধেক পানি ভরা একটা কলস আবিষ্কার করে সে। কলসির মুখে দাঁড়িয়ে সেই পানির নাগাল পায় না কাক। তখন বুদ্ধি করে ছোট ছোট পাথর কুড়িয়ে, সেই পাথর কলসিতে ফেলে পানির উচ্চতা বাড়িয়ে পানি পান করে। বুদ্ধিমান কাকের গল্প বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে প্রচলিত। শিশুরা এ গল্প পড়ে আর নিজেদের ওই কাকের মতো বুদ্ধিমান ভাবতে ভালোবাসে।


বোকা কাকের বিষয়ে আমাদের সময় প্রাইমারীর বাংলা পাঠ্য বইয়ে ছিল বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী লিখিত বোকা কাক আর চতুর চরুই পাখির গল্প ।
https://www.newsbangla24.com/kidzone/168684/Climb-and-crow
চড়াই আর বোকা কাকের গল্প কথায় থাকা ছন্দময় কাব্যিক কথা মালা সকলের কাছেই হয়তবা জানা কথা যথা -
মোষ, মোষ! দে তো শিং, খুঁড়ব মাটি, গড়ব ঘটি, তুলব জল, ধোব ঠোঁট- তবে খাব চড়াইর বুক।

সেল্টিক দেশগুলিতে (বৃটেন,কর্নওয়েল,আয়ারল্যন্ড,আইসল অফ ম্যান,স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস) , কাককে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক পাখি হিসাবে মনে করা হতো , যদিও ঈগল, রাজহংস ( সোয়ান) এবং ক্ষুদ্র ডানা-ওয়ালা পাখীদেরও ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা ছিল বলে ধরে নেয়া হতো।
নর্স পৌরাণিক কাহিনীতে ( উত্তর জার্মানীর লোক কাহিনী) , দেবতা ওডিনের দুটি দাঁড়কাক যথা হুগিন ( চিন্তার পাখী) আর মুগিন (মনের পাখী) প্রতিদিন ভোরে সারা পৃথিবী জুরে উড়ে বেড়াত ।


তারপর কাক দুটি -দেবতা ওডিনের কাঁধে বসে তার কানে পর্যবেক্ষনের বারতা শোনাত ।


ভারতে মারাঠাদের পূর্বপুরুষের আত্মা কাকের মধ্যে বাস করত বলে মনে করা হত; মিশরে এক জোড়া কাক দাম্পত্য সুখের প্রতীক। অস্ট্রেলিয়ার আদিম উপাখ্যান এবং উত্তর আমেরিকার অনেক উপজাতির পৌরাণিক কাহিনীতে কাককে দ্বৈত প্রকৃতির যথা একদিকে ছলচাতুর্যময়ী , একটি কাকের বাসায় এখনো যে কেও অআয়না ,চিরুনী , সাবান , শারী ব্লাউজের টুকরা , বাচ্চাদের জামাকাপর সবই পাওয়া যায় আর দিকে এদেরকে স্রষ্টা দেব হিসাবেও অনেক জায়গায় মানা হয় , সেখানে কাককে আগুন, আলো, যৌনতা, গান, নৃত্য এবং মানবজাতির জন্য জীবন বয়ে আনার কৃতিত্ব দেওয়া হয় ।
সৃষ্টি কর্ম রত একটি কাকের ছবি।


সেল্টিক রূপকথায় আইরিশ যুদ্ধের দেবী মরিগান এবং দ্বীপ দেশ ( গ্রেট বৃটেন) এর রাজা ব্রাণকে দাঁড়কাক এর আরর্শিবাদধন্য রাজা হিসাবে মান্য করা হতো।
ছবি- কাকের সাথে আইরিস যুদ্ধের দেবী মরিগান


দাঁড় কাকের আর্শিবাদধন্য রাজা ব্রাণ ছিলেন বিশাল দেহী । মাবিনোজিওনে (মধ্যযুগীয় ওয়েলশ গল্পের একটি সংগ্রহ) "এই দ্বীপের রাজা" অর্থাৎ, ব্রিটেনের রাজাকে দাাঁড়কাকের আর্শিবাদ ধন্য রাজা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল।

রাজা ব্রাণের দৈহিক উচ্চতার কারণে, তাঁকে এবং তাঁর রাজ সভাসদেরকে একটি তাবুতে থাকতে হয়েছিল, কারণ তাকে ধারণ করার মতো এত বড় কোনও বাড়ি তখনও নির্মিত হয়নি। ব্রানের পৌরাণিক কাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল তার বিস্ময়কর কাটা মাথার সাথে সম্পর্কিত। প্রাচীন সেল্টরা মানুষের মাথার পূজা করত এবং বিশ্বাস করত যে এটি আত্মার আসন, শরীরের মৃত্যুর পরে তা স্বাধীন জীবনযাপন করতে সক্ষম। তারা ভেবেছিল যে এটি ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষমতার অধিকারী এবং উর্বরতার প্রতীক। তারা এটাও বিশ্বাস করত যে এর অন্যতম কাজ হল অন্য জগতে বিনোদন প্রদান করা।শ্রুতি আছে যে রাজা ব্রানের কাটা মাথাটি লন্ডন টাওয়ারের নীচে
চাপা পড়ে আছে ।


লন্ডন টাওয়ারে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিয়োজিত রেভেন মাস্টার এখনও টাওয়ারে আগত পাখীদের উপর নজর রাখে । একটি পুরানো প্রথা বলে যে যদি ব্রাণের পাখিরা কখনও টাওয়ার ছেড়ে চলে যায় তবে রাজ্যটির পতন হবে ।


কাকের প্রতি জগত বিখ্যাত চিত্র শিল্পীদেরও ভালবাসা মমতা কম কিছু ছিলনা ।
একজন মহিলার কোলেবসা কাক নিয়ে ১৯০৪সনে পাবলু পিকাশো অঙ্কিত চিত্র শিল্পটি জগত জোড়েই শিল্প রসিকদের মনযোগ কাড়ে।


ছবি উৎস - Click This Link

প্যাঁচা

প্যাঁচা হল এমন একটি পাখি যা অন্য যে কোনোটির চেয়ে বেশি নৃশংসতার কৃতিত্ব পেয়েছে, যদিও জ্ঞানী পাখি হিসাবে এর খ্যাতি আছে প্রাচীনতম পৌরাণিক কাহিনীতে । গ্রীসে প্যাঁচা পাখিটি দেবি এথেনার কাছেও পবিত্র ও একটি প্রাজ্ঞ প্রাণী হিসাবে সম্মানিত ছিল ।
এথেনিয়ান মুল্যবান রোপ্যমুদ্রা টেট্রাড্রাকমের একপিঠে দেবী এথেনা অন্য পিঠে ছিল প্যাঁচার প্রতিচ্ছবি


এখানে উল্লেখ্য যে টেট্রাড্রাকম হলো খৃষ্টপুর্ব পঞ্চম শতকে এথেনের একটি মুল্যবান রোপ্য মুদ্রা । যার একটি দিয়ে সে সময়ে একজন উচ্চদক্ষ শ্রমিকের ৪ দিনের পারিশ্রমিক প্রদান করা যেতো কিংবা একজন নামকরা ভাস্কর্যের দুই দিনের সম্মানী /পারিশ্রমিক দেয়া যেতো।
তবুও ভয় ছিল, প্যাঁচার ডাক বা ভর সন্ধায় আকস্মিক সাদা ডানার চেহারা নিয়ে প্যাঁচার উপস্থিতি কারো মৃত্যুর পূর্বাভাস দেয় বলে মনে করা হতো।


মধ্যপ্রাচ্যে, অশুভ আত্মারা বাচ্চা চুরি করার জন্য প্যাঁচার আকার ধারণ করে বলে মনে করা হতো । অন্যদিকে সাইবেরিয়ায়, বাচ্চাদের রক্ষাকারী হিসাবে প্যাঁচাকে বাড়িতে রাখা হত।আবার আফ্রিকায় পেঁচার আকৃতির যাদুকররা রাতে দুষ্টুমি করে বেড়াত ।

জাপানের ট্রাইবাল পিপুল আইনুদের কাছে যদিউ প্যাঁচা ছিল একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রাণী তার পরেও ঈগলের পর প্যাঁচাকেও তারা মানুষ এবং দেবতাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সম্মানিত মনে করতো ।


উত্তর আমেরিকায়, আদিবাসী উপজাতিদের মধ্যে প্যাঁচার প্রতীক ভিন্ন, পুয়েবলো জনগণ তাদেরকে খারাপ বলে মনে করত; নাভাজোরা তাদেরকে বিপজ্জনক ভূত বলে বিশ্বাস করত।
আবার যখন সেল্টিক ঐতিহ্যের দিকে ফিরে তকানো যায় তখন দেখতে পাওয়া যায় যে প্যাঁচাকে যদিও পবিত্র হিসাবে মানে, তার পরেও এটিকে একটি অশুভ লক্ষণ যথা মৃত্যু, অসুস্থতা বা কোন মহিলার সম্মানের জন্য ক্ষতিকর ভবিষ্যদ্বাণী বলে গন্য করত।
ওয়েলসের রূপকথার সংগ্রহ ম্যাবিনোজিওনের ৪র্থ খন্ডে থাকা বর্ণনা হতে জানা যায় মস্তবড় জাদুকর গুইডিয়ন ও ম্যাথ বনের তিনটি ফুল দিয়ে ব্লোডিউয়েডর নামে একটি খুবই সুন্দরী মেয়ে তৈরী করেছিলেন , এবং তাকে করেছিল ফুলের রানী যেন সে বনের ফুলদের দেখবাল করতে পারে ।


পরে মেয়েটিকে তার পুত্র লী এর সাথে বিয়ে দেয়া হয় । কিন্তু ব্লডিউড লীতে সন্তুষ্ট ছিলনা । একদিন লীর অবর্তমানে পাশের রাজ্য পিলিভিন হতে পর্যটক হিসাবে আগত ঘৌড় সওয়ার লর্ড ঘ্রন পিবরের প্রতি প্রথম দেখাতেই আসক্ত হয়ে পরে।


পরে তাদের মধ্যে বিবিধ উপায়ে দেখা সাক্ষাত হত ও একপর্যায়ে তারা প্রেমে মত্ত হয়ে পড়ে । এই প্রেমের ধারাকে বজায় রাখার জন্য তারা লিকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজে । ব্লডিউডের এই বিশ্বাসঘাতকতা ধরা পরে তার সৃস্টিকারি যাদুকর ওডিয়ন ও পতি লির কাছে । ফলে তারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ব্লডিউডকে প্যাঁচায় পরিনত করে বনে ছেড়ে দেয় । তারপর সে ফুলের রাণী থেকে প্যাঁচা দেবি হিসাবে পরিনত হয়।


প্যাঁচাকৃতির ব্লডিউড নিয়ে হয়েছে অনেক শিল্প কর্ম , আবার শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে প্যাঁচার আকৃতিকে ধারণ করে বাহারী ডিজাইনের নেকলেস জাতীয় গহনা হয়ে সুন্দরী ললনাদেরকে করেছে আকৃষ্ট।


বাংলা মুলুকেও প্যাঁচা নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প কথা , রয়েছে প্যাঁচা প্রতিকের ব্যপক ব্যবহার , আমাদের এই ব্লগেও প্রায় সকলের কাছে পরিচিত একজন ব্লগারের অনেক লেখাতেই প্রচ্ছদ চিত্র হিসাবে প্যাঁচার উপস্থিতি দেখা যায় । যাহোক, প্যাঁচা নিয়ে প্রচলিত গল্প কথাকে ছাপিয়ে হুতুম প্যাঁচার নক্সা নামক একটি পুস্তক আজ থেকে দুই শত বছর আগে সারা বাংলা মুলুকে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল ।
"হুতোম প্যাঁচা" ছদ্মনামে সে সময়ের প্রক্ষাত লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ হুতুম প্যাঁচার নকশা শিরোনামে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের গোড়াপত্তনকালীন পর্যায়ে একটি গদ্য উপাখ্যান রচনা করেছিলেন । সেটি মূলত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক সামাজিক নকশা জাতীয় রচনা।


এতে কলকাতার হঠাৎ ফেঁপে ওঠা ঐশ্বর্য-ভারাক্রান্ত নব্য সমাজ এবং তার প্রায় সব ধরনের মানুষের চরিত্র অঙ্কিত হয়েছে। গ্রন্থে যাদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে তারা সবাই তৎকালীন সমাজের অসাধারণ পরিচিত মানুষজন। তারা তিন ভাগে বিভক্ত; সাহেবি ওল্ড অর্থাৎ ইংরেজি শিক্ষিত সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী; ইংরেজি শিক্ষিত নব্যপন্থী, যারা অনুকরণকারী নয় এবং ইংরেজি না-জানা গোঁড়া হিন্দু। এরা সকলেই কমবেশি জাল-জুয়াচুরি ফন্দি-ফিকির করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। নকশায় ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকলেও শ্লীলতার মাত্রা অতিক্রম করেনি। গ্রন্থে উল্লিখিত যেসব চরিত্র নিন্দা করার মতো নয়, লেখক তাদেরকে সঙ সাজিয়ে উপস্থাপন করেছেন।

সারস

এটা আমাদের সকলের কাছেই একটি পরিচিত পাখি । তবে একে নিয়েও রয়েছে অনেক মঝার রূপকথা । সারস অনেক দেবতা বিশেষ করে গ্রীক দেবতা এপলোর ( যার কার্য পরিধি হল আলো- চারুকলা ও কাব্য ) কাছে সারস ছিল পবিত্রতার স্মারক একটি প্রিয় পাখী।


চিনে সারস নিয়ে রয়েছে অনেক অভাবনীয় রূপকথা । চায়নিজ বিশুদ্ধ সাদা সারসগুলি অমরত্ব, সমৃদ্ধি এবং সুখের প্রতিনিধিত্ব করে বলে বিশ্বাস করা হত ।


জাপানেও সারস দেবতা জোরোজিনের ( দীর্ঘায়ু ও ভাগ্যের দেবতা) সাথে যুক্ত ছিল ।


রাশিয়া, সিসিলি, ভারত এবং অন্যান্য সংস্কৃতির লোককাহিনীতে সারস ছিল " নির্দেশিক প্রাণী" , যা কাহিনীর নায়ককে তার দুঃসাহসিক অভিযানে পথ নির্দেশ দিয়ে থাকে বলে অনেক গল্প কাহিনীতে দেখা যায় ।
জনশ্রতি আছে সারস নারী বিশ্বাস, ত্যাগ এবং মাতৃভক্তির প্রতীক - এই বিশ্বাসের কারণ হল সারস তার বাচ্চাদের নিজের বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আহার যোগায় ।



লোনি তথা গ্রেট নর্দার্ন লোনি পাখি

আমিরিকা আর কানাডা প্রবাসী আমাদের ব্লগারদের অনেকেই সম্ভবত লোনি তথা গ্রেট নর্দার্ন লোন, পাখিটি দেখে থাকবেন।
ডুব সাতারে বিশেষ পারঙ্গমতার জন্য এটা গ্রেট নর্দার্ন ডাইভার নামেও পরিচিত ।


লোনির গাঢ় ঘাড়ের পালক বেশ উজ্জর এবং সূর্যের আলোতে এর রঙ পরিবর্তন করে: ছায়ার নিচে কালো দেখায় কিন্তু আলোর নিচে গাঢ় সবুজ দেখায় । প্রাচীনকাল থেকেই লোনি পাখিটি নেটিভ আমেরিকান আর কানাডিয়ান পৌরাণিক কাহিনীতে বিশিষ্টভাবে বৈশিষ্ট্যযুক্ত। সিওক্স এবং লাকোটা ( Sioux and Lakota) কিংবদন্তিতে এটি ডিলুভিয়ান-পরবর্তী ( বাইবেলে বর্ণিত মহাপ্লাবনের পরে ) বিশ্বকে পুনরুদ্ধারে ভূমিকা পালন করে। একটি ওজিবওয়া গল্পে ( Ojibwa tale) লোনির কণ্ঠকে নেটিভ আমেরিকানরা বাঁশির সুরের অনুপ্রেরণা হিসাবে কৃতিত্ব দেয়। অপরদিকে আলাস্কার একটি সিমশিয়ান( Tsimshian ) গল্প থেকে জানা যায় কীভাবে একটি লোনি একজন অন্ধ ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়, যার জন্য সেই অন্ধ ব্যক্তি লোনি পাখিটির ঘাড়ে সাজানো সাদা পালকের সুন্দর নেকলেস উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করে ।


সুন্দর এই পাখিটির প্রতিকৃতি কানাডিয়ান মুদ্রাতেও হয়েছে সংস্থাপিত । কানাডিয়ান এক ডলারের মুদ্রার একপাশে কানাডার ততকালীন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও অন্যপাশে জলে ভাসা লোনির প্রতিকৃতি রয়েছে । রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর অবশ্য রাজা চার্লস III কে এক পাশে ও অন্য পাশে লোনিকে রেখে নতুন মুদ্রা চালু করা হয়েছে ( সুত্র : https://en.wikipedia.org/wiki/Loonie )
লোনি নামক মুদ্রাটি প্রচলনের পরবর্তীকালে কানাডায় এটা আইকনিক মর্যাদা লাভ করে, এবং এখন এটি সেখানে একটি জাতীয় প্রতীক হিসাবে বিবেচিত । এক ডলারের মুদ্রাটি লোনি নামে পরিচিতি পেয়েছে। একটি পাখির নাম "লোনি" শব্দটি তখন থেকেই কানাডিয়ান ডলারের সমার্থক হয়ে উঠেছে। এটি কানাডায় লাকি পাখি হিসা্বেও স্বীকৃতি পেয়েছে, খেলাধুলায় বিশষ করে ২০০২ এ ন্যশনাল হকি লীগে গোপন প্রতিক হিসাবে এর ব্যবহারে সফলতা লাভের পর এর ঐতিহ্যকে পুঁজি করে, রয়্যাল কানাডিয়ান মিন্ট ২০০৪ সাল থেকে প্রতিটি অলিম্পিক গেমসের জন্য একটি স্মারক সংস্করণ "লাকি লুনি" প্রকাশ করছে ( সুত্র https://en.wikipedia.org/wiki/Loonie)। পাখি প্রেম আর কাকে বলে । কিংবদন্তির রূপকথার পাখির গুরত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবে কতটা প্রভাব রেখেছে এটিও তার একটি জলন্ত দৃষ্টান্ত ।

ফিঙে পাখি

ফিঙে বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে পরিচিত একটি পাখি এবং অনেকের কাছে ফিঙে হলো পাখির রাজা। এ পাখিকে অঞ্চলভেদে ফ্যাচ্চোয়া পাখি নামে চিনে বা ডাকে। এদের বিচরণ ক্ষেত্র মাঠে-ঘাটে। ফিঙে পাখি মানুষের কাছাকাছি উড়ে বেড়াতে পছন্দ করে। এরা পরিবেশ বান্ধব পাখি। ফিঙের রাজা হওয়ার পিছনে যেমন রয়েছে একটি চমকপ্রদ গল্প তেমনি রয়েছে এর সাহসিক কাজকর্ম ।
এ প্রজাতিটি অনেক বড় পাখির প্রতি আক্রমণাÍক আচরণের জন্য বেশ পরিচিত। এদের বাসার কাছে অন্য পাখি আক্রমণ করতে এলে, তাড়াতেও দ্বিধা করে না। তাই অনেক পাখি ফিঙে পাখির বাসা এড়িয়ে চলে।
কালা ফিঙে অনেক বেশী সাহসী পাখি । কারণ হলো সে অনেক বড় পাখিকে তাড়া করে থাকে। ও যে এলাকায় থাকে সেখানে তার থেকে দশগুণ বড় এবং ওজনে বিশগুণ বড় পাখিকে সে সবসময় তাড়া করে সরিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ও যদি নীড় বাঁধে তখন আসেপাশের সব শিকারী পাখিকেই সে তাড়া করে।


ফিঙে শিকারী পাখি নয়, কিন্তু ওর নখর অত্যন্ত শক্তিশালী। সেজন্যে ওর একটা বড় সুবিধে আছে- ও যদি তাড়া করে পায়ের নখ দিয়ে ধরে তাহলে বড় পাখিদের বড় ক্ষতি করে ফেলবে। তাই তারা ফিঙের তাড়া খেয়ে পালায়।আবার ফিঙের বাসাও দেখা যায় খোলা জায়গায় হয়ে থাকে। কারণ ও কাউকেই ভয় পায় না( ছবি সুত্র - Click This Link


ফিঙের পাখির রাজা হওয়ার পিছনেও একটি গল্প আছে ।পাখির রাজা কে হবে তা ঠিক করার জন্য একদা পাখিরা মিটিং করে । মিটিং এ ঠিক হয় সকলের আগে যে গায়ে গতরে নীজ নীজ পছন্দমত রং চং মেখে সকলের চেয়ে সুন্দর সাজুগুজু করে নির্দিষ্ট সময়ে সকলের আগে আসতে পারবে তাকেই রাজা হিসাবে বরণ করে নেয়া হবে । সকল পাখিই যার যার সুবিধামত সাজতে চলে গেল ।
সকলেই চাচ্ছিল অপরূপভাবে সাজতে যেমন ময়ুর সেজেছিল অপরূপ সাজে , অন্য পাখিরাও ব্যস্ত সময় পার করেছে বিভিন্ন বাহারী রঙিন সাজুগুজুতে । এদিকে চতুর ফিংগে পাশেই এক কিষানের বাড়ীতে গিয়ে ছাই এর টালে গড়াগড়ি দিয়ে সারা শরীর কালো রঙে রাঙিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সকলের আগে মিটিং এ এসে হাজির হয় । একেতো সে সবার আগে এসেছে তদোপরি তার শরীরে রঙ মাখানোতেও কোন খুত ধরা পরে নাই , তার পায়ের নখ থেকে ঠোটের আগা পর্যন্ত কালো রংয়ে মাখামাখি । অপরদিকে অন্য পাখিরা বাহারী সুন্দর সাজে সেজে আসলেও একেতো তারা আসতে বিলম্ব করেছে তদোপরি কেও ফিঙের মত নিখুতভাবে সাজতে পারে নাই । যেমন ময়ুর খুব সুন্দর করে সেজে আসলেও তার পা দুটি দেখতে ছিল বড়ই কদাকার ।

ঘুঘু পাখি

ঘুঘু হল একটি পাখি যা অনেক ঐতিহ্যের মাতৃদেবীদের সাথে যুক্ত। ঘু ঘু কে আলোর প্রতিক, রোগ নিরাময় ক্ষমতাসম্পন্ন এবং অস্তিত্বের এক অবস্থা থেকে পরবর্তীতে রূপান্তরের প্রতীক হিসাবে ভাবা হয়।


ঘু ঘু পাখী আনেক দেব দেবির কাছেই ছিল ভালবাসা আর পবিত্রতার প্রতিক । পাখিটি দেহের ভিতরে থাকা জীবন পাখির বাহ্যিক আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে বলে বিশ্বাস করা হত ।


ঘুঘু পাখির মিষ্টি মধুর সুরের ডাকে নি:সঙ্গ বনের ঘুঘু পাখি চলে আসে তার কাছে। আর এই সুবিধাটুকু কাজে লাগিয়ে ঘু ঘু শিকারীগন ঘু ঘু পাখি ধরে ধরে এর বিনাস ঘটিয়ে চলেছে আমাদের দেশে নিরন্তর । নীচের ভিডিয়ু লিংকে গিয়ে ফাঁদ পেতে ঘু ঘু দিয়ে ঘু ঘু শিকার কাহিণি দেখা যাবে ।

ছোটকালে আমি দেখেছি আমাদের দেশে দলবেধে ঘাট হতে ঘাটে নোঙগর করা ভাসমান বেদেরা এভাবে ফাদ পেতে ঘু ঘু শিকারে বেশ পটু । বেদে মেয়েরা যখন মাথায় ঝাপিতে প্রসাধনি আর কাখে করে ঝুপরীতে সাপ নিয়ে খেলা দেখাবার তরে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ায় তখন পুরুষ বেদেরা খাচায় পোষা ঘুঘু নিয়ে বন বাদারে ঘুরে পাখি শিকারের তরে , এমনি করেই তারা উজার করে ঘু ঘু সহ অনেক ছোট ছোট পাখিদেরে ।

রাজহংস

অনেক প্রাচীন সমাজে রাজহংস একটি পবিত্র ও সুরক্ষিত পাখি হিসাবে গন্য ছিল। মিশরে, মহান নীল হংস মহাজাগতিক ডিম পেড়েছিল এবং সে ডিম ফুটে সূর্য বের হয়েছিল। সুত্র Click This Link.
মিশরিয় রূপ কথায় বলা হয়েছে গেব (Geb) ছিলেন পৃথিবীর দেবতা । প্রাচীন মিশরে বিশ্বাস করা হত যে গেবের হাসি ভূমিকম্প সৃষ্টি করে এবং তিনি ফসল ফলাতে সহায়তা করেন । তার শিরে একটি ঘুঘু পাখি শোভা পেত ।


রাজহংস অনেক দেবতা যথা আইসিস, ওসিরিস, হোরাস, হেরা এবং অ্যাফ্রোডাইটের কাছেও একটি পবিত্র পাখি হিসাবে গন্য ছিল।
ভারতে বিণা হাতে পদ্মপাতে বসা বিদ্যার দেবী সরস্বতির পদ্মাসনের পাশেই শোভা পেতো রাজহংস । দেবীর পদ পাশে থেকেই সেও পেতো ভক্তের অর্ঘ্য ।


হিন্দু পুরাণে রাজহংসকে বাহ্যিক প্রদর্শন থেকে অন্তর দর্শন এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা অর্জন এবং মোক্ষের প্রতীক হিসাবেও গন্য করা হত। দেবতা শ্রীকৃষ্ণের বাহন হিসাবে ঈগলের পাশে রাজহংসও হতো সঙ্গি। রাজহংস সৃজনশীলতা, শিক্ষা এবং বাগ্মীতারো প্রতিক ।



রাজহাঁস

সাইবেরিয়ার বৃহত্তর উপজাতীয় জনগুষ্ঠি বুরিয়াটগন তাদের বংশের ধারাকে রাজহাঁসের কাছে খুঁজে পেয়েছিল। প্রতি শরৎ এবং বসন্তে অভিবাসন অনুষ্ঠানে তারা তাদের পূর্বপুরুষ রাজহাঁস-মাতাকে সম্মান জানায়। রাজহাঁসের ক্ষতি করা, এমনকি রাজহাঁসের পালক ভুলভাবে ছিড়ে ফেলাকে তারা অসুস্থতা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে মনে করে ।


আয়ারল্যান্ডের কন্নাচ এলাকায় রাজ ফরমান বলে কুমারী রাজহংস নিধন নিষিদ্ধ ছিল । কারণ বিখ্যাত ‘’দি চিলড্রেন অফ লির ‘’ রূপকথার পুস্তকে আইরিশ পৌরাণিক কাহিনীতে থাকা তিনটি মহান দুঃখের কাহিনীর মধ্যে একটিতে আছে যে একদা সেখানকার সমুদ্রের প্রভু লি‌র চারটি শিশু তাদের ঈর্ষান্বিত সৎ মায়ের যাদুতে বন্য রাজহাঁসে রূপান্তরিত হয়। লির নিজে এবং সেখানকার সমস্ত মহান জাদুকররা সৎমায়ের অভিশাপের শক্তিকে প্রশমিত করতে পারে নাই । ফলে যাদু ক্লিষ্ট চারটি শিশুকে ডেরিভরাঘ হ্রদে তিনশ বছর, জনমানবহীন উত্তর সাগরের বিরান উপকুলে তিনশ বছর এবং শেষ তিনশ বছর ঝর জঞ্জাটপুর্ণ মাইয়ূ উপকুলে নির্বাসনে পাঠাতে বাধ্য হয়। এই সময়ে লির শিশুরা মানুষের কথাবার্তার ব্যবহার ধরে রাখে এবং রাজহাঁস হলেও তাদের গানের সৌন্দর্যের জন্য সারা দেশে খ্যাতি পায়।


অভিশাপের সমাপ্তি ঘটে যখন দক্ষিণের রাজকুমারী উত্তরে কননাচের রাজা লেয়ারগ্রেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রাজহাঁসের আকারগুলি শেষ পর্যন্ত লোপ পায়, কিন্তু ততদিনে চারটি শিশুই শুকিয়ে যাওয়ায় প্রাচীন আত্মার মতো তাদের মানব আকারগুলি পুনরায় জীবন শুরু করে। তারা শীঘ্রই মারা যায়, এবং সমুদ্রের ধারে একটি একক কবরে একসঙ্গে সমাহিত হয়। বহু শতাব্দী ধরে, আইরিশরা এই দুঃখজনক গল্পের কারণে রাজহাঁসের কোন ক্ষতি করেনা এবং দেশের লোক এখনও বলে যে একটি মৃত রাজহাঁস লির সন্তানদের সঙ্গীত স্মরণ করে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের একটি গান গায়, এবং প্রাচীন গ্রীক বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি করে যে একটি রাজহাঁস জীবনে মাত্রএকবারই মিষ্টি করে গান গায় মৃত্যুর আগের মুহুর্তগুলিতে।
অরল্যান্ডো গিবন্স রচিত মাদ্রিগালে ( মধ্যযুগীয় ছোট্ট গীতি কবিতায়) "দ্য সিলভার সোয়ান" শীর্ষক কিংবদন্তির গানটি একথাই বলে:
রূপালী রাজহাঁস, জীবিত কালে যার কন্ঠে ছিল না কোন কথা,
মৃত্যু যখন কাছে এল, তার নীরব গলা খুলে গেল ।
তার বক্ষ বিদ্ধ তীরে হেলান দিয়ে,
তার জীবনের প্রথম এবং শেষ গান গাইল, আর বলে গেল
"বিদায়, সমস্ত আনন্দ! হে মৃত্যু, আমার চোখ বন্ধ কর‌"!
"রাজহাঁসের চেয়ে রাজহংসই বেশী বাঁচে ;জ্ঞানীর থেকে বোকাই বেশী।"

আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে পার্নেল স্কোয়ারে ‘’গার্ডেন অফ রিমেমব্রেন্স‘’ নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে । এটি ইংল্যান্ড এবং পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য ৯০০ বছরের সংগ্রামের পরে আইরিশ জাতির পুনর্জন্মের প্রতীক, যেমনি করে ৯০০ বছর পরে রাজহাঁসের পুনর্জন্ম হয়েছিল।


পাখিদেরকে নিয়ে নিম্নলিখিত প্রার্থনাটি স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ডস থেকে এসেছে, যা একশ বছরেরও বেশি আগে রেকর্ড করা হয়েছে (গ্যালিক ভাষায়)।
কাকের শক্তি তোমার হোক,
ঈগলের শক্তি তোমার হোক,
ফিঙের শক্তি তোমার হোক
সারসের শক্তি তোমার হোক।
ঝড়ের শক্তি তোমার হোক,
চাঁদের শক্তি তোমার হোক,
সূর্যের শক্তি তোমার হোক।
সমুদ্রের শক্তি তোমার হোক,
জমির ক্ষমতা তোমার হোক,
স্বর্গের শক্তি তোমার হোক।
সমুদ্রের মঙ্গল তোমার হোক,
পৃথিবীর মঙ্গল তোমার হোক,
স্বর্গের কল্যাণ তোমার হোক ।
প্রতিটি দিন আনন্দময় হোক,
কোন দিন তোমার দুঃখ না হোক
সম্মান এবং সমবেদনা থাকুক।
প্রতিটি মুখের ভালবাসা তোমার হোক,
বালিশে মাথা রেখে মৃত্যু তোমার হোক,
এবং ঈশ্বর তোমার সাথে থাকুক ।

সবশেষে উপরের এই প্রার্থনার সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও রূপকথার পাখিসহ উপকারী সকল পাখিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রার্থনা করি কারন রূপকথার বিস্মৃতপ্রায় পাখিরা স্মরণ করে দিয়ে যায় তারা আমাদেরকে যতটুকু ভয় পায় আমরা কি তাদেরকে তার চেয়ে বেশী ভালবাসি ।


পাখিদের জন্য প্রার্থনা শুনে তারা আমাদেরকে হয়ত শেখাবে কীভাবে পাখিদের কথা শুনতে হয়, কীভাবে তাদের ভালবাসতে
হয়,কীভাবে তাদের বন্ধু হতে হয় আর এ ধরাকে পাখির কল কাকলিতে মুখর করে তুলতে পারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।

এতক্ষন ধৈর্য ধরে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।পাখি বিষয়ে আরো সুন্দর সুন্দর রূপকথা কারো জানা থাকলে মন্তব্যের ঘরে কিংবা
পৃথক পোষ্ট আকারে দিয়ে পাখিদের রূপকথার জগতকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য সম্মানিত সকল ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ রইল।

তথ্য ও ছবি সুত্র

১) লেখাটির ভিতরে অনেক জায়গায় মুল সুত্র উল্লেখসহ লিংক আকারে দেয়া হয়েছে ।
২) এছাড়া অন্য ছবিগুলি উইকিডিডিয়াসহ গুগল অন্তরজালের পাবলিক ডমেন
হতে যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন পুর্বক সংগৃহীত । এখানে আবারো তাদের
প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

1.Baitanasova, Karlygash, and Aigerim Talen. "THE SHRINE OF THE BIRD: THE PLACE OF THE OWL IN WORLD FOLKLORE." Bulletin of the Eurasian Humanities Institute, Philology Series, no. 1 (March 24, 2022): 73–83. http://dx.doi.org/10.55808/1999-4214.2022-1.08.
2. Glynn Anderson ( 2017) Birds of Ireland: Facts, Folklore & History: Facts, Folklore and History Paperback – Illustrated, 27 Feb. 2017, The Collins press.Glasgow , Scotland
3. Tate, Peter( 2007, Flights of fancy: Birds in myth, legend and superstition. London: Random House, London
4. Alan Garner(2002) The Owl Service (Collins Modern Classics S) ,Available from https://www.amazon.co.uk
5. Evangeline Walton ( EvangelineWalton ( 1936).a The island of the mighty: The fourth branch of the Mabinogiby mazon, Seattol , Washington .
৬.Lang Andrew edt ( 1905) , The End of Dragon in Red Romance Book, Longmans Green and Co, London.
৬.দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৯০৬), ঠাকুমার ঝুলী কলকাতা, 'ভট্টাচার্য এন্ড সন্স' প্রকাশনা সংস্থা
৭.দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার (১৯০৯), দাদা মশায়ের থলে কলকাতা, 'ভট্টাচার্য এন্ড সন্স' প্রকাশনা সংস্থা
৮. উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ( ১৯৬৪), টুনটুনির বই , দেব সাহিত্য কুটির প্রকাশনী , কলকাতা।
9. Academic literature on the topic 'Birds, folklore'
at Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১৯
৩৮টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×