somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এসব কি ?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেকে উঠলাম আম্মার ধাক্কায়। রাত একটায় বাড়ি পৌঁছে না খেয়েই ঘুম দিয়েছি। উঠে দেখি সাড়ে দশটা বাজে। আম্মা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রেডিও জকির মত বক বক শুরু করলেন।
'তোর আব্বা কাইল বড় একটা পাঙাস মাছ নিয়ে আসছে, তুই পছন্দ করিস দেইখা। '
ভালো তো। রান্না করো।
'হ্যাঁ রান্না তো করবোই, তুই আসবি বলেই তোর আব্বা এই মাছ আনছে '
আম্মা তুমি কি বলতে আসছো সেইটা বল, এত বক বক করো না।
'মার সাথে এমনে কথা বলিস কেন '
কি বলবে তাই বল।
'তুই এত খোট্টার মত হইছিস ক্যান? '
এবার আম্মার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই কেমন যেন তার মুখের ভাব বদলে গেলো। বোকা বোকা চোখে আমার দিকে পিট পিট করে তাকিয়ে থাকলেন। এই মহিলার সমস্যা আমি বুঝি না। ইনি কি আমাকে ভয় পান নাকি এমনিই এমন বোকা আল্লাই জানে। '
উঠে গিয়ে ব্রাশে পেস্ট মাখানোর সময় পিছন থেকে বলে উঠলেন -
'তোর আব্বা শুকনা মরিচ হলুদ এগুলো আনতে ভুলে গেছে। তুই তো শুকনো মরিচের রান্না ভাল খাস। '
'তো এখন কি করতে হবে? বাজারে গিয়ে এগুলো নিয়ে আসতে হবে তাই তো? এ কথা বলার জন্য এত প্যাঁচানো লাগে? '
'তোর কাছে তো কথাই হেসানো যায় না '
'হিসিয়ে লাভও নেই, যা আছে তাই দিয়ে রান্না করো '।
'ওখানে কি না কি খাস, এত দিন পর আসলি তাই বলছিলাম '
বকবক থামিয়ে যাও এবার।
আম্মা ধমক শুনে মিইয়ে গেল আরো। দরজার কাছে কাছে গিয়ে মিন মিন করে বললেন, 'তোর আব্বা বারান্দায় বসে আছে, তুই ঘুম থেকে উঠলে যেতে বলছিল একটু '
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আম্মা এই কথাটা এতক্ষণ আমাকে বলেনি। উনি আসলেই বোকার মত কাজ করেন প্রায়ই। আম্মার দিকে চাইতেই বলল - 'ওভাবে তাকাচ্ছিস ক্যানো? আমি ভুলে গিয়েছিলাম '
বলেই চলে গেলেন। হাসি পেয়ে গেল আমার। আম্মা আমাকে ভয় পায়। কেন পায় কে জানে। শুনেছি আব্বাও নাকি আমার সাথে কথা বলতে ইতস্তত করেন। এরা আমাকে কি ভাবে? মাঝে মাঝে মনে হয় আমিই এদের গার্জিয়ান।

হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় গেলাম। আব্বা পেপারে চোখ বুলাচ্ছেন। উনি যে খুব রাজনীতি সচেতন তা নয়। বেশিরভাগ সময়ে সিনেমার পাতা পড়েন। আম্মার কাছে শুনেছি এটা নাকি তার পুরনো অভ্যাস। ভাবতেই হাসি পায়। অবশ্য মানুষের মন যে কখনো বৃদ্ধ হয় না এটা আব্বাকে না দেখলে বুঝতাম না।
আব্বার বাম পাশে আরেকটা বেতের চেয়ার খালি। সেখানে একটা বাটিতে আধ খাওয়া গুড় পড়ে আছে। আব্বা মনে হয় গুড় আর মুড়ি খাচ্ছিলেন। বাটিতে মুড়িও আছে কয়েকটা।
বাটিটা নিচে নামিয়ে রেখে চেয়ারে বসলাম। আস্তে করে বললাম
'আব্বা ডেকেছিলেন? '
আব্বা এতক্ষণ যেন আমার উপস্থিতি টের পান নি এমন একটা ভাব করলেন। আসলে তিনি নাটক করছেন। এ বাড়িতে আমার সামনে নাটক করে এরা ধরা খায়। তাও যে কেন করে কে জানে ?
আব্বা হঠাৎ বললেন, ' দুর্বল লাগছে নাকি? কাল তো অনেক বড় জার্নি করলে '
'না আমি ঠিক আছি, আপনার শরীর ভালো? '
'আর শরীর, বয়স তো আর কম হল না। এখন কি আর শরীর ভাল থাকবে বলো?
কথাটা বলে আব্বা মুখে করুণ করুণ একটা ভাব আনতে চাইলেন, কিন্তু হচ্ছেনা। হাস্যকর একটা ভাব ফুটে উঠেছে ওনার চোখ মুখে। আমি শুধু বললাম 'কিছু বলার জন্য ডেকেছিলেন? '
আব্বা খানিক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর গলা হালকা খাকারি দিয়ে বললেন -
'মনিরের বড় মেয়েটাকে তোমার মার খুব পছন্দ '
'একথা আমাকে বলছেন ক্যানো?
আব্বা আবারো চুপ। কথা গুছিয়ে বলার চেষ্টা করবেন বলে সময় নিচ্ছেন হয়ত। প্রচন্ড হাসি আর রাগের অনুভূতি মিলে একসাথে যা হয় আমার তাই হচ্ছে। কিন্তু হাসছি না।
আব্বা বললেন - 'তোমার বিয়ে শাদী নিয়ে ভাবছে তোমার মা '
আমি জানতাম একথাই আব্বা বলবেন। বাড়ি আসার আগে এমন একটা আভাস পেয়েও গিয়েছিলাম ।
আমি কিছু না বলে চলে আসলাম। এরা আমার সাথে কথা বলতে ইতস্তত করে ঠিকই। কিন্তু পরিবারের কোন ব্যাপারে কোন কথা বলি না তাই এরা আমার মতামত নেয়ার প্রয়োজনও মনে করে না।;
মনির চাচা আব্বার বন্ধু। আব্বা আম্মা যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন যে মনির চাচার বড় মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেবেন তাহলে আমার সেখানে দ্বিমত করেও লাভ হবে না। সুতরাং,কাল যেরকম সবাইকে না জানিয়ে বাড়ি এসেছিলাম, আজ সেরকম সবাইকে না বলেই চলে যেতে হবে।
পেট চো চো করছে। গত কাল থেকে কিছু খাইনি। আব্বার আনা মাছ টা আম্মা মহা উৎসাহে রান্না করছেন। তেল মসলা কোত্থেকে যোগাড় করলেন জানিনা। তবে ওটা আমার পেটে যাবে না। খাওয়াটা স্টেশনে বসেই সেরে নেবো।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×