আজও আমাদের দেশে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হয়, ব্ল্যাকে চিনি আসে, জিরা আসে। আমদানি করা হয় বিদ্যুৎ। দেশের আশি শতাংশ মটরবাইক আসে ভারত থেকে। আমাদের রাজপথে এখন যে মাহিন্দ্রা চলে, টাটা চলে এগুলো কাদের? ঐ পাশের দেশের দাদাদের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ কিংবা লা লিগা অথবা সিরি আ নামক টুর্নামেন্ট গুলো আমরা ওই ভারতীয় আর পাকিস্তানি চ্যানেলেই দেখি। মাঝে মাঝে নিজের দেশের খেলাও দেখতে হয় বিদেশের চ্যানেলে। কারণ আমাদের দেশে তা টেলিকাস্ট হয় না।ভারতীয় সিরিয়ালের কথা আর না বলি। এমন একটা লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যে বলিউডের মুভির জন্য অপেক্ষা করেনা। বাট ঢালিউডের সিনেমা হলে এসে চলে গেলেও অনেকে খোঁজ জানেনা। pk সিনেমা দেখেনাই এমন একজন লোকও আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নাই হয়ত। একই সাথে 'দবীর সাহেবের সংসার ' কিংবা 'অগ্নি ' দেখছে এমন লোকও খুব একটা আমার লিস্টে নাই। হোক সেগুলো থার্ড ক্লাস তবু আমাদের তো। এটা কয়জন বুঝি??? আর না বুঝেই শুধু বলি ভারত পাকিস্তানের পণ্য বর্জন!!! ভারতের কিছু পাইলে ভাদা আর পাকিস্তানের কিছু পাইলে পাদা??? এখন যে ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট চলছে তাতে যদি কেউ ভারত কিংবা পাকিস্তানের পতাকা এঁকে স্লোগান দেয় তাহলেও আমাদের কি কিছু বলার আছে? যাদের চারিদিকে ভারত পাকিস্তান দিয়ে ভরা তারা কিভাবে বলতে পারে যে তুই ভাদা তুই পাদা তুই রাজাকার!!! দু মুখো সাপ হয়ে গেলাম না???
এখনো আমাদের হাসপাতাল গুলোতে অপারেশনের জন্য যন্ত্রপাতি আনা হয় পাকিস্তান থেকে। শিয়ালকোটের নাম কারো অজানা নয়। আমাদের মায়েরা বোনেরা প্রেমিকারা স্ত্রী রা শপিং এ গিয়ে পাকিস্তানি লন, পাকিস্তানি লেহেঙ্গা, পাকিস্তানি বোরখা খোঁজে।
মুসলমান পরিবারের বাবা রা পাকিস্তানি কাবুলি সেট কিনতে এখনো দোকানে যায়। আর টিভিতে পাকিস্তানি মেয়ে দেখে এখনো আমাদের যুবকেরা প্রেমে পড়ে। তখন তাদের মনে কোন ক্ষোভ আসে না যে এরা আমাদের ভাল চায় না। এরা আমাদের বন্ধু দেশ নয়। এরা আমাদের সাথে এখনো প্রতারণা করে, এরা একাত্তরে আমাদের মা বোন দাদী নানীদের রেপ করে গিয়েছে, এরা সীমান্তে আমাদের বোনের লাশ ঝুলিয়ে রাখে। এরাই। আবার এদের পণ্য ছাড়াই আমাদের জীবন অচল। সমাজ স্তব্ধ। জাতি চলৎশক্তিহীন। কেন?
কারণ আমরা আমাদের নিজস্বতা তৈরি করতে পারিনি।যেটুকু ছিল তা দিয়ে এখন ব্যবসা করছি ব্যবসা। হুমায়ূন আহমেদ ব্যবসা, রবীন্দ্র ব্যবসা, স্বাধীনতা ব্যবসা, হিমু ব্যবসা, বঙ্গবন্ধু ব্যবসা আরো কত কি!
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরে এসে ভারত পাকিস্তানের উপর এখনো ডিপেন্ড করতে হয় অপ্রিয় সত্য কথা। তাহলে স্বাধীন হবার কি দরকার ছিল? এত যে লাশ পড়ল, এত নারী ধর্ষিতা হল তার কি দাম? একটা স্বাধীন দেশের সীমান্তে এখনো লাশ পড়ে বিনা কারনে। কেন?
কারণ আমাদের নিজের বলে কিছু নাই। যে জাতির দিন শুরু ভারতীয় টুথব্রাশ কিংবা টুথপেস্টে দাঁত ব্রাশ করতে করতে আর দিন শেষ হয় রাতের বেলা পাকিস্তানি শিল্পীর গান শুনতে শুনতে সে জাতির আর যাই হোক, অমুক তমুক পণ্য বর্জন করুন ভারত কে না বলুন কিংবা পাকিস্তান কে গালি ছুঁড়ুন স্লোগান টা ঠিক দেওয়া উচিৎ না।
মোদ্দা কথা হল - ফেসবুকে লিখে সমাজ চেঞ্জ করা যায় না। ফেসবুক সেলিব্রেটি বলে যে একটা শব্দ এদেশে চালু হয়েছে ওগুলো হল রাজাকারদের আধুনিক ভার্শন। হিপোক্রেসিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই তাদের এমন ব্যাপক পরিচিতির কারণ। দেশপ্রেমের স্ট্যাটাস দেওয়ার সময়ও তাদের ল্যাপটপের আরেকটা ট্যাবে বেস্ট অব আমির, শাহরুখ, সালমানের মুভি কিংবা রাহাত ফতেহ আলীর সুরেলা এম্পিথ্রি সং ডাউনলোড হতে থাকে।
আর আমরাও মনে মনে আওড়াই -' জিয়ো পাকিস্তান', 'বন্দে মাতরম' ।।।