ছোট মাথায় বেশি কিছু ধরেনা । তাও কিছু বলার চেষ্টা করি ।
সেদিন রাতে যখন টিভি চ্যানেল গুলোতে অভিজিৎ হত্যার নিউজ দেখাচ্ছিল ,তখন দেশের প্রায় সব মানুষ যারা নিউজ টা দেখছিল তারা নিজেদের মধ্যে একটা সহানুভূতি অনুভব করেছিল লোকটার জন্যে । কারণ , তারা তখন অভিজিৎ কে মানুষ হিসেবে দেখেছিল । সেইসব মানুষের মধ্যে দাঁড়িওয়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বৃদ্ধ ছিল , মন্দিরের পুরোহিত ছিল , স্টার জলসা দেখা বাড়ির মহিলামানুষ গুলো ছিল , স্কুল কলেজ গুলোতে পড়া ছাত্র ছাত্রী ছিল সবাই ছিল । তারা তখন শুধু ভাবছিল কেন এভাবে লোকটাকে খুন করতে হবে তার স্ত্রীর সামনে । স্ত্রী যে রেহাই পেয়েছে তাও নয় । তার হাতের আঙ্গুল কাটা পড়েছে খুনীদের চাপাতিতে । কত মানুষ অভিজিৎ আর তার স্ত্রীর জন্যে টিভির সামনে মুখ ভার করে বসে থেকেছে তার হিসেব রাখা ভার । শুধু একদল মানুষ তাদের মৃত্যুতে মুখ ভার করেনি । বরং তারা উল্লাস করেছে । পরবর্তীতে তারাই মানুষ কে বুঝিয়েছে যে অভিজিৎ ভাল না , ও নাস্তিক , ও কুরান মানে না আল্লাহ মানে না অমুক তমুক অমুক তমুক । আস্তে আস্তে মানুষ দুদিনের মধ্যেই এসব লোকের কথায় প্রভাবিত হয়েছে । এইসব লোকেদের আমি ধর্মান্ধ হিসেবে জানি । আমি বিশ্বাস করি যে ধর্মান্ধ আর ধার্মিক দুটি দু মেরুর জিনিস । ধার্মিক জগতের সব সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে । কিন্তু ধর্মান্ধ , সে ধর্মের ছায়ায় সব মানুষ কে নিয়ে আসার জন্যে ক্যাওস পর্যন্ত তৈরি করে । সে ভাবে জগতে অধার্মিক দের কোন জায়গা নেই । জায়গা শুধু তাদের মত ধর্মান্ধদের । তাদের ওই লাদেন তরিকার মাথায় ঢুকে না যে সবাই ধর্ম নিয়ে এক চিন্তা করে না । সবার চিন্তা ধারা লাদেন কিংবা আইমান আল জাওয়াহিরির মত নয় অথবা জামাত শিবিরের মত নয় ।
এবার আসি মুক্তমনা দের কথায় । মুক্তমনাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি , তাদের ট্র্যাক ঠিক নেই । তারা বারবার লাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে নিজের কথা ভাবতে যায় । তাদের কেউ কেউ ভাবে আমি যেটা বলি আমি যেটা মানি সেটাই সবাই মেনে নিতে বাধ্য । কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে সে মূর্খ । উদাহরণ স্বরূপ ওই অভিজিৎ রায়ের হত্যার কথাই ধরি । অভিজিৎ রায় কে হত্যা করার পর যতগুলা মানুষ মনে ব্যথা পেয়েছিল , তাদের মধ্যে শুধু মুক্তমনারাই ছিল না উপরে যেটা বললাম । অনেক ধর্ম বিশ্বাসী মানুষও ছিল । মুক্ত মনারা চাইলেই এই সহজ সরল মানুষ দের সমর্থন আদায় করতে পারত স্বভাবিক ভাবেই । তারা সেটা করেনি । তারা কি করল ??? তারা সেইসব মানুষদের গালি দেয়া শুরু করল যারা তাদের পায়ের নিচের মাটি গড়ে দিতে পারত । এই দেশে মৌলবাদ দূর করার জন্য যে জনগণের সহায়তা লাগবে সেই জনগণের মনেই যদি আপনি আঘাত দেন তাহলে তারা কেন আপনার পাশে দাঁড়াবে । আপনি ধর্মবিশ্বাসী মানুষ গুলোকে বুঝাতে পারেন যে আমরা আর আপনারা একই ভাবে চিন্তা করিনা । আমরা ঈশ্বর মানিনা কিন্তু মানুষ মানি , আপনাদের মানি । মুক্তমনা ভাইয়েরা সেটা না করে সমগ্র ধর্মবিশ্বাসী গোষ্টী কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে গাল দেন । তাদের ধর্মপ্রচারক কে গাল দেন । তাদের বলেন বাস্টার্ড তাদের ধর্মীয় নেতাকে নিয়ে করেন অশ্লীল মন্তব্য । কখনো কখনো সেটা হয়ে যায় বিশেষ কোন একটি ধর্মের প্রতি মুক্তমনাদের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ । মুক্তমনারাই কি শুধু দেশ থেকে জঙ্গিবাদ মৌলবাদ দূর করতে চান ? তারা কি একা পারবেন ? এইদেশের যে মানুষ গুলো নিয়মিত জঙ্গিবাদের নৃশংসতার অরাজকতার ভিক্টিম হচ্ছে তারা কি চান না ? তাদের জন্য কেন ভাবেন না ? শুধু নিজের কথা ভাবলে কোনদিনও এই দেশে আপনারা স্বাধীন ভাবে সুষ্ঠু ভাবে মুক্তচিন্তা চর্চা করতে পারবেন না । মুক্ত যুদ্ধ শুধু মুক্তমানারা করেনি । সৈয়দ বংশের ছেলে , পুরোহিতের মেয়েও করেছিল । সুতরাং এই দেশের মানুষের কথা একটু ভাবুন । আপনারা যারা মুক্তচিন্তা চর্চা করেন , তারা সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পান । শুধু সেটা একটু সাধারণ মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরার প্রক্রিয়াটা ঠিক করে করুন । গালিগালাজ করে কিংবা উত্তেজিত করে নয় , তাদের ভালোবাসুন তাদের কে বুঝতে সময় দিন যে তারা কি অবস্থায় আছে । দেখবেন একদিন এই সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীরাই সমস্বরে বলবে –
মুক্তমনারা আমাদের ভাই , আর একটাও অভিজিৎ মরবে না , আর একটাও রাজীব মরবে না , মরবে না কোন হুমায়ূন আজাদ ।