গত পরশু রাতে কোকাকোলার কিছু পুরনো এড ও তাদের মার্কেটিং পলিসি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আজ আপনাদের কোকাকোলার কিছু মার্কেটিং পলিসি নিয়ে আলোচনা করব সেই সাথে নতুন আরও কিছু প্রিন্ট এড ও শেয়ার করব।
৮ই মে, ১৮৮৬। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা অঙ্গরাজ্যর একজন স্থানীয় ফার্মাসিস্ট জন পেমবার্টন সর্বপ্রথম কোকাকোলার রাসায়নিক ফর্মুলা আবিস্কার করেন। প্রথমে এর সাথে এলকোহল মিশিয়ে বিক্রি করা হত। কিন্তু পরবর্তীতে রাজ্যে এলকোহল বিরোধী আইন পাশ হলে এলকোহল মুক্ত কোক বিক্রি শুরু হয়। ব্যাবসায়ি আসা ক্যাদলার ফর্মুলাটি কিনে নিয়ে কোকাকোলা বিক্রি করা শুরু করেন। বিক্রির প্রথম বছর মাত্র ৯গ্লাস কোকাকোলা বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু আসা ক্যাদলার এর অসাধারন মার্কেটিং স্ট্রাটেজির ও সুদক্ষ সেলস পলিসির কারনে অল্প কিছু দিনের মধ্যই তিনি কোকাকোলাকে ‘All American Beverage’ এই ইমেজে আনতে সক্ষম হন। তিনি প্রথমে মাথাব্যথা, ক্লান্তি থেকে মুক্তি ও মানসিক অবসাদ দূর করার পানীয় রূপে সবার সামনে কোকাকোলাকে উপস্থাপন করেন। একারনে আমেরিকায় খুব দ্রুত কোকাকোলা'র নাম ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে পৃথিবীতে গড়ে প্রতিদিন ১৬০কোটি গ্লাস কোকাকোলা বিক্রি হয়।
সারা আমেরিকায় জনপ্রিয় হবার পর কোকাকোলা কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করে তাদের এখন ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করা উচিৎ। একারনের তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কাজে লাগায়। আমেরিকান সৈন্যদের হাত ধরে কোকাকোলা পৌঁছে যায় ইউরোপ এবং এশিয়ায়। সারাবিশ্বের মার্কেট ধরার জন্য তারা তাদের লোগোতে পরিবর্তন আনে। একারনে লাল সাদা রং ও প্যাঁচানো ইংলিশে কোকাকোলা লোগোটি ব্যাবহার শুরু করে। তারা বিভিন্ন দেশের লোকাল এড এজেন্সি গুলোকে ব্যাবহার শুরু করে। যার ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে একেবারে লোকাল ব্র্যান্ড রূপে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়। বিশ্বে সম্ভবত মায়ানমার ও সিরিয়া বাদে বাকি সব দেশেই কোকাকোলা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সংকটপূর্ণ বাজারেও (যেমনঃ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, জিম্বাবুয়ে ইত্যাদি) তারা সফল ভাবে তাদের ব্যাবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। তাদের রয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডিস্ট্রিবিউসন চ্যানেল। যার ফলে যেখানে আপনি থাকুন না কেন হাটা দূরত্বের মধ্যই কোকাকোলা পেয়ে যাবেন। তাদের ব্র্যান্ডভ্যালু এত শক্ত যে ইংরেজি শব্দ ‘Kola’ পরিবর্তন হয়ে ‘Cola’ হয়ে গিয়েছে। এমনকি ৯/১১ এর পরবর্তী ‘anti American sentiment’ কোকাকোলার প্রবৃদ্ধি হতে পারে নি।
আজকেও আপনাদের জন্য কিছু অতি প্রাচীন কোকাকোলা’র এড শেয়ার করলাম। আপনাদের ভালো লাগলে সামনে কোকাকোলার বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ ডিজাইনের বোতল নিয়ে আরেকটি পোস্ট দিব। সেই সাথে কোকাকোলা অসাধারন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে আরও আলোচনা করব।
সাধারনের উপর অসাধারন এড।
বলা হয় CocaCola এর 'All American Beverage' ইমেজ সৃষ্টির পেছনে এই এডটি বিশাল ভুমিকা রয়েছে।
'It tastes like SHIT' !!!
স্বয়ং বার্বি গার্ল নিজেই কোকাকোলার ফ্যান। তবে এটি প্রিন্ট এড নাকি কোকাকোলা ফিচারড বার্বি সেটা বুঝা যাচ্ছে না।
মডেল লোকটি সম্ভবত কোন সেলিব্রেটি। সবাইকে রিফ্রেশ হতে কোক খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ইয়ে পরের ছবিটিতে যাই।
যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোক সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশী পরিচিতি পেয়েছে। তাই ওদের অনেক এড এর মডেল সাধারণ সৈনিক থেকে বীর সৈনিক।
অসাধারন এড
তাদের শক্ত ও সুদক্ষ মার্কেটিং পলিসির মূলে আছে অসাধারণ সব শ্লোগান।
খেলার সুপারস্টারদের কে ব্র্যান্ড এম্বাসেডর/মডেল করার চিন্তা কোকাকোলারাই প্রথম প্রয়োগ করে। উপরের দুটি এডে এরকম দুইজন বিখ্যাত খেলোয়াড়কে দেখা যাচ্ছে।
সুন্দরী বিমানবালা থেকে সুদর্শন বিমান চালক সবারই পছন্দ কোকাকোলা।
অসাধারণ প্যাকেট/বোতলের জন্যও কোকাকোলা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এই ছবিতে ওদের আরেকটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজিও প্রকাশ পাচ্ছে। যেখানে সব এডে কোকাকোলার দাম ৫সেন্ট দেখাচ্ছে, সেখানে এই এডে এক প্যাকেটের ৬টি কোক ২৫সেন্ট করে দামের ট্যাগ দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ৫টি কিনলে ১টি ফ্রি।
Howdy !
১৯০৯ সালের এড। তখনকার বোতলে গঠন ও কোকাকোলার লোগোটি লক্ষ্য করুন।
এক্সারসাইজের পর কোক খেতে ভুলবেন না যেন। কঠিন এড!
এডটির লাস্টে লক্ষ্য করুন। Rx কথাটি লিখা যা আমরা ডাক্তার এর কাছে গেলে প্রেসক্রিপশন লিখার সময় লিখে। এডটি ওরা বলছে শপিং এর সময় ক্লান্ত হয়ে গেলে কোক খেয়ে ক্লান্তি দূর করে নিতে পারেন।
অতি প্রাচীন এড বলে মনে হচ্ছে। এডটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আমার হাতে নেই।
১৮৯০ সালের এড। Hilda Clark নামের একজন সেলিব্রেটি সবাইকে কোক খেয়ে দেখবার পরামর্শ দিচ্ছেন।
Walthour নামের একজন বাইসাইকেল চ্যাম্পিয়ন এর বক্তব্য সম্বলিত বিজ্ঞাপন।
সামনেই আসছে কোকাকোলার বিভিন্ন সাইজের ও ডিজাইনের বোতল নিয়ে আরেকটি ছবি ব্লগ।
একটি বল্টু মিয়া প্রোডাকশন।
এই প্রোডাকশনের আরও কিছু পোস্ট যা আপনাদের ভালো লাগতে পারেঃ
১। কোকাকোলা'র(CocaCola) কিছু প্রাচীন প্রিন্ট এড কালেকশন - ০১ (17+)
২। মিল্কিওয়ে তোমার জন্য ভালোবাসা ও একটি ছবি ব্লগ।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৩:১২