আমার আর আমার মার গাছের শখ টা বরাবর ই একটু বেশি। আমার মাকে দেখতাম , বাজার থেকে আনা পুই শাকের ডগা গুলো হয়্তো ছাদের উপর নয়তো গেটের পাশের মাটিটুকু তে লাগিয়ে রাখতো।যখন ওই ডগা গুলি থেকে কয়েকদিন পর কুড়ি উকি দিয়ে বের হতো , কি যে আনন্দ হত আমার, বলে বুঝানো যাবেনা। প্রতিবছর ই মার সাথে বৃক্ষ মেলায় যাওয়া আর মরিচের ছাড়া সহ আম ছাড়া কিনা একটা রেওয়াজ এ পরিনত হয়ে গেছে, যদিও শেষ পর্যন্ত আম ছাড়া গুলি বাচেনা। কয়েকদিন পর দেখা যায়, পাতা গুলি সব মরে যেয়ে সুধু ডাল টা সোজা হয়ে আচে। এক বার কতগুলি টব এ বোমবাই মরিচ ধরল, আমার মা মনে হয়, সারা ঢাকা শহর সব রিলেটিভ দের কে দিয়েছে। আমার দাদির মদদে ও গাছের নেশা টা খুব প্রোবল ছিলো। যাই হুক, আমার একটা অভ্ভাশ হলো ফল খেয়ে বীজ টা কে কোনো টব অথবা আসে পাশের কোনো মাটিতে ফেলে রাখা।
একটা কথা বলি, ২০০১ এর দিকে, আমার গলির বাউন্ডারী ওয়াল এর গা ঘেষে অনেক সুন্দর সবুজ কতগুলি ঘাস জন্মায়, আমি তখন ইউনিভার্সিটি ভর্তি হয়েছি মাত্র, আমি সকাল এ ক্যাম্পাস এ যাওয়ার আগে একবার ঘাস গুলি নেড়ে যেতাম, আসে বিকেলে চা এর পেয়ালা টা হাতে নিয়ে আরেকবার দেখতে যেতাম, সবুজ ঘাসের গুচ্ছ গুলি আমাকে যে কি নির্মল একটা আনন্দ দিতো সেটা আসলে, লিখে বুঝানোর মত ক্রিয়েটিভ রাইটিং স্কিল আমার নাই। একদিন ক্যাম্পাস থেকে এসেই দেখি ঘাস গুলি নাই, পরে, আমার মা কে জিগেশ করলাম, মা ঘাস গুলি কাটল কে, মা বলল সিটি করপোরেসন এর লোকজন এসে কেটে ফেলেছে। কারণ গলিটি উনারা পাকা করবেন। মনে মনে বললাম, ঢাকা শহরের হাজারটা ইম্পর্টান্ট গলি বেহাল দশায় পরে আছে , কোনো খবর নাই, আর,আমাদের বাসার এই চিপা গলিতা আসছে পাকা করতে। যাই হুক পরে জানলাম, এলাকার কমিশোনার আঙ্কেল উন্নয়ন কাজে হাত দিয়েছেন।
২০০২ এর দিকে, কিছু মিষ্টি তেতুল এর বীজ একটা টব এ ফেলে ছিলাম। কয়েক দিন পর দেখলাম বীজ থেকে চারা বের হয়েছে, আমি তো মহা খুশি আর সপ্নে সপ্নে মিষ্টি তেতুল খাওয়া আরম্ভ করলাম। অল্প কয়েক দিনে বেশ বড় হয়ে গেলো গাছটা। ছাদের টব এ আর রাখার উপায় নাইকা। তখন বুদ্ধি করে, গ্রামের বাড়িতে গাছটা পাঠায়া দিলাম। ইতি মদদে মাশাল্লাহ , গাছটা অনেক বড় হয়ে গেছে আর, তেতুল ও ধরেছে। তবে, আমি গাছটার কোনো যত্ন ই নিতে পারিনি। আমার মা অনেক বার গ্রামে গিয়েছেন, শুধু আমার তেতুল গাছটা দেখার জন্য।সময় বেরকরে গ্রামে কখনো ই যাওয়া হতো না। বেশ কয়েক বছর আগে একবার গ্রামে গিয়েছিলাম, আমার গাছ টা তখন বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। রাতে আমরা ফ্যামিলির সবাই মিল়ে বাগানে গল্প করছি আর পূর্নিমার জোসনা রাত উপভোগ করছি। আমি কখনও ই এতো সুন্দর রাত দেখি নি, আকাশ ভরা তারা, লাল, নিল সাদা, নানান রং এর তারা। মনে হলো, আমাদের সারাটা বাড়ি যেন একটা মিল্কি ওয়ে এর কাছাকাছি। সব গুলো গাছের ফাকে ফাকে অপরূপ জোসনার স্নিগ্ধ আলো এসে খেলা করছে। আমার তেতুল গাছের চিরি চিরি পাতার ফাক দিয়ে ও কেমন জানি জোসনার আলো কেটে কেটে আসছে। আমার কাছে ওই রাতের সব কিছু ই কেমন জানি এতো অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল, সেটা মননে ধারন করাটা খুব কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। কি যে অদ্ভুত সুন্দর একটা রাত কাটালাম ওই দিন,আজও ভাবলে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাই, ওই জোসনার রাতে।প্রবাস জীবন, পড়াশুনা নিয়ে সব সময় ই বেস্ত থাকি। তারপর ও কিছু জিনিস মনে পড়লে, সব বেস্ততা ম্লান হয়ে যায়।
গতকাল মার সাথে কথা হলো। জিগেশ করলাম, মা, আমার তেতুল গাছ টা কেমন আছে, মা বললো , "বাবা শুনলাম তোমার গাছে নাকি অনেক তেতুল ধরেছে , গাছের একটা ভিডিও করে তোমাকে পাঠাব। আশে -পাশের মানুষ নাকি সব পেরে খেয়ে ফেলে।" আমি মাকে বললাম, মা, মানুষ খাওয়ার পর যা থাকে তা আমরা খাবো, আমার মা ও তাই বলল। যাই হুক, হয়ত কোনো দিন ই আমার গাছের তেতুল আমি অথবা আমার পরিবার এর কেও খেতে পারবনা, কারণ, আমাদের গ্রামের বাড়ির সব ফল, এলাকার মানুষ জন ই খায়। কিন্তু তবু ও আমার অনেক আনন্দ, যে, আমার গাছে মিষ্টি তেতুল ধরেছে।
হুমায়ুন আহমেদ এর জন্মদিনে একটা গিফট দেয়ার ইচ্চেঃ হলো। আমার তেতুল গাছের ফাকে পূর্নিমার রাতে যে জোসনা খেলা করে, ইচ্চেঃ করছে, সেটা যদি হুমায়ুন কে উনার জন্মদিনের উপহার দিতে পারতাম, উনি খুব ই খুশি হতেন।তেতুল বনে জোসনা,এর চেয়ে সুন্দর উপহার আর কি হতে পারে।
প্রিয় হুমায়ুন , শুভ জন্মদিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমার লেখায় অনেক বানান ভুল আছে, কারণ, আমি বাংলা টাইপিং এ নতুন। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন জনাব এবং জনাবা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৩০