চা বলতে প্রথমেই চোখে ভাসে সেই চিরচেনা দুটি কুড়ি ও একটি পাতা থেকে প্রক্রিয়াজাত করে যা আমরা পানিতে জ্বাল দিয়ে পান করে থাকি। তবে এখনকার দিনে চায়ের সংজ্ঞাই পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু চায়ের পাতা ব্যবহার করলেই চা নয়। বিভিন্ন ভেষজ এবং ফেলে দেওয়া ফল ও সবজির খোসা দিয়ে তৈরি গরম পানীয়ও চা হিসেবে গণ্য হয় যা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এ সকল চায়ে যেমন রয়েছে স্বাদের ভিন্নতা তেমনি রয়েছে বহুবিধ ওষধি ও পুষ্টিগুণ।
১) উইন্টার মেলন টি
উপকরণ – চালকুমড়া কুঁচি ২ কাপ, বাদামী চিনি ১/৪ কাপ।
প্রণালী – চালকুমড়া কুঁচির সাথে বাদামী চিনি মিশিয়ে মৃদু আঁচে পাত্র ৩০ মিনিট জ্বাল দিন। কোন পানি যোগ করা যাবে না। ৩০ মিনিট পর চালকুমড়ার নির্যাস ছেঁকে কাপে ঢেলে পান করুন।
পুষ্টিগুণ – উইন্টার মেলন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ফাইবার, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি। এই চা আলসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং নার্ভ শান্ত রাখে।
২) ব্যানানা পিল টি
উপকরণ – কলার খোসা ২ টি, পানি ২ কাপ, মধু ২ চা চামচ।
প্রণালী – কলার খোসা পানিতে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ করা পানি ছেঁকে কাপে ঢেলে মধু যুক্ত করে পান করুন।
পুষ্টিগুণ – কলার খোসায় যে পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম আছে যা একটি পূর্ণাঙ্গ কলাতেও বিদ্যমান থাকে না। এছাড়াও এতে আছে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই চা নিদ্রাহীনতা দূর করে এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
৩) বাটারফ্লাই পী ফ্লাওয়ার টি
উপকরণ – শুকনো বা তাজা অপরাজিতা/নীলকণ্ঠ ফুল ১০ টি, পানি ২ কাপ, মধু ২ চা চামচ, লেবুর রস ২ চা চামচ।
প্রণালী – প্যানে পানি জ্বাল দিন। বলক আসলে ফুল দিন। পানির রঙ নীল বর্ণ ধারন করলে চুলা থেকে নামিয়ে কাপে ঢেলে ছেঁকে নিন। মধু যুক্ত করে পান করুন।
পুষ্টিগুণ – এই চায়ে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কান্সারের ঝুঁকি নিরসন করে এই চা। এছাড়াও
মস্তিষ্কের রোগ ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার নিরাময়েও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
৪) ট্যাংগেরিন পিল টি
উপকরণ – কমলার খোসা কুঁচি ১/২ কাপ, পানি ২ কাপ, মধু ২ চা চামচ।
প্রণালী – কমলার খোসা ধুয়ে রোদে ভালো ভাবে শুকিয়ে নিন। প্যানে শুকনো খোসা মৃদু আঁচে টেলে নিন। পটে পানি ফুটিয়ে খোসা দিয়ে ভালো ভাবে জ্বাল দিন। কাপে ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে পান করুন।
পুষ্টিগুণ – এই অভিনব চায়ে রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা আমাদের বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা, কাশি বা অ্যাজমার সমস্যা ও লিভারের সমস্যাসহ আরও অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
৫) রোজ প্যাটেল টি
উপকরণ – শুকনো বা তাজা গোলাপের পাপড়ি ১/২ কাপ, পানি ২ কাপ, মধু ২ চা চামচ।
প্রণালী – পানি জ্বাল দিয়ে গোলাপের পাপড়ি দিন। গন্ধ বের হলে কাপে ছেঁকে মধু মিশিয়ে পান করুন।
পুষ্টিগুণ – এই চায়ে রয়েছে প্ল্যান্ট হরমোন। যাদের প্রায়ই খিটখিটে অন্ত্রের রোগ, পিত্ত থলি এবং লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য অনেক উপকারী এই চা।
৬) যবস টিয়ার টি
উপকরণ – যব ১/২ কাপ, পানি ৩ কাপ, মধু ২ চা চামচ।
প্রণালী – যব প্যানে মৃদু আঁচে টেলে নিন। এবার এটি পানিতে ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। পানিসহ যব এবার জ্বালিয়ে নিন। কাপে ছেঁকে মধু যুক্ত করে পান করুন।
পুষ্টিগুণ – এই চা শরীর ঠাণ্ডা করে, কফ ও পিত্ত নাশ করে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করে।
৭) মেরীগোল্ড টি
উপকরণ – গাঁদা ফুল ২ টি, পানি ২ কাপ, মধু ২ চা চামচ।
প্রনালী – পানি ফুটিয়ে গাঁদা ফুলের পাপড়ি দিন। ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে ছেঁকে কাপে ঢেলে মধু যুক্ত করে পান করুন।
পুষ্টিগুণ - গাঁদা ফুলে আছে বিটা ক্যারোটিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হাড়ের ক্ষয় রোধ ও আথ্রাইটিসের সমস্যা কমাতে গাঁদা ফুলের চা ভূমিকা রাখে। এছাড়াও গাঁদা ফুলের চায়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখ ও ত্বক ভাল রাতে সহায়তা করে।
৮) অনিয়ন স্কিন টি
উপকরণ – মাঝারি আকারের ২ টা পেঁয়াজের খোসা, পানি ২ কাপ, মধু ২ চা চামচ।
প্রণালী – পেঁয়াজের খোসা ভালোভাবে ধুয়ে পানি দিয়ে জ্বাল দিন। পানির রঙ লাল হয়ে এলে ছেঁকে কাপে ঢেলে মধু যুক্ত করে পান করুন।
পুষ্টিগুণ - পেঁয়াজের খোসায় ফাইবার, ফেনোলিক, কোয়ারসেটিন ও ফ্লেভোনয়েডসের মত উপদান বিদ্যমান যা কার্ডিওভাসকুলার ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনালের মত রোগ কমায়। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস ও মেদ বাহুল্য কমায়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১১:৩৮