সরু রাস্তা ও রাস্তায় ডিভাইডার না থাকা: দেশের অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে আন্তঃজেলা মহাসড়কগুলোতে যেখানে যানবাহন খুব দ্রুতবেগে চলাচল করে। এসব সড়কে দ্বিমুখি (মুখোমুখি) যানবাহন চলাচল করলেও সড়কগুলো প্রশস্ত নয় এবং কোন ডিভাইডার নেই। যার ফলে যানবাহনগুলো যখন পাশাপাশি চলে আসে তখন তাদের মধ্যে নিরাপদ দুরত্ব না থাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আর নিরাপদ দূরত রাখতে হলে রাস্তা ছেড়ে যানবাহন নিচে নেমে আসে। ফলে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।
পুরনো ও ত্রুটিপূর্ন যানবাহন: ২৫ বছরের পুরোনো যানবাহনগুলো ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে নেয়ার একটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল বছরখানেক আগে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন আমরা দেখিনি। কিন্তু ঢাকার বাইরে অসংখ্য পুরাতন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে যেগুলো দুর্ঘটনা ঘটানো অন্যতম কারণ।
উন্নতমানের ও টেকসহ সড়ক নির্মান: আমাদের দেশের রাস্তাঘাটগুলোর বেলায় দেখা যায় যে, জোড়াতালি দিয়ে ওগুলো তৈরি করা হয়। তৈরির ছয়মাসের মধ্যেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এমন অনেক রাস্তার নজির আছে এ দেশে। যেকোন ধরনের সড়ক নির্মানে আমাদের যত্নবান হতে হবে। সেটি যেন যুগোপযোগী, টেকসই ও সকলের ব্যবহার উপযোগী হয় তার জন্য যথযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ন কখনই যেন গ্রহণযোগ্য না হয়।
অদক্ষ চালক: অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য অদক্ষ চালক দায়ী। এসব চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। আবার এটাও সত্য যে, বিপুল সংখ্যক চালকদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার মত অবকাঠামো সরকারের এখনও নেই। সেটি সরকারেরই ব্যর্থতা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে এসেও একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা মেনে নেয়া অসম্ভব।
ড্রাইভিং পেশার উৎকর্ষহীনতা: আমাদের দেশে ড্রাইভিং কে এখনও নিম্নমানের পেশা হিসেবে দেখা হয়। বাস ও ট্রাক ড্রাইভারেরা দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬-১৮ ঘন্টাই পরিশ্রম করেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এভাবে পথঘাটে থাকতে থাকতে তাদের মধ্যে অস্থিরতার তৈরি হয়। তারা শারীরীক ও মানষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। যার ফলে তারা তাদের পেশায় মনোনিবেশ করতে পারেন না। এটিও দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ।
সনাতনী ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থা: বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনও সনাতন পদ্ধতিতেই পড়ে আছে। ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রয়োজন। গতি পরিমাপক, ওজন পরিমাপক, জিপিএস প্রযুক্তি ইত্যাদির অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে।
সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতার অভাব: সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে পাঠ্যবইতে সড়ক নিরাপত্তা ও আইন সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিকল্প যানবাহনের(রেল, লঞ্চ ইত্যাদি) সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকা: আমাদের দেশে অনেক জেলা ও উপজেলাই এখনও রেল যোগাযোগের বাইরে রয়েছে। সড়কপথের বিকল্প হিসেবে রেলপথ ও জলপথের প্রচলন ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। কারন একটি নির্দিষ্ট পথে যখন যাত্রীসংখ্যা বেশি হবে তখন স্বভাবতই বিড়ম্বনা বাড়বে। রেল যোগাযোগ সবার কাছে পৌছে দিতে পারলে সড়কপথের উপর থেকে চাপ কমবে।
যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের অভাব: বিদ্যমান ট্রাফিক আইন সংশোধন ও তার যথাযথ প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন। রাস্তাঘাটে যেসকল অবৈধ চালক, ফিটনেসহীন গাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটক করেন তার অধিকাংশই অর্থের বিনিময়ে বৈধ হয়ে যায় বা মামলা কাগজ কলমেই থাকে।
আমার মনে হয়, উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে বিভক্ত করে এখনই কাজ শূরু করা গেলে সড়ক নিরাপত্তায় একটি ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে। আর এজন্য সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আর এত অকালমৃত্যু দেখতে চাই না। আমরা চাই নিরাপদ সড়ক, ঝুকিমুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা।