somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষকে হিরো বানায় যে কুমারী লতা চিনে নিন সে গাছ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা নাম: কুমারীকা/ কুমারী-লতা/ হস্তী-কর্ণ লতা

বৈজ্ঞানিক নাম: Smilax zeylanica L.

ইংরেজি নাম: Indian Smilax, Indian Sarsaparilla, Kumarika Vine

সংস্কৃত নাম: বনমধুস্নেহী (Vanamadhusnahi)

পরিবার: Smilacaceae

সমনাম:
Smilax columnifera Buch.-Ham. ex D.Don
Smilax grandifolia Voigt, nom. illeg.
Smilax grandis Wall. ex Voigt
Smilax macrophylla Roxb., nom. illeg.
Smilax ovalifolia var. parvigloba A.DC.
Smilax ovalifolia var. polystemon A.DC.
Smilax retusa Roxb., nom. illeg.
Smilax roxburghii Kunth
ফুল-ফলের সময়: এপ্রিল - নভেম্বর।



উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় একে Smilax Sp বলা হয়। এই জেনাসের প্রায় ৩০০-৩৫০টি প্রজাতি আছে। এদেরকে সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দেখা যায়। এরা Smilacaceae পরিবারভুক্ত একবীজপত্রি সপুস্পক কাটা যুক্ত climbing পেরিনিয়াল শক্ত কাস্টল লতা জাতীয় উদ্ভিদ। ইংরেজীতে এদেরকে ওয়াইল্ড সারসাপারিলা, ইন্ডিয়ান সারসাপারিলা বা ব্ল্যাক ক্রিপার বলা হয়। এছাড়াও Catbriers, Greenbriers, Prickly-ivys I smilax নামে পরিচিত। আমাদের দেশে কুমারীলতা বা কুমারীকা নামেই অধিক পরিচিত। । এখন এদের দেখা খুব একটা পাওয়া যায় না। বর্তমানে এই উদ্ভিদ হারিয়ে যাবার পথে।বাড়ির পাশের ঝোপ ঝাড়ে জন্মায়। বেশ তিতা স্বাদের পাতা ও ডগা। লতার গায়ে কাটা আছে।কোথাও কোথাও বুলকুমিয়া, বেড়াল আচড়া নামেও এই উদ্ভিদ পরিচিতি লাভ করেছে।
শক্ত লতানো, কাঁটাযুক্ত আরোহী এই উদ্ভিদ। পাতার অগ্রভাগ সরু, বৃন্তদেশ গোলাকার, পাতার উপরের দিক মসৃণ। গ্রীষ্ম, বর্ষায় মনকাড়া ফুল ফোটে। এর কচি ডগার রঙ খুবই আকর্ষনীয়। দেখলে মনে হয় যেন সদ্যস্নাত এক রূপসী তরুণী দাঁড়িয়ে আছে।
আগেকার দিনে অবিবাহিত মেয়েদের PMS এর ব্যাথা নিরাময়ে এই লতার কচি ডগা পিষে রস খাওয়ানো হতো। এতে যেহেতু চমৎকার ফলাফল পাওয়া যেতো তাই এর বাংলা নামকরণ করা হয় কুমারীলতা বা কুমারিকা।গ্রামের অনেকের ধারণা, এর ডগা সাপে খেয়ে ফেলে। এবং এ কারণে সাপ অনেক শক্তিশালী হয়। এই ধারণা থেকে অনেকে কুমারী কাটার গাছ দেখলে এর ডগা কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। মূলত এতে সত্যি কাজ হয় কিনা জানা নেই।তবে সিফিলিস, গনোরিয়া, বাত, পায়ের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্ত-শুন্যতা, আমাশয় ও জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহারের কথা জানা যায়।


বর্তমানে sarsaparilla বিয়ার হিসেবে পান করা হয়। এর অল্প করেকটি ব্র্যান্ড আমেরিকাতে পাওয়া যায়। আগে এই পানীয় প্রচুর পাওয়া যেতো কিন্তু এখন আর সব দেশে পাওয়া যায় না। এখন sarsaparilla ফ্লেভারের ড্রিংকস পাওয়া যায় তাতে Smilex Sp ব্যবহার করা হয় না। বলা যায় আসল sarsaparilla এখন খুব কম প্রস্তুত করা হয়।

১৮২০ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত কুমারী লতা USP তে সিফিলিসের ঔষধ হিসেবে রেজিস্টার্ড ছিলো। কুমারীলতায় স্যাপোনিন, রেসিন, ডায়োসজেনিন, ট্যানিন, সিটোস্টেরল, কিউমারিন, রুটিন, স্মাইলাসপারিক এসিডসহ বেশ কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা এর মূল থেকে পৃথক করা হয়। এই উপক্ষারগুলো সিফিলিস, গনোরিয়া, বাত, পায়ের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্ত-শুন্যতা, আমাশয় ও জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর রাইজোম শুকিয়ে পাউডার করে বাতের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জ্যামাইকান কিছু প্রজাতি পাওয়া যায় যাতে ৪ রকমের Progesterone থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় Smilax flavonoids অটোইমিউনি (autoimmune) ডিজিজে ভাল ফল পাওয়া যায়। ২০০৬ ও ২০০৮ সালে আমেরিকার কিছু গবেষক যথাক্রমে দাবি করেছেন Smilax-এর রাইজোম লিভার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকরী ও এন্টি ভাইরাল ফলাফল প্রদর্শন করে। তবে এই নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।

Smilax প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। আগুনে পুড়িয়ে দিলেও এর রাইজোম থেকে পুনরায় নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। পাখি ও অন্য ছোট জীব জন্তু এর পরাগায়ন ঘটায় ও বীজের বিস্তার ঘটায় ফলে নতুন উদ্ভিদের জন্ম নেয়। সাধারণত কুমারীলতা অন্য উদ্ভিদের উপর কাটা ও আকর্ষির সাহায্যে ভর করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।

নোটঃ

* PMS=প্রি-মিন্সস্ট্রুয়াল সিনড্রোম।
* USP=ইউনাইটেড স্টেটস ফার্মাকোপিয়া।
* Progesterone=Progesterone (প্রোজেস্টেরন) এক প্রকার হরমোন যা মেয়েদের ওভারিতে উৎপন্ন হয় এবং প্রেগনেন্সিতে সহায়তা করে।
* ফ্ল্যাভোনয়েড=ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoids) হলো উদ্ভিদের খুবই গুরুত্ববাহী রঞ্জক (Pigment) যা ফুলের রঙ তৈরি করে, পরাগায়নকারী প্রাণিদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্লাভোনয়েড হলুদ, লাল ও নীল রঙের পাপড়ির ডিজাইন তৈরি করে। কিছু উঁচু (Higher plants) শ্রেণির উদ্ভিদে ফ্ল্যাভোনয়েড UV (আল্ট্রা ভায়োলেট) রেডিয়েশনকে ফিলট্রেশন করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ফ্ল্যাভোনয়েড উদ্ভিদের রাসায়নিক মেসেঞ্জার, শারীরবৃত্তীয় নিয়ন্ত্রক এবং সেল (Cell) চক্র ইনহিবিটরের কাজ করতে পারে।
* Venereal disease = এক ধরনের রোগ যা যৌন সঙ্গমের ফলে উৎপন্ন বীর্য (semen) অথবা ভেজাইনাল ফ্লুইড নিঃসরনের মাধ্যমে ছড়ায়।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×