somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থেমে গেল শাহ আব্দুল করিমের 'জীবনগাড়ি'

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না রে......' আর শোনা যাবে না শাহ আব্দুল করিমের কণ্ঠে। শনিবার সকালে চিরতরে চলে গেছেন এ বাউল সাধক।

দুপুরে সিলেট শহীদ মিনারে শিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। রোববার তাকে জন্মস্থান সুনামগঞ্জের উজান ধল গ্রামে সমাহিত করা হবে।

বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন আব্দুল করিম। অবস্থার অবনতি ঘটলে কয়েকদিন আগে তাকে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল নূরজাহান পলি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

শুক্রবার দুপুর থেকে তাকে লাইফসাপোর্ট (কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে) দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বাউল শিল্পীর একমাত্র ছেলে শাহ নূর জালাল।

শনিবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে চিকিৎসকরা ঘোষণা করেন, 'সব শেষ'। একুশে পদক পাওয়া এ মরমী শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

নূরজাহান পলি ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. সুজন বোস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "শনিবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে শাহ আব্দুল করিম মারা গেছেন।"

দুপুর ১টায় শাহ আব্দুল করিমের মরদেহ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

শহীদ মিনারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বদরুদ্দীন আহমদ কামরান, নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, সিলেটের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার ফজলুর রহমান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শিল্পীর কফিনে ফুল দেন।

দুপুর ২টার পর হযরত শাহজালালের মাজারে আব্দুল করিমের নামাজে জানাজা হয়। এতে ইমামতি করেন শাহজালাল দরগা জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ আসাদ আহমদ। জানাজা শেষে লাশ সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা জানায়, উজান ধল গ্রামে স্ত্রী সরলা বিবির কবরের পাশে রোববার আব্দুল করিমকে সমাহিত করা হবে।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজান ধল গ্রামে ১৯১৬ সালে জন্ম আব্দুল করিমের। সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।

আব্দুল করিমের বাবা ছিলেন ইব্রাহিম আলী, মায়ের নাম নাইয়রজান বিবি। গ্রামের নৈশ বিদ্যালয়ে মাত্র ৮দিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। তারপর যা শিখেছেন নিজের চেষ্টায়।

দারিদ্র্যের মধ্যেই কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন শাহ আব্দুল করিম। শৈশব থেকেই একতারা ছিল তার নিত্যসঙ্গী।

সঙ্গীতের প্রতি তিনি এতটাই অনুুরাগী ছিলেন যে তা ছেড়ে চাকরিতে জড়াননি তিনি। ফলে কাটেনি তার দারিদ্র্য এবং বাধ্য হয়ে নিয়োজিত ছিলেন কৃষিশ্রমে। জীবন কেটেছে সাদাসিধেভাবে। তবে কোনও কিছুই তার সঙ্গীতপ্রেম ঠেকাতে পারেনি।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নিতে থাকেন কমর উদ্দিন, সাধক রশিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহীম মোস্তান বকশ এর কাছ থেকে।

দীর্ঘ এ সঙ্গীত জীবনে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের পাশাপাশি ভাটিয়ালি গানেও বিচরণ ছিল তার। লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শ'র বেশি গান। যেগুলো ছয়টি বইয়ে গ্রন্থিত আছে।

তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আরও রয়েছে- 'গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান...... আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম', 'বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে', 'বসন্ত বাতাসে', 'আমি কূলহারা কলঙ্কিনী', 'সখী, কুঞ্জ সাজাও গো' ইত্যাদি।

বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ ও দুদ্দু শাহ এর দর্শনে অনুপ্রাণিত ছিলেন আব্দুল করিম।

২০০৪ সালের এ গুণী শিল্পীর স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এরপর থেকে নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কখনও হাসপাতালে কখনও বাড়িতে দিন কাটান তিনি।

শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী এ বছরের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

২০০০ সালে তিনি কথাসাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক পান। এছাড়া দ্বিতীয় সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন আব্দুল করিম।

তার পাওয়া অন্যান্য পদক ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে- রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পদক ২০০০, আইডিয়া সংবর্ধনা স্মারক ২০০২, লেবাক অ্যাওয়ার্ড ২০০৩, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা ২০০৪, অভিমত সম্মাননা ২০০৬, সিলেট সিটি কর্পোরেশন সম্মাননা ২০০৬।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×