যদি কেউ কোন ইমারত বা প্রাসাদ নির্মাণ করতে চায় তাহলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন তার ভিত্তিটি মজবুত ও সুদৃঢ়ভাবে স্থাপন করা। ভিত্তি যদি দুর্বল হয় আর তার উপর যতবড় প্রাসাদই নির্মাণ হোক না কেন তা দুর্বল হবে, এবং কিছুদিন পর তা ভেঙ্গে যাবে এটাই স্বাভাবিক। নিরেট একটি ইমারতের ক্ষেত্রে এ কথাটি যেমন প্রযোজ্য তেমনি একটি আদর্শিক ইমারতের বেলায়ও এই কথাটি শতভাগ প্রযোজ্য ও বাস্তব। একটি আদর্শ বা মতবাদ বাহ্যিকভাবে যতই আকর্ষণীয়, দর্শণীয় ও কল্যাণময় হোক, তার ভিত্তিটি যদি মজবুত ও দৃঢ়তার সাথে স্থাপন করা না হয়, তাহলে সে আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণে কোন উপকার স্বাধন করতে পারবেনা।
এই পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত ধর্ম, আদর্শ বা মতবাদের আগমন ঘটেছে তন্মধ্যে ইসলামই আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আর তাওহীদ হলো এ জীবন ব্যবস্থার মূলভিত্তি। অতএব যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী বা ইসলাম নামক ইমারতটি সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাদেরকে সর্বপ্রথম এর মূলভিত্তি তথা তাওহীদকে সুদৃঢ়তার সাথে ধারণ করতে হবে। এতদ্ব্যতিত কোনভাবেই ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। সাথে সাথে তাওহীদের বিপরীত র্শিককে চিনে তা পরিপূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে। আলোকে চিনতে হলে যেমন প্রথমে অন্ধকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হয়। তেমনি তাওহীদকে আঁকড়ে ধরতে হলে সর্বপ্রথম র্শিক সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে।
তাওহীদ শুধুমাত্র আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে একটি তাত্ত্বিক ধারণা নয়। বরং এটি বাস্তব জীবনের একটি স্পষ্ট নিয়ামক। পবিত্র কুরআনের ভাষানুযায়ী আল্লাহ তায়ালা যেমন সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, রক্ষাকর্তা ও মৃত্যূদাতা। তেমনি তিনি আইনপ্রণেতা, আইনদাতা, মঙ্গলকর্তা, বিচারকর্তা ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। আল্লাহ তায়ালার এই গুণাবলী পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ অবিচ্ছেদ্য বিষয়। আর এই বিশ্বাসের নামই হলো তাওহীদ। সুতরাং তাওহীদে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি এই গুণাবলীর মাঝে কোনরূপ পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারবে না। যদি কোন প্রকার পার্থক্য করে তাহলে সে র্শিককারী বা মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।
মানবজীবনে তাওহীদে বিশ্বাস একটি অপরিসীম গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়। তাওহীদে বিশ্বাস মানুষকে জীবনের সকল মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়। এই পৃথিবীতে মানুষ কেন এসেছে, কেথায় থেকে এসেছে, কিভাবে এসেছে, এখানে সে কী করবে আর কী ছাড়বে এবং সর্বশেষ মানুষ কোথায় যাবে এমনসব হাজারো প্রশ্নের সঠিক ও ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যায় তাওহীদ থেকে। এই উত্তর থেকে মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা যেমন স্থিতিশীল হয়, তেমনি কাজে-কর্মে আসে শৃঙ্খলা। মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারজীবন, আধ্যাত্মিক জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবন পর্যন্ত গড়ে উঠে এক পূর্ণ সামঞ্জস্য। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই মানুষ হয় এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর বান্দা। একাধিক প্রভূর গোলামীর দাবীকে অগ্রাহ্য করে মানবতার উত্তরণ ঘটে এক পূর্ণ স্বাধীন মানুষ হিসাবে।
আর একজন মানুষ পূর্ণ স্বাধীন মানবতায় আত্মপ্রকাশ করতে হলে ব্যক্তি জীবনে যেমন, আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় মানতে হবে। তেমনি রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক জীবনেও আইনপ্রণেতা, আইনদাতা ও সার্বভৌমত্তের মালিকরূপে মানতে হবে একমাত্র আল্লাহকে। সকল ক্ষমতার উৎস বা মালিকরূপে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, সরকার বা রাষ্ট্রকে মানা যাবেনা। সকল ক্ষমতার উৎস বা মালিক হিসাবে মানতে হবে এক ও একমাত্র আল্লাহকে। এছাড়া মানবতা পূর্ণ স্বাধীনতা ও মুক্তি পেতে পারেনা। অতএব এই পৃথিবীতে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণ পেতে হলে মানবজীবনের সকল পর্যায়ে তাওহীদের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।