বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক, গহরপুর মাদরাসা সিলেটের স্বনামধন্য শাইখুল হাদীস, মাওলানা নিজাম উদ্দিন রহ: গত ২৬ ডিসেম্বর’১৪ শুক্রবার, বিকাল ৪০.৩০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সংবাদটি যদিও এখন পুরাতন কিন্তু আজও আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কারন এই মহান মানুষটিকে আমি অনেক ভালবেসেছি। তিনিও আমাকে তাঁর হৃদয় মন দিয়ে ¯েœহ করতেন। যার কাছে আমার সুখ-দু:খের কথা মনখুলে বলার মত সাহস পেতাম। তিনিও আমার সকল কথা মন দিয়ে শুনতেন। দিতেন সুন্দর সমাধান ও পরামর্শ।
আজ এই মহান ব্যক্তিকে হারিয়ে হাজারো মানুষের ন্যায় আমিও বাকরূদ্ধ। আজ সাড়াটা দিন শুধু তার কথাই মনে পরেছে। মাদরাসায় এসেও সবক পড়ানোর মত কোন শক্তি আমি পাইনি। আজকের দিনটি সকলের সাথে হযরতের স্মৃতিচারণ আর দুয়া মুনাজাতের মাধ্যমেই কাটিয়েছি। মনটাকে দিতে চেয়েছি কিছুটা সান্তনা।
তিনি যেই দিনটিতে ইন্তেকাল করেছেন (অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর’১৪ শুক্রবার) সেদিনটিতে হযরতের সাথে আমি কিছু সময় এমন কাটিয়েছি যা আমি জীবনেও ভুলতে পারবোনা। তিনি আমাকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন যা চেষ্টা করবো আজীবন মেনে চলার। আল্লাহ আমাকে সেই তাওফিক দান করুন, আমীন। ২৬ ডিসেম্বর সকাল ৮.৩০ মিনিটে তাঁর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতে সালাম দেয়ার পরই তিনি বললেন, আমানুল্লাহ! আমাকে তাড়াতাড়ি নাশতা করাও। কী নাশতা করবেন জানার পর নাশতা নিয়ে এসে খাওয়ালাম। তারপর পান চাইলেন। কিনে আনলাম তাঁর জন্য ১০ টি পান। কথার এক ফাঁকে মজা করে বলেছিলাম, হুযুর! আপনি তো আমাকে দেখতে পারেননা। উত্তরে তিনি বললেন, আমানুল্লাহ! তুমি আমাকে এমন একটি কথা বললা, যা আমি তোমার কাছে আশা করিনি। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি, তুমি তা জাননা। তুমি এখলাছের সাথে কাজ করে যাও, একদিন তুমি অনেক বড় খেদমত আঞ্জাম দিতে পারবে। কথাটা শুনে মনে অনেক সান্তনা পেলাম। আর মনে মনে দুয়া করলাম, আল্লাহ! তুমি আমাকে এখলাছের সাথে দ্বীনের পথে কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান কর।
আর এই কারনেই তিনি যখন অনুষ্ঠানস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তারপর থেকে আল্লাহ তায়ালা হযরতের পিছনে থাকার তাওফিক দান করেছেন। পাজাকুলে করে উঠালাম আবু সাঈদ নোমান ভাইয়ের গাড়ীতে। নিয়ে গেলাম ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে, সেখান থেকে বারডেম হাসপাতালে। সেখানে ইন্তেকালের সংবাদ শুনার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। সেখান থেকে আল মারকাযুল ইসলামীতে নিয়ে গেলাম। সেখানে গোসল ও কাফন পড়ানোর পর পল্টনে নিয়ে আসলাম। তারপর আবার হযরতের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল থানার পুটিঝুড়ি নিয়ে গেলাম। সর্বোপরি জানাযা ও দাফন পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা আমাকে হযরতের লাশের পিছনে সর্বক্ষণ থাকার তাওফিক দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
দুয়া করি আল্লাহ যেন হযরতের জীবনের সকল গুনাহগুলোকে মাফ করে জান্নাতে উঁচু স্থানে অধিষ্ঠিত করুন। আর আমাদেরকে তাঁর ফয়েয বরকত দ্বার ধন্য হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।