somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আপেক্ষিক মানুষ
লেখক হওয়ার ক্ষুদ্র ইচ্ছা মাঝে মাঝেই মনের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়। তাই মাঝে মাঝে লিখতে চেষ্টা করি। তবে সামুতে লেখা বা মন্তব্য করায় বড়ই অনিয়মিত। তবে নিয়মিত হবার চেষ্টা করছি। পেশায় আমি একজন ছাত্র। দেশের কোন একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মধ্যে আছি।

নন্দিত মায়া

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লিনা চোখ কচলাতে কচলাতে একটা খাম নিয়ে এলো। এসে বলে, আম্মু আপু তোমাকে এটা দিতে বলেছে। লিপি জিজ্ঞেস করে, কি এটা? মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে হাই তুলতে তুলতে লিনা বলল, জানি নাহ, তোমার মেয়েকেই জিজ্ঞেস কর না। একটু আগে মাত্র ঘুমিয়েছি...

লিপি খামটা খুলতেই গোলাপের কয়েকটা পাপড়ি দেখতে পায়। ভিতরে একটা ভাঁজ করা কাগজ। কাগজে লেখার প্রথম লাইনটা ঘষামাজা করে কাটা দেওয়া। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে সেখানে লেখা ছিল I love you Ammu. এরপর যা লেখা তা হল, আমি তোমায় খুব ভালবাসি আম্মু, বিরিয়ানী রান্না করে খাওয়াবে?-সারা

লিপি সামান্য রাগের ভাব নিয়ে ডাকে সারা, এই সারা কলেজ থেকে এসেই পাগলামী শুরু করেছ? যাও তাড়াতাড়ি পড়তে বোস।

সারা এতক্ষণ দরজার আড়ালে দাড়িয়ে মার চিঠি পড়া দেখছিল। এখন তার মুখে হাসির খঁই ফুটছে।

উপরে উপরে রাগ দেখালেও লিপি কিন্তু মোটেও রাগ করেনি। বরং মনে অদ্ভূত রকমের এক শিহরণ জেগেছে। এ এক অন্য ধরনের মাতৃত্তের অনুভূতি, যা শুধু মায়েরাই বুঝে। কিন্তু লিপি ভেবে পেলনা প্রথমে ইংরেজি কেটে পরে বাংলায় লিখেছে কেন?

হয়ত সারা চায়নি মায়ের প্রতি তার এই ভালবাসা বিদেশী কোন ভাষায় প্রকাশ করতে। আর আমরা যত সহজে I love you কথাটা বলতে পারি তত সহজে আমি তোমাকে ভালবাসি বলতে পারি না।

লিপি তার মেয়ের ছেলেমানুষি দেখে মনে মনে হাসে।

আজ বিরিয়ানী রান্না করতে গিয়ে পাঁচ বছর আগের ওই কথা গুলো লিপির মনে পড়ছে। লিপি বুকের বাপাশে কেমন যেন চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে। চোখ দিয়ে পানি এসেও আবার আটকে যায়। তেইশ বছর ধরে যেই বাড়িটা সারার নিজের বাড়ি, আজ থেকে সেটা তার বাপের বাড়ি হয়ে যাবে! কথাটি তার বিশ্বাস হতে চায় না। কিন্তু সে নিজেও ছাব্বিশ বছর আগে নিজের ঠিকানা লিখতে গেলে লিখত জেলা-টাঙ্গাইল, আর গত ছাব্বিশ বছর ধরে সে লিখে আসছে জেলা-মানিকগঞ্জ। লিপি মানতেই চায় না, মনে হয় সব যেন স্বপ্ন একটু পর তার ঘুম ভেঙে দেখবে সেই হাসিখুশি খুনসুটিতে মাতানো ছোট্ট সারা।

হ্যাঁ, আজ সারার বিয়ে। স্বপ্ন নয় বাস্তবেই আজ তার বিয়ে। লাল বেনারসিতে বউ সেজে পাশের ঘরে বসে আছে। ভাবতেই অবাক লাগে আর কখনো সারা লিপির সাথে ছেলেমানুষী করবে না। আর বিরিয়ানী খাবার জন্য সে মাকে ভালবাসি বলে চিঠি লিখবে না। বুকের ভিতর শূন্যতা অনুভব করে লিপি। সেই শূন্যতা ক্রমেই অসীমের দিকে ধাবমান। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় লিপির। চশমার আড়ালে লিপির চোখ থেকে গাল বেয়ে পানি ঝরে।

বিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন রীতিসিদ্ধ খাবারের আয়োজন থাকলেও লিপি আজ একা একা বিরিয়ানী রান্না করছে। বিরিয়ানী যে সারা প্রিয় খাবার ছিল! আমাদের বাবা মা যে আমাদের ভালবাসে এটা তারা কখনো মুখে বলে না, তেমনি লিপিও তার মেয়েকে বলতে পারেনি। কিন্তু কেন যেন গভীর মমতায় সে মনের অজান্তেই আজ বিরিয়ানী রান্না করতে রান্না ঘরে চলে এসেছে। সারা মাঝে মাঝেই নানান পাগলামী করে লিপির কাছে বিরিয়ানী খেতে চাইত। সেই দিন গুলো যেন লিপির চোখের সামনে চকচক করে ভেসে আসে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে আর বুকের ভেতরের শূন্যতা চরমে পৌছে যায়।
হঠাৎ লাফাতে লাফাতে লিনা রান্না ঘরে হাজির।
-আম্মু বর এসেছে, বর এসেছে...




ছবিসূত্র: গুগোল
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:৫৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×