somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আপেক্ষিক মানুষ
লেখক হওয়ার ক্ষুদ্র ইচ্ছা মাঝে মাঝেই মনের ভিতর সুড়সুড়ি দেয়। তাই মাঝে মাঝে লিখতে চেষ্টা করি। তবে সামুতে লেখা বা মন্তব্য করায় বড়ই অনিয়মিত। তবে নিয়মিত হবার চেষ্টা করছি। পেশায় আমি একজন ছাত্র। দেশের কোন একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মধ্যে আছি।

কোথাও কেউ নেই-হুমায়ুন আহমেদ। বুক রিভিউ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাকের ভাই; হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সৃষ্টি করা বিখ্যাত চরিত্র। কোথাও কেউ নেই নাটক হয়ত অনেকেই দেখেছে, কেঁদেছে। আজ বইয়ের পাতা থেকে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।

কিছু কিছু মানুষের জন্মই হয় হয়ত কষ্ট পাবার জন্য। মুনা যখন অনেক ছোট, খেলাধুলা, এদিক-ওদিক করে সন্ধ্যেবেলা মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শোনার কথা। তখনই সে বাবা-মাকে হারিয়েছে। এদিক-ওদিক করে শেষে মামার কোলে আশ্রয় হয় মুনার। তের বছর বয়সে পৃথিবীর খারাপ রুপটা সে দেখেছে। মামার অনুপস্থিতিতে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে, তারপর... মুনা কাউকে কিছু বলেনি আড়াল করে গেছে।

মামা বিয়ে করে। সাধারণত দেখা যায় মামার বাড়ি থেকে মামীর সাথে বনিবনা হয় না। কিন্তু এখানে মামীর সাথে মুনার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। মুনা বড় হয়, চাকরি করে মামার টানাটানির সংসারে একটু হলেও হাত লাগায়।

মামার একটি মেয়ে বকুল দশম শ্রেণীতে পড়ে আর ছেলে বাবু সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। মামা শওকত সাহেব কেরানির চাকরি করেন, উপর মহলের কারো চাপে টাকা হাতিয়ে নেয়ার মামলায় ফেঁসে যান। জেল-টেল হয়ে যেত যদিনা মুনার দায়িত্বশীলতা আর বাকের ভাই দৌড়াদৌড়ি না করত।

বাকেরকে এলাকা দায়িত্বশীল যুবক রুপে দেখা যায় কিন্তু এলাকার সবার দৃষ্টিতে সে একজন ছোটখাটো গুন্ডা! কিন্তু এলাকার কারো কোন সমস্যা হলে বাকেরকেই আগে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। বাকের মুনাকে পছন্দ করে আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কখন মুনাকে একটু সাহায্য করা যায়। কিন্তু বাকের মুনার সামনে গেলেই মন খারাপ হয়ে যায় আর মনে উদাস ভাব লক্ষ্য করা যায়।

মুনা শক্ত ধরণের মেয়ে। মুনা আর মামুনের সম্পর্ক তিন বছরের। মামুন কলেজের লেকচারার। তাদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। মামুন কল্যাণপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছে, কিছুদিন পরে তারা বিয়ে করে সেখানে থাকবে।

হঠাৎ মামুন কেমন বদলে যায়। মাঝে মাঝে কাউকে কিছু না বলে গ্রামের বাড়ি চলে যায়, কয়েক মাসে কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। তার ভিতর মুনা স্বার্থপরতা আর অনিহা লক্ষ্য করে।

মামি মারা যায়। মুনার মন খুব খারাপ থাকে। এরইমধ্যে সে মামুনের সাথে কল্যাণপুরের বাসা দেখতে যায়। মামুনের এমন উদাসীনতা লক্ষ্য করে মুনা দ্বিতীয়বার ভাবতে শুরু করে সে মামুনকে বিয়ে করবে কিনা। একথা মামুনকে বলতেই সে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়, মুনাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে, তারপর... মুনা দ্বিতীয়বার পৃথিবীর খারাপ রুপটা দেখে।

মুনা মামুনের সাথে বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে যদিও মামুন তার কাজের জন্য মুনার কাছে ক্ষমা চায়। মামুন তিন বছর আগে মুনার সাথে ঠিক যেভাবে সম্পর্ক করেছিল ঠিক সেভাবে জাহানারা নামের এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে তারপর বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের পরও তার মুনার কথা মনে পরে!

ডাক্তার জহিরের সাথে বকুলের বিয়ে হয়। বকুল তার শশুর বাড়ি নেত্রকোনায় চলে যায়। কিছুদিন পর বকুল তার ভাই বাবুকেও তার শশুর বাড়ি নিয়ে যায় আর সেখানকার স্কুলে ভর্তি করে দেয়।

মামা আর মুনা শুধু বাড়িতে থাকে। কিছুদিন পর মামা মারা যায়। মুনা সম্পূর্ণ একা হয়ে যায়। বকুলের ছেলে হয়।

ভদ্রলোকের পাড়ায় পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে কথা বলা এবং সিদ্দিক সাহেবের ভাড়টিয়া উচ্ছেদে বাধা দেবার জন্য বাকের রাজনৈতিক নেতা সিদ্দিক সাহেবের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। মিথ্যা অস্ত্র মামলায় চার মাস জেল খাটে। জেলে থাকবার সময় বাকেরের প্রতি মুনার দুর্বলতা লক্ষ্যনীয়। প্রতিদিন সে বাকেরে জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে যায়। মুনা নিজেই উকিল ঠিক করে বাকেরের মামলা লড়ে।

পুরো উপন্যাস জুড়েই মুনার পরিবারের প্রতি বাকেরের ভালবাস এবং টান লক্ষ্য করা যায়। নষ্ট ফ্যান ঠিক করে দেয়া, কাজের লোক রেখে দেয়া থেকে শুরু করে সে নেত্রকোনা গিয়ে বকুলের সাথে দেখা করে আসে। অসুস্থ বকুলকে দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে, ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে। ঘন্টায় ঘন্টায় মুনা আর বকুলের খোঁজ নিতে দেখা যায়। শুধু মুনার পরিবার নয়, পাড়ার যেকারো বিপদে আপদে সে যেন ছোটাছুটিতে রেডি।

বকুল চলে যাবার পর মুনা পুরোপুরোপুরি একা হয়ে যায়। প্রতিটা দিন তার একাকিত্বে কাটে। একা বাসায় মুনার জ্বর হয়। বাকের দেখতে যায়। মুনা বাকের হাত ধরে বলে, "বাকের ভাই আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন? " বাকের কিছু বলে না। মুনা বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে, বলুন বাকের ভাই আপনি আমাকে পছন্দ করেন কিনা। একসময় বাকের বলে, হ্যাঁ করি। মুনা অন্য ভঙ্গিতে বলে, আমি আপনাকে একদমই পছন্দ করি না। কিন্তু মুনা হয়ত মনে মনে বলছিল, বাকের ভাই আমি আপনাকে ভালবাসি, আপনি কেন বুঝেন না?

মুনা বাকের হাত ধরে বলে, বাকের ভাই আপনি সব গুন্ডামি, মাস্তানি ছেড়ে ভাল হতে পারবেন না? আমি একটা বাসা ভাড়া নেব, সেখানে শুধু আমি আর আপনি থাকব, সব ছেড়ে দেবেন আপনি।

বাকেরের চোখে পানি এসে যায়, দুফোটা পানি গড়িয়ে পরে। বাকের হয়ত মনে মনে বলে আমি সব ছেড়ে দেব মুনা, সব ছেড়ে দেব। তোমার জন্য কিনা করতে পারি আমি মুনা বল।

বাকের আমার দৃষ্টিতে প্রকৃতই ভাল মানুষ। এত দুঃখ, কষ্ট, একাকিত্ব ভুলে, মুনা হতয় বাকেরকে আকঁড়ে বাচতে চেয়েছিল। কিন্তু ওইযে মুনার জন্মই হয়েছে কষ্ট পাবার জন্য।

এগারো নাম্বার বাড়ির (যে বাড়িতে তিনজন পতিতা থাকে) কেয়ারটেকার জোবেদ আলিকে খুন করে সিদ্দিক সাহেব। কিন্তু বলির পাঠা হয় বাকের। বাকেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

বাকেরের লাশ নিতে এসেছিল মুনা। বাকের কি হয় আপনার? জেলর মুনাকে জিজ্ঞেস করাতে মুনা বলে, কেউনা, আমি ওর কেউ না।

পরিশিষ্ট: হুমায়ুন আহমেদ আমাকে কাঁদিয়েছে, ২৫২ পৃষ্ঠার কোথাও কেউ নেই দিয়ে আমায় কাঁদিয়েছে...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ৯:২১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×