যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব থেকে রহস্যময় জিনিসটা কি? অনেকেই সোজা সাপ্টা উত্তর দেবেন ভাই ব্ল্যাক হোল।
এখন যদি কেউ বলে, অতশত বিজ্ঞানের সমীকরণ-হিসেব নিকেশ বুঝি না বাপু কালা গর্ত জিনিসটা কি একটু সহজ করে বুঝাও।
-ওকে ভাই চলো আজ সহজ করে বুঝি ব্ল্যাক হোলের মাথা-মুন্ডু।
ভাই সোজা কথায় বলতে ব্ল্যাক হোল হল মরে যাওয়া নক্ষত্র। নক্ষত্র মরে গেলে ব্ল্যাক হোল হয়।
এখন একটু বাঁকা কথায় আসি। ব্ল্যাক হোলের জন্ম নিয়ে জানতে গেলে নক্ষত্র কিভাবে মারা যায় তা জানা গেলেই তো হয়ে গেল। চলুন জেনে আসি নক্ষত্র কিভাবে মারা যায়।
একটি নক্ষত্রের উপাদান প্রধানত হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম। নক্ষত্র বেঁচে থাকে দুটি কারনে-পারমাণবিক বিস্ফোরণ আর মহাকর্ষ বা গ্রাভিটি।
নক্ষত্রের ভিতরে হাইড্রোজেনের ক্রমাগত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন হিলিয়ামে পরিনত হয়। নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার কারনে হয় পারমাণবিক বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণে সৃষ্ট শক্তি দ্বারা নক্ষত্র জ্বলতে থাকে। আর আমরা তো হিরশিমা আর নাগাসাকির ঘটনায় জানিই যে পারমাণবিক বিস্ফোরণে কি পরিমাণ রেডিয়েশন হয়।এই রেডিয়েশন বাহিরের দিকে প্রচণ্ড বল প্রয়োগ করে ফলে নক্ষত্রের সব হাইড্রোজেন বাইরে ছড়িয়ে পড়তে চায়। কিন্তু নক্ষত্রের ভিতরে এত পরিমাণ হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম গ্যাসের ভরের কারনে নক্ষত্রের নিজের একটা গ্র্যাভিটি তৈরি হয় যা সমস্ত হাইড্রজেন আর হিলিয়ামকে কেন্দ্রের দিকে টানে। এর ফলে দুটি পরস্পর বিপরীত দিকে বলের সৃষ্টি হয়। একারনে নক্ষত্রের সব হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম এক জায়গায় থেকে ঘুরতে থাকে। আর এই বিস্ফোরণে প্রচুর আলো তৈরি হয় যাকে আমরা পৃথিবীতে বসে দেখি মিটিমিটি তারা জ্বলছে। আমাদের সূর্যেও কিন্তু একই ক্রিয়া বিক্রিয়া হয়।
কিন্তু কথা হল এই প্রবল বিক্রিয়ার ফলে যখন সকল হাইড্রোজেনের মজুত শেষ হয়ে যায় তখন কি হবে? তখন এই পারমাণবিক বিক্রিয়া ও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে রেডিয়েশন ও বন্ধ হয়ে যায়। আগে বলেছিলাম এই রেডিয়েশনের ফলে বাহিরের দিকে একটি বল তৈরি হয়, যা হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম গ্যাসকে বাহিরের দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু রেডিয়েশনে বন্ধ হবার পর তো এই বাহিরের দিকের বল আর রইল না। বিস্ফোরণ বন্ধতো তো শক্তি উৎপাদন বন্ধ। শক্তি উৎপাদন বন্ধ তো আলো উৎপাদন বন্ধ। ফলে বেচারা নক্ষত্রের কি হবে? সে তো মারা যাবে।
নক্ষত্র মারা যাবার পর শুধু একটি বল থাকে যা হল গ্রাভিটি, যা সকল হাইড্রোজেন আর হিলিয়ামকে কেন্দ্রের দিকে টানে। কেন্দ্রে দিকে এত বল দ্বারা টানে যে নক্ষত্রের কেন্দ্রের আয়তনই শূন্য করে দেয়। কিন্তু এই শূন্য আয়তনে আবার ঘনত্ব হয় অসীম। যাকে বলে সিঙ্গুলারিটি।
এখন বেচারা নক্ষত্র তো মৃত তার তো আর কোন আলো থাকবে না। আর আলো না থাকার কারণে নক্ষত্রটি পুরো কাল রুপ ধারন করে। এই কাল নক্ষত্রটিকেই বলা হয় আমাদের সবার প্রিয় ব্ল্যাক হোল ওরফে কৃষ্ণ গহ্বর ওরফে কালা গর্ত।
অসীম ঘনত্বের কারনে এর গ্রাভিটি বেড়ে যায়। বেড়ে যায় বলতে খুব বেশি বেড়ে যায়। এত বেড়ে যায় যে তার আসে পাশে যা কিছু আছে সব খেতে শুরু করে মানে নিজের ভিতর টেনে নিতে শুরু করে। সব কিছু টেনে নেয় এমনকি আলোকেও ছাড় দেয় না বিন্দু মাত্রও। আলোকেও খেয়ে ফেলে হারামজাদা (দুঃখিত, এটি আদরের গালি)।
এখন যদি বলি যেকোন নক্ষত্র হলেই কি তাহলে ব্ল্যাক হোল হবে? উত্তরটা সহজ ভাষায় 'না'। কারন আমাদের বাঙ্গালী গনিতবিদ সুব্রাহমানিয়ান চন্দ্র শেখর অংক কষে বলে গেছেন কোন নক্ষত্রকে ব্ল্যাক হোল হতে হলে তার ভর অবশ্যই আমাদের সূর্যের ভরের দেড় গুনের বেশি হতে হবে। সূর্যের ভরের দেড় গুন পর্যন্ত ভরকে একটি লিমিট ধরা হয় যা চন্দ্র শেখর লিমিট নামে পরিচিত।
অর্থাৎ কোন নক্ষত্রের ভর যদি চন্দ্রশেখর লিমিটের বেশি হয় তা মরে গেল হবে ব্ল্যাক হোল। আর যদি সমান বা কম হয় তাহলে হবে হোয়াইট ড্রাফট।
আর এভাবেই একটি নক্ষত্রের মৃত্যু আর একটি ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৭