দোয়েল
আমাদের বাড়ি উঠানে ছিল কুমড়ো গাছ। বাঁশ আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে উঁচু বিশাল মাচার উপর গাছ ছড়িয়ে থাকত আর কুমড়ো গুলো ঝুলে থাকত। কত দোয়েল পাখি আসত ওই মাচায়। বাঁশের চিকন কঞ্চিতে বসে থাকত, ছোট ছোট পোকা-মাকড় খেত। আমার ফুপাতো ভাই তপু ছিল খুব ত্যাদড়। একদিন বারান্দায় বসে মেজ ফুপু ওকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল। আমি ডুমুর ফল আর আম পাতা দিয়ে বানানো গাড়ি নিয়ে খেলছিলাম। হঠাৎ তপু একটা কঞ্চি নিয়ে বসিয়ে দিল এক ঘা দোয়েল পাখিটার মাথায়। এত সুন্দর একটা সাদা-কাল রংয়ের লেজ খাড়া পাখিটা নিচে পড়ে গেল! বড় ঘরের বারান্দায় ছিল ছোট ফুপু, দৌড়ে আসল। পাখিটাকে হাতে তুলে নিল, মাথায় পানি দিল। আমার চোখ ছলছল করছিল পাখিটার জন্য...
টিয়া
এই পাখিটার জন্য কিনা করেছি। আকাশ দিয়ে ঝাকে ঝাকে উড়ে যেত টিয়া পাখি গুলো, টিটি শব্দ করে। বড় কাকা আর্মিতে ছিল, ছুটিতে বাড়ি আসলে বলত উঠানে লাল পাকা মরিচ ছিটিয়ে রাখলে নাকি টিয়া পাখি গুলো মরিচ খেতে উঠানে নেমে আসে। কত মরিচ ছিটিয়ে বসে থেকেছি, ওরা আসেনি! একদিন নানু বাড়ি থেকে এলাকার ছেলেদের সাথে দুই গ্রাম পরে একটা বোস বাড়ি আছে সেখানে গিয়েছিলাম টিয়া পাখির বাচ্চার সন্ধানে। বোসরা যুদ্ধের সময় ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিল। তাদের বাগান বাড়িটাকে এলাকার সবাই বোস বাড়ি বলে। বোসরা যাবার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেটি একটি পরিত্যক্ত বাড়ি। নাড়িকেল গাছে ছিল টিয়ার বাসা, একজন গাছে উঠছিল আর আমি নিচে দাঁড়িয়ে; আনন্দে আমায় পায়কে। কিন্তু ছেলেটি যখন নারিকেল গাছে অর্ধেক উঠেছে তখন ধুলায় চারদিক ভরে গেল, কাল বৈশাখি চলে এসেছিল! তখন সবাই যে যার মত দৌড়। আমিও দৌড় দিলাম। ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় এসেছিলাম। বাজে সঙ্গে মিশেছি আর ঝড়ের মধ্যে এতদূর গেছি কাউকে না বলে তাই আম্মু কি মারটাই না মেরেছিল!
টুনটুনি
আহ ছোট্ট একটা কারিগর পাখি। কি সুন্দর তার দেহের গঠন, কি সুন্দর তার বাসা! আমাদের বাড়ির পাশে একটা পুরানো ভাঙ্গা মন্দির ছিল, সেটার পাশে ছিল অনেক গুলো খসখসি গাছ (খসখসি গাছের শুদ্ধ নাম আমি জানি না। উপরের ছবিতে টুনটুনির যে বাসাটি রয়েছে ওটাও খসখসি গাছে করা। এটার পাতা খসখসে, আর পাতা দিয়ে গ্রামে পাঙ্গাস মাছের আইশ ছাড়ানো হয়)। মাঝে মাঝেই দেখতাম খসখসি গাছে মা টুনটুনি পাখি মুখে তুলার মত কিছু একটা নিয়ে কি যেন খুজছে। একটু পরেই দেখতাম খসখসির দুটো পাতা সুন্দর করে সেলাই করে জোড়া লাগানো। দেখতে অসাধারণ লাগত! চার-পাঁচ ঘন্টা পর দেখতাম দুটো পাতা গোল করে সেলাই করে বানানো একটি বাসা। ভিতরে খড়কুটো আর তুলা দিয়ে গোল করে বানানো গদিতে মা টুনটুনি বসে আছে। দুদিন পর দেখতাম বাসায় দুটো ধূসর ছোট্ট ডিম। কি সুন্দর দেখতে!
তবে ক্লাশ সেভেনে থাকতে আমার স্কুলের আর আব্বুর অফিসের সুবিধার জন্য দাদা বাড়ি ছেড়ে মফস্বলে চলে আসি। তারপর ছিলাম ঢাকায় কলেজের পড়ার জন্য। আপাতত আছি রাজশাহীর রুয়েটে। তবে বাড়ি আসলেই দাদা বাড়ি যাই নিয়মিত কিন্তু প্রিয় পাখি গুলো এখন দেখি না!
বি.দ্র: ছবি গুলো গুগোল থেকে নিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:৫১