নানুবাড়ির পাশে একটি বাড়িতে সামুর ব্লগারদের গেট টুগেদার হবে। আর আমি নানুবাড়িতেই ছিলাম, খুব বৃষ্টি হচ্ছে। আমার যাবার জন্যে মন আঁকুপাঁকু করছে। আম্মু আমাকে গেট টুগেদারে যেতে দিবে না। তার কথা, তুই সেখানে গিয়ে কি করবি। সামহোয়্যারইন ব্লগে অনেক বড় মাপের লেখকেরা আছেন জ্ঞানী মানুষেরা আছেন যাদের পায়ের কাছে যাবার যোগ্যতাও তোর নেই। তুই তো লিখতেই পারিস না ঠিক মত, বানান ভুল হয়। এমনিতে তোর বয়স কম, সবে মাত্র ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে পড়িস, ব্লগের কেউ তোকে চিনে না। আর তুই তো ব্লগার না, আমাবশ্যার চাঁদ!
আমি বললাম দেখ আম্মু তুমি যাই বল আমি যাবই। আমি না লিখলেও, মন্তব্য না করলেও আমি লেখা পড়ি নিয়মিত। সামুর সব জনপ্রিয় ব্লগারদের নিক আমার নখদর্পণে।
আম্মু তাও যেতে দিবে না। কিন্তু আমিতো যাবই, যেতেই হবে। সামুর ব্লগারদের লেখা পড়ে তাদের নিয়ে কত কল্পনা করেছি, তাদের একবার হলেও সামনে থেকে দেখতে চাই, লুকিয়ে হলেও।
আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ছাদে গেলাম, তারপর ছাদের পাশের সুপারি গাছ বেয়ে নিচে নেমে গেলাম। আমি সুপারি গাছে চড়তে বা নামতে পারিনা। কিভাবে নামলাম কে জানে! গাছ থেকে নেমেই ঝুম বৃষ্টির ভিতর দিলাম এক দৌড়। চলে গেলাম খাল পারে। খাল পারে আসতেই বৃষ্টি নেই আর! ওখানে একটা পরিত্যক্ত ছোটখাট জমিদার বাড়ি আছে, সেখানেই গেট টুগেদার হবে। বাড়িটা সবুজে ঘেরা। আম, কাঁঠাল, সুপারি, নারিকেল, জাম, জারুল সব ধরনের গাছের সমাহার। বাড়ির দুইপাশে জঙ্গল, সামনে খাল আর পিছনে একটা পুকুর, জমিদারদের পুকুর!
আমি খালের উপর বাশের পুল পার হয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে জঙ্গলের দিকটায় চলে গেলাম। যাবার সময় সামনে পড়ল পড়ল চাঁদ গাজী। তিনি এদিক ওদিক পায়চারি করছেন। আমার দিকে একবার তাকালেন আবার নিচে তাকিয়ে পায়চারি শুরু করলেন।কিন্তু বোধয় মনে মনে বললেন, এইসব প্রশ্নফাঁস জেনারেশনের ডোডো গুলো এখানে কি করছে, এটা ব্লগারদের গেট টুগেদার, ছোকরা ইজ নট এলাউড।
আমি জঙ্গলের দিকটায় গিয়ে নিজেকে আড়াল করলাম। দেখতে পেলাম সামুর প্রতিষ্ঠাতা জানা আপুও এসেছেন। খুব ব্যস্ত। ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছেন।
একপাশে সনেট কবি, স্রাঞ্জি সে, সেলিম আনোয়ার, মনিরা সুলতানা, বিদ্রোহী ভৃগু, খায়রুল আহসান, জাহিদ অনিক এরা বসে কিসব কবিতা নিয়ে কথা বলছে। হঠাৎ হাসান কালবৈশাখি ভাইয়ের গলা শুনলাম, আরেহ আমাদের সরকার স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে, পদ্মা সেতু করেছে। মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন সাহেব বললেন মালয়েশিয়া দেখছো মিয়া? মাহাতির মোহাম্মদকে চিনো? হাঠাৎ চাঁদ গাজী সাহেব এসে বললেন এইসব ক্যান্টনমেন্টের পিগমীদের জন্য দেশের এই অবস্থা। তাদের পাশে বসে আছে আখেনাটেন, মা.হাসান, ডা: এম এ আলি, গিয়াস উদ্দীন লিটন, বিচার মানি তাল গাছ আমার, হাবিব স্যার, গড়ল, নতুন নকিব সহ আরো কয়েকজন।
ছবি তোলার দায়িত্ব পড়েছে কাজী ফাতেমা ছবি আপু আর ব্লগের নায়ক রাজিব নুর ভাইয়ের উপর।
সেই ওপার বাঙ্গলা থেকে এসেছে সাহিনুর, পদাতিক চৌধুরী ভাই।
গল্পের আসর জমেছে। দেখা যাচ্ছে ভুয়া মফিজ, কাওসার চৌধুরী, অপু তানভির, নীল আকাশ ভাই আরো কয়েকজন গুনি লেখক।
কাল্পনিক ভালবাসা আর আর্কিওপটেরিক্স ভাই কি যেন আলোচনা করছেন। পাশে গরম গরম মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাঠকের প্রতিক্রিয়া! ভাই। ব্লগের ফ্লাডিং টাইপ ক্যাচাল হয়েছে হয়ত।
আরেক পাশে ওমেরা, জুন, রিম সাবরিনা জাহান সরকার আর শায়মা আপু বসে আছেন। রেসিপি নিয়ে আলোচনা হয়ত।
হঠাৎ জঙ্গল থেকে এক ছোকরা বের হয়ে এল। কাচুমাচু হয়ে বলে, অতি প্রিয় ব্লগার ভাই ও বোনেরা আমাকে কি একটু ব্লগারের আসনে জায়গা দেয়া যায়? আমি কথা দিচ্ছি এখন থেকে সামুর নিয়মিত হবার চেষ্টা করব। হঠাৎ সবাই বলে উঠল এই এই ছোকরা তোমার পরিচয় বল।
ছোকরা অর্থাৎ আমি বলতে শুরু করলাম, জ্বী আসলে হয়েছে কি, ইয়ে মানে আমার নিক আপেক্ষিক মানুষ, যার বয়স তিন বছর এক সপ্তাহ। কিন্তু আমি সামুর প্রেমে পড়েছি সেই ২০১৫ সাল থেকে। আমার আসল নাম হচ্ছে গিয়ে রবিউল হাসান। বয়স খুবি কম, ছোট ভাই/ছোকরা যা খুশি ডাকতে পারেন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আর বাড়ি হচ্ছে গিয়ে মানিকগঞ্জ। আমাকে কি একটু বসতে দিবেন? বিরক্ত করব না, একটু আপনাদের কথা শুনব এই আরকি।
হঠাৎ ঘুম ভাঙল। ধুর! আরেকটু পরে ভাঙ্গলে কি হত?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:০৮