পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের সবচেয়ে বড় দুর্দিন বিরাজ করছে আজ। একটি দীপ্তিমান সত্যকে মুহূর্তের মধ্যে কলুষিত করে পৃথিবীময় প্রচার করার মতো গণমাধ্যম আজ ইহুদিদের হাতে। পৃথিবীর সর্বাধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি, টেকনোলজি, মুদ্রানীতি ও অর্থনীতির নেতৃত্ব আজ তাদেরই হাতে। একসময় যদিও এর সবটাই ছিল মুসলমানদের হাতে। কিন্তু এখন তা রূপকথার গল্পে পরিণত হয়েছে। এককালে যে মুসলমানদের তাকবিরে ভুবন কাঁপতো, আজ তাদের বুকফাটা আর্তকান্নায় জগৎ কম্পমান। এককালে যে মুসলমানদের দাপটে পৃথিবীর বাতিলগুলো ভয়ে থরথর করতো আজ তাদের লাশের স্তূপ দেখে পৃথিবী শঙ্কিত, তারপরও অতি অল্পসংখ্যকই এ অবস্থার পরিবর্তনে কাজ করছে। অনেকে বা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মাহদি আসার প্রহর গুনছে। কেউ ঘাম ঝরাচ্ছে রীতিমতোই; কিন্তু সহযোগী নেই। কেউ আবার শত সহযোগী থাকা সত্ত্বেও সঠিক কর্মসূচি বিনির্মাণে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে মানজিলের সোনালি চেরাগ হস্তগত হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের যা করণীয়, তা দিব্য রাসুল জীবনে। রাসুল (স.) আমাদের জন্য সর্বোত্তম মডেল - এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রেই, সর্ব পরিস্থিতিতে রাসুলের কর্মসূচিই যে আমাদের একমাত্র দিক-দর্শন এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকার কথা নয়। নামাজ-রোজা, বিয়ে-শাদির জন্য সব মুসলিমের আদর্শ মহানবী মুহাম্মদ (স.), অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বহু মুসলিমেরই আদর্শ প্লেটো, অ্যারিস্টোটল, ল্যাস্কি, লক, হিউম, জেফারসান, আব্রাহাম লিংকন প্রমুখ। অর্থনীতির জন্য আমাদের অনেকেরই আদর্শ কার্লমার্কস ও মাও সেতুং।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ও সামগ্রিক জীবন বিধান। আর এ সামগ্রিক জীবন বিধানকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ বাস্তবায়নেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ শান্তি। বর্তমান পৃথিবীতে প্রজ্বলিত অশান্তির দাবানল, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক পাশ্চাত্যবাদীরা তাদের অতি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেও যেখানে নির্বাপিত করে শান্তি দানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, ইসলাম সেখানে শান্তির জোর চ্যালেঞ্জ করেছে। এর বাস্তবতা পরীক্ষিত হয়েছে একটি সুদীর্ঘকালের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দ্বারাই। পৃথিবীর সোনালি সফেদ ইতিহাসই তার নির্মল সাক্ষী। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (স.) মসজিদের নববীর ইমামতি থেকে শুরু করে আরবের প্রতিটি ভাঙা কুটিরের অনাহারি মানুষের খোঁজখবর নেয়া, দুস্থ-দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই ছিলেন আল্লাহর সফল প্রতিভূ। মসজিদে ইমামতি, দোয়া-দরুদ ও ওয়াজ-নছিহতের মধ্যেই তার কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর প্রথম খলিফা চতুষ্ঠয়ের প্রধান পরিচিতি ছিল রাষ্ট্র পরিচালক ‘আমিরুল মুমিনিন’ হিসেবে। রাজনীতি ও রাষ্ট্রের কল্যাণ তথা মানবতার সামগ্রিক কল্যাণ সাধনই ছিল মুহাম্মদ (স.)-এর সুন্নত আর এই মানব কল্যাণ ও সেবাই হচ্ছে ইসলামী জীবন দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
পবিত্র কুরআনে : সূরা আলে-ইমরানের ১১০নং আয়াতে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদের আবির্ভাব ঘটেছে মানুষের কল্যাণের নির্দেশ ও অকল্যাণ থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে।’ বলে এদিকে ইঙ্গিত করেছে। সুরা আল-বাকারার-১১৭নং আয়াতে আল্লাহর ঘোষণা ‘পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরানোর মধ্যেই শুধু নেক কাজ সীমিত নয়, বরং নেককাজ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতকে বিশ্বাস, ফিরিশতার প্রতি বিশ্বাস, কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, নবীদের প্রতি বিশ্বাস আর আল্লাহর মহব্বতে, আত্মীয়স্বজন, ইয়াতিম-মিসকিন, মুসাফির, ভিখারিদের জন্য ও দাসত্ব শৃঙ্খল মুক্তির জন্য অর্থ ব্যয় করা।’ মানব সেবার দায়িত্ব উল্লেখ করে কোরআনের সুরা আল-বালাদে এসেছে : ‘ওরা কঠিন দুর্ভেদ্য দুর্গটি অতিক্রম করতে পারেনি। আপনি কি জানেন সে কঠিন দুর্ভেদ্য দুর্গটি কী? তা হচ্ছে, মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খল মোচন, নিরন্ন মানুষকে খাদ্য প্রদান, নিকটাত্মীয় ইয়াতিমদের পুনর্বাসন ও ধুলায় লুণ্ঠিত (ফুটপাতে শায়িত) মিসকিনদের খাদ্যের সংস্থান করা’ (১১-১৬ আয়াত)। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করো ও রুগ্ণ ব্যক্তির সেবা করো’ (বুখারি)। অপরপক্ষে মানুষকে দীনের ব্যাপারে বুঝ দান করাও কল্যাণকামিতার বৃহৎ দিক। তদুপরি, পার্থিব দারিদ্য মানুষকে অনেক সময় দীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বনই ইসলামী নীতি।
ইসলাম এসেছে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্যই। আল্লাহ আমাদের তারই কাছে প্রার্থনার কৌশল শিক্ষা দিয়ে বলেন, ‘হে প্রভু! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করো, আর কল্যাণ দান করো আখিরাতেও।’ অতএব ইসলাম সৃষ্টির সর্বজনীন ধর্ম। ইসলাম যেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে সৃষ্টির প্রতিটি মানুষ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে এমনকি পশুপাখি পর্যন্ত সেখানে নিরাপত্তায় বসবাস করবে। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম সম্প্রাদায়ের সঙ্গে সদাচার করার ব্যাপারে কোরআনেও নির্দেশ এসেছে (আনআম ১০৮ আয়াত দ্র.)। যদিও বিশ্বব্যাপী প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামকে মানবাধিকারবিরোধী বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা তাদের যুগে যুগে কল্পিত নীল-নকশারই ফসল। মূলত, ইসলামই মানবাধিকারের প্রবক্তা। সত্যিকার ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের জুড়ি নেই। তারপরও আমাদের কয়েক ভাই ইসলামের এই সর্ব সুন্দর, সর্বজনীন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে শুধু কয়েকটি শাখার মাসয়ালা নিয়ে চরমভাবে ব্যস্ত রয়েছেন। অথচ তার সামনেই তার ঘরেই যে শিরকের প্রশিক্ষণ হচ্ছে, বুভুক্ষু মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় কাতরাচ্ছে সেদিকে নজর দেয়ার সময় তার নেই!আজ শুধু জামা-কাপড়, তাসবিহ, টুপি, দোয়া-দরুদ ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেছে মুসলমান এই সর্বজনীন ইসলামকে। অথচ পারিবারিক ক্ষেত্রে, ব্যবসার ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে, পররাষ্ট্রের ব্যাপারে এবং দুস্থ কাঙালদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে তার যে অনুপম নীতি ইত্যাদি যেন মুসলমানদের কাজই নয়। বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি কারণে কোথাও কোনো উদ্বাস্তু বা শরণার্থীর জন্য অমুসলিম স্বেচ্ছাসেবীরা ছুটে যায়। আজকের দুনিয়ার সমগ্র মুসলিম দরিদ্রদের মধ্যে অমুসলিম সেবা সংস্থাগুলো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে, এসব দেখেশুনে মনে হয় যেন মুসলমানরা এসব কাজ জানেই না। এটা যেন তাদের কর্মসূচিই নয়। অথচ মুসলমানকে বোঝা উচিত, এ কর্মসূচি ও কাজ তাদেরই। এ কাজ সাহাবায়ে কেরাম ও রাসুল (স.) নিজে করেছেন।
মসজিদে নববীতে বসে আল্লাহর রাসুল নিজেই দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। এটা বিধর্মীদের কর্মসূচি নয়। এটা মুসলমানদের কর্মসূচি। আমাদের সমাজের কয়েক ভাই বটতলার গাঁজাখোরদের কাছে ইসলাম তলব করে। অথচ ইসলাম তো ওই গাঁজাখোরদের জন্য আসেনি। ইসলাম এসেছে সর্বজনীন মুক্তির জন্য। ইসলামের বিরাট অট্টালিকার মালিকের অধিকার, যা আর ওই নিভৃত পল্লীর রাখালের অধিকারের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই। এ কারণেই ইসলাম দ্বারা পৃথিবীময় এত বড় বিপ্লব সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছিল। ইলামের একেকজন শ্রমিক ও মজুরও যথার্থ সম্মানিত মানুষ। শ্রমিক তার যথার্থ পাওনা সম্মানের সঙ্গেই পাবেন। ইসলামের বণ্টনের ক্ষেত্রে এতটা সমতা দেখা যায় যে পাঁচতলার মালিককে গাছতলার রাখালের খবর নিতে বাধ্য করেছে। পুঁজিবাদের বাজারে তা নেই। সেখানে কাজে অক্ষম ব্যক্তিরা নিরন্ন পশুর মতো দুর্বিষহ জীবন কাটায়। কিন্তু ইসলাম জাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই অক্ষমদের আহারের ব্যবস্থা করেছে। দুঃখের বিষয়, কিছু কিছু লোক এই জাকাত, সদকা এবং ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভর করে কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছে। অথচ এই যে জাকাত, সদকা এর উদ্দেশ্য কী এবং এটা কার জন্য? সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার ব্যক্তিকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা দানই জাকাতের উদ্দেশ্য। যাতে তারা ওই জাকাতের অর্থ দ্বারা কাজকর্ম করে, কৃষি ব্যবসা করে, সচ্ছল হতে এবং আবার অর্থনৈতিক কর্মকা-ে শরিক হতে পারে। সুতরাং জাকাতের মাধ্যমে, ওই দরিদ্র ব্যক্তি অকর্মণ্য এবং পরনির্ভরশীল হবে না বরং, স্বনির্ভর হওয়ার একটি চিরস্থায়ী সুযোগ লাভ করবে। অতএব জাকাত হচ্ছে বিশ্বের দারিদ্র্য বিমোচন এবং স্বনির্ভর বিশ্ব গড়ার একটি অনুপম ঐশী ব্যবস্থাপনা।
ইসলাম একেকজন কর্মীকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘শ্রম করে অর্থ উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘সততার সঙ্গে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য করাই অর্থ উপার্জনের সর্বোত্তম পন্থা।’ তিনি কি শুধু এই থিওরি দিয়েছেন? না বরং নিজেই ব্যবসা করে উম্মতের সামনে তার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আর তাঁর ব্যবসায় সততা ছিল। তাই লাভও হয়েছে প্রচুর। মদিনায় মসজিদের নববীর নির্মাণ কাজে নবীজি কাউকে আদেশ না করে বিশাল প্রস্তর খ- নিজেই সর্বপ্রথম মাথায় তুলে নিয়েছিলেন। খন্দকের যুদ্ধের পরিখা খননের সময় বিশ্বের এই ত্রাণকর্তা সৃষ্টির সেরা মহামানব ক্ষুধায় কাতর অবস্থায়ও পেটে পাথর বেঁধে সাহাবাদের সঙ্গে নেমে যান খনন কাজে। নবী জীবনের এই বাস্তব দৃশ্যও কি উম্মতকে আলোড়িত করে না! অতএব, বর্তমান আলেম সমাজকে শুধু মিলাদ ও হাদিয়ানির্ভর না হয়ে কর্মঠ এবং সমস্ত হালাল পেশা গ্রহণেই আন্তরিক হওয়া উচিত। আজকের উন্নতির যুগে, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন পন্থা বের হয়েছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি মিডিয়া দখলে থাকলে ব্যবসা ছাড়াও দীনের প্রচার ও প্রসারে এসব মিডিয়ার ব্যবহার সময়োপযোগী। আল্লাহর রাসুল (স.) তাঁর সময়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পন্থাটাই দীন প্রচারে কাজে লাগাতেন। তাইতো তিনি, বিশ্বের অতুলনীয় সফল ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে সাধারণ মানুষের কাছে দীন প্রচারের মাধ্যম হচ্ছে ওয়াজ-নছিহত, কিন্তু শিক্ষিত যুব শ্রেণীর কাছে দীন প্রচারের মাধ্যমে সাহিত্য পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি মিডিয়ার ব্যবহার, অথচ আমরা আজ এই সময়োপযোগী পদ্ধতিগুলো উপেক্ষা করে যুব সমাজের কাছে ইসলামকে পৌঁছতে দিচ্ছি না। অতএব, ইসলামী নেতৃবৃন্দকে বর্তমান প্রযুক্তি মিডিয়া আয়ত্ত করে, প্রয়োজনে নিজেরা টিভি সেন্টার করে ইসলাম প্রচারে এর ব্যবহারসহ ইন্টারনেটে অসংখ্য ইসলামী ওয়েবসাইট রচনা করা সময়ের দাবি।
এ ব্যাপারে আলোচনাটি এজন্য করতে হচ্ছে যে, আমাদের ইসলামী নেতৃবৃন্দের একটি বিশাল শ্রেণী আজ এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন, অথচ নবী করিম (স.)-এর মুখে জীবনে কেউ একটি অশুদ্ধ কথাও শোনেনি। ভাষার শুদ্ধতা এবং স্পষ্টতা ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর সঙ্গী-সাথীরা তাঁর কথাগুলো শুনে, মুখস্থ করে, লিখে নিতে পারতেন। এ উৎস থেকেই তো আমরা অতি উন্নতধ্বনি বিজ্ঞান, শুদ্ধ সুন্নাহ (হাদিস) পেয়েছি। অথচ আমরা অনেকে মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই এ সুন্নতের বরখেলাপ করে বসি। ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ তাইতো, নবী (স.) ছিলেন সবচেয়ে রুচিশীল মানুষ। এক দিরহাম থাকলে তিনি খাবার কিনতেন। একাধিক দিরহাম থাকলে তিনি ফুল কিনতেন। স্বল্প সময়ের জন্য কোথাও গেলে তাঁর সঙ্গে চারটি জিনিস থাকতোÑ জায়নামাজ, মিসওয়াক, চিরুনি ও আতর। তৎকালীন কাফির, ইহুদি, খ্রিস্টানরাও মহানবীর আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদের অসুরণ করতো। অথচ আমরা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও বিধর্মীর অনুকরণে তৃপ্তি বোধ করি। অপরপক্ষে আজকাল ইসলামপন্থীরা পোশাক-পরিচ্ছদে এমনকি অযতেœ লালিত এলোমেলো চুল-দাড়ি ও কথাবার্তার ভাবভঙ্গিতে এমন নমুনা প্রদর্শন করে, যাকে অমুসলমান তো দূরের কথা সাধারণ মুসলমান এমনকি নিজেদের ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত অসুরণ করতে চায় না। এ ব্যাপারে আমাদের সংশোধন কতটুকু জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূলত ইসলামী নীতি সৌন্দর্য যা, তা হবে কোরআনেরই বাস্তব রূপ। নবী (স.) তার প্রতিচ্ছবি। কোনো ব্যক্তিসমষ্টির জন্য তা সীমাবদ্ধ নয়, বরং সর্বজনীন। কবি নজরুলের ভাষায় :
কেবল মুসলমানের লাগিয়া
আসেনিক ইসলাম,
সত্য যে চায় আল্লাহকে মানে
মুসলিম তারই নাম।
দুঃখের বিষয়, আজিকার ইসলামও ইসলামপন্থী মুসলমানদের দেখে সে প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে না, যা ছিল ইসলামের সোনালি অতীতে। যে আদর্শের কারণে ইসলাম সমগ্র পৃথিবীতে দিগি¦জয়ী, কালজয়ী মিশন। সুতরাং অজিকার ইসলামপন্থীরা, ইসলামের সোনালি অতীত থেকে যতটুকু পেছনে সরেছেন, তা ফিরিয়ে না আনলে শত মিছিলেও শান্ত হবে না এ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি, নির্বাপিত হবে না প্রজ্বলিত অশান্তির দাবানল।