somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী বই দেখলেই তাকে জিহাদী বই বলে এক শ্রেণীর মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে।জিহাদ আসলে কি.?

১৭ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিনি আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। যিনি আমাদেরকে ইসলামের দিকে হেদায়াত না করলে আমরা সঠিক পথ পেতাম না। অসংখ্য দরুদ ও সালাম বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর। যিনি অসংখ্য বনী আদমকে ধ্বংসের অতল গহ্বর থেকে টেনে এনে মুক্তির সন্ধান দিয়েছেন। উপহার দিয়েছেন শোষণ ও বঞ্চনাহীন একটি সোনালী সমাজ।

ইসলামের অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মত জিহাদও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জিহাদ নিয়ে পড়াশুনা করলে যে বিষয়টা স্পষ্ট বুঝা যায় তাহল- জিহাদ সমস্ত প্রকার অত্যাচার,অনাচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আর জিহাদকে অনুমোদনই দেয়া হয়েছে আত্মরক্ষার জন্য। অথচ,রীতিমত আশ্চর্যের বিষয় হল- ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের এই দেশে জিহাদ ও সন্ত্রাসকে এক করে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। এটা ইসলাম বিদ্বেষীদের ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটা নোংরা হাতিয়ার বলে মনে হচ্ছে। ইসলামী বই দেখলেই তাকে জিহাদী বই বলে এক শ্রেণীর মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে। যাদের কাছে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকে জাতির সামনে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করছে। এগুলোর পিছনে একমাত্র কারণ যেটা আমি মনে করি তা হল- জিহাদ আসলে কি জিনিস তারা তা জানেনা এমনকি জানারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনা। তাদের অনেকেই মুসলিম পিতামাতার সন্তান। নিজেও ইসলামকে মনে প্রাণে লালন করে। অথচ,ইসলাম কিংবা ইসলামের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়ে জ্ঞান অর্জনের গরজ অনুভব করে না। জিহাদও ইসলামের একটি শাখা। শাস্তি তো পাওয়ার উপযুক্ত তারাই যারা জিহাদের নাম ভাংগিয়ে নীরিহ মানুষ মারার খেলায় মেতে উঠেছে। কেননা,ইসলাম নিরীহ মানুষ মারার কোন অনুমোদন দেয় না। আর ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধ করতে হলে রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায়ই করতে হবে; ব্যক্তি বিশেষের নির্দেশে অস্ত্রধারণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ।


ইসলাম চির শান্তির ধর্ম। ইসলাম চায় মানুষের মাঝে পরস্পর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হোক। তারা দুনিয়ায় সুখে শান্তিতে থাকুক। ফিতনা ফাসাদ দাংগা হাংগামা মানুষকে কখনো কল্যাণ দিতে পারেনা। মানুষের জীবন চলার পথকে সুন্দর ও সুশৃংখল করার জন্য ইসলাম তাদেরকে দিয়েছে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা। নিশ্চিত করেছে তাদের যথাযথ স্বাধীনতা। আল্লাহ তায়ালা মানুষের উপর বিভিন্ন ধরণের বিধি-বিধান পালনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন। যেমন-নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি। সেগুলো যেমন একেকটি ফরজ তথা অত্যাবশ্যকীয় ইবাদাত, তেমনি জিহাদও একটি ফরজ বা আবশ্যক বিধান। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীসে জিহাদের নির্দেশ এসেছে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে জিহাদের আবশ্যকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে-

كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (216)



অর্থাৎ, তোমাদেরকে যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। হতে পারে তোমরা এমন কিছুকে অপছন্দ কর যা আসলে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার এমনও হতে পারে কোন জিনিসকে তোমরা পছন্দ করো অথচ, তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ সবকিছু জানেন,কিন্ত তোমরা জানো না। (সুরা বাকারা: ২১৬)

অন্য আয়াতে এসেছে:

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ (39) الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَنْ يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (40)



অর্থাৎ, যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে,কেননা তারা মজলুম এবং আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন। তাদেরকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র এ অপরাধে যে, তারা বলেছিল,“আল্লাহ আমাদের রব।” যদি আল্লাহ তায়ালা লোকদেরকে একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না রাখতেন,তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশী করে উচ্চারণ করা হয় সেসব আশ্রম,গীর্জা,ইবাদাতখানা ও মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা হত। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন যারা তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ তায়ালা বড়ই শক্তিশালী ও পরাক্রান্ত। (সুরা হজ্জ: ৩৯-৪০)





কিন্তু, অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল-জিহাদ নামক পবিত্র শব্দটিকে এখন কলঙ্কৃত করে ফেলা হচ্ছে। কুরআন শরীফের বহু স্থানে এ শব্দটি এসেছে। অথচ, এখন একে কলঙ্কৃত করে এর দ্বারা সন্ত্রাসকে বুঝানো হচ্ছে। বর্তমানে “জিহাদ” শব্দটি সাধারণ মানুষের নিকট আতংকজনক হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। এমনভাবে একে উপস্থাপন করা হয় যে, জিহাদ মানেই যেন সন্ত্রাস কিংবা অস্ত্রবাজি ইত্যাদি। অথচ, ইসলাম সন্ত্রাসকে কঠোরভাষায় ঘৃণা করেছে। সন্ত্রাসীর জন্য গুরুতর শাস্তির বিধানও ইসলাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। হয়তবা, ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে জিহাদকে বিকৃত করে উপস্থাপন করার পথকে বেছে নিয়েছে। আর একে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।



আসুন! আমরা জিহাদ সম্বন্ধে জেনে নিই। ইসলাম কি আসলেই যুদ্ধ করতে বলেছে? নাকি তা শান্তির ধর্ম সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এ ছাড়া জিহাদ সম্বন্ধে আমাদের মাঝে পরিস্কার একটা ধারণার সৃষ্টি হবে ইনশাল্লাহ। আসুন! তাহলে শুরু করা যাক।





জিহাদের সংজ্ঞা:

জিহাদ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল-

১. কোন বিষয়ের চুড়ান্ত সাফল্যে পৌছানোর লক্ষ্যে কথা ও কাজ দ্বারা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।

২. কষ্ট স্বীকার করা।

৩. শত্রুকে প্রতিরোধ করতে সাধ্যমত চেষ্টা করা। (তাজুল উরুস,কামুসুল ফিকহী)


জিহাদকে কেন বৈধতা দেয়া হল?

যুদ্ধ আসলে ভালো কাজ নয়; যুদ্ধ-বিগ্রহ দাংগা-হাংগামা মানুষের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। তবে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে এটার দারস্থ হতে হয়। যখন যুদ্ধ ছাড়া সমাজকে শান্তিপূর্ণ রাখার আর কোন পথ অবশিষ্ট্য থাকেনা তখনই বাধ্য হয়ে জিহাদের চুড়ান্ত স্তর যুদ্ধের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহ তায়ালা জিহাদকে পবিত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে বৈধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ (39)

অর্থাৎ, আর এ কাফেরদের সাথে এমন যুদ্ধ করো যেন গোমরাহী ও বিশৃংখলা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন পুরোপুরি আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তারপর যদি তারা ফিতনা থেকে বিরত হয় তাহলে আল্লাহই তাদের কার্যকলাপ দেখবেন। (সুরা আনফাল: ৩৯)



অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ (193)

অর্থাৎ, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখ যালেম তথা অত্যাচারী ছাড়া আর করোর ওপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়। (সুরা বাকারা: ১৯৩)



জিহাদের উদ্দেশ্যঃ

কোন কাজ করার পিছনে কোন না কোন উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ কোন কাজ করে না। তেমনি জিহাদেরও বেশ কিছু উদ্দেশ্য আছে। সেগুলো নিম্নে উপস্থাপিত হল।



প্রথমত: আল্লাহ তায়ালার বাণী তথা বিধানকে উচ্চকিত করা। কোন স্বার্থের কারণে নয়। হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ فَمَنْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ

অর্থাৎ, আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল (সাঃ) এর কাছে একজন লোক এসে বললেন: একজন লোক যুদ্ধলব্ধ সম্পদের আশায় যুদ্ধ করে, আরেকজন নিজের নাম যশ-খ্যাতির জন্য যুদ্ধ করে এবং অন্যজন নিজের অবস্থান মানুষকে দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে কে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় যুদ্ধ করে? রাসুল (সাঃ) বললেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার বাণী তথা বিধানকে উচ্চকিত করার জন্য যুদ্ধ করে সেই আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় যুদ্ধ বা জিহাদ করে। (বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান, বায়হাকী, নাসায়ী, তিরমীজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)



দ্বিতীয়ত: মজলুম তথা অত্যাচারিতদেরকে সাহায্য করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا (75) الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا (76)



অর্থাৎ, তোমাদের কী হলো,তোমরা কেন আল্লাহর রাস্তায় অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করছ না,যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতীত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করে বলছে,হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও,যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন বন্ধু,অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরী করে দাও। যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায় আর যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। অতএব, শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়াই কর এবং জেনে রাখ,শয়তানের কৌশল আসলেই দুর্বল। (সুরা নিসা:৭৫-৭৬)



তৃতীয়ত: শত্রুদেরকে প্রতিরোধ করে তাদের হাত থেকে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে হেফাজত করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ (194)





অর্থাৎ, হারাম (সম্মানিত) মাসের বিনিময় তো হারাম মাসই হতে পারে এবং সমস্ত মর্যাদা সমপর্যায়ের বিনিময়ের অধিকারী হবে। কাজেই যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করবে তোমরাও তার ওপর ঠিক তেমনিভাবে হস্তক্ষেপ কর। তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, আল্লাহ তায়ালা খোদাভীরুদের সাথে আছেন (যারা সীমালংঘন করা থেকে বিরত থাকে)। (সুরা বাকারা:১৯৪)



অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন:

الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَنْ يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (40)

অর্থাৎ, তাদেরকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র এ অপরাধে যে,তারা বলেছিল,“আল্লাহ আমাদের রব।” যদি আল্লাহ তায়ালা লোকদের একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না করতেন,তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশী বেশী উচ্চারিত হয় সেসব আশ্রম,গীর্জা,ইবাদাতখানা ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হত। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন যারা তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা বড়ই শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী। (সুরা হজ্জ: ৪০)





জিহাদের প্রকারভেদঃ

শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ বেশ কয়েক প্রকারের হতে পারে। যেমন-

১. কাফের, মুনাফিক ও মুরতাদদের সাথে যুদ্ধ।

২. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তন আকাংখী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ (9)



অর্থাৎ, ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি দল অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে বসে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মীমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ইনসাফ তথা ন্যায়বিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। (সুরা হুজুরাত: ৯)



একটি হাদীসে এসেছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন:

إِنَّهُ سَتَكُونُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الأُمَّةِ وَهْىَ جَمِيعٌ فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ ».

অর্থাৎ, অচিরেই ফিতনা ফাসাদ ও দুর্ঘটনা ঘটবে। যে এই উম্মাতের (মুসলমানদের) মাঝে ফাটল সৃষ্টি করতে চায় সে যেই হোক না কেন তাকে তরবারী দ্বারা শাস্তি দাও (এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব)। (মুসলিম শরিফ, মুসনাদে আহমাদ)



এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইসলামিক স্কলাররা বলেন: যদি কেউ ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলমানদের ভিতর ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র করে তাকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে হবে। যদি সে বিভিন্নভাবে সতর্ক করার পরেও ক্ষান্ত না হয় তাহলে, তাকে প্রয়োজনে তরবারী দ্বারা শাস্তি দেবে। তবে,এটা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বের আওতায় পড়ে। সরকারের কোন সবুজ সংকেত ছাড়া এটা সাধারণ মানুষ কর্তৃক বাস্তবায়নযোগ্য নয়।



৩. দ্বীন, জীবন, পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ রক্ষায় যুদ্ধ করা বৈধ। রাস্তায় সন্ত্রাসী আক্রমণ প্রহিহত করাও এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন:



« مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ أَوْ دُونَ دَمِهِ أَوْ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ »

অর্থাৎ, যে তার সম্পদ হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হয়েছে সে শহীদ, যে পরিবার পরিজনকে হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হয়েছে সে শহীদ। যে নিজের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়েছে সে শহীদ এবং যে দ্বীনের (ইসলামের) জন্য নিহত হয়েছে সেও শহীদ। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমীজি, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)



জিহাদের ফযীলত:

জিহাদের ফযীলত সম্বন্ধে কুরআন ও হাদীসে বেশ কিছু বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বর্ণনা নিম্নে বর্ণিত হল।

১. আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদ করা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (111)

অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের কাছ থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদকে জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহ তায়ালার পথে লড়াই করে, মারে এবং মরে। তাদের প্রতি তাওরাত,ইনজীল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা)এটি একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা। আর আল্লাহর চাইতে বেশী ওয়াদা রক্ষাকারী আর কে আছে?কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। এটাই বিরাট সাফল্য। (সুরা তাওবা:১১১)



অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (11) يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (12) وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ (13)



অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসার সন্ধান দেব না যা তোমাদেরকে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ কর। এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান। তাহলে, (পুরস্কার হিসেবে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন বেহেশতে প্রবেশ করাবেন যার নীচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বহমান থাকবে। আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম বাসস্থান দান করবেন। এটাই বড় সফলতা। আরেকটি জিনিস যা তোমরা আকাংখা কর আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং নিকটবর্তী সময়ে বিজয়। হে নবী! ঈমানদারদেরকে সুসংবাদ দান করুন। (সুরা সফ: ১০-১৩)




জিহাদে মানুষ হত্যা কেন?:

পৃথিবীর সচেতন সকল ব্যক্তিই বলবে যে, কোন একটা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নিজস্ব সেনাবাহিনী দরকার। অত্যাচারী রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া কোন দেশ অন্য আরেকটি দেশ বা গোষ্টির সাথে যুদ্ধ করতে চায় না। শান্তিকামী রাষ্ট্র সব সময় সুযোগ খুজতে থাকবে শান্তির কোন দরজা খোলা রাখা যায় কিনা? যখন শান্তির সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তখনই তারা অন্য দেশ বা গোষ্টির সাথে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।



শান্তির ধর্ম ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়। কেননা, ইসলাম চায় সমাজে শান্তি বজায় থাকুক। আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই, মুসলমানরা যেখানেই অন্যদের সাথে যুদ্ধ করতে গেছেন সেখানেই তাদের একটা অপশন ছিল সন্ধির। সন্ধিতে সাড়া দিলে তাদের সাথে আর তারা যুদ্ধে জড়াতেন না।



ইসলামে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল কেন? এ প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। ইমাম ইবনুল কায়্যেম (রহঃ) এ প্রশ্নের খুব সুন্দর জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:



প্রথমত: ইসলাম মুসলমানদেরকে ধৈর্য ধারণ ও ক্ষমা করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:



أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا (77)



অর্থাৎ, তোমরা কি তাদেরকে দেখনি,যাদেরকে বলা হয়েছিল,তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখ, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও? এখন যুদ্ধের নির্দেশ দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে,তারা মানুষকে এমনভাবে ভয় করছে যেমন আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশী। তারা বলছেঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ কেন দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন? তাদেরকে বলে দিন দুনিয়ার জীবন ও সম্পদ অতি সামান্য এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষের জন্য আখেরাতই উত্তম আর তোমাদের ওপর সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না৷ (সুরা নিসা: ৭৭)



নাসায়ী শরীফের হাদীসে এসেছে-

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ وَأَصْحَابًا لَهُ أَتَوْا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا كُنَّا فِي عِزٍّ وَنَحْنُ مُشْرِكُونَ فَلَمَّا آمَنَّا صِرْنَا أَذِلَّةً فَقَالَ إِنِّي أُمِرْتُ بِالْعَفْوِ فَلَا تُقَاتِلُوا



অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ ও তার কিছু সাথী মক্কায় থাকাকালীন রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমরা যখন মুর্তিপুজারী ছিলাম তখন সম্মানের সাথেই ছিলাম। আর ইসলাম গ্রহণ করেই আমরা লাঞ্চিত হয়ে গেলাম। (আমাদের কি কিছুই করার নেই?) রাসুল (সাঃ) বললেন: আমাকে ক্ষমা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং, যুদ্ধে জড়িয়ে পড় না।(নাসায়ী,মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকী,মুসনাদে সাহাবা)



দ্বিতীয়ত: যখন শত্রুরা মারমুখী হয়ে গেল তখন শুধুমাত্র জিহাদের অনুমতিটুকু দেয়া হয়েছিল। আবশ্যক করা হয়নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ (39) الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَنْ يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (40)



অর্থাৎ, যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে,কেননা তারা মজলুম এবং আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন। তাদেরকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র এ অপরাধে যে, তারা বলেছিল,“আল্লাহ আমাদের রব।” যদি আল্লাহ তায়ালা লোকদেরকে একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না করতেন,তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশী বেশী উচ্চারিত হয় সেসব আশ্রম,গীর্জা,ইবাদাতখানা ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হতো। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন যারা তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ তায়ালা বড়ই শক্তিমান ও পরাক্রমশালী। (সুরা হজ্জ: ৩৯-৪০)



তৃতীয়ত: যারা তাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের সাথেই যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অন্যদের সাথে নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ (190)

অর্থাৎ, আর তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ কর,যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে,কিন্তু খবরদার, সীমালংঘন কর না। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না। (সুরা বাকারা:১৯০)



চতুর্থত: অন্যান্য অমুসলিমদের সাথে শর্তসাপেক্ষে (রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে নির্দেশ ইত্যাদি) জিহাদকে আবশ্যক করা হয়েছে। সেটাও হতে হবে যৌক্তিক কারণে। কেউ অমুসলিম হলেই যে, তার সাথে যুদ্ধ করা যাবে এটা ঠিক নয়। কেননা, আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই- রাসুল (সাঃ) এর মদীনাতে অনেক অমুসলিম বসবাস করতেন। তাদের সাথে তিনি সু সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ (36)

অর্থাৎ, আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই কর, যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। আর জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীদের (খোদাভীরু) সাথেই আছেন। (তাওবা:৩৬)



উল্লেখ্য যে,এখানে যাদের সাথে যুদ্ধ করা হচ্ছে শুধুমাত্র তাদের সাথেই যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। যাদের সাথে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছেনা তাদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশ নয়। (ফিকহুল জিহাদ দ্রষ্টব্য)





জিহাদের অনুমতি:

নিজের ইচ্ছামত কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি ইসলামে নেই। ইসলাম যুদ্ধ করার জন্য বেশ কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তন্মধ্যে জিহাদের অনুমতি নেয়ার বিধানও রয়েছে। কেউ যদি যুদ্ধে যেতে চায় তাহলে তাকে বেশ কয়েকটি স্থান থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেগুলো হল-

১. পিতামাতার কাছ থেকে অনুমতি:

মুসলিম পিতামাতার অনুমতি ব্যতিত জিহাদে অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- রাসুল (সাঃ) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন। রাসুল (সাঃ) বললেন: তোমার পিতামাতা কি বেঁচে আছেন? তিনি বললেন: জি, তারা বেঁচে আছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন: তাহলে তাদের মাঝেই জিহাদ কর। (তাদের খেদমতে আত্মনিয়োগ কর। তোমার জিহাদে যাওয়া লাগবে না) । (বুখারী, মুসলিম, তিরমীজি, নাসায়ী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান)



২. ঋণদাতার কাছ থেকে অনুমতি: সমস্ত ইসলামিক স্কলার এ কথায় একমত পোষণ করেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কারো কাছে ঋণী থাকে এবং তাৎক্ষনিকভাবে ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকে তাহলে, জিহাদে যেতে হলে ঋণদাতার অনুমতি লাগবে। তবে, যদি কথা থাকে যে, পরে পরিশোধ করবে তাহলে, এ অনুমতির কোন দরকার নেই।



৩. সবচেয়ে বড় ও আসল ব্যাপার হল রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে অনুমতিগ্রহণ করা। অনেকেই এটাতে ভুল করে বসেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন:



إِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ فَإِنْ أَمَرَ بِتَقْوَى اللَّهِ وَعَدَلَ فَإِنَّ لَهُ بِذَلِكَ أَجْرًا وَإِنْ قَالَ بِغَيْرِهِ فَإِنَّ عَلَيْهِ مِنْهُ



অর্থাৎ, নিশ্চয় রাষ্ট্রপ্রধান ঢালের মত। তার পিছনে থেকে যুদ্ধ করতে হয় এবং তার মাধ্যমেই নিরাপত্তা পাওয়া যায়। যদি তিনি আল্লাহ ভীতির কোন বিষয়ে নির্দেশ দেন এবং ন্যায় বিচার করেন তাহলে, তিনি সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আর যদি এর বিপরীত কোন নির্দেশ দেন তাহলে, তিনি গুণাহের পাত্র বিবেচিত হবেন। (বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ)



রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি থাকলে আর কেউ এটা নিয়ে কোন কথা বলতে পারবে না। এটা তখন বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যশীল বলেই গণ্য হবে।



আল্লামা ইবনে কুদামাহ (রহঃ) বলেন: জিহাদের বিষয়টা ইমাম তথা রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যাপার। রাষ্ট্রের অধিবাসীদের জন্য তার আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য। তিনি আরও বলেন: আমীরের (দায়িত্বশীল; আমরা এখানে বাহিনীপ্রধান বুঝতে পারি) অনুমতি ছাড়া সেনাদলের তাবু থেকে বের হওয়াও বৈধ নয়।(আল-মুগনী) কেননা, শত্রুর গতিবিধি তিনিই ভালো করে জানেন। অনুমতি ছাড়া বের হলে উক্ত ব্যক্তি শত্রুদলের শিকারে পরিণত হতে পারে।(আল-মুগনী)



উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিম শাসক; হোক না সে মহাপাপী তবুও তার অনুমতি ছাড়া জিহাদে বের হওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি ব্যতিত কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় জিহাদের ডাক দেয়া কিংবা তাতে শরীক হওয়া। কেননা, তাতে ফিতনা ফাসাদ ও বিপদের আশংকা রয়েছে।



জিহাদ ও যুদ্ধের পার্থক্যঃ

জিহাদ ও যুদ্ধ এক জিনিস নয়। এ দু’টি ভিন্ন জিনিস। জিহাদের ভিতরে যুদ্ধ থাকতে পারে, আর যুদ্ধই জিহাদের চুড়ান্ত স্তর। তবে, যুদ্ধ সবসময় জিহাদ বলে গণ্য হয় না। জিহাদের একটি অংশ ও চুড়ান্ত স্তর হল যুদ্ধ। অন্য কথায় আমরা বলতে পারি, কিছু কিছু যুদ্ধকে জিহাদ বলা যায়, তবে সব যুদ্ধকে জিহাদ বলা যায় না। কেননা, অনেক সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করা লাগে। সেটা মোটেই জিহাদ নয়।



মূল লেখক .

মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ

নার্স,ইসলামী আইন বিভাগ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়,মিশর।






৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×