somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতির দুষ্ট চক্র এবং আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি অর্থনীতিবিদ নই আবার রাজনীতিবিদও নই কিন্তু দুষ্ট চক্র বোঝার জন্যে আমার মনে হয় এই দুতোর কোনটাই হবার প্রয়োজন পড়েনা তা অর্থনীতিরই হোক বা রাজনীতিরই হোক। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারনা খুব বেশি দিনের না। রাজনীতির ব্যাপারে মূলত সচেতনতা এসেছে আওয়ামী লীগের প্রথমবার সরকারের মাঝামাঝি সময় থেকে। মূলত, সেই সময় থেকে খবরের কাগজে নিয়মিত চোখ রাখা শুরু। সেই সময় মাধ্যমিক বইয়ে পড়ছিলাম দারিদ্যের দুষ্টচক্র অর্থ্যাত কিভাবে একজন দরিদ্র মানুষ দরিদ্র থেকে যায়। যেখানে বাহিরের কোন প্রভাবক যেমন সরকারী অনুদান, লটারির টিকেট বা সামাজিক বিপ্লব ইত্যাদি না আসলে, একজন দরিদ্র মানুষ প্রথমত দারিদ্যের দুষ্ট চক্রে প্রবেশ করে কারন তার আগের জেনারেশন দরিদ্র ছিলো, এই কারনে স্বাভাবিক ভাবেই সে উন্নতির জন্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় এবং যার ফলে চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারেনা। আমি আমাদের দেশের রাজনীতিকে যেভাবে আমার বয়সকাল থেকে অনুধাবন করেছি তাতে এটিকেও আমার একটা দুষ্টচক্র মনে হয়। এই দুষ্টচক্রের সুত্রপাত হয় ছাত্ররাজনীতি থেকে তবে আমি এখানে ঢালাও ছাত্ররাজনীতি বুঝাচ্ছি না (বুয়েট, কুয়েট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির মত কিছু পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কে বাদ দিচ্ছি)। কিছু ছাত্র রাজনীতির নামে বিশেষত সরকারী দলের সংগঠনের হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবর্তে অপকর্মের মাধ্যমে একধরনের দুষ্ট আবহাওয়া তৈরি করে রাখে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে এইরকম আবহাওয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়া একটি বিশদ আকার হয়ে সরকার পতনে বিশাল ভুমিকা রাখে। যেহেতু এই ছাত্রনামধারী ব্যক্তিরা মূলত নিজেদের শিক্ষালব্দ কোন পেশায় কম যেতে পারে তারা বিরোধী দলে থেকে সরকারী দলের অত্যাচার হজম করে প্রতিশোধের জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকে এবং কিছু সুবিধাবাদি দল পরিবর্তন করে ফেলে। এই ব্যক্তিরাই পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের যুব বা অন্য কোন সহযোগী সংগঠনে যায় এবং একই দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে সরকারী দলজনিত সুবিধা পেতে থাকে যা আদত অপকর্ম। আর যেহেতু এই মানুষগুলি সরকারী দল করে এবং দলটিকে সরকার করে আনতে তারা মাঠে ময়দানে কাজ করেছে, তাই সরকারও তাদের খুব একটা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা বা করতে চায়না। এবং আবার দেখা মতে ১৯৯৬ সালের মধ্যভাগ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কম-বেশি এই চক্রই চলমান ছিল।

দারিদ্রের দুষ্ট চক্র ভাঙ্গতে যেমন বাহিরের প্রভাবকের কথা বলা আছে, বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে এই দুষ্ট চক্র ভাংতেও বাহিরের প্রভাবকের দরকার ছিলো। যেগুলো হতে পারতো ভালো এবং সাহসী নেতার আবির্ভাব, একটি তৃতীয় দলের আবির্ভাব ইত্যাদি। ২০০৭ সালের ১/১১ তে এইরকম একটা প্রভাবকের পাওয়া গেলো যদিও পরবর্তীতে প্রভাবকটি তাদের গুনাগুন হারিয়ে ফেলে। তারপরো ১/১১ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের একটা নতুন শিক্ষা দিয়ে যায়- 'যে কেউই আইনের উর্ধে না' যদিও এটা প্রমান করতে যেয়ে প্রভাবক চক্র টা আরেকটা দুষ্টচক্রের সুচনা করে দিয়ে যায় আর তা হলো বিচার বিভাগকে সরকারের অধীন করে রাখার প্রচেষ্টা। যাইহোক, অনেক চড়াই উতরাই পার হয়ে ১/১১ এর মাধ্যমে আশা সম্ভাবনাময় প্রভাবকদের বিদায় ঘটে। এবং তখন আমাদের মতো কিছু ছা-পোষা রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের ধারনা হয়েছিল- বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদ্যমান দুষ্টচক্র এবার আওয়ামী লীগের মাধ্যমে দূর হবে। দিন বদলের সনদে পূর্ণ আস্থা রেখে এদেশের জনগন বিপুল (!) ভোটে আওয়ামী লীগকে জয়ী করে। ভোটের বাজারে পার্থক্য নির্নয়কারী ৪৬% ভাসমান ভোটারদের বিশ্বাস ছিলো দেশে সত্যিকার গনতন্ত্রের দেখা এবার পাওয়া যাবে, রাজনীতির দুষ্টচক্রের অবসান ঘটবে। কিন্তু আদতে আওয়ামী লীগ এই প্রত্যাশার সাথে খুব বাজে ভাবে ছলনা করেছে।
- ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে যে দুষ্টচক্রের শুরু হয়, তা আরো দুষ্ট হয়েছে এবং একইভাবে তারা নিজেদের মধ্যে আরেকটি দুষ্টতর চক্রের সুচনা করে দিয়েছে একই ভাবে তাদের বড়দের মধ্যেও
- গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে ঘৃন্যতম কাজ করা হচ্ছে বিচার বিভাগকে সরকারের অধীন করে নেয়া হচ্ছে
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয় করে ফেলা হচ্ছে
- এবং অপ্রত্যাশিতভাবে রাষ্ট্রিয়ভাবে বিভিন্ন খুন-খারাপিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে, ইত্যাদি অনেক কিছু

সর্বোপরি, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিকে সংশোধনের সুযোগ পেয়ে বা বলা যায় সরল জনগনকে ধোকা বানিয়ে সুযোগটি নিয়ে দেশের জনগনের সাথে ধোকা দিয়েছে।

লেখাটিকে অনেকের পক্ষপাতমূলক মনে হলেও সবাইকে অনুরোধ করবো বিভিন্ন পত্রিকার মান অনুযায়ী
তাদের প্রতিদিনের জরিপ অনুসরন করার জন্যে। আমি গত একমাস ধরে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেই বলছি জনগনের আসলেই এই সরকারের উপর আস্থা নেই যতটা ছিলো ২০০৮ এর ডিসেম্বারে। এবং জনগন তাদের আগের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছে এর পরে বিরোধী দল ক্ষমতায় আসলে কি হতে পারে আর তাই এইসব জরিপে বিরোধী দলের উপর আস্থাহীনতা দেখা যাচ্ছে। তারপর সেই চক্র অনুযায়ী যদি বিরোধী দল ক্ষমতায় আসতে পারে, এই আস্তাহীনতার একটি উপযুক্ত উত্তর কি দুষ্টচক্র ভাঙ্গার মাধ্যমে দিতে পারবে কি?? ৪৬% ভোটার + (২২% নিজেদের ভোটার-২% দুষ্টচক্র ভাঙ্গার কারনে অসন্তুষ্ট সমর্থক) = ৬৬% ভোটারের কাছে অনন্য হবার সুযোগটা কি বর্তমান বিরোধী দল নিবে কিনা?? (সবই অনুমিত ডাটা)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×