somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ R2B: Return to Base

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কোরিয়ান মুভি বলতে আমি একসময় শুধু রোমান্টিক মুভিই বুঝতাম। ডাউনলোড করিনা বিধায় অন্যের কাছ থেকে যা পাই তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাতেই গোলমাল বেঁধে গেল। এত রোমান্টিক দেখতে দেখতে সিদ্ধান্তে পৌছালাম নাক বোঁচা আর চোখ ছোট ওই পাবলিকরা খালি ভালবাসতেই জানে। আর ঠিক এই মুহুর্তেই আমার হাতে পৌছাল আলোচ্য মুভি টা। সাথে সাথে আমার সিদ্ধান্তটা মাটিতে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। ভাঙ্গা টুকরোর একটা ধারাল অংশ এসে পায়ে লাগল, পা কেটে গেল। ব্যান্ডেজ মেরে ভাবলাম রিভিউ টা লিখে ফেলি।

সাউথ কোরিয়ার এয়ারফোর্স এর কাহিনী এইটা। মুভি তৈরির সময় ব্যাপক সাহায্য করেছে বিমানবাহিনী প্রশাসন। যার প্রমান পুরো মুভি জুড়ে পাওয়া যায়।

এবার কাহিনী তে আসি। মুভির শুরুতেই সাউথ কোরিয়ান বিমানবাহিনীর এলিট ফ্লাইং ইউনিট black eagle থেকে লাথি মেরে (লিটারেলি লাথি মেরে) বের করে দেয়া হয় আমাদের নায়ক Captain Jung Tae yoon কে। কারণ এই তারছিড়া পাবলিকটা ব্লাক ঈগলের বিপদজনক স্ট্যান্টগুলোকেও তার বা হাতের খেল মনে করে, আর তাই সে এক এয়ার শো তে একটা নিষিদ্ধ ম্যানুভার করে দর্শকদের দফারফা করে দেয়। তাই নামামাত্রই লাথি খেয়ে একেবারে কালা ঈগলের বাইরে এসে পড়ে।


এই সেই ম্যানুভার। মাঝ আকাশে ইঞ্জিন বন্ধ করে, মাটির কাছে এসে রিকোভারি করা।

এরপর সে ফিরে আসে নিজের স্কোয়াড্রনে। তাই বলে যে তার মাথার স্ক্রু গুলো টাইট হয়ে গেছে তা ভাবার কোন অবকাশ নেই। বিমানবাহিনীর মেরুদন্ড F 15 Strike Eagle নিয়ে রেগুলার দ্বায়িত্বের সময়ও স্ট্যান্টবাজি করতে থাকে। কো পাইলট হিসেবে পায় First Lieutenant Ji Seok hyun কে। যে কিনা আবার একটু কড়া ফ্লাইং করলেই পুরা বেহুশ হয়ে পড়ে। যেহেতু পাইলট হিসেবে সে জিনিয়াস তাই স্কোয়াড্রন লিডার আর কমান্ডার দুইজনেরই মৌন সমর্থন পায়।


স্ট্যান্টবাজি!!!

তাই বলে যে সবাই তাকে পছন্দ করে তা না। Major Yi Cheoul hee নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবতে শুরু করে, যদিও তাদের আইডিওলজির পার্থক্য একেবারে মহাশুন্য আর মারিয়ানা ট্রেঞ্চ। এরমধ্যে আবার Technical Sergeant Yoo Se young প্রেমে পড়ে যায় আমাদের ক্রাক পাইলট। কিন্তু স্টোন কোল্ড মেয়েটা পাইলটের এত্ত এত্ত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও একেবারে পাড়ার গায়ে পড়া ছেলেটার চেয়ে বেশি দাম দেয় না। বেচারা শেষে একটা চুক্তি করে মেয়ের সাথে যে, তাকে সে আপকামিং একটা এক্সারসাইজে টেকনিক্যাল তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। যাই হোক, বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যে সে মেয়েটার মন পাবে এ আমরা সবাই জানি।

কিন্তু পরিচালকরা তো আর এইসব দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখানোর জন্য মুভি তৈরি করেনি। মুভির এন্টিগোনিস্ট না হলে কি আর মুভি জমে? সুতরাং মুভিতে হঠাৎ করে আমরা ভিলেনের দেখা পেয়ে যাই। অবধারিতভাবেই উত্তর কোরিয়ার লোক সে। আমেরিকা যেমন রাশিয়াকে শত্রু বানিয়ে মুভি বানায়, কোরিয়ানরা তেমনি তাদের অপোজিট কোরিয়াকে শত্রু বানিয়ে মুভি বানায়।

যাই হোক, এক উত্তর কোরিয়ান অফিসার ক্যু এর মাধ্যমে তাদের নিজেদের এক ফ্যাসিলিটি দখল করে নেয়। এরপর ইচ্ছাকৃত ভাবে দুইটা mig 29 fulcrum এর মাধ্যমে দুইদেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে। দক্ষিন কোরিয়ার আকাশে উত্তর কোরিয়ার এক বিমান দিয়েই নিজেদের মিগ কে মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করে আর শহরে হামলা চালায়। মিগ কে প্রতিরোধ করার সময় এক দক্ষিন কোরীয় পাইলট মারা যায় আর একজন নিখোঁজ হয়। বারবার এনগেজ করার অনুমতি চাইলেও দক্ষিন কোরিয়ার হাই কমান্ড তাদের পাইলটদের অনুমতি দেয় না। আইনের কাছে পরাজিত হয়ে তাদের দেখতে হয় কিভাবে একজন শত্রু পাইলট তাদের প্রপার্টি ধ্বংস করে, একজন পাইলট কে হত্যা করে চোখের সামনে দিয়ে নির্বিঘ্নে চলে গেল। অসাধারণ কয়েকটা ডগ ফাইট দেখায় এখানে। ব্রেথটেকিং একশন। আর পাইলট মরার সময় খুব ইমোশনাল কয়েকটা সিন দেখায় (সাউথ কোরিয়ান বলে কথা!!!)।


দুই কোরিয়ার পাইলটের রোল!


মৃত পাইলট এর গার্লফ্রেন্ড আরেক ফাইটার থেকে দেখছে সঙ্গীর মৃত্যু!!




দক্ষিন কোরিয়ার এক স্কাইস্ক্র্যাপার এর কাচ ভেঙ্গে পড়ছে মিগ এর আফটার বার্নার এর কারণে!!

এবার দেখা যায়, আমাদের ক্র্যাক পাইলট আসলে কি চীজ। মনে আছে সেই বেহুশ হয়ে পড়া কো পাইলটের কথা? একশনের সময় সে দুই কোরিয়ার সীমান্তে যে ডি এম জি লাইন আছে, তার অন্য পাশে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে পড়ে প্যারাস্যুট নিয়ে। এখন কি হবে?

কাহিনী এখানেই শেষ না। সেই ক্যু করা উত্তর কোরিয়ান অফিসার একেবারে আমেরিকার দিকে আই সি বি এম তাক করে বসে আছে; এমন গোয়েন্দা তথ্য হাতে আসে। কোরিয়ার সাথে আমেরিকার যৌথ কমান্ড কিভাবে বিপদ মোকাবেলা করা যায় তাই নিয়ে ভাবতে থাকে। আমেরিকা তার চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী নাক গলাতে শুরু করে দুই কোরিয়ার ব্যাপারে। তারা বলে, তারা নিজেরা অপারেশন পরিচালনা করবে, দ. কোরিয়া না। এখানেই বেঁধে যায় গোল। কারণ সেই বেহুশ পাইলটের হুশ ফিরেছে, আর সে সাহায্যের জন্য রেডিও তে একটানা কেঁদে চলেছে। আমেরিকা অপারেশন করলে সেই পাইলট তাদের হারাতে হবে যা কিনা কোনমতেই চায় না কোরিয়া।

তাই আমেরিকার সাথে গুটিবাজি করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অর্ডার দিয়ে দেয় নিজের বিমানবাহিনীকে অপারেশন পরিচালনা করার জন্য। এখানে একটা কথা না বললেই নয়। যৌথ কম্যান্ডের আমেরিকান জেনারেল যখন জানতে পারে এই অপারেশন সম্পর্কে তখন কড়া মেজাজ দেখিয়ে মন্ত্রিকে বলে , আপনি এই অপারেশন এর অর্ডার দিতে পারেন না। উত্তরে তিনি বলেন, ‘yes, i can. because this is my country. my country.’ থোতা মুখ একেবারে ভোতা হয়ে যায় জেনারেলের।

যাই হোক, অপারেশনে যায় তিন পাইলট। আমাদের ক্র্যাক, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আর মৃত পাইলট এর গার্লফ্রেন্ড Captain Oh Yoo jin যে কিনা আরেক পাইলট। এবং অসাধারণ কয়েকটা ডগ ফাইট শেষে সফল অপারেশন শেষ করে। নিয়তির কি পরিহাস!! যে নিষিদ্ধ ম্যানুভার করে ব্লাক ইগল থেকে বাদ পড়েছিল নায়ক, ঠিক সেই ম্যানুভার করেই ফাইনাল হিট টা করে সে। SAR team এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায় নিখোঁজ পাইলট কে। তিন পাইলট মিলে ধ্বংস করে দেয় আই সি বি এম সহ উত্তর কোরীয় বেজ টা। কাহিনী শেষ।






কিছু ডগ ফাইট সিন!

মুভি সম্পর্কে আমার মতামত হল, আমি ১০০ ভাগ সন্তুষ্ট মুভি দেখে। বিমানবাহিনী প্রচুর সাহায্য করায় অসাধারণ কয়েকটা ডগ ফাইট আর ম্যানুভার দেখা গেছে। নিউজ ফ্ল্যাশ, টম ক্রুজের ‘টপ গান’ থেকে এই মুভিটা আমার বেশি পছন্দ হয়েছে।
অভিনয় নিয়ে কোন কথা হবে না, ফ্রান্স। পারফেক্ট।
ইমোশনাল আর রোমান্টিক সিন ছিল কয়েকটা। যা দেখে আমিই ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।
এই তো।

আমার বড় করে লেখা স্বভাব, ছোট করে লিখতে পারি না। পড়ে বিরক্ত হলে নিজ দ্বায়িত্বে বিরক্ত হবেন।
আমার গল্পটি ফুরাল, নটে গাছটি মুড়াল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×