somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মেডিকেল ভর্তি ফর্ম এবং একটি রাষ্ট্র

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাদের সাথে একটা ঘটনা শেয়ার করি। ২০১০ সালের ঘটনা!

তখন মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতাম। থাকতাম মোহাম্মদপুর এর জাপান গার্ডেন সিটিতে। মেডিকেল ভর্তির জন্য ফর্মটা তাই সেটা কাছের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করতে চাইলাম। যেদিন ফর্ম দেবে তার আগের রাতের বেলাতেই এক ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে জানালো সীমিত ফর্ম ছাড়বে, তাই হাসপাতালে লাইন দেয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি দ্রুত রাত ৯:৩০ এর দিকে হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার আগেই আরও অনেকে চলে এসেছে এবং যে যার মত ব্যাগ দিয়ে জায়গা রেখেছে বা পেপার-বিছানা বিছিয়ে বসে পড়েছে। আমি লাইনের শেষ মাথায় গেলে একজন ছেলে একটুকরো কাগজে একটা নম্বর লিখে আমার হাতে দিল। বলল আমরা যারা আগে আসছি তাদের জায়গা যেন আগে থাকে এজন্য নাম্বারিং করছি।

আমি ছিলাম একশতম। তাই আমি নিজের জন্য কাগজে লিখলাম ১০০, এরপর বসে রইলাম। দেখতে দেখতে আরও অনেকে চলে এল। আমি যেহেতু আমার খাতা থেকে পাতা ছিঁড়েছিলাম আর কলমও ছিল, তাই নিজেই পরে আসা ছেলে গুলোকে তাদের আসার ক্রম অনুযায়ী নম্বর দিতে লাগলাম। একদম স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কেউ বলে নি। কিছুক্ষণের ভিতরই কাজটাতে মজা পেয়ে গেলাম। দেখলাম কেউ আসলেই আগে আসা ছেলেরা আমার কাছে তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমি আর নম্বর লিখে দিলে সেটা নিয়ে গিয়ে চুপচাপ লাইনে গিয়ে বসে পড়ছে।

সারারাত ধরে এই নম্বরিং এর কাজটা খুব ধৈর্য নিয়ে করলাম। সংখ্যার ঘরে ততক্ষনে ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মাঝে মজার সব অভিজ্ঞতা হচ্ছিল!! কেউ জিজ্ঞাসা করে ভাইয়া আপনি কোন ইয়ারে পড়েন, কেউ এসে অভিযোগ করে আমার পরে এসে আগে বসেছে, কিছু করুন; আমি গিয়ে বললে আবার মেনে নিয়ে পিছনে গিয়ে বসে। মানে একটা সেলফ স্ট্যাবলিশড অথরিটি আর কি!!

এরপর সকালের দিকে শুরু হল আসল কাহিনী। এত দ্রুত লোকসংখ্যা বেড়ে গেল যে তাল সামলানো মুশকিল হয়ে গেল। একসাথে দশবারোজন এসে বলে, ভাই আমার টোকেন দেন (টোকেন!!! হা হা হা। আমার ম্যাটাডোর খাতার পাতা গুরুত্বপূর্ণ টোকেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে!)। সবাই ভাবছিল আমিই অথরিটি। এদিকে সবাই প্যানিকড!! কারণ রিউমার ছড়িয়েছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক ফর্ম ছাড়া হয়েছে, তাই যেভাবেই হোক কালেক্ট করতে হবে। আর ভাবছিল, বুঝি এই সমাধান আমার কাছে আছে!!

বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ল খুব দ্রুত!! লাইন ঠিক করে দিয়ে আসি, আবার এলোমেলো হয়ে যায়! এ এসে অভিযোগ করে, সে এসে অভিযোগ করে। এর মধ্যে অভাবনীয় কয়েকটা অফার পেলাম। কয়েকজন আস্তে করে কানের কাছে এসে বলে, ভাই আমারে আগে নম্বর দেন! পাঁচশ টাকা দেব এক একটার জন্য!!! Can you believe it!!!

বুঝলাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। এর মাঝে একদল অভিভাবক এসে আমাকে ছেকে ধরল, কেন তাদের বাচ্চাকে আমি লাইনে দাঁড়াতে দিই নি!! আমি চুপচাপ নিজের জায়গাতে এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। চতুর্দিকে চিৎকার চেঁচামেচি!!

এরপর গেট খুললে নিজের ফর্ম টা নিয়ে চলে এলাম!!

এঘটনা আমাদের কি শিক্ষা দিল!!
১. সবাই আমার কাছে আসছিল কেন!! কারণ একের অধিক লোক একটা নির্দিষ্ট সময়ে মনে করেছিল আমি দায়িত্বে আছি, আমার হাতে কিছু একটা ক্ষমতা আছে। কোথা থেকে সেই ক্ষমতার উৎপত্তি হল, তা একবারও কেউ জিজ্ঞাসা করেনি। এসেই সিস্টেমাটাইজড হয়ে গেছে।

২. আমি কিসের আনন্দ পাচ্ছিলাম!? ক্ষমতার আনন্দ। লোকে আমার কাছে আসছে। আমার মুখের কথা অনেকে বিনাবাক্যে মেনে নিচ্ছে। এর ভিতর আনন্দ আছে।

৩. ছেলেগুলো আমাকে টাকা সাধছিল কেন!? কারণ এখানে ফর্ম হল সেই কমোডিটি, যেটা তারা যে কোন মূল্যেই আদায় করতে চায়, কারণ সেটা হারানোর ভয় আছে তার। এতে যদি কমোডিটির দামের চেয়েও বেশি দাম পরিশোধ করতে হয়, তো তারা তা করতে প্রস্তুত!!

৪. সাময়িক সময়ের জন্য ছেলেগুলোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমার তাদের আগেরদিকের নম্বর দিতে ইচ্ছা করছিল কেন!!? কারণ, এটা আমাদের মনের সেই সুপ্ত পটেনশিয়াল ক্রিমিনাল সত্তা, যার সাথে হেরে গিয়ে একজন মানুষ করাপ্টেড হয়ে পড়ে। আমি জিতে গিয়েছিলাম!! চামে কিছু টাকা হাতিয়ে নেবার ইচ্ছা হয় নি।

৫. গার্জিয়ান রা আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছিল কেন, যদিও তারা উচিতকাজ করছিল না?! এটাও সেই কমোডিটি যেভাবেই হোক বাগানোর ইচ্ছা থেকে।

এই ঘটনাকে একটু ব্রোড সেন্সে একটা রাষ্ট্রের পারস্পেকটিভ থেকে চিন্তা করেন!! দেখেন কিছু শেখার আছে কিনা!!
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×