somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা

০৪ ঠা জুন, ২০১০ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- “তার নাম ছিল রাজকুমারী লোরেলাই।”
- “নাহ! এই নাম পচা । আমি এই নামের লাজকুমালি নেবনা।” ছোট্ট মাথা নেড়ে আপত্তি জানালো নোয়াহ। একমাথা চুল ছেলেটার – কিন্তু কিছুতেই ছুঁতে দেবেনা বীথিকে। ৩ বছরের বিরাট ব্যাক্তিত্ব হয়েছেন উনি।
- “তুই নিজেই বল তাহলে কোন নামের রাজকুমারী চাই।” পুছকে নাকটাকে আঙ্গুলের ডগায় ছুঁয়ে দিল বীথি।
- “আমি চাই লাজকুমালি বিতি।” খিলখিল করে হেসে মায়ের গায়ে হামলে পড়ে ছোট্ট নোয়াহ – তার ছোট্ট বাবাই – তার পৃথিবী।

ঘুমন্ত ছেলের চুল ঘেটে দিয়ে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে বিথী – এখনো মাঝে মাঝে বিশ্বাস হতে চায়না এই শরীরটা তার শরীরের ভেতরে বড় হয়েছে। হাল্কা পায়ে বেডরুমে ফিরে আসে বিথী। ক্লান্ত দেহটা ছুড়ে দেয় বিছানায়। সারাদিন অফিস করে ৫টা বাজতেই উড়ে যায় সে নোয়ার ডে-কেয়ারে। ১০ মিনিট দেরী হলেই গাল ফোলাবে ছেলে। বাসায় ফিরে সারাদিন মাকে মিস করা নোয়ার বকবকানি আর দুষ্টুমী সামাল দিয়ে রাতের খাবার তৈরী করা – তারউপর তো পিকি বাঁদরছানার না খাবার নানা বাহান আছেই। সব শেষ করে ৭টার মধ্যে ছেলেকে হকি প্র্যক্টিসে নিয়ে যাওয়া। আজকে মাথাটা আবার ধরেছে বিথীর। বেড সাইড টেবিলে টাইলানলের বোতলটা খুঁজতে গিয়ে টেলিফোনের দিকে চোখ পড়লো – ২টা ম্যসেজ আছে। কিছুতেই ইচ্ছে করছেনা তবুও রিসিভারটা কানে তুলে নিল সে। সামনের শনিবার নোয়ার জিগরি দোস্ত ডেরিকের জন্মদিনে তারা স্বপরিবারে আমন্ত্রিত – তারমানে এই শনিবারে বাগান করার যেই প্ন্যান ছিল সেটা আপাতত রিস্ক্যজুল করতে হবে। আনমেনে মাথা নেড়ে দ্বিতীয় ম্যসেজটায় মন দিল বিথী। যা ভেবেছিল তাই – মা ফোন করেছিল। যান্ত্রিক রেকর্ডিং-এ মায়ের কন্ঠে সেই একই কথা।
- “বিথী, আমি ফোন করেছিলাম। তুই কোথায় মা? সারাদিন এইভাবে কেও ছোটাছুটি করে? কোনদিনই কোনকথা শুনিসনা তুই। গত সপ্তাহে এত করে বললাম জামিকে একটা ফোন দিতে! বড় আপা আজকেও আমাকে ফোন করেছিল – উনি আগামী মাসে জামিকে নিয়ে তোর এখানটায় আসবেন। তুই অবশ্যই খালাকে একটা ফোন করবি। এইভাবে কি জীবন চলে মা? জেদ করেনা আমার লক্ষী বাচ্চা। আমি তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছি মা – তোকে একা রেখে মরেও শান্তি পাবোনা। নিজের জন্য না হোক ছেলের কথা ভাব একবার। আমি আবার কাল ফোন দেব। একটু ভেবে দেখ মামনি। ভালো থাকিস। ”

চোখের সামনে আর একটা হবু দুঃস্বপ্ন দেখতে পায় বিথী। খালাকে কি করে বোঝায় সে – বিয়ে করতে চাইলে এই এত বড় শহরে বর খুঁজে পাওয়া কঠিন তো কিছুনা ডাকসাঁইটে সুন্দরী বিথীর পক্ষে, ৬ ফিগার ইঙ্কাম করা বিথীর পক্ষে, অসম্ভব স্মার্ট আর মিষ্টি বিথীর পক্ষে। জামি ভাইকে খালাত ভাই নয়, নিজের ভাই এর মতই দেখেছে সে সবসময়। খালাকে কি করে বোঝায় সে? এই ২৮ বছরের জীবটার সব ডিসিশন হয়ত ঠিক ছিলনা – কিন্তু তা নিয়ে একটুও আক্ষেপ নেই তার। সবার জীবনই একই রকম হতে হবে এমন কোন নিয়াম কি আছে আদৌ?

নভোকে আসম্ভব ভালোবেসেছিল – কিন্তু বাস্তব হলো তাদের দুজনার পথ কনোদিনই এক হবেনা। পৃথিবীর দুই প্রান্তে বসে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যায় – সংসার হয়না। সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে খালি রূপকথার রাজপুত্রই রাজকন্যার কাছে আসে। কিন্তু বিথী কি পারতো না নভোর জন্যে এই চেনা পৃথিবী ছেড়ে অসম্ভব সেই ভালোবাসায় ডুবে যেতে? ৪ বছর আগেও তার জন্যেই কি তৈরি ছিলনা সে? শুধু একবার নভোর মুখ থেকে শুনতে – চুলোয় যাক সব; ফিরে যেতে দেবনা – তোমাকেই চাই আমার। আত্মভিমানী নভো – বিথী যেদিন বললো ১৮ তারিখ আমার ফ্লাইট, কিছুই বলেনি সে। সদ্য মাস্টার্স শেষ করে বিশাল একটা ফার্মাস্যুটিক্যল কম্পানির রিসার্চার বিথী তখন। তার স্বপ্নের কাজ ছেড়ে দিতে বলে কি করে তাকে আটকে রাখবে নভো? বিথী নিজেই ডিসিশান নেক। অভিমানে নীল হয়ে গেছিল সেদিন বিথী। এভাবে নভোর কাছে বারবার ছুটে আসার মানে কি সত্যিই বোঝেনা সে? হয়তো বিথীকে এতোটা প্রয়োজন নেই তার, যতটা বিথীর আছে। এক বুক কান্না নিয়ে ফিরে এসেছিল নিজের ঠিকানায় – একা। প্রতিজ্ঞা করে নিজের কাছে সে – নভো না ডাকলে সে আর আনুপ্রবেশ করবেনা ওর জীবনে।

কাজের মাঝে জোর করে ডুবে যাওয়া বিথী কিছুদিনেই টের পেয়েছিল বদলে যাচ্ছে সে। শরীরে নোয়ার অস্তিত্ব জানান দিয়ে যায়। প্রথম আল্ট্রাসাউন্ডে তার ছোট্ট বাবাই-এর হার্ট-বিট শুনে সব ভয়, আসঙ্কা এক মুহুর্তে উধাও হয়ে যায়। ছোট্ট একটা হৃদস্পন্দন মা হওয়ার মানে বুঝিয়ে দেয় তাকে। এরপরের বছরগুলো কিভাবে কেটে গেছে নিজেও টের পায়নি বিথী। মা বাবার প্রচন্ড আপত্তিকে উড়িয়ে দিয়ে অনেক দূরে বদলি নিয়ে চলে আসে সে এই প্যাসিফিকের তীরে এই শান্ত শহরে। নোয়ার দিকে চেয়ে থেকে সে একটা কেন, এক হাজার জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে এইভাবে। এই বেশ আছে বিথী। হঠাৎ মায়ের কথাগুলো মনে পরে যায়। এক সময় বড় হবে নোয়াহ – বাবাকে জানতে চাইবে, তখন কি করবে বিথী? নিজের অভিমানের জন্যে ছেলেকে কি ঠকানো নয় এটা? নভো কি কোনদিন চিনবেনা ছেলেকে? নাহ মাথাটা আসলেই ধরেছে খুব। ২টা টাইলানল খেয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করে বিথী।

কোলের কাছে হঠাৎ গড়িয়ে পরে ছোট্ট একটা নরম বল।
- “মম, বেডের নিচে মন্সতার বসে আছে – আমাকে কামল দিচ্ছে।” ভেজা চোখে ঠোঁট ফোলায় নোয়াহ।
- “আমাকেও মন্সটার কামড় দিচ্ছে, বাবাই। আজকে তুই আমার সাথে ঘুমোনা প্লিজ। আমি মন্সটারকে ভয় পাচ্ছি খুব।” ছেলেকে বুকে টেনে নেয় বিথী।
- “ভয় পেওনা মম। আমি মেলে দেব ওকে।”
মায়ের পাশে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরে নোয়াহ – যেন ভুল করে পৃথিবীতে চলে আসা একটা পরীর ছানা। বিথীর চোখে ঘুম নেই আজ। ছেলের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে ঠিক-ভুল সব ওলট পালট হয়ে যেতে থাকে। কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নেয় হাতে। স্মৃতির অতল থেকে তুলে এনে ডায়াল করে নাম্বারটা। বিথীর হৃদপিন্ডের শব্দ ছাপিয়ে বেজে যায় টেলিফোন – রিং … রিং … রিং …
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১০ রাত ২:৫১
৯৮টি মন্তব্য ৯০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×