somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যারিসের আগে: সুইজারল্যান্ড পর্ব

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুইজারল্যান্ড দেশটা একটু অদ্ভুত। জুরিখে নামলে সব জায়গায় দেখা যায় জার্মান ভাষা। মানুষ বলেও এই ভাষায়, দোকানে সাইনবোর্ডেও এই ভাষা। দক্ষিনে দাভোসের দিকে গেলে মানুষ বলে ইতালীর ভাষায়। আর যদি উল্টো দিকে জেনেভায় আসি সবাই বলে ফরাসী ভাষায়, দোকানের সাইনবোর্ড বা রাস্তার সাইনও তাই। কেউ যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে চান তাহলে চলে যান জুরিখ কিংবা আরও দক্ষিণে। সে তুলনায় জেনেভা অনেক নিরস। অনেকটা ওয়াশিংটনের মতো। ওয়াশিংটনে অবশ্য দেখার মতো অনেক কিছু আছে, মিউজিয়াম তো বটেই, হোয়াইট হাউজ বা অনেকগুলো মনুমেন্টও আছে।
জেনেভায় আছে অসংখ্য সদর দপ্তর। জাতিসংঘের অনেকগুলো সংস্থার প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর এখানে। জেনেভা লেক ছাড়া এখানে দেখতে হলে এগুলোই দেখতে হয়। আগের বার জেনেভায় সেসবও দেখা হয়ে গেছে। আর আছে একটা ভাঙ্গা চেয়ার।

ভাঙা চেয়ার। এটা দেখতেও অনেকে আসেন এখানে।

জাতিসংঘের অফিস যে চত্বরে সেখানে দাঁড় করানো আছে এই ভাঙ্গা চেয়ার। মূলত এটি স্থল মাইন এবং কাস্টার বোমা বিরোধী একটি স্থাপনা। অল্প সময়ের জন্য এটি স্থাপন করা হয়েছিল, এখন সেটা স্থায়ী হয়ে আছে।

পারমানবির বোমার বিরুদ্ধে একাই এভাবে প্রতিবাদ করছিলেন একজন, ভাঙ্গা চেয়ারের ঠিক সামনে

এর ঠিক পাশেই জেনেভার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। এখানে হয়ে গেলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ৭ম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। এর একটু দূরেই ডব্লিউটিওর প্রধান কার্যালয়। বাসে উঠলে ঠিক পরের স্টপেজে। জেনেভা ছোট্ট জায়গা। পায়ে হেটেও নানা জায়গায় যাওয়া যায়। তার উপর হোটেলে থাকলে ঐ কয়দিনের জন্য বাস ও ট্রামের ফ্রি টিকেট দেয়। ফলে যাতায়তে মহা আরাম। আবার টিকেট আছে কিনা কেউ পরীক্ষা করে না। শুনতে পেলাম হঠাৎ হঠাৎ পরীক্ষা করতে নেমে যায়, ধরা পড়লে মোটা অংকের জরিমানা।

মিডিয়া সেন্টারে কাজ করছি

ডব্লিউটিওর প্রধান কার্যালয় এখন যে ভবনে সেটি এক সময় ছিল আইএলওর প্রধান অফিস। ২০০৮ সালে যখন এসেছিলাম আমি আর এনটিএনের মামুন তখন ডব্লিউটিওর উপ-মহাপরিচালক হর্ষবর্ধন সিং আমাদের এক ঘন্টা সময় দিয়েছিলেন। তাই এবার আর প্রধান কার্যালয়ের নীচ থেকে উপরে উঠা হয়নি। আবার সবাই ব্যস্ত ছিলেন সম্মেলন নিয়ে।
আতিথিয়তার এশীয়ানরাই ভাল। ২০০৫ সালে হয়েছিল মন্ত্রী পর্যায়ের ৬ষ্ঠ সম্মেলন। ব্যাপক আয়োজন ছিল। এয়ারপোর্টেই ছিল সম্মেলনে আগতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। সেবার পুরো হংকং জুড়েই ছিল সম্মেলনের আবহাওয়া। এবার জেনেভায় নেমে তেমনটি টের পাওয়া গেল না। আসলে জেনেভায় এতো বেশি সম্মেলন হয় যে আলাদা করে কোনোটিই হয়তো চোখে পড়ে না। তবে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা ছিলেন এয়ারপোর্টে, আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিলেন। বিদেশ-বিভূইয়ে সেটাই বা কম কিসে।

সুইজারল্যান্ড অনেক ধনী দেশ। জীবন যাপনের মানের দিক থেকে জেনেভা ও জুরিখ বিশেষ ২য় ও ৩য় স্থানে। শহরটি ব্যয়বহুল। ১৫৮ ডলার দিয়ে যে হোটেলে উঠলাম সেটি তিন তারকা মানের। সেবার মানও তেমন ভালো না। সর্বত্রই ওয়াই ফাই কনেকশন পেলেও কোনো কিছুই ফ্রি না। অথচ হংকং-এ হোটেলে ইন্টারনেট ফ্রি পেয়েছিলাম। তবে চাইলে ১০ ফ্রায় পেট ভরে তার্কিস কাবাব খাওয়া যায়। সুস্বাদু, এমনই বড়, পেটও টুইটুম্বুর।

সম্মেলন কেন্দ্রের ঠিক সামনে
ডব্লিউটিও মূলত বেটন উডস সংস্থার মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিধ্বস্থ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঠিক করতে মিত্র শক্তির ৪৪টি দেশ ১৯৪৪ সালে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পসায়ারে ব্রেটন উডস-এর ওয়াশিংটন হোটেলে সম্মেলনে বসেছিল। সেখান থেকে জন্ম নেয় তিনটা সংস্থা। আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থাকে ঠিকঠাক রাখতে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ, ইউরোপকে পুনর্গঠনসহ অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরিতে ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি হয় বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য তৈরি করার কথা বলা হয় ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন বা আইটিও। তবে যুক্তরাষ্ট্র মেনে না নাওয়ায় সেই আইটিও আর কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এর পরিবর্তে শুরু হয় গ্যাট (জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ) আলোচনা। ১৯৪৮ থেকে এই আলোচনা শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৯৫ সালে ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
মূলত গ্যাটের ৮ম রাউন্ড আলোচনাই ডব্লিউটিওর মূল ভিত্তি। এই আলোচনাকে বলা হচ্ছে উরুগুয়ে রাউন্ড। এই আলোচনার সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৪ সালে মরোক্কোর মারাকাসে, মারাকাস চুক্তির মাধ্যমে। আর পরের বছর থেকেই শুরু হয়েছিল ডব্লিউটির পথ চলা।

সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরের বিক্ষোভ

মুখ রার জন্য ৭ম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হয়ে গেল জেনেভায়। আগেই কথা ছিল কোনো ঘোষণা থাকবে না। এমনকি পরবর্তী বৈঠক কোথায় ও কবে হবে তাও ঠিক করা যায়নি। তবে ২০১০ সালের মধ্যে দোহা আলোচনা শেষ করার একটা প্রতিশ্রুতি এসময় পাওয়া গেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রীর তিন মিনিটের বক্তৃতা

দর কষাকষির বৈঠক ছিল না বলে এবারে জেনেভায় তেমন কোনো উত্তেজনা ছিল না। দরকষাকষির বৈঠকের যে উত্তেজনা তা কোনো অংশেই একটি জমজমাট থ্রিলারের চেয়ে কম না। সেটা এবার পাওয়া গেল না। সবাই ছিল অনেকটা সফরের মুডে। বিক্ষোভও এবার ধারাবাহিকভাবে হয়নি। কেবল ২৮ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় জেনেভার রাস্তায় বেশ কিছু দামী গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এর বাইরে সম্মেলনের তিন দিন সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে মৎস্য খাতের ভর্তুকি নিয়ে খানিকটা বিক্ষোভ করতে দেখেছি।

সম্মেলন কেন্দ্রের মধ্যে বিক্ষোভ

আর ডেলিগেট হিসেবে আসা কিছু এনজিও কর্মী সম্মেলন কেন্দ্রের মধ্যে পথ নাটক ও গানের মাধ্যমে খানিকটা বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেছে।

আমাদের বিশ্ব বিক্রির জন্য নয়-এই শ্লোগানই সবচেয়ে শোনা গেছে এবার জেনেভায়

এবার সুইজারল্যান্ডে সম্মেলনের বাইরে সফরের আর কিছু ছিলই না বলতে গেলে। সব আকর্ষন আমি জমিয়ে রেখেছিলাম প্যারিসের জন্য।

সম্মেলনের সমাপনী প্রেস কনফারেন্স


মার্কিণ বাণিজ্য প্রতিনিধি রন কার্ক সবশেষে সংবাদ সম্মেলন করেন
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×