বুঝ হবার পর থেকে মাকে কখনো দেখিনি। বাবার কাছে শুনেছি মা আকাশে থাকে। তখন বুঝতে পারতাম না আকাশটা কোন জায়গাতে কিন্তু এখন আমি অনেক বড়, অনেক..... আমি এখন আকাশ চিনি, অনেক ভাল করে.....
তারপর বাবাও ছেড়ে চলে গেল। আমি অনেক কেঁদেছি........! প্রাণভরে কেঁদেছি। এখন আর আমি কাঁদিনা। কোন ব্যাথাই আর মনে দাগ কাটে না!
অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। যখন মা বাবার খুব প্রয়জন ছিল তখন তাদের কাছে পাইনি। পদে পদে তাদের হারানোর কষ্ট অনুভব করেছি।
......সেই থেকে শুধু মরণ গুলাই চোখে পরে আমার।
এইতো সেদিন আমার সামনে, ঠিক এক হাত সামনে দাড়িয়ে লোকটা ফোনে কথা বলছিল হঠাৎ একটা ট্রাক দিক হারিয়ে এদিকে চলে এল আর লোকটিকে পিষে দিল। ট্রাকটারও নিস্তার হলোনা, সামনে থেকে আসা এক বাসের সাথে প্রচন্ড বেগে ধাক্কা খেল!
.....সকালে গার্ল্ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেল। নিজেই এসে ব্রেকআপ করল অথচ আমার এতে কোন মত ছিলনা। তার বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছে। ঘরে অসুস্থ মা, দুই ভাই ছোট। পরিবারের জন্য হলেও তাকে এবার একটা চাকরি করতে হবে। ভাগ্য অনেক সময় বড়ই পরিহাস করে মানুষের সাথে। আর একটা ইয়ারের জন্য ভার্সিটি ফাইনালটা দিতে পারল না। আজ তার মুখে হাসি ছিল না কিন্তু এই হাসির জন্যই আমি তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতাম একসময়।
একথা ভেবে আমার লাভ নেই। কেননা জড় পদার্থের মত দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।
খোলা ছাদে ভর দুপুর বেলা দাড়িয়ে আছি। রোদগুলো গায়ে এসে লাগছে বলে একাকিত্বটা কেটে গেল। এলাকার এক ছোট ভাইয়ের ফোন এল, ওর চাচী মারা গেছে। তখনই গেলাম ওদের বাসার উদ্দেশ্যে। সারাবাড়িতে কান্নার রোল। কিছুদিন আগে ওর চাচা মারা গেছে আর আজকে চাচী। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল, দুজনেরই বয়স অনেক কম। কে জানে, হয়তো স্বামীর শোকেই মারা গেছে।
অনেক দেখেছি এসব, সয়ে গেছে এখন আর কোন অনুভুতি হয়না। এই মানুষগুলো যাদের এখনো বয়স হয়নি মারা যাবার, যাদের এই পৃথিবী দেখার আরো অনেক বাকী তারা কেন মারা যাবে। সেই মানুষগুলো কেন মারা যাবে যাদের দিকে চেয়ে পরিবারের আর সব সদস্যরা বেচে থাকে। কিন্তু কিছু জায়গা আছে যেখানে বিধিকে মেনে নিতে হয়। তবুও বলি, এই মানুষগুলো না মরলে কি হয়না!