somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্মজীবী মায়ের পথচলা

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা তো মা ই, হোক সে কর্মজীবী বা বাসায় থাকা মা। বাসায় থাকা মায়েদের কাজ আরও বেশী। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম মায়েদের চলতেই থাকে। বাসায় থাকা মায়েদের মনে একটা ব্যাপারে স্বস্তি থাকে যে তিনি তার সন্তানের পাশে সর্বক্ষণ থাকতে পারছেন, তার প্রতিদিনের একটু একটু করে বেড়ে উঠা, প্রতিদিনের যত্ন, খাবার দাবার আর বড় বাচ্চাদের পড়াশুনা সব কিছুতে সাথে থাকতে পারছেন, প্রয়োজনীয় সাহায্য ও করতে পারছেন। এই স্বস্তি বা সৌভাগ্য কর্মজীবী মায়েদের হয়না। আমার মত যাদের ৯টা – ৬টা অফিস করতে হয় তাদের জীবন আসলে কতটা আনন্দময় (!)? আশা করছি পাঠক তাদের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।

আমাদের মত কর্মজীবী মায়েদের জীবন চক্র ব্যাখ্যা করলেই বোঝা যাবে আমরা আসলে কি অবস্থায় আছি। আমাদের দেশে ছেলেদের ঘরের কাজ কর্ম যেমন রান্না বান্না করা, কাপড় ধোয়া, বা ঘর গোছানো এগুলো নিরুৎসাহিত করা হয়। ফলে বড় হতে হতে ছেলেরা এই কাজগুলো শেখে না বা করতেও চায়না। তাই এগুলো হয়ে যায় মেয়েদের কাজ। বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় অনেক অনেক মেয়ে চাকরী করছে। সংসার জীবনে প্রবেশের আগে থেকেই চাকরী জীবনে প্রবেশ করছে মেয়েরা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা মেয়েদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এখন একটু ভাবুনতো পাঠক, এই চাকরিজীবী মেয়েটি যখন সংসার শুরু করছে তখন নতুন সংসারের সব দায় দায়িত্ব যদি হুট করে তার কাঁধে এসে পড়ে তখন তার কি অবস্থা হতে পারে? এখন যদিও একক পরিবারের সংখ্যা বেশী, তবুও একটি সংসারের দায় দায়িত্ব কিন্তু কম নয়। একটি মেয়ে সারাদিন অফিস করার পর তার বাসায় গিয়ে কি রান্না হবে বা কখন রান্না করবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। দিন শেষে তার কাছ থেকে কতটুকু ভালো ব্যবহার আশা করা যায়? কিন্তু আমরা মেয়েরা এসব ক্ষেত্রে দারুণ পারদর্শিতার সাথে দিন পার করে যাচ্ছি। এমন না যে এমন জীবনচক্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন প্রভাবই ফেলছেনা। এই কর্মজীবী মেয়েটির নিজের জন্য কোয়ালিটি টাইম বা রিল্যাক্সিং সময়টা কখন পাচ্ছে। এই না পাওয়াগুলো জমতে জমতে আমরা একসময় বার্স্ট আউট করি। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র না পাওয়াগুলো আমাদের সাথে অন্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।সব মেনে নিতে নিতে একসময় আমরা অনেক ছোট ছোট ব্যাপার মেনে নিতে চাইনা বা ছাড় দিতে চাইনা। তখনই সূত্রপাত হয় ব্যক্তিগত দ্বন্দের।

আমি আমার ও আমার দেখা কয়েকজনের জীবনের কিছু টুকরো টুকরো ঘটনা শেয়ার করতে চাই। আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি।

আমার বিয়ের পর শশুরবাড়ি হাজারিবাগে থাকা শুরু করি। তখন অফিস ছিল গুলশানে। প্রতিদিন ২+২ = ৪ ঘণ্টার যাতায়াত করার জন্য বের হতাম অনেক সকালে আর ফিরতাম রাত ৮টার দিকে। সৌভাগ্যবশত প্রতিদিনের রান্নার চিন্তা আমাকে করতে হতনা। শাশুড়ি নিজেও চাকরী করতেন বলে প্রতিদিনের রান্নার জন্য সহকারী কেউ না কেউ থাকত। তারপর সপ্তাহের একটি ছুটির দিন আমার, নিজের বিবেকের তাড়নায় হোক বা ইচ্ছে/অনিচ্ছায় হোক সারাদিন কেটে যেত রান্নাঘরে। ছুটির দিনে আমারও ইচ্ছে হত বিয়ের আগের সময়ের মত বেলা ১০টা /১১টা পর্যন্ত ঘুমাতে বা আরাম করতে। বা ইচ্ছে হত কোথাও ঘুরতে চলে যাই সারাদিনের জন্য। নিজের মত করে কিছুটা সময় উপভোগ করতে চাইতাম। কোনটাই করতে পারতাম না। যার ফলে এসবের প্রভাব পড়ত আমার আর তার নতুন বিবাহিত সম্পর্কের উপর। খুব খারাপ কেটেছে সে সময়টা।

এবার আমার এক বন্ধুর কথা শেয়ার করি। তার বাসা মিরপুর, অফিস কাওরান বাজার। ভাগ্য ভালো হলে এক / দেড় ঘণ্টায় বাসায় বা অফিসে যাওয়া আসা করতে পারে। আর ভাগ্য খারাপ হলে ২ ঘণ্টা। তাকে ঘুম থেকে উঠতে হয় ৭ টার আগে। সকালের নাস্তা, ৪ বছরের মেয়ের খাবার, নিজের ও তার স্বামীর অফিসের খাবার রেডি করে বের হতে হয় তাকে। তারপর অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে কখন ও ৭ টা আবার কখনো ৮ টা। বাসায় ফিরে তার কাজ হল ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকা, মাঝে মাঝে সন্ধ্যার নাস্তা বানানো, পরের দিনের কিছু কাজ এগিয়ে রাখা, মেয়েকে খাওয়ানো, নিজেদের খাওয়া, সবার খাওয়া শেষে সব গোছগাছ করে রাখা। আর মেয়েটির স্বামীর কাজ হল বাসায় গিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়া আর টিভি দেখা। বেচারা সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত যে তাই! তার পানি খাওয়ার প্রয়োজন হলেও তা এনে দিতে হবে বৌকে। এই টাইপ ছেলেদের কথা শুনলে আমার রাগ লাগে। অবাক হয়ে ভাবী এদের মধ্যে সামান্য মানবতা বা বিবেকবোধ ও কি নেই?

আমি বলছিনা যে ভালো উদাহরণ নেই, আছে কিন্তু তার পরিমাণ খুব কম। এই পরিমাণটা যেন অনেক বাড়ে সেই প্রত্যাশায় এই লেখা। ছেলে সন্তানের মায়েদের জন্য অনুরোধ থাকবে আপনার সন্তানটিকে টুকটাক বাসার কাজ ও শিখান। মেয়ে সন্তানের পাশাপাশি তাকে ছোটখাটো রান্না শেখান যা তার পরবর্তী জীবনে কাজে আসবে। আমি প্রায়ই দেখি ও শুনি যেসব ছেলেরা বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে প্রবাসে সংসার জীবন শুরু করে তারা এসব কাজের ক্ষেত্রে পারদর্শী হয় এবং স্ত্রীকেও সাংসারিক কাজে সাহায্য করে থাকেন। শ্রদ্ধা ও সম্মান সেই উদার ও বিবেকবান মানুষদের প্রতি।

দেশে থাকা পুরুষরা যে বিবেকহীন তা কিন্তু নয়। আমি এমন একটি পরিবারকে চিনি যেখানে সপ্তাহের ছুটির দিনে বাড়ির কর্তাব্যক্তি সন্তানদের সাথে নিয়ে বাড়ির বিভিন্ন কাজ করে তার স্ত্রীর কাজের চাপ কমাতে সাহায্য করেন।

আরও একটি সুন্দর পরিবার আছে আমার পরিচিতদের মাঝে। দুই সন্তানের এ পরিবারে বাবা নেভীতে কাজ করেন আর মা ব্যাংকে । ব্যাংকের জবের প্রেশার কেমন থাকে তাতো সবাই জানে। তবুও আমি সব সময়ই ভাবীকে দেখেছি দারুণ হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত থাকতে। এর পেছনের রহস্য কি জানেন? ভাবীর জন্য বাসায় কাজ জমে থাকে খুব কম। বাসার বাকি ৩ সদস্য সুন্দর মত সব কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। আমার খুব শান্তি লাগে যখন ঐ বাসায় যাই। কারন ভাবীকে আমি অনেক মানসিক প্রশান্তিতে থাকতে দেখি।

আমরা মেয়েরা আসলে আমাদের উপর সমাজ বা সংসার বা পরিবার কতৃক অর্পিত সব দায়দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছি। কোন স্বিকৃতি বা পুরস্কারের আশা না করেই চলে আমাদের পথচলা। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমাদের ও খুব ভালো লাগে যদি ছুটির দিনে একটু বেশী ঘুমাতে পারি। ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি নাস্তা ও চা রেডি করে আমার জন্য কেউ বসে আছে। দু’একদিনের এই ছোট ছোট ভালোলাগাটুকু আমাদের উপহার দিতে কি অনেক কষ্ট হবে?

***খাপছাড়া লাগছে আমার কাছেই, তবুও দিলাম। এটা ভাবতে ভালো লাগবে যে ব্লগে আমি আছি :) ভালো থাকুন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×