আদালত অবমাননা অধ্যাদেশ, ২০০৮ ( ২০০৮ সনের ২১ নং অধ্যাদেশ)
[২৫ মে, ২০০৮]
কতিপয় কার্য আদালত অবমাননা না হওয়া
৩। আদালত অবমাননাকে যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হউক না কেন, নিম্নবর্ণিত কার্যসমূহ আদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য হইবে না, যথঃ-
(ক) আদালতের স্বাভাবিক কার্যধারা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, মন্তব্য বা সংবাদ প্রকাশ;
(খ) কোন ব্যক্তি কর্তৃক কোন বিচারকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা সূচিত করিবার জন্য সরকার, আদালত বা উপযুক্ত কোন কর্তৃপক্ষের নিকট পেশকৃত কোন দরখাস্তে সরল বিশ্বাসে ও সংযত ভাষায় প্রদত্ত কোন বক্তব্য;
(গ) বিচার কার্যের সহিত সম্পৃক্ত নয় এমন বিষয়ে কোন বিচারকের ব্যক্তিগত আচরণ সম্পর্কে তথ্য, মন্তব্য বা সংবাদ প্রকাশ;
(ঘ) আদালতের কোন রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল অনিষ্পন্ন থাকিলেও উক্ত রায় বা আদেশের গঠনমূলক সমালোচনা;
(ঙ) চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিকৃত কোন মামলার রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা;
(চ) আদালতে চলমান বিচারিক কার্যধারা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ কোন তথ্য, মন্তব্য বা সংবাদ প্রকাশ;
(ছ) বিচারিক কোন কার্য বা দায়িত্ব পালন সংশ্লেষে দুনীর্তি, অনিয়ম, অজ্ঞতা বা অদক্ষতা বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ কোন তথ্য, মন্তব্য বা সংবাদ জনস্বার্থে প্রকাশ;
(জ) আদালত বা বিচারক সংশ্লেষে জনগুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে কোন তথ্য, মন্তব্য, সংবাদ বা প্রতিবেদন জনস্বার্থে প্রকাশ।
(২) কোন বিচারক যদি এমন কোন সুবিধা দাবী করেন যাহা তিনি আইনত প্রাপ্য নহেন এবং কোন ব্যক্তি যদি উক্তরূপ সুবিধা কোন বিচারককে প্রদান না করেন অথবা প্রদান করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন তাহা হইলে উক্ত কারণে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন আদালত অবমাননার অভিযোগ উত্থাপন বা কার্যধারা রুজু করা যাইবে না।
(৩) বিদ্যমান আইন, বিধি বা অন্য কোন বাস্তব কারণে আদালতের কোন রায়, আদেশ বা নির্দেশ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোন ব্যক্তির পক্ষে যথাযথ প্রচেষ্টা স্বত্বেও বাস্তবায়ন বা প্রতিপালন করা অসম্ভব হইলে, অনুরূপ কারণে বাস্তবায়ন বা প্রতিপালন করিতে ব্যর্থতার কারণে তাহার বিরূদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উত্থাপন বা কার্যধারা রুজু করা যাইবে না বা, ক্ষেত্রমত, রুজুকৃত বা চলমান আদালত অবমাননার কার্যধারা বাতিল হইবে।
(৪) চলমান বিচারিক কার্যধারার অংশ নয় এমন কোন বিষয়ে কোন বিচারক বা আদালত কর্তৃক বা উহার পক্ষে উহার প্রশাসনিক বা অন্য কোন ক্ষমতায়, প্রদত্ত কোন আদেশ, নির্দেশ, মতামত বা অভিমত এর লংঘন বা ব্যত্যয়ে কৃত কোন কার্য আদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য হইবে না।
(৫) এই অধ্যাদেশে অনুমোদিত হয় নাই বা নিষিদ্ধ হইয়াছে বিচারকের এইরূপ কোন কার্য দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ কোন ব্যক্তি প্রতিকার দাবী করিয়া উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত নালিশ দায়ের বা আবেদন পেশ করিলে উহা আদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য হইবে না।
আদালত অবমাননার পরিধি বিস্তৃত না হওয়া
১৪ এই অধ্যাদেশের অধীন শাস্তিযোগ্য নহে এইরূপ কোন লংঘন, প্রকাশনা বা অন্য কোন কার্য এই অধ্যাদেশের পরিধিভুক্ত গণ্যে আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তিযোগ্য হইবে না।
রহিতকরণ ও হেফাজত
২৫। (১)The Contempt of Courts Act, 1926 (Act No. XII of 1926)এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
অবশ্য এই আইনটি পরে বাতিল হয়েছে।কারন আদলত এখনও উপনিবেশিক মানসীকতা নিয়ে চলতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
সম্প্রতী ঘটনা
আদালত অবমাননার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের পর বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আর কেউ সাহস পাবে না।
এর আগে ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একজন অতিরিক্ত বিচারপতির সার্টিফিকেট জাল সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় আদালত অবমাননার অভিযোগে প্রথম আলো ও ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশকসহ সাতজনকে এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
২০০২ সালের ২০ মে ক্যাসেট কেলেঙ্কারির মামলায় মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
গত ২১ এপ্রিল আমার দেশ পত্রিকায় 'চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। দু'জন আইনজীবী রিয়াজউদ্দিন খান ও কাজী মইনুল হাসান আপিল বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ২ মে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন।
এর আগের দিন বুধবার শুনানির এক পর্যায়ে আদালত তাকে 'বাই চান্স এডিটর' বলে অভিহিত করেছিলেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন এক নম্বর আসামি মাহমুদুর রহমান একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। আদালতে তার কোনো আইনজীবী রাখেননি। নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। তার অপরাধ লঘুভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দেওয়া হলে আদালতের প্রতি অবমাননার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে।