এখন রাত তিনটা। জানালার পাশে রিমার বিছানা। চাঁদের আলো বিছানায় এসে পরেছে। চাঁদের দিকে মুখ করে তাকিয়ে শুয়ে আছে এলোমেলো ভাবে। এক সপ্তাহ আগে পূর্ণিমা ছিল। বুদ্ধ পূর্ণিমা। যে পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধ সংসার ত্যাগ করেছিল।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে। যখন একা একা লাগে, তখন কিছু ব্যাপার আছে, যা করতে খুব ভালো লাগে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকা তার মধ্যে একটা। রিমা এখন সেটাই করছে। এখন সম্ভবত একা একা লাগছে। যদিও আজ একা একা লাগার কথা না। একটু আগে পর্যন্ত ওর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিল ফেসবুকে। সবাই দারুন দারুন ভাবে উইশ করল।
রিমার অনেক বন্ধু। সবাই রিমাকে খুব হাসিখুশি প্রাণবন্ত মেয়ে হিসেবেই জানে। কিন্তু কেউ জানে না, সেই মেয়েরও সন্ধ্যা বেলায় ভিতরটা ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। একা একা লাগে। রাতের বেলা একা একা চাঁদ দেখে।
রিমার যখন খুব মন খারাপ হয়, তখন আর একটা কাজ করতে খুব ভালো লাগে। একা একা হাঁটতে। মন চায়, হেঁটে হেঁটে দূরে... বহুদুরে কোথাও চল যেতে। যেখানে কেউ তাকে খুঁজে পাবে না। থাকবে শুধু সে আর... আর কেউ না। সে একা। এখন সে শুধু ব্যাহ্যিক ভাবে একা না। কিন্তু ভিতরটা অনেক একা। ধু ধু করে। তপ্ত মরুভূমির মত। যেখানে বেদুইন পানির খোঁজে মরিচিকার কাছে গিয়ে ফিরে আসে। না। ফিরে আসে না। আর একটা মরিচিকার কাছে যায়। কিন্তু পানি পায় না।
কিন্তু যেখানে কেউ তাকে খুঁজে পাবে না, সেখানে গেলে সে ব্যাহ্যিক ভাবেও একা অভ্যন্তরীণ ভাবেও একা।
জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। আশেপাশে কোথাও হয়ত বৃষ্টি হচ্ছে। সেজন্য ঠান্ডা বাতাস। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। ইচ্ছা করলেই পায়ের কাছ থেকে চাদর নিয়ে গায়ে জড়ানো যায়। কিন্তু সেটা করতে ইচ্ছা করছে না।
রিমা উঠে বসল। খাটের স্ট্যান্ড এর সাথে হেলান দিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে এখন। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে পরেছে। ঠান্ডা হাওয়ায় চুল উড়ছে। রিমার ভালো লাগছে। যতবার মৃদু হাওয়া ওর চোখে মুখে লাগছে, মনে হচ্ছে, কেউ যেন আলতো করে ওকে ছুয়ে দিচ্ছে আর সে হারিয়ে যাচ্ছে কোন এক অজানায়। সেই কেউ টা কে, সেটা রিমা নিজেও জানে না। তবে খুব জানতে ইচ্ছা করে। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি জানত তাহলে ওকে রিমা জিজ্ঞাস করত, তোমার জাদুকরী ছোঁয়ায় কি এমন আছে যেটা আমার কষ্টকে দূরে ঠেলে দেয়?
তখন ও বলত, আমার তো জন্মই হয়েছে তোমার কষ্টকে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য। তারপর হাওয়া যেমন করে ওর চুল উড়িয়ে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে হাতটা দিয়ে মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো পেছনে সরিয়ে দিয়ে বলত, তোমার কিসের এত কষ্ট, বলত?
তখন রিমা বলত, তুমি আমার পাশে সব সময় থাকবে তো? তাহলেই আর আমার কোন কষ্ট থাকবে না। কোন কষ্ট ছুঁতেই পারবে না আমকে!
ধুর পাগলী। তোমাকে ছেরে কিভাবে যাব? আমি মরে যাব না? এবার মিষ্টি করে একটা হাসি দাও দেখি...
রিমা তখন কষ্ট আড়াল করে ফিক করে হাসি দিবে।
চাঁদটা এখন ঝাপসা হয়ে গেছে। মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। একটু পরে মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে ঢেকে যাবে। হারিয়ে যাচ্ছে খুব তারাতারি।
রাত বাড়ছে। চাঁদের আড়ালে যাওয়া বাড়ছে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রিমার একাকীত্ব।
ক্ষণিকের জন্য চাঁদটা ওকে ছুয়ে দিয়েছিল।