ট্রেন ছাড়তে এত লেট করছে কেন! বিরক্ত লাগছে। রাগও। মনের ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। জাস্ট ওকে মারতে হবে। এর পর কি হবে, হোক।
অবশেষে ট্রেন ছাড়ল। আগের মত করেই বসেছে। ট্রেন সেতুর মাঝামাঝি আসল। সিয়াম এর পা টা ওই লোকটার ঠিক পিঠে। এই লাথি দিল বলে।
.
.
.
এইটুকু লিখে থেমে গেল আকাশ। আর কিছু মাথায় আসছে না। আসলে ও জানে না, কাউকে মারার আগে অনুভূতি কেমন হবে! অনুভূতি কল্পনা করার চেষ্টা করল বেশ কয়েকবার। মনে মনে সিয়াম এর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে অনুভূতি অনুভব করার চেষ্টা করল। কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না। কারন, তখন খুব সহজ মনে হচ্ছে মেরে ফেলা। এত সহজে কাউকে খুন করা যায় না। তাহলে অনুভূতিটা কিভাবে লিখবে আকাশ? কোথায় পাবে?
ওর ফোন বেজে উঠল। ওর ভাইয়া ফোন করেছে। মামাতো ভাই।
হ্যাঁ, আকাশ?
হুম।
তোর ল্যাপটপটা নিয়ে আসতে পারবি আমাদের বাসায়?
ক্যান?
মুভি দেখব।
আপনার না পরীক্ষা?
হোক। বাসায় কেউ নাই। আয়। আর তোর মামাকে বলবিনা কিন্তু।
আচ্ছা। কিন্তু মুভি নাই তো!
আমার পেনড্রাইভে আছে। আয়।
আচ্ছা।
আকাশ এর মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। ওর মামাতো ভাই এর নাম সেলিম। ছোটবেলা থেকেই ওকে অপছন্দ করে। যদিও অপছন্দ করার মতো তেমন কোন কারন নাই। যথেষ্ট ভালো ছেলে। সবাই খুব ভালোবাসে। হ্যাঁ। এটা কারন হতে পারে। সবাই ওকে ভালোবাসে। আকাশ এর থেকেও বেশী। সবাই।
মেস এ থাকে আকাশ। চৌকির নিচে তাকাল। একটা ছোট তিন হাত সমান দড়ি পেল। ছিল কয়েকদিন আগে থেকেই। মোটা দড়ি। ওটা প্যান্টের পকেটে নিয়ে নিল।
ল্যাপটপ ব্যাগে নিয়ে বের হল। এখন কোন টেনশন করা যাবে না। কোন একজন সিরিয়াল কিলার উপদেশ দিয়েছিলেন, খুন করার সময় মাথায় কোন দুশ্চিন্তা থাকা যাবে না। নিশ্চিন্তে খুন করতে হয়। একটা সিগারেট জ্বালানোর সময়ও মাথায় সামান্য দুশ্চিন্তা কাজ করে এই কারনে যে, কাঠি থেকে বারুদ ছিটকে গায়ে পরবে না তো! কিন্তু খুন করার সময় সেই সামান্য পরিমান দুশ্চিন্তাও থাকা যাবে না। ঠান্ডা মাথায় থাকতে হবে। মাথা গরম হয়ে গেলেই মিস।
ব্যাগে করে একটা পুরনো টি-শার্ট নিল। কেন জানি মনে হল, নেওয়া উচিত। সেজন্য। ফোনটাও রেখে গেল।
বাসায় পৌঁছানর একটু আগে রিক্সা থেকে নামলো। বাকিটা হেঁটে গেল। হাতের উল্টা দিক দিয়ে কলিং বেল চাপল।
সব কিছু খুব সতর্কতার সাথে করছে। কোন ভুল হওয়া যাবে না।
সেলিম দরজা খুলতেই আকাশ ঢুকে গেল। তা না হলে ওকেই দরজা লাগাতে হত।
খুব গরম পরেছে। তাই সেলিম এর রুমে গিয়ে মেঝেতে বসে পরল। ল্যাপটপ বের করল জানলার উল্টা দিকে বসাল। যাতে পেছনের কিছু ল্যাপটপ এর স্ক্রিনে দেখা না যায়! ফ্যান ছাড়ল হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে। তারপর একটু বাতাস খেয়ে ঠান্ডা হয়ে টয়লেটে গেল যাতে তাকে পেনড্রাইভ লাগাতে না হয়।
সব এখনও ঠিকঠাক মতোই চলছে। কোন ভুল হয়নি।
রুমে এসে দেখল, সেলিম মুভি শুরু করে দিয়েছে। ল্যাপটপ এর সামনে বসে আছে। পেছনে দেওয়ালে হেলান দিয়ে আকাশ বসে পরল। আকাশের মনোযোগ মুভিতে না থাকায় স্বাভাবিক। পকেত থেকে দড়িটা বের করে হাতে নিল। দুই হাতে ভালো মতো পেঁচায়ে নিল। কয়েকবার প্র্যাকটিস করল, কিভাবে ধরবে।
এখন সেলিম এর পেছনে হাঁটুতে ভর করে বসে আছে আকাশ। যেকোনো সময় ওকে মেরে ফেলতে পারে। শেষ বারের মতো ওকে একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অথবা নিজেই নিচ্ছে।
আকাশ এখন বাঁ হাত ডান পাশে আর ডান হাত বাঁ পাশে এনে ঠিক সেলিম এর ঘার বরাবর হাটু গেরে বসে আছে। এই মুহুরতে মাথায় কিছু নেই। পুরো ফাঁকা। এমনকি, কেন খুন করছে, সেটাও জানে না। শুধু জানে, সামনে যে বসে আছে, একে খুন করতে হবে। অনেকটা এরকম বলা যায় যে, আকাশকে এখন অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। ওর নিজের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, ইচ্ছা নেই, আকাঙ্ক্ষা নেই, স্বপ্ন নেই। কিচ্ছু নেই। শুন্য। নিজেকে শুন্য মনে হচ্ছে। যেকোনো একটা হাত একটা পেচ দিয়ে মাথার উপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনলেই শেষ। দড়ি হাতে ভালোভাবেই পেচিয়ে নিয়েছে। ফসকে যাওয়ার কোন কারন নেই। সেলিম এর হাত এখন ল্যাপটপ এর উপর। তাই পেঁচিয়ে ধরলে হাতটা দড়ি আর গলার মাঝে আসার সম্ভাবনা নাই।
বড় এবং নিঃশব্দ একটা শ্বাস নিয়ে পেঁচিয়ে ধরল।
মনে হচ্ছে, আকাশ জ্ঞান হারিয়েছে। কিন্তু হাতটা ধরে আছে। কিছুতেই ছাড়া যাবে না। গলায় পেঁচিয়ে ধরেই শুয়ে পরেছিল। এখন সেলিম ওর উপর আছে। আকাশ এখনও পেছনেই আছে। পেছন থেকে সরা যাবে না। সেলিম ওর পা খুব নাড়াচ্ছে। হাতটা গলা আর দড়ির মাঝে ঢুকানোর চেষ্টা করছে। আকাশ বুঝতে পারছে, কি হচ্ছে। কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে, ওর কোন সেন্স নাই। কখন ওর জ্ঞান ফিরবে, জানে না। আর কখন সেলিম মরে যাবে, সেটাও জানেনা।
জ্ঞান থেকেও না থাকার অনুভূতিটা দারুণ একটা অনুভূতি...!