somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারা এই চিয়ার্সগার্ল?

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বদলে যাওয়া সময়ের এক নতুন সংস্কৃতি ‘ডিজে পার্টি’। । বড় বড় অভিজাত হোটলেই এখন কেবল ডিজে পার্টি সীমিত নেই রাজধানীর গুলশান-বনানী-উত্তরাসহ নানা জায়গায় গড়ে উঠেছে ডিজে ক্লাব। এইসব ক্লাব হোটেলের ডিজে পার্টির আকর্ষণ হলো চিয়ার্সগার্লরা।

কারা এই চিয়ার্সগার্ল? স্বল্প পোশাকে চেনা-অচেনা পুরুষের বাহুলগ্ন হয়ে নাচানাচি করাটা কি তাদের নেশা নাকি পেশা? ডিজে পার্টিতে পুরুষকে সঙ্গ দেয়ায় কী তাদের কাজ, নাকি অন্য কোন পাঁয়তারাও আছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে ক্লাবে-হোটেলে ডিজে পার্টির চালচিত্র সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

বিরাট হলরুম – বড় সারাউন্ড স্পিকারগুলোতে বিটের তাল এমনিতেই মন-প্রাণ চঞ্চল করে তোলে। সেখানেই মিনি বারে বিয়ার এবং হার্ডড্রিংসের হরদম সরবরাহ হচ্ছে। গ্লাস বা বিয়ারের ক্যান নিয়ে অনেকেই চলে আসছেন ড্যান্স ফ্লোরে। স্বল্প বসনা উচ্চবিত্ত ঘরের তরুন-তরুনীর উপচে পড়া ভিড় ড্যান্স ফ্লোরে। রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমে উঠছে পার্টি।

নগরজীবনের ব্যস্ততা ও নানাবিধ হতাশা ভুলতে অনেকেই ছুটছেন ডিজে ক্লাব পার্টিতে। এখানে মিউজিকের তালে তালে এক মায়ানগরীতে ভাসে সবাই। বিশাল স্পিকার থেকে ভেসে আসে বুক কাঁপানো সুর। কানে হেডফোন, চোখের সামনে রাখা ডিস্ক প্লেয়ারে চলে ডিজেদের দক্ষ হাতের জাদু। আঙুলের নিয়ন্ত্রণে চলে ভিন্ন ধরনের মিউজিকের খেলা। ডিস্কো জকির বাজনার জাদুতে মোহাচ্ছন্ন হয়ে নাচে এক দল মানুষ। এদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। চোখ ধাঁধানো আলো-আঁধারির খেলায় হারিয়ে যায় সব বেদনা ও হতাশা।

অভিযোগ রয়েছে যে, মাদক পানীয় নির্ভর এসব পার্টিতে অংশগ্রহণের বয়সের কোনো বাছ-বিচার নেই । যে কোনো বয়সের লোকজন, এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও অনায়াসেই অংশ নিতে পারে উন্মাতাল পার্টিগুলোতে। এর ফলে সামাজিক অবক্ষয় যেমন বাড়ছে, তেমনি অশানি সংকেত সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারের মধ্যে। ড্যান্স পার্টির উদ্যোক্তাদের বেপরোয়া তৎপরতায় অভিজাত এলাকার অভিভাবকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন।

এখন অভিজাত পাড়াগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই জমজমাট পার্টি ব্যবসা চলছে ঢাকার অনেকে জায়গায়। বহুতল এ্যাপার্টমেন্ট ভবনের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া করে এবং বিভিন্ন গেস্ট হাউসে নিয়মিতই চলছে রাতের জলসা। এরমধ্যে বেশ কিছু চিহ্নিত গেস্ট হাউসকে মিনি পতিতালয় বললেও অতিরিক্ত বলা হবে না । রূপালি জগতের উঠতি চলচ্চিত্র তারকা থেকে টিভি মডেলদের অনেকেই এসবে নিয়মিত অংশ গ্রহণকারী।
এবার আসা যাক, ডিজে পার্টির প্রধান আকর্ষণ চিয়ার্সগার্লদের প্রসঙ্গে।

মিনি স্কার্ট, টাইট জিন্স, পাতলা টি-শার্ট পড়ে ডিজে পার্টি জমিয়ে রাখা এসব মেয়েদের ক্লাব বা হোটেলের মালিক পক্ষই নিয়োগ করে থাকে। এদের মধ্যে আবার বিভিন্ন ক্লাস আছে। কেউ স্থায়ী, কেউ অস্থায়ী। স্থায়ীরা চুক্তিভিত্তিক টাকা পায়, আর যারা অস্থায়ী তারা ‘পার নাইট’ হিসেবে টাকা নেয়।

ডিজে পার্টিতে ড্যান্সের পাশাপাশি চিয়ার্সগার্লরা দেহ ব্যবসা ও মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিজাত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদের অনেকেই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতে ডিজে পার্টিতে আসে। আবার অনেকে আসে একাকী। একাকী যারা আসে, তাদের জন্যই পার্টিতে থাকে চিয়ার্সগার্লরা।

পয়সাওয়ালা পুরুষরাই থাকে চিয়ার্সগার্লদের মূল টার্গেট। আয়োজকরাই ইশারায় চিয়ার্স গার্লদরে চিনিয়ে দেয় মালদার পুরুষকে। ব্যাস, তাকে টার্গেট করেই এগিয়ে যায় একেকজন স্বল্পবসনা চিয়ার্সগার্ল। নাচের নামে একটু একটু করে বাড়ায় ঘনিষ্ঠতা। দেহের বিশেষ বিশেষ জায়গার ছোঁয়া দিয়ে পুরুষটির দেহমনে তৈরি করে পুলক। এরপরই শুরু হয় বেড পার্টনার হওয়ার দর কষাকষি।

একই সাথে চিয়ার্সগার্লরা জেনে নেয়, সে বাবা (ইয়াবা) নেয় কিনা? যদি উত্তর পজেটিভ হয় তাহলে তো পোয়াবারো। খুলে গেল তার ব্যবসার নতুন দুয়ার। পেয়ে গেল সে নিয়মিত খদ্দের। অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ চিয়ার্সগার্লই ইয়াবা আসক্ত। ফিগার ঠিক রাখা আর ‘নাইট পার্টি’-তে হাজিরা দিতে রাত জাগার জন্য তারা নিয়মিতই ইয়াবা সেবন করে। এদের অনেকেই আবার মাদক সিন্ডিকেটের ডিলার বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ডিজে পার্টির আয়োজকদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডেকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে।

ওয়েস্টার্ণ পোশাক পড়ে ডিজে পার্টিতে অংশ নিলেও চিয়ার্সগার্লরা যে উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। বরং উল্টোটা। এদের বেশির ভাগই মফস্বল থেকে আসা অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। ঢাকায় এসে তারা ওভারস্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করে। অনেকেই আবার স্বপ্ন দেখে মিডিয়ায় জায়গা করে নেয়ার। এ জন্য তারা মর্ডান ড্যান্স শেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যায়। এসময়ই ডিজে পার্টির আয়োজক বা তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। মিডিয়ায় সেইভাবে জায়গা করতে না পেরে তারা লুফে নেয় চিয়ার্সগার্ল হওয়ার অফার। পরে ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে দেহ ও মাদক ব্যবসায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রফেশনাল চিয়ার্সগার্ল বলেন, আসলে ইচ্ছে ছিল মিডিয়ায় কাজ করার। তাই মর্ডান ড্যান্স শিখি। স্বপ্ন ছিল মডেলিং করার। এজন্য নিজের অনেক কিছুই বিলিয়ে দিয়েছি। মিডিয়াটা প্রতারকদের আখড়া। আমার সব নেওয়ার পর তারা কোনো কথা রাখে নি।

তিনি বলেন, এদিকে মডেল হওয়ার স্বপ্নে পরিবারের নিষেধ না শোনায় আমার হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিবার থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। জিদ করে একটা মেয়েদের হোস্টেলে উঠেছিলাম। সেখানেও বিল দিতে না পারায় আমাকে বের করে দেয়া হয়। এরকম একটা সংকটের সময়ে এক ড্যান্স টিচার আমাকে ডিজে পার্টিতে নিয়ে যায়। অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আমি চিয়ার্সগার্ল হয়েছি।

ওই চিয়ার্সগার্ল আরো বলেন, প্রথম দিকে ডিজে পার্টিতে পার নাইট হাজার-বারো’শ পেতাম। এখন পাই আড়াই থেকে তিন হাজার। ডিজে পার্টি হয় গভীর রাতে। রাত জাগার জন্য আর ফিগার ঠিক রাখার জন্য ইয়াবা খাওয়া শুরু করি। ইয়াবার খরচ যোগাতে আমাকে অনৈতিক কাজও করতে হয়।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এরকম জীবন আমি চাই নি। এ জীবন আমার ভালো লাগে না। কিন্তু আমার তো বেঁচে থাকতে হবে। মিডিয়ার লোকরাই আমাকে এ জীবনে ঠেলে দিয়েছে

রাতভর চলা ডিজে পার্টির রঙচঙে চিয়ার্সগার্লদের সিংহভাগের জীবন কাহিনী অনেকটা এমনই।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×